আরবরা আপনার সাথে যতোই ইয়া হাবিবি ইয়া হাবিবি… করুক না কেন তারা আপনার সাথে কখনোই কোলাকুলি করবেনা।

বাংলাদেশে যেমন বুকে জড়িয়ে চাপাচাপি করা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরবদের মাঝে তেমনটি কখনো আমার চোখে পড়েনি।

আরব দেশ গুলোর ভাষা ও সমাজিকতায় একটি খুব সাধারণ মিল থাকলেও ঐতিহ্য পালনে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সেকথা অন্য একদিন বলবো আশাকরি।

আরব আমিরাতে ঈদের নামাজ শুরু হয় খুব ভোরে, সরকার সময় নির্ধারণ করে দেয় এবং ঠিক ঐ সময়েই সারা দেশে একযোগে জামাত শুরু হয়।

সূর্যোদয়ের ২৩-৩০ মিনিটের মধ্যেই সাধারণত ঈদের জামাত শুরু হয়। সারা দেশের ঈদগাঁ ময়দান গুলো একই নকশার সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকে।

তারই ভিতরে এককোণে মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, তার প্রবেশ পথও আলাদা।

মিম্বরের অংশটুকু ছাড়া ময়দান গুলো ছাদ বিহীন উন্মুক্ত, সামনে বা পিছনে থাকে বিস্তৃত গাড়ি রাখার জায়গা।

ঈদগাঁ ময়দান গুলোরও মসজিদের মতো নিদিষ্ট পরিচিতি নম্বর রয়েছে। সে নম্বর থেকেই কর্তৃপক্ষ অফিসে বসে বুঝতে পারেন ময়দানের বিস্তারিত তথ্য।

অধিকাংশ বড় মসজিদ গুলোতেও ঈদের জামাত হয়।

ফজরের পর থেকেই ঈদগাঁ ময়দান ও মসজিদের উচ্চ শব্দ যন্ত্রে (mike) তাকবির চলতে থাকে।

একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা থেকে বড়দের পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কন্ঠে ভেসে আসতে থাকে আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি।

জামাতের সময় হলে ইমাম প্রবেশ করে ৬-৬ তাকবীরে নামাজ শুরু করে দেন এবং সরকার নির্ধারিত খুতবা পাঠ করেন। খুতবা গুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে রেকর্ড করা হয়।

আরবদের ঈদের নামাজ
নামাজ শেষে অনেকেই ইমামের সাথে করমর্দন করে থাকেন। এসময় সম্ভ্রান্ত আরবরা কেউ কেউ মুষ্টিবদ্ধ দিরহাম গুঁজে দিয়ে দ্রুত সরে পড়েন।

ফটকের আশেপাশে অনেক দরিদ্র ব্যাক্তি ও নির্দিষ্ট পোশাক পড়া (uniform) মসজিদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরও মাঝেও তাদের দান করতে দেখা যায়।

সেলিম নামের টাঙ্গাইলের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে একবার কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি হয়েছে ভাই?
ঃ চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো– দুই বৎসরের বেতনের চেয়েও বেশি বকশিস পেয়েছি! এক আরবি আমার সাথে করমর্দনের ভিতরে দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে চলে গেছে…

ঈদুল আদহা’র নামাজের আগে থেকেই জবাই খানাগুলোতে পশু জবাই শুরু হয়। জবাইখানা ব্যতিত পশু জবাই করা সারা বছরই মামনুহ্ (নিষেধ)।

এদেশের আরবরা আইনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল, তথাপি ঈদের দিন অনেকেই বাড়ীর ভিতরে গোশত খাওয়ার নিমিত্তে ছোট ছোট ছাগল ভেড়া দুম্বা জবাই করে থাকে।

তবে বিদেশিরা এক্ষেত্রে বেশি আইন ভঙ্গ করে, বাংলাদেশ পাকিস্তান ও মিসরীয়রা এ ব্যাপারে রাকাম ওয়াহেদ! মানে “number one।

আরবদের অনেকে তাদের কোরবানির পশু (উট বা দুম্বা) তারা নিজ চোখে দেখেও না। অনেকে আবার অনলাইনে কুরবানি নির্ধারণ (booking) করে রাখে।

রয়েছে drive through জবাইখানা, এজন্য অবশ্য Google play store থেকে নির্ধারিত appication -Zabayeh Al Jazeera ব্যবহার করতে হবে।

তারা মাংস কেটে কুটে দুই ঘন্টার মধ্যে বাসায় পৌছে দিয়ে যাবে। এবিষয়ে কোন ফাঁকি বা ধোঁকাবাজির সুযোগ নেই। আরবের পশুর হাট অংশে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখা হয়েছে।

ঈদের দিনে আরবদের ঘরেও রকমারি খাবার তৈরি হয়। বিভিন্ন রকমের বাদামকুঁচিতে ভরপুর অতি সুমিষ্ট একধরণের হালওয়া (হালুয়া) এখানে খুবই প্রচলিত মিষ্টান্ন, এগুলো চকোলেটের দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়। তাছাড়া সেমাইও তৈরি হয়।

কুরবানির ঈদে তারা মাংস ঝলসে খেতে খুবই পছন্দ করে। এদের ঝলসানো পদ্ধতিটিও দারুন!
বাড়ীর এক কোণে পাঁচ ছয় ফুট গভীর সিমেন্ট বা লৌহপাত নির্মিত একটি স্থায়ী গর্ত করে নেয়।

দেখতে বড় তেলের ড্রামের মতো। সেটার ভিতরে কাঠ পুড়িয়ে অগ্নিকুন্ডলি তৈরি করা হয়। আগুন জ্বলা শেষ হলে চামড়া ছুলে রাখা ছাগল ভেড়ার গায়ে সামান্য লবণ আর জায়তুন তেল মেখে লোহার শিকে গেঁথে আস্ত ঝুলিয়ে দেয়।

তারপর ঢাকনা বন্ধ করে উপরে বালি মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। ঘন্টা দেড়েক পরে তুলে স্বপরিবারে পরিবেশন করা হয়, বিশেষ করে পুরুষদের বেলায়।

মহিলাদের জন্য আলাদা পরিবেশিত হয়। ভাইয়ের বৌ অর্থাৎ ভাবিদেরকে তো অনেকে একবাড়ীতে থেকেও কখনো চোখে দেখেনা! এমনকি অন্য কোথাও দেখলে তারা চিনতেও পারেনা!

ঈদের আগের দিন আরবরা তাদের ভাই বোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বাড়ীতে ফলের ঝুড়ি, হালুয়া,খেজুর, মধু মিশ্রিত বাদামকুঁচির বইয়াম ইত্যাদি পাঠিয়ে থাকে।

রমাদান মাস শুরুর মাস খানেক আগে থেকেই শহরগুলোর প্রধান প্রধান সড়ক, নগর চত্বর গুলোতে আলোকসজ্জার কাজ শুরু হয়ে যায়।

আলোকসজ্জা গুলোতে মূলত ইসলামি ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। প্রতিবছর এসব নকশায় ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সড়ক ও মহাসড়ক গুলোর খেজুর গাছগুলোকেও আলোকমালা পড়ানো হয়।

বৈদ্যুতিক খুঁটি গুলোতে স্থায়ী ভাবে যুক্ত করা দন্ডে জাতীয় পতাকা লাগানো হয় পুরো শহর জুড়ে। কখনো কখনো শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে আতশবাজি ফোটানো হয়।

আতশবাজি গুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে ‘খেজুর গাছ’ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

বড়বড় বিপনি বিতান (shoping mall) গুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোন কেনাকাটা চোখে পড়েনা। এখানে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু বিপনি বিতান আর তাই সারা বছরই বাংলাদেশের ঈদের বাজারের মতো ভিড় চোখে পড়ে।

তবে এগুলোতে ঈদ উপলক্ষে মূল্যছাড় দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সবার জন্য উন্মুক্ত এসব অনুষ্ঠানে মূলত ইউরোপ থেকে আসা শিল্পীগোষ্ঠি বর্ণিল পোশাকে নাচ গান করে থাকে।

শিশুদের জন্য শিশুতোষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Al Ayala

Al Ayala

আরব-আমিরাতের তথা উপসাগরীয় আরবদেশ গুলোর ঐতিহ্যবাহী এবং জাতীয় নাচ হলো আয়ালা নৃত্য (Al Ayala), এটাকে অনেকে লাঠি নৃত্যও বলে থাকে, তবে দেশ ভেদে নামে ভিন্নতা আছে।

ঈদ ও জাতীয় দিবসে তারা দলবদ্ধ হয়ে আয়ালা নৃত্য করে থাকে। দশ থেকে পঞ্চাশ জনের একটি দল কান্দুরা গায়ে (সাদা আরবীয় পোশাক) হাতে বেতের চিকন ছড়ি নিয়ে মৃদু হেলে দুলে গান গায়।

গানগুলো ঐতিহ্যগত লোকগীতির মতো ফলে অনারবদের এর মর্ম বুঝা খুবই কঠিন।

আরবদের ঈদ

সবাই কাঁধের সাথে কাঁধ লাগিয়ে হাতে হাত ধরে কাতারবদ্ধ ভাবে নাচে আর এক বা দুজন দফ্ অথবা ঢোল বাজিয়ে তাল রক্ষা করে, কখনো কখনো দুই তিন জনকে সামনে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

দুই সারিতে ভাগ হয়ে এধরনের নাচকে বলা হয় হারবিয়া (Harbiya) নৃত্য। এক্ষেত্রে পিছনের সারির সবার হাতে থাকে বন্দুক এবং তারা প্রথম সারির চেয়ে বয়সে কম হন। গ্রীক ও তুর্কির দেবকা নাচের সাথে আয়ালা নাচের বহুলাংশে মিল রয়েছে। তবে দেবকা’র মতো নারী- পুরুষের মিশ্রণ নেই।

ছোটদের এবং মহিলাদের ও আয়ালা- হারবিয়া নাচ হয়, ছোট মেয়েরা খুবই রঙ্গীন চকমকে এবং মেক্সি’র মতো পোশাক পরিধান করে।

তবে সাধারণত নয় দশ বছর বয়স হলেই মেয়েরা আর বাহিরে (outdoor) নৃত্য পরিবেশন করেনা।

পারস্য উপসাগরীয় আরবরা ই পৃথিবীর একমাত্র জাতিসত্তা যাদের পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী পোশাকের কোন পরিবর্তন হয়না।

বিদ্যালয়ে, মসজিদে, বেড়াতে, স্টেডিয়ামে, নিজের বিয়েতে, কার্যালয়ে, বিদেশ ভ্রমণে, জাতিসংঘে কিংবা ঈদ সহ সকল উৎসবে তাদের একই ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোশাক পরিধান করে।

সাদা ধবধবে কান্দুরা আর ভিতরে সাদা লুঙ্গি। কান্দুরার কাপড়গুলো তাদের জাপানি পছন্দ হলেও লুঙ্গির বেলায় বাংলাদেশী হওয়া চাই।

সাদা সুতি লুঙ্গি গুলোর ৯৫ শতাংশই আসে বাংলাদেশ থেকে। তবে বর্তমানে লুঙ্গির বাজারে হানা দিয়েছে চীন!

তারা সেলাই বিহীন থেকে এক ধাপ এগিয়ে কোমড়ে রাবার যুক্ত করে নতুন ধরনের লুঙ্গি ছেড়েছে এবং এটি আরবদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

বিষয়টি বাংলাদেশের লুঙ্গি রপ্তানিকারকদের ভেবে দেখা উচিত।

এখানে ঈদের দিনেও একজন আরেক জনের বাড়ীতে প্রবেশ করেনা। বন্ধু বান্ধব বা প্রতিবেশীদের সাথে যে সুসম্পর্ক বজায় রাখেনা তা নয়।

তাদের আবাসিক এলাকা গুলোতে বিশেষ করে ছুটির দিনের আসর ও মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে তাদের মিলনমেলা চলতে থাকে। ঈদের দিনেও তাই।

রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে করমর্দনের পর বুক মিলায় (কোলাকোলির মতো) আর কোলাকোলির পর শুধু নিকটাত্মীয়দের গালে চুমু খায় এবং চাচা মামা চাচাতো ভাই আপন ভাই তাদের নাকের সাথে নাক মিলায়।

এমনও দেখা যায় দুই ভাই একই সাথে ঘর থেকে বের হয়ে নামাজে এসেছে। নামাজ শেষ করে এক ভাই আরেক ভাইকে জিজ্ঞেস করছে – কেইফ হাল আঁখি (আখুঁই)!

মানে কেমন আছো ভাই– তারপর নাক ডলাডলি, মনে হয় যেন মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজে পেয়েছে।

আরবদের কাছে বাবা ও আপন ভাইদের পর সবচেয়ে সন্মানিত ব্যাক্তিরা হলেন চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা, মহিলারাও।

চাচার সাথে দিনে দশবার দেখা হলেও জিজ্ঞেস করবে- চাচা কেমন আছেন! আরবরা বাড়ীর সবার মতো সবচেয়ে বয়ষ্ক লোককে যথেষ্ট সন্মান করে এবং খোঁজ খবর নেয়।

বাড়ীতে প্রবেশ করে তার খাওয়া দাওয়া এবং অন্যান্য বিষয়ের খবর নেওয়া তাদের সংস্কৃতির অংশ।

আপনি আরবদের জন্য মনের কোণে যতোই বিষ জমা করে রাখুন না কেন এখানে (ইউএই) আসলে আপনি আরবদের প্রেমে পড়বেনই।

প্রথমেই আপনার ভালো লাগবে এখানে জীবনের নিরাপত্তা পেয়ে। তাদের ঐতিহ্য ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করবে। জি, এখানে অমায়িক যতো আরব আছে তাদের মাঝে দুএকটি যে ‘সজারু’ নেই তেমনটি নয়।

আসলে পৃথিবীর কোন জাতিই ধোঁয়া তুলসি পাতা নয়, তবে তাদের জন্য ‘সোরতা’ (পুলিশ) ই যথেষ্ট।

ঈদের দিন বা ঈদের ছুটিতে ইসলামিক কেন্দ্র গুলোতে শুধুমাত্র অমুসলিম পর্যটকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

সেখানে আসা নারী পুরুষ যাদের ইসলাম ধর্ম সমন্ধে কোন ভালো ধারণা নেই তাদের কে ইসলাম সমন্ধে বিস্তারিত বুঝানো হয়, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়, তাদের ভুল ভাঙ্গানো হয়, তাদের সামনে নামাজ পড়ে দেখানো হয়, হিজাব পড়া ও এর গুরুত্ব ইত্যাদি অনেক কিছুই আলোচনা করা হয়।

তাদেরকে বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়– তারা ফিরে যান চমৎকৃত হয়ে, ইসলামে মুগ্ধ হয়ে।

সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতটি হয় শেখ জায়েদ গ্রান্ড মসজিদে।

সেদিন যতোজন মুসল্লি সমাগত হন ঈদের নামাজ পড়তে তার প্রায় অর্ধেকের সমান অমুসলিমরা আসেন “ঈদের নামাজ” দেখতে! আর মসজিদটিও বড়োই মনোমুগ্ধকর!

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঈদের ছুটি দুই রকম- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী!

কথা এখানে নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ওয়াতিনি মানে এদেশের নাগরিকরা বিদেশিদের তুলনায় একটু বেশি ছুটি পেয়ে থাকেন। এখানে ঈদের ছুটি সাধারণত তিনদিন।

আগের দিন ঈদের দিন ও পরের দিন। তবে শুক্র শনি এর মাঝে থাকলে ছুটি বর্ধিত করা হয়।

অন্যান্য ছুটির দিন যেমন নবী সাঃ এর সম্ভাব্য জন্মদিন, মিরাজ ইত্যাদি দিনগুলো যদি বুধবার বা সোমবার পড়ে কখনো তাহলে সেগুলোকে বৃহস্পতি ও রবিবার করে দেওয়া হয়।

এতে টানা তিন দিন বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যালয় গুলোতে সরকারি ছুটির সাথে সমন্বয় করে ছুটি দেওয়া হয় যাতে তারা পরিবারের সাথে বেশি সময় উপভোগ করতে পারে।

ঈদের আগে কিংবা পরে এখানে আইনশৃঙ্খলার কোন ব্যাতিক্রম চোখে পড়েনা। রাস্তা গুলো ফাঁকা হলেও গাড়ী গুলো নির্দিষ্ট নিয়মেই চলে।

দু’একজন আরব কিশোর উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে গাড়ি চালালেও পুলিশকে ধাওয়া করতে দেখা যায়।

একবার কোন এক রোজার ঈদের দিন বিকেলে আল আইন সিটির সানাইয়া এলাকায় একজন পুলিশ কয়েকজন পাকিস্তানিকে জরিমানা করতেছিলেন।

তারা একটি গলিপথ (প্রধান সড়কের বাইরের পথ) জেব্রা দাগের বাইরে দিয়ে পারাপার হচ্ছিলো। হঠাৎ একটি গাড়ী সেখানে এসে দাড়ালো।

ষাটোর্ধ একজন আরব মহিলা জানালার কাঁচ নামিয়ে বললেন – সু মুশকিলা?
ঃ আমাদের কে মুখালফা দিতেছে!
মহিলা গাড়ী থেকে নেমে পুলিশকে বললেন, ইনতা ইনসান ওয়ালা মাফি? (তুমি কি মানুষ না?)

পুলিশ ব্যাক্তিটি কিছু একটা বলছিলেন..
মহিলা আঙ্গুল উচিয়ে কর্কশ ভাষায় কিছু বললেন, তারপর বললেন– রোহ্, আনা কালাম রোহ্…( যাও, আমি বলছি যাও…)

পুলিশ লোকটি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন!

…আপনাদেরকে আমি এজন্যই বারবার সাবধান করতেছি, আরব আমিরাতে এসে কেউ ভুলেও কোন চাচীর সাথে কখনো তর্কে জড়াবেন না!

আপনাকে যদি বলে – ইনতা জামাল! (তুই একটা উট!)

বলুন, আইওয়া মামা, আনা জামাল! ( হ্যাঁ মা, আমি উট!) তারপর সরে পড়ুন…, এটাই সবচেয়ে ভালো। কেননা আপনার তেরো গোষ্ঠীর সবাইকে নিয়ে আসলেও আপনি জিততে পারবেন না!

এদেশে বেসরকারি কোম্পানি গুলোতে ঈদ বা অন্যকোন উৎসবের বোনাস দেওয়া হয়না। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর কোনটিতে কখনো কখনো বোনাস দেওয়া হয়।

আমাদের কোম্পানি থেকে আগে সামান্য নগদ অর্থ ও ছাগল দেওয়া হতো তবে বর্তমানে এই প্রথা বন্ধ আছে।

তার জন্যে কি আমাদের ঈদ বন্ধ থাকে… ঈদ চলে আপন গতিতে। বাংলাদেশ থেকে আনা পাঞ্জাবি গায়ে ঈদের নামাজ পড়ার আনন্দই অন্য রকম। তবুও মনটা আমার পড়ে থাকে সেই পাড়া গাঁয়ে, সেই শৈশবে….

মাসুদ আলম
ইউএই