ডম্বুর লেক নিয়ে ক’দিন ধরে দুই বাংলার মধ্যে তুমুল তর্ক-বিতর্কের মধ্যে একটা কথাই শুধু ভাবছি, যে নিজেই দুঃখজাত সে কীভাবে অন্যের দুঃখের কারণ হয়!
তাহলে আপনাদের ডম্বুর লেকের জন্ম কাহিনি শুনতে হবে।বন্ধু প্রদীপ মজুমদারের সৌজন্যে একটা গল্প পড়েছিলাম। শক্তিশালী গল্পকার হরিভূষণ পালের গল্প ‘ভোলং বাসার ভিটে মাটি’।গল্পের একটা অংশ পড়লে কিছুটা আন্দাজ পাবেন ডম্বুর লেকের জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে :
“ডম্বুর হাইড্রো প্রজেক্ট-এর প্রয়োজনে কম করেও তিরিশটি ছোটো বড়ো জনপদ তলিয়ে যায় জলের গভীরে।এক সময় সামগ্রিক ভাবে এ অন্ঞ্চলের নাম ছিল ভোলংবাসা।আদিবাসীদের ভাষায় এ শব্দটার অর্থও পাহাড়ের ধারে জনবসতি।
জমাতিয়া,ত্রিপুরি,রিয়াং ও বাঙালি সবাই দুঃখ দৈন্য,অভাব অনটন সব কিছু সঙ্গে নিয়েও এখানে শান্তিতেই ছিল। ভোলংবাসা ছিল রাইমা আার সাইমা নামের দুটি খরস্রোতা পাহাড়ি নদীর মোহনা। জমি ছিল তাই উর্বর। খেত যেন ফসল উগরে দিত সেই জমি। সবাই বলত ভোলংবাসা ছিল এ রাজ্যের ব্রেড বাস্কেট। সাথে ছিল আদিবাসী পাহাড়িদের জুমের ফসল।”
আশ্চর্য না?
কোথাও কেউ প্রতিবাদ করলো না? এমন একটা অবৈজ্ঞানিক অবাস্তব অপরিনামদর্শি পরিকল্পনার কোনো প্রতিরোধ গড়ে উঠলো না?
৩০ টা গ্রামের ৯০০০ মানুষের কী দুর্দশা হ’ল কোথাও লিপিবদ্ধ থাকলো না? ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২-এসে সুইচ টিপে যেদিন ‘দ্য লংগেষ্ট ক্যানেল অব দ্য ওয়ালর্ড ফর স্মলেস্ট কোয়ান্টিটি অব পাওয়ার’-এর উদ্বোধন করলেন একটিও হাত মুষ্টিবদ্ধ হ’ল না?
ওয়াল্টার বেনয়ামিন আবর্জনার স্তূপে খুঁজে বেড়াতেন সভ্যতার আকর।সভ্যতার ঝড়ে উড়ে গেছে কত ঠিকানা।ব্যাক্তিগত ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে।আমরা এগুলো খুঁজি না।আমরা মোটা মোটা বই পড়ে জীবনের একেকটা হার্ডেল পার হই, কিন্তু শীর্ণ এই গাথাগুলো আমাদের অজানা থেকে যায়।
পৃথিবীর কোনও দেশে যেন বন্যায় একজন মানুষও মারা না যায়, এই প্রার্থনা করি, তবু মানুষের লোভ হিংসা ও আগ্রাসী মনোভাব দিনদিন যেভাবে বাড়ছে, নিশ্চিত যে কলকাতা শহর আগামী তিন-চার দশকে জলের তলায় লীন হবে।হবেই।
আসুন কোনও নির্দিষ্ট দেশের হয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে পৃথিবী নামক সবুজ গ্রহটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি।
আমার ক্যামেরায় ডম্বুর লেকের ছবি।
– গৌতম মিত্র