প্রথমেই বলে রাখি ইইই কোন সাব্জেক্ট না, এটা একটা ডিপার্টমেন্ট।লিখার সুবিধার্থে বিভিন্ন জায়গায় এটিকে সাব্জেক্ট বলা হয়েছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে পরিচিত।

আদিযুগ থেকে মানব জাতির বিবর্তনের পথে যে আবিষ্কারটি মানব সমাজে বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলেছে তাহলে ইলেক্ট্রিসিটি। আর ইলেকট্রিসিটি কে উপজীব্য করে মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে আবিষ্কৃত হয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
আজ একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে ইলেকট্রিসিটি ও ইলেকট্রনিক্স ছাড়া আমাদের জীবনকে কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। আর এই দুটি বিষয় নিয়ে প্রকৌশলবিদ্যার যে শাখায় পাঠদান করা হয় সেটিই ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্ষেপে ইইই(EEE)। আজ আমি ইইই সম্পর্কে কিছু বলবো। প্রথমে আমার এই লিখা কে কয়টি ভাগে ভাগ করা যাকঃ

১। কোথায় পড়ানো হয়
২। কি কি বিষয় পড়ানো হয়
৩। চাকরি ক্ষেত্র
৪। চুয়েট ইইই
৫।একজন ছাত্র বা ছাত্রী ইইই কেন পড়বে

* কোথায় পড়ানো হয়

বাংলাদেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। (বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট)। এছাড়াও অন্যান্য অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ও ইইই পড়ানো হয়।

*কি কি বিষয় পড়ানো হয়

একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর প্রধান কাজ হল শক্তি উৎপাদন সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিয়ে কাজ করা।ইইই পড়ালেখা যে সব বিষয় নিয়ে বিস্তৃত সেগুলো হলঃ

Electronics

Software

Hardware

Signal Processing

Communications

Computer Engineering

Power Electronics

Power Systems Engineering (including renewable energy)

Nanotechnology

Biomedical Imaging

Embedded Systems

Control

ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা এই বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান লাভের সুযোগ পায়।

* চাকরিক্ষেত্র

ইইই চাকরি ক্ষেত্র নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। দেশ এবং বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে ইইই ইঞ্জিনিয়াররা কৃতিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং চাকরির বাজারে তাদের যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে। যদি তুমি ইইই নিয়ে পড়ো এবং তোমার যোগ্যতা থাকে তবে তুমি অনেক ভাবেই নিজের ভবিষ্যত গড়ে নিতে পারবে।দেশে এবং বিদেশে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) একটি ডায়নামিক সাবজেক্ট। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পছন্দ তালিকার শুরুর দিকেই অবস্থান করছে এটি। এর কারণও আছে। দেশে-বিদেশে এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। দেশে পাওয়ার সেক্টর গ্রো করছে। সেখানে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের কাজের যথেষ্ট চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক কোম্পানিগুলো ভালো বেতনে ইইই গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ দিচ্ছে।

নবায়নযোগ্য অ্যানার্জি সেক্টরসহ বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের চাকরি হচ্ছে। আইসি সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের প্রসপেক্ট ভালো। এছাড়া কমিউনিকেশন সেক্টর বিশেষ করে টেলিকম কোম্পানিগুলোতে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের চাহিদা রয়েছে। ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের আয়ের একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে আউটসোর্সিং।

পাওয়ার সার্কিটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে ঘরে বসেই ভালো আয় করতে পারবেন আউটসোর্সাররা।

বিটিটিবি, বিটিআরসিসহ টেলিকম সেক্টরে সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শুরুতেই অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরিতে নিয়োগ পান তারা। আণবিক শক্তি কমিশন, জাতীয় বিদ্যুৎ বোর্ডসহ রাষ্ট্রায়ত্ব বিভিন্ন পাওয়ার জেনারেটর কোম্পানিতেও চাকরির সুযোগ হচ্ছে। বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। যারা ট্র্যাক চেঞ্জ করতে চান তারা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকেও চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। মেধাবীরা শিক্ষকতা-গবেষণাও করতে পারে। দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইইই বিষয়ের প্রচুর শিক্ষক দরকার হচ্ছে।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রচুর ছাত্র বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েটের বহু গ্রাজুয়েট প্রতিবছর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের মধ্যেও কেউ কেউ সুযোগ পাচ্ছে। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার খরচ কম। কিন্তু ভাষা শিখতে হবে। সেই সঙ্গে ভিসা জটিলতাও রয়েছে। সেই তুলনায় বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়া সহজ। যারা সেখানে পড়তে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সেখানে চাকরি কিংবা গবেষণায় ঝুঁকে পড়ছে। কারণ ওইসব দেশে একদিকে যেমন চাকরি পাওয়া সহজ তেমনি বেতনও ভালো।

