এই লেখাটা যারা আমেরিকায় মাস্টার্স বা পিএইচডি লেভেলে ভর্তির চেষ্টা করছেন তাদের জন্য —
কীভাবে করোনাকালের কঠিন সময়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন উচ্চশিক্ষায়।
করোনাকালের বিপর্যয়ে অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, আর তার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেটে বিশাল টান পড়েছে, সেটা আগেই নানা জায়গায় বলেছি।
এর ফলাফল হল টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশিপ, ফেলোশিপ, বা রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্টশিপের সংখ্যা কমে যাওয়া। বিশেষ করে টিএ বা ফেলোশিপ খাতে বরাদ্দ কমতে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় (UAB) তো বটেই, নানা বড় নামকরা জায়গা যেমন জন্স হপকিন্স কিংবা অন্যান্য বনেদি জায়গাতেও এই অবস্থা।
নানা সময়ে এটা আগেই বলেছি, তাই সেদিকে না গিয়ে আজকে বলব কীভাবে এর মধ্যেও নিজের প্রোফাইল ভাল করে ভর্তির সুযোগ বাড়ানো যায়।
১) নিজের প্রোফাইল ভাল করুন — হাজার হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করবে ভর্তির জন্য, আর অনেকে এই বছর না গিয়ে আগামী বছরে যাবে।
কাজেই প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে অনেক। এই অবস্থায় কীভাবে নিজের প্রোফাইল ভাল করবেন? এখানেই বুদ্ধি করে আগাতে হবে। আপনি যেই বিষয়েরই শিক্ষার্থী হন না কেন, কিছু কম্পিউটেশনাল স্কিল গড়ে নিন।
এর মধ্যে থাকবে ডেটা অ্যানালাইসিস করার নানা টুলস এর ব্যবহার, যেমন R, SPSS, ইত্যাদি। প্রায় সব ডিসিপ্লিনেই ডেটা প্রসেসিং এর গুরুত্ব বাড়বে, কাজেই আপনার যদি এসব জানা থাকে, তাহলে অনেক প্রফেসরেরই চোখে পড়বে সেটা।
২) কিছু গবেষণা করার চেষ্টা করুন – খুব বিশাল ভাল কিছু না হলেও চলবে। ঘরে বসে থাকার সময়টাতে কয়েকজন মিলে হলেও কিছু গবেষণা করুন যার জন্য বাইরে যাবার দরকার নাই। আপনি সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী?
তাহলেও এই সময়টাতে আপনার বিষয়েরই কিছু কাজ করতে পারেন সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যে যে বিভাগেরই হন না কেন, কিছু গবেষণার কাজ করেন, এবং ছোটখাট জায়গাতে হলেও সেটা সাবমিট করেন। সিভিতে একটা গবেষণা কাজ দেখাতে পারলেও আপনার আবেদনপত্রের কদর বাড়বে।
৩) নতুন কিছু অনলাইনে শিখে নিন – এই সময়টাতে সবাই অনলাইনে ফ্রি কোর্স খুলে দিয়েছে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু শেখার চেষ্টা করেন, যাতে করে স্কিলসেট হিসাবে সেটা উল্লেখ করতে পারেন।
৪) প্রফেসরদের হয়ে কামলা খাটুন – আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে ফ্রি-তে কামলা খাটার মানে প্রফেসরের হয়ে কাজ করে দেয়ার অফার দেন। পৃথিবী চলে দেয়া নেয়ার মাঝে। আপনি কোন প্রফেসরের কাছে রিসার্চের ফান্ড চাইলে না দেখেই দিবেন কেন তিনি?
সেজন্য গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে রাখুন, অনেকদিন আগে থেকেই প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর কাজের সুবিধার জন্য কিছু ভলান্টারি কাজ করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। উপরে (১)-(৩) এ যেটা বলেছি তার ভিত্তিতে কথা বলুন যে আপনি অমুক জানেন এবং ফ্রি-তে প্রফেসরের জন্য সেই স্কিল ব্যবহার করে কাজ করে দিবেন।
এভাবে যোগাযোগ বাড়লে দরকার মত পরে এপ্লাই করার সময়ে সুবিধা পাবেন এমনকি হয়তো প্রফেসরের কাছ থেকে একটা রেকমেন্ডেশন লেটারও পেতে পারেন কাজ ভাল হলে।
৫) কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানো — ইংরেজিতে ইমেইল লেখা, ফোনে কথা বলা, এবং প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরী — এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। এগুলো এই সুযোগে ভাল করে নিন।
এই আইডিয়াগুলোই আপাতত মাথায় এল — জিপিএ বা টেস্ট স্কোর এর সাথে সাথে এইগুলো করে নিজের প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় করে তুলুন, যাতে করে এই করোনাকালের দুঃসময়েও আপনি ফান্ড সহ সুযোগ পান মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে।
শুভকামনা রইলো।
লেখকঃ Ragib Hasan