আপনি এখন এই পোস্টটি পড়তে ব্যবহার করছেন স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ। সাথে আছে ইন্টারনেট যা আসছে মোবাইল অপারেটর অথবা অপটিকাল ফাইবার ব্রডব্যান্ড থেকে। মাথার উপরে ঘুরছে ফ্যান। রুমে জ্বলছে লাইট। বাসায় আছে একটি কনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই। এক কথায় আপনি যে জিনিসের সমুদ্রে ডুবে আছেন তার নাম ইলেকট্রিসিটি এবং ইলেকট্রনিক্স। একবিংশ শতাব্দীর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনের গতি যেভাবে আপনার জীবনে প্রভাব ফেলে সেভাবেই প্রভাব ফেলে এই গতির নিয়ন্ত্রক ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়াররা !

এখন আসি আসল কথায়। ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সংক্ষেপে EEE হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্যতম প্রধান শাখা যা প্রধানত আলোচনা করে Flow of Electron কে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে আরো সহজ করার ক্ষেত্রে। এর সাবডিসিপ্লান চারটিঃ POWER, TELECOMMUNICATION, ELECTRONICS, COMPUTER. আরেকটু বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে এটি যেই এরিয়াগুলো কাভার করে সেগুলো হচ্ছেঃ

Electronics

 

Software

Hardware

Signal Processing

Communications

Computer Engineering

Power Electronics

 

Power System Engineering (including Renewable Energy)

Nanotechnology

Biomedical Imaging

Embedded Systems

Control Systems

 

EEE তে বিএসসি ডিগ্রী থাকলে আপনি উপরের যেকোনো এরিয়া নিয়ে আপনার ক্যারিয়ার সাজিয়ে নিতে পারবেন।

 

Power sector কাজ করে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন, ডিস্ট্রিবিউশন, সেফটি এবং এই সম্পর্কিত মেশিন (মোটর, জেনারেটোর, ট্রান্সফরমার) এগুলো তৈরী এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। এই সেক্টরের জব সাধারণত পাওয়ার প্লান্ট,ইলেক্ট্রিকাল স্টেশন,সাব-স্টেশন,সরকারী ও আধা সরকারী বিভিন্ন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড, পল্লী বিদ্যূৎ ইত্যাদিতে। এছাড়া ইলেক্ট্রিকাল মেশিন তৈরীকারী কিছু বেসরকারী কোম্পানিও রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সেক্টরেই ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা সবচাইতে বেশি।

 

Electronics এর বেপারটা আমরা মোটামুটি প্রায় সবাই জানি।ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইস তৈরীই প্রধানত এর কাজ। Microcontroller নিয়ে এই অংশে বিস্তারিত আলচনা করা হয়।যার উপরেই সব ভিত্তি করে মডার্ন ডিভাইস গুলো তৈরী। পুরো বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা খুব বেশী।এই সেক্টরে গবেষনার জায়গাটাও ব্যাপক। রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে চাইলে এবং বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দিতে চাইলে এই সেক্টরটি আপনার জন্যে পারফেক্ট।

 

Telecommunication এর মধ্যে যেই জিনিসগুলো প্রধানত রয়েছে সেগুলো হচ্ছে RADIO AND TELEVISION ENGINEERING, OPTICAL FIBER COMMUNICATION, MICROWAVE AND SATELLITE COMMUNICATION, MOBILE CELLULAR COMMUNICATION, MULTI MEDIA COMMUNICATIONS. মোবাইল ফোন কোম্পানিতে মাঝের কয়েক বছর ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের বিশাল চাহিদা ছিলো। আমাদের মত দেশে নতুন নতুন নেটওয়ার্ক, টাওয়ার, কভারেজ তৈরিসহ সমগ্র সিস্টেম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছে বিপুল সংখ্যক ইইই ইঞ্জিনিয়ার।

 

Computer এর জায়গাটা যে কতটা বড় সেটা মনে হয় আলাদা ভাবে বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার এবং এদের মধ্যে কানেকশন এই তিন জায়গাতেই এর রাজত্ব। প্রশ্ন থাকে যে EEE পড়ে প্রোগ্রামার হওয়া যাবে কিনা।হ্যা অনায়াসেই যাবে। কিন্তু সেজন্য প্রোগ্রামিং কে ভালবাসতে হবে আর উদ্যম পরিশ্রমী হতে হবে। এই আর কি! EEE থেকে সফটওয়্যারের দিকে ডাইভার্ট হওয়া যায় সহজেই।

 

এছাড়া আরো অনেক বড় জায়গা এই EEE, একটা সাব্জেক্ট রিভিউতে যাকে নিয়ে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। ইইই তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সার্কিট সল্ভিং, ইকোয়েশন ডেরিভেশন এবং সল্ভিং আর প্রোগ্রামিং। ইন্টারমিডিয়েটে যদি আপনার ফেভারিট বিষয় হয়ে থাকে ম্যাথ অথবা ফিজিক্স তাহলে EEE আপনার জন্যেই। শিখার এবং কাজ করার আগ্রহ এই বিষয় আপনাকে হতাশ করবে না কখোনই।

 

আর চাকরির বাজার টা নিয়ে যদি কিছু বলি তাহলে এটা অন্তত বলতে পারি যদি আপনি আসলেই EEE তে পড়ে কিছু শিখে আসতে পারেন তাহলে আপনাকে বেকার থাকতেই হবে না কখোনই। বাংলাদেশে বর্তমানে এর বাজার খুবই ভাল। গবেষনার ইচ্ছা থাকলেও পুরো বিশ্বে সুযোগ আছে প্রচুর। ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির স্টার্টিং স্যালারী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট সম্মানজনক। এবং এতে উন্নতি করার ভাল সুযোগ থাকে। আপনি কেমন চাকরী পাবেন কি করবেন সেটা পুরোটাই নির্ভর করে আপনি কেমন, কি পারেন এর উপর। সুযোগ আছে, লুফে নেয়ার দায়িত্ব আপনার।

 

সবশেষে আসি কুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগ নিয়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে EEE এর জন্যে অন্যতম সেরা প্লাটফর্ম হচ্ছে কুয়েটের EEE. এই বিভাগে ফ্যাকাল্টি মেম্বার বর্তমানে ৪২ জন, যারা যথেষ্ট মানসম্মত। আর এই বিভাগ যেই ল্যাব ফেসিলিটি গুলো প্রোভাইড করে সেগুলো হচ্ছে :

 

Circuit Lab.

Analog Electronics Lab.

Digital Electronics and Microprocessor Lab.

Electrical Machine Lab.

 

Measurement and Instrumentation Lab.

Communication Engineering Lab.

Power System and High Voltage Lab.

Control, Power Electronics and Machine Drive Lab.

Hardware, Modeling and Simulation Lab.

Consultancy, Research and Testing Service (CRTS) Lab.

Optoelectronics Lab.

 

এক কথায় আন্ডারগ্রাযুয়েট লেভেলে EEE সম্পর্কে শিখার জন্যে যা যা দরকার তার সবকিছুই আছে এই বিভাগে। ল্যাব রিপোর্ট আর সেমিস্টার ফাইনাল টুকু বাদ দিলে ডিপার্টমেন্ট টা বেশিই জোস 😛

ক্যারিয়ার আপনার।সিদ্ধান্ত আপনার। যদি ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়ার ইচ্ছা থাকে তবে স্বাগতম ইলেকট্রনের জগতে 🙂

……………………………………………………………

Abdullah Arafat

Department of Electrical and Electronic Engineering,KUET

2K14 Batch