ইইই ইঞ্জিনিয়াররা প্রধানত যেসব সেক্টরে কাজ করতে পারে সেগুলো হলোঃ

Design

Consulting

Research and development

Teaching

Management

Computer software development

Entrepreneur – start your own company

এবং যেসব পদে কাজ করা যায় সেগুলো হলোঃ

Electronic/ Electrical engineers

Telecommunication engineers

Biomedical engineers

Computer engineers

Software engineers

Power engineers

Project managers

Engineering consultants

ইইই এমন একটা সাবজেক্ট যে সাবজেক্ট থেকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সেক্টরে যাওয়া যায়। টেলিকমিউনিকেশন খাতে ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের ভালো চাহিদা রয়েছে। গ্রামীনফোন এ বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার প্রকৌশলী কাজ করে তাদের মধ্যে অধিকাংশই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

একজন ইইই ইঞ্জিনিয়ার এর সফটওয়্যার ডিজাইনিং এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
যারা প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী তারাও ইইই থেকে পড়ে ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং খাতে ভবিষ্যত গড়তে পারে। আর ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে কাজ করার সুযোগ তো থাকছেই।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররাই কাজ করছে। আর কারো যদি রোবটিক্সে আগ্রহ থাকে তবে তার জন্য ইইই অবশ্যই সেরা পছন্দ হবে।
দেশে এবং বিদেশে

*চুয়েট ইইই

বাংলাদেশের চারটি প্রধান ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে চুয়েট অন্যতম। চুয়েটে ইইই ডিপার্টমেন্টের যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা পরিচালিত এই ডিপার্টমেন্ট। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে চুয়েট ইইই তে মোট ১৮০ টি আসনে ভর্তির সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। ল্যাব ফ্যাসিলিটি এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে এখানে। চুয়েটে একাডেমিক কোর্সগুলোর পাশাপাশি গবেষণা কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। গবেষণা কাজের জন্য প্রধান বিষয়গুলো হলো

১. পাওয়ার ইলেক্ট্রনিকস
২. ইলেকট্রিক্যাল মেশিন এন্ড ড্রাইভস
৩. এনার্জি সিস্টেমস
৪.কন্ট্রোল সিস্টেম
৫.টেলিকমিউনিকেশন্স
৬.ফিজিক্যাল ইলেকট্রনিক্স।

চুয়েটে ইইই তে প্রায় 68 টি কোর্স পড়ানো হয় এর মধ্যে ৫২ টি ডিপার্টমেন্টাল কোর্স ও ১৬ টি নন ডিপার্টমেন্টাল কোর্স। এর মধ্যে থিওরি কোর্সের পাশাপাশি সেশনাল কোর্স,ল্যাব ক্লাস আছে যেগুলো একজন শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ১৬ টি নন ডিপার্টমেন্টাল কোর্সের মধ্যে রয়েছে পদার্থ, রসায়ন, গণিত, ইংরেজি, একাউন্টিং, ইকোনমিক্স ইত্যাদি। নন ডিপার্টমেন্টাল কোর্সগুলো ডিপার্টমেন্টাল কোর্সগুলোর সাথে সরাসরি জড়িত।

চুয়েট ইইই থেকে গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে অনেকেই দেশের উচ্চ পর্যায়ে সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই বিদেশে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসছেন চুয়েটের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের জন্য।

*একজন ছাত্র বা ছাত্রী কেন ইইই পড়বে

ছোটবেলা থেকেই অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে। তাদের অধিকাংশই যে বিষয়গুলোর প্রতি বেশি আগ্রহী হয় তার মধ্যে একটি হল ইইই। বর্তমান বিশ্ব মূলত ইলেকট্রিসিটি এবং ইলেকট্রনিক্স এর উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে।সুতরাং ইইই নিয়ে পড়ে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গঠন করা তুলনামূলক সহজ।

যারা ম্যাথ এবং ফিজিক্সের প্রতি আগ্রহী, যারা সার্কিট সলভ করতে ভালবাসো, যারা ইন্টারে ২য় এবং ৩য় অধ্যায় ভাল পারতে তারা ইইই কে নির্বাচন করতেই পারো।
তবে হ্যা, ইইই পড়তে হলে যোগ্যতা, মেধার পাশাপাশি যে জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি থাকতে হয় তা হল ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য এবং লেগে থাকার ক্ষমতা এবং জানার স্পৃহা। কারণ একটা বিষয়ের প্রতি যদি তোমার আগ্রহই না থাকে তবে তুমি কখনোই ঐ বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবে না। মনে রাখবে তুমি যে বিষয়টা নির্বাচন করবে সেটা নিয়েই তোমাকে সারাজীবন থাকতে হবে।
নিজেকে গড়ে তোলো, নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দাও, নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখো, বিষয় নির্বাচনে দৃঢ়তা দেখাও।

মনে রাখবে ইঞ্জিনিয়ারিং দুর্বল মানুষের জন্য নয়। সেই সফল হবে যে কষ্ট করতে পারবে, শ্রম দিতে পারবে।

নব্য ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের স্বাগতম।

মোঃ মাইন উদ্দিন
EEE17, CUET

 

All Post About EEE

CUET Review