সাবজেক্ট রিভিউ:
ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স (শিক্ষা অনুষদ)।
.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন সাবজেক্ট নিয়ে স্বয়ং চবির ৬০% স্টুডেন্টরাই ভাল করে জানে না।যদিও ইতিমধ্যে এই ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
.
যুগের বাস্তবতায়,বর্তমান সরকার কর্তৃক খেলাধুলা, সুস্থতা ও স্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করায় এবং পদ্ধতিগতভাবে যথাযথ উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞান সম্মত ক্রীড়াবিশারদ তৈরি করে ক্রীড়াক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স বি.পি.ই. (ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন) চালু করা হয়েছে। নতুন অনুষদের অধীনে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়। মাননীয় উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী নিজেই অনুষদটির (শিক্ষা অনুষদ) ডিনের দায়িত্বে রয়েছেন এবং তাঁরই দিক নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রীড়া অন্তপ্রাণ শিক্ষক জনাব এ.এইচ.এম. রাকিবুল মাওলা অভীষ্ট লক্ষ্যপানে নিরলস ছুটে চলেছেন।
.
অবকাঠামোগত সুবিধা:-
বর্তমানে চবি জিমনেশিয়ামে এই ডিপার্টমেন্টের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ডিপার্টমেন্টের জন্যে আরো সুপরিসর ভবন নির্মাণের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এমনকি ডিপার্টমেন্টে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে আলাদা আবাসন ব্যবস্থাকরণের ব্যাপারটিও বিবেচনাধীন আছে। নতুন ডিপার্টমেন্ট হলেও ছাত্র-ছাত্রীরা মাননীয় উপাচার্যের সুনজরের কারণে চবি’র পুরাতন ডিপার্টমেন্টগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় সুযোগ সুবিধার দিক থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই।
ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধাও আছে।
.
পড়ালেখা ও ক্লাসসূচী এবং পরীক্ষার ধরণ:-
এখানে পড়ালেখা হয় মূলত দুই ধরণের।তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক।
তত্ত্বীয় ক্লাস হয় ক্লাসরুম ভিত্তিক আর ব্যবহারিক ক্লাস হয় মাঠ কেন্দ্রিক।
.
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় ক্লাস এবং দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত মাঠ কেন্দ্রিক ব্যবহারিক ক্লাস।
.
পরীক্ষার ধরণ হল, 
সম্পূর্ণ অনার্স কোর্সটি ৮ সেমিস্টারে ভাগ করা হয়েছে। নির্ধারিত ৬ মাসের মধ্যেই প্রতি সেমিস্টারের পাঠদান থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শেষ করা হয়। পরীক্ষার শেষে রেজাল্ট দিতে সর্বনিম্ন সময় ১১ দিন সর্বোচ্চ ২০ দিন সময় নিয়েছে ডিপার্টমেন্ট যাত্রাকালীন সময় থেকে।
.
প্রশ্ন পদ্ধতি ও মানবন্টন:-
প্রতি সেমিস্টারে ২০ ক্রেডিট (তত্ত্বীয় ১৪ ও ব্যবহারিক ৬ ক্রেডিট)। মোট ৫টি তত্ত্বীয় কোর্স থাকে এবং ৩-৪ টি ব্যবহারিক কোর্স থাকে।
.
তত্ত্বীয় কোর্সের গ্রেড নির্ধারণের জন্য ৭৫% লিখিত পরীক্ষার, ১৫% এসাইনমেন্ট,টিউটোরিয়ালের এবং বাকী ১০% ক্লাস উপস্থিতির বিবেচনায় নেয়া হয়।
ক্লাসে ৭০% এর উপরে উপস্থিত হলেই ক্লাস উপস্থিতি হারের নাম্বারটা পাবে।
৬০% থেকে ৬৯% উপস্থিতি হলে জরিমানা দিয়ে কলেজিয়েট হওয়ার সুযোগ দিবে বিবেচনা করে।কিন্তু কারো যদি ৬০% এর নিচে উপস্থিতি না থাকে তবে সেমিস্টার ড্রপ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

ব্যবহারিক কোর্সের ক্ষেত্রে পারফরমেন্সের উপর নাম্বার অর্জন নির্ভরশীল। সুতরাং খেলোয়াড়ি মানসিকতা এই ডিপার্টমেন্টে নাম্বার অর্জনের জন্যে বেশি দরকার।
.
সেশনজট:- সেশনজট সম্পর্কে এই ডিপার্টমেন্টে স্টুডেন্টদের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ১ দিনেরও সেশনজট হয়নি।
.
যা যা পড়ানো হয়:-
ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্সে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
.
তত্ত্বীয়:
# সমাজতত্ত্ব # অর্থনীতি # মনোবিজ্ঞান # ব্যবস্থাপনা
# পরিসংখ্যান # কম্পিউটার ও আইটি # রাজনীতি বিজ্ঞান
# আন্তর্জাতিক সম্পর্ক # দর্শন # বাংলাদেশ স্টাডিজ # বাংলা # ইংরেজি# পুষ্টিবিদ্যা # প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য # ফিজিওলজি # এনাটমি।
.
ব্যবহারিক:
ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিক্স, জলক্রীড়া,জিমনাস্টিক,গ্রামীণ খেলাধুলা সহ গুরুত্বপূর্ণ সবগুলি ইভেন্টের ইতিহাস,কলাকৌশল,নিয়মকানুন এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবে পাঠাদান করা হয়।
.
চাকুরীর সুবিধা:-
ভালো রেজাল্ট করে বিসিএস-ব্যাংকসহ যে কোন সেক্টরে ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারবে।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজের,বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে শিক্ষকতার সুযোগ তো সবার জন্য থাকবেই।
বিভিন্ন সামরিক বাহিনীতে ক্রীড়া বিশারদের চাহিদা আছে,তাছাড়া ক্রীড়া জগতের যে কোন স্তরে চাকুরীর সুযোগ তো আছেই।
.
সাবজেক্ট ভিত্তিক নিয়মিত ক্যাডারটা পাব কি?
শিক্ষা ক্যাডারে শারীরিক শিক্ষা ক্যাডার পদ সৃষ্টিটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।আগে এই বিষয়ে অনার্স কোর্স ছিল না বলে শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত পদটা তৈরি হয়নি যেহেতু বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্স চালু আছে শিক্ষা ক্যাডারটাও শীঘ্রই আলোচনায় আসবে।
এই ছাড়া চবি,যবিপ্রবি,রাবি ছাড়া যেহেতু এই সাবজেক্ট অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টেদের প্রচুর চাহিদা আছে।
.
উচ্চতর ডিগ্রীর সুবিধা:-
চীন ও ভারতের ২০ টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই সাবজেক্ট নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করার সুযোগ আছে।এমআইটির মত প্রতিষ্ঠান এই সাবজেক্টে স্কলারশিপ দিচ্ছে।
.
ডিপার্টমেন্টে পড়তে আগ্রহীদের ব্যাপারে কিছু কথা:-
এই সাবজেক্টটা মাঠ কেন্দ্রিক।রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পরিশ্রম করার মতন মানসিকতা থাকলেই এই ডিপার্টমেন্টে ভাল কিছু করতে পারবে।
প্রতিদিন মাঠে প্র্যাকটিস করতে না পারলে এই ডিপার্টমেন্টে পড়তে এসে কোন লাভ হবে না,ভাল রেজাল্ট তুলতে পারবে না।
খেলোয়াড় বা বিকেএসপি থেকে পাশ কৃতরাই এই ডিপার্টমেন্টে জন্যে উপযুক্ত।ডিপার্টমেন্টে প্রফেশনাল খেলোয়াড়রা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের হয়ে সব সময় খেলার অগ্রাধিকার পাবে।
কেউ যদি বলে,আমি অন্য ক্লাবের হয়ে খেলি,এখানে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সময় দিলে ক্লাবে কখন সময় দিব?
সেই প্রেক্ষিতে ক্লাব বাদ দিতে হবে।ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনাকে আগে স্থান দিতে হবে না হলে নাম্বার অর্জন সম্ভব নয়।
.
মনে রাখবে,খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার বড়জোড় কয়েক বছরেই থাকে কিন্তু এ বিভাগ থেকে পাস করে যে সার্টিফিকেট পাবে তা কিন্তু তোমার সারাজীবনেরই ক্যারিয়ার গড়ে দিবে। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ন্যূনতম যে উপস্থিতি দরকার তা নিশ্চিত করে কেউ যদি পেশাদারী পর্যায়ে খেলাধুলা চালিয়ে নিতে পারে, তবে তা নিঃসন্দেহে বাহবাযোগ্য। এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, এখানে উপস্থিতির জন্যও (তত্ত্বীয় ১০% এবং ব্যবহারিকে ২০%) নাম্বার বরাদ্ধ রয়েছে। ও নাম্বারগুলি কিন্তু উপস্থিতি ৫০% এর নীচে নামলে মোটেও পাবেনা, সেক্ষেত্রে পাস করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
.
এখানে পড়তে হলে যে কাউকে পেশাদার খেলোয়াড়হতেই হবে, এমন কিন্তু নয়।তবে, ন্যূনতম একটা খেলোয়াড়ি যোগ্যতা (অন্ততঃ থানা পর্যায়ের কৃতিত্বের স্বীকৃতিসহ) অবশ্যই থাকতে হবে,নইলে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না, কারণ ন্যূনতম খেলোয়াড়ি যোগ্যতা ব্যতিরেকে কেউ ভর্তি হলে সে ভালো রেজাল্ট করবে না (পারফর্ম করতে না পারায়) এমনকি পড়ে মজাও পাবে না। নিয়মানুবর্তিতা তথা নিয়মিত মাঠে উপস্থিত হয়ে পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস করলে ন্যূনতম খেলোয়াড়ি যোগ্যতায় যথেষ্ট ভালো রেজাল্ট করবে।মনে রাখতে হবে,এই কোর্সটি কাউকে খেলোয়াড় বানানোর জন্য নয় বরং বিভিন্ন কলাকৌশল ও নিয়মকানুন শিখে (সবগুলো প্রচলিত ক্রীড়ার) ক্রীড়া বিশারদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই এ অনার্স কোর্সটি চালু করা হয়েছে।
.
বিশেষ সহযোগিতা:
এ.এইচ.এম.রাকিবুল মাওলা স্যার,
চেয়ারম্যান,
ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
.
লেখা:
মিজানুর রহমান নোবেল,
১ম ব্যাচ,ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।