দেশের বাইরে পড়াকালীন দেখতাম প্রায়ই ভার্সিটিতে অন্য দেশ থেকে এক সেমিস্টারের জন্য স্কলারশিপ নিয়ে স্টুডেন্ট আসছে পড়ার জন্য, তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারতাম তারা “এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রামের স্টুডেন্ট”। আফসোস হতো যে বাংলাদেশের জন্য এমন এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রাম যদি কানাডাও চালু করত।
কানাডা সরকার বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের জন্য নতুন বছরের জন্য অনেকটা উপহার স্বরূপ যেন EduCanada Study in Scholarship এই এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রামটি চালু করল। বাংলাদেশের প্রতি তাদের এই বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য সবার আগে কানাডা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশীদের এখন থেকে স্কলারশিপটি দেয়া হবে।
EduCanada Study in Canada Scholarship স্কলারশিপটি কি?
স্কলারশিপটি দেয়া হয় কানাডা সরকারের Global Affairs Canada-র আনুষ্ঠানিক সংস্থা Department of Foreign Affairs, Trade and Development (DFATD) থেকে, উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশের আন্ডারগ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের, যেন তারা এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রামে ফুল ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট নিয়ে কানাডার ভার্সিটি গুলায় পড়তে আসতে পারে। এই দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশকেও এই বছর থেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এশিয়া থেকে মাত্র তিনটি দেশ আছে Bangladesh, Nepal, Taiwan. ধন্যবাদ কানাডাকে।
কারা এপ্লাই করতে পারবে?
বর্তমানে বাংলাদেশে কোন ভার্সিটিতে আন্ডারগ্রাজুয়েটে কিংবা মাস্টার্সে পড়াশুনা করছে এমন যেকেউ এপ্লাই করতে পারবে। বিশেষত আন্ডারগ্রাজুয়েট যারা পড়ছো এখন তাদের জন্য সত্যিই একটা বড় সুযোগ আমি বলব।
থিওরিটিক্যালি বাংলাদেশে পিএইচডি অধ্যায়নরত এমন যে কেউ এপ্লাই করতে পারে। কিন্ত অধিকাংশ ক্যান্ডিডেটই যেহেতু বাংলাদেশি আন্ডাগ্রাজুয়েট ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত তাই আমার আর্টিকেলটি শুধু এদের উপর ফোকাস করে লিখা।
স্কলারশিপটি কতদিনের?
চারমাস বা একটা সেমিস্টারের জন্য তোমাকে স্কলারশিপটি দেয়া হবে। এই একটা সেমিস্টার তুমি কানাডাতে এসে কোনো একটা নির্দিষ্ট ভার্সিটিতে কোর্সওয়ার্ক/রিসার্চ ওয়ার্ক ইত্যাদি সম্পন্ন করবে, যার যাবতীয় খরচ কানাডা সরকারের।
এই স্কলারশিপে কি কি সুবিধা?
তোমাকে 10,200 কানাডিয়ান ডলার দেয়া হবে চার্ মাসের জন্য যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি (পুরোটা ট্যাক্স ফ্রি!)। ছয়মাসের রিসার্চ করার জন্য যে মাস্টার্স স্টুডেন্টরা আসবে তারা 12,700 কানাডিয়ান ডলার পাবে (প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা)।
স্কলারশিপটির স্কিম অনুযায়ী তোমার কোনো টিউশন ফি থাকবেনা কানাডাতে এই এক সেমিস্টার পড়ার জন্য। তাই এই টাকাটি দিয়ে মূলত তোমার ভিসা ফি, আসা যাওয়ার এয়ারপ্লেন টিকেট, থাকার খরচ, হেলথ ইন্সুরেন্স সহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বহন করা হবে। অর্থাৎ তোমাকে এক পয়সাও ব্যয় করা লাগবে না।
এতো গেলো ফিনান্সিয়াল সুবিধা। আর এখানে কানাডায় এসে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কিং, প্রফেসরদের সাথে রিসার্চ করার অভিজ্ঞতা, ক্লাস করার অভিজ্ঞতা এগুলা তো থাকছেই।
এপ্লিকেশন কিভাবে করবে?
এপ্লিকেশন নিজে নিজে সাবমিট করা যাবে না, করতে হবে বাংলদেশের নিজ নিজ ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে। তোমার ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টাল হেড বা ডিনকে গিয়ে বলতে হবে এই স্কলারশিপের কথা।
তিনি তোমার নাম পরিচয় উল্লেখ করে যাবতীয় ডকুমেন্ট সহ অনলাইনে আবেদন জমা দেবেন কানাডাতে যে ভার্সিটিতে তুমি পড়তে আসতে চাও এই স্কলারশিপের অধীনে সেই ভার্সিটিকে। অনলাইনে আবেদন পত্র জমা দেবার জন্য DFATD অনলাইনে পোর্টালে momentum একাউন্ট খুলতে হবে। এপ্লিকেশন অনলাইনে সাবমিট করলে, সেটা পাওয়ার পরে, সেই কানাডার ভার্সিটি
Department of Foreign Affairs, Trade and Development (DFATD) এ তোমার জন্য ফাইনাল এপ্লিকেশন সাবমিট করবে। এই হলো ধাপ গুলি।
কোন কোন কানাডিয়ান ভার্সিটিতে এপ্লাই করা যাবে?
Designated learning institutions (DLI) যুক্ত যেকোন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি। DLI ভার্সিটি লিস্ট দেখার জন্য ভিজিট কর কানাডা সরকারের অফিশিয়াল www.canada.ca ওয়েবসাইটে
কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
নিচের ডকুমেন্টগুলা পিডিএফ বা ইমেইজ ফাইল আকারে অনলাইনে আপলোড করতে হবে। খেয়াল রাখা চাই যে প্রতিটি ডকুমেন্টের সাইজ যেন পাঁচ মেগাবাইটের কম হয়। নাহলে অনলাইনে আপলোড করতে পারবে না। ডকুমেন্ট লিস্ট:
1. Proof of citizenship: পাসপোর্ট/বার্থ সার্টিফিকেট হলেই হবে
2. Proof of full-time enrolment: নিজ নিজ ভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট থেকে নিবা এটা লেটারহেডে যে তুমি ওই ভার্সিটির একজন রেগুলার স্টুডেন্ট ও অধ্যয়নরত
3. Letter of intent: এটি তোমাকে লিখতে হবে, স্কলারশিপের মোটিভেশন লেটারের মত
4. Letter of support from the home institution: ডিপার্টমেন্টাল হেড বা ডিন প্রাতিষ্ঠানিক লেটার হেডে তোমার নাম সহ উল্লেখ করবে
5. Letter of invitation from the Canadian supervisor: এটা শুধু যারা মাস্টার্সে পড়ছো এবং এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রামে কোনো কানাডিয়ান প্রফেসরের ল্যাবে রিসার্চ করতে আসতে চাও তাদেরকেই আপলোড করতে হবে। আন্ডারগ্রাজুয়েট যারা কোর্সওয়ার্ক করতে আসতে চাও তাদের এটার দরকার নাই।
কিন্ত আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট যারা রিসার্চ করতে আসতে চাও, তাদের আবার লাগবে এটা। ওই কানাডার ভার্সিটির কোনো একজন সুপারভাইজর যে কিনা প্রাতিষ্ঠানিক লেটার হেডে লিখবে যে সে তোমাকে চার মাস মেন্টরশীপ করতে রাজি আছে এমন একটা প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
6. Signed copy of Memorandum of Understanding (MoU): তোমার ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের হেড বা ডিন কানাডার ভার্সিটির যেখানে তুমি পড়তে আসতে চাও সেই ভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করলেই তারা MoU ফরম্যাট জানিয়ে দেবে, সেখানে দুই ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের ডিন/ হেডের সাইন থাকবে আর বলা থাকবে যে বাংলাদেশ থেকে ওই ভার্সিটির স্টুডেন্ট হিসেবে তোমাকে এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রামে কানাডায় পাঠানো হচ্ছে।
কি উদ্দেশ্যে বা কি করবে ঐখানে এসব লিখা থাকবে। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী উল্লেখ থাকতে হবে যেমন: তোমার কানাডাতে থাকাকালীন ওই ভার্সিটিতে ফুল টিউশন ফি মওকুফ করার বিষয় অবশ্যই উল্লেখ থাকবে। মোট কথা MoU – এটা কানাডিয়ান ভার্সিটি ও তোমার ভার্সিটির মধ্যে একটা পারস্পরিক বোঝাপড়া সহ কিছু শর্তযুক্ত একটা চুক্তির মত।
ভিসার জন্য কি কোনো ধরনের ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে?
এই স্কলারশিপটি তোমার যাবতীয় খরচ বহন করবে, তাই কানাডার ভিসা এপ্লিকেশনে তোমার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে না।
IELTS লাগবে?
প্রতিটা ইউনিভার্সিটির নিজ নিজ ল্যাঙ্গুয়েজ রিকোয়ারমেন্ট আছে যা ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ীও ভিন্ন ভিন্ন। তাই এ ব্যাপারে DFATD নিজ নিজ কানাডিয়ান ভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করতে সাজেশন দিয়েছে। তবে চেষ্টা করতে পারো যদি তোমার বাংলাদেশের ভার্সিটি মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন প্রত্যয়নপত্র দেয় যেখানে লিখা থাকবে যে ভার্সিটিতে তুমি ইংরেজিতে পড়াশুনা করো, সেটা তোমার কানাডিয়ান ভার্সিটি গ্রহণ করে কিনা।
তবে এক্ষেত্রে স্ব-স্ব কানাডিয়ান ভার্সিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচত হবে। তাদের সাথে যোগাযোগ করেই এসব ব্যাপারে কনফার্ম হয়ে নিবে আগেই যেহেতু একেক ভার্সিটির পলিসি একেক রকম।
এপ্লিকেশন করার জন্য ডেডলাইন কবে?
সাধারণত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এপ্লাই করা যাবে। তবে এখানে বিষয় আছে। প্রতিটা কানাডিয়ান ভার্সিটির নিজস্ব ডেডলাইন থাকবে যেটা মার্চের আগেও হতে পারে, তাই ভার্সিটি ভেদে ডেডলাইন ভিন্ন হবে। এটা জানার জন্য সেই স্পেসিফিক ভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ সেকশনে যোগাযোগ করো।
স্কলারশিপ পেলে কবে থেকে কানাডায় এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রাম শুরু করা যাবে?
যদি এই বছর (২০২১) এপ্লাই করে স্কলারশিপ পাও, তাহলে আন্ডারগ্রাজুয়েট যারা শুধু কোর্সওয়ার্ক করতে আসবে তারা অবশ্যই সেপ্টেম্বর ২০২১ অথবা জানুয়ারি ২০২২ তে কানাডায় অবশ্যই উপস্থিত থাকবে।
আর যারা কিনা রিসার্চ করার জন্য (আন্ডারগ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স উভয় ক্যাটাগরি) তাদেরকে জুন ২০২১-ফেব্রুয়ারি ২০২২ মাসের যেকোনো সময়েই কানাডাতে ক্যান্ডিডেটকে অবশ্যই উপস্থিত থেকে রিসার্চ শুরু করতে হবে।স্কলারশিপের মেয়াদ (চার -ছয় মাস) শেষ হয়ে গেলে ক্যান্ডিডেটকে অবশ্যই নিজ নিজ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত চলে যেতে হবে।
এই এক্সচেইঞ্জ স্কলারশিপটি আমাদের বাংলদেশের আন্ডারগ্রাজুয়েটদের জন্য সত্যিই অসাধারণ একটা সুযোগ।
এই স্কলারশিপটি কানাডার সরকার বাংলাদেশিদের জন্য এই কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছে! তাই এ সম্পর্কে কেউ এখনো জানেনা তেমন একটা। লিখাটি শেয়ার করে পুরো বাংলাদেশকে জানিয়ে দাও।
Md Nazmul Hasan, PhD Researcher,
University of British Columbia, Vancouver, Canada