ইলন মাস্ক একজন উদ্যোগক্তা, বিলিয়নিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার, জিনিয়াস, সুপার হিরো (অথবা সুপার ভিলেন!?)।

লোকটাকে একটু বেশিই ভালোবাসি।

তাই এই অবসর টাইমেও তাকে নিয়ে না লেখলে নিজেকে অপরাধিই মনে হতো। দয়া করে বিশাল লেখাটির পুরোটুকু পড়বেন! কথা দিচ্ছি লেখাটি অনেক ইনফরমেটিভ হবে।

নিচে তার সাবেক এবং বর্তমান কোম্পানিগুলোর ছোট বর্ননা দেওয়া হলো :

Blaster

মাত্র ১২ বছর বয়সেই ইলন Blaster নামে একটি গেম ডেভেলপ করে যা একটি ম্যাগাজিনে সেটির সোর্স কোড বিক্রি করে ৫০০ ডলার আয় করে!

Zip2

Zip2 একটি সফটওয়্যার কোম্পানি যেটি মাস্ক ও তার ভাই মিলে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করে।যার মূল উদ্দেশ্য ছিল লোকাল খবরের কাগজ ইন্ডাস্ট্রির গাইডলাইন হিসেবে কাজ করা।পরবর্তীতে এটি ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে ইলন তার ৭% শেয়ারের ২২ মিলিয়ন ডলার ইনকাম করে।

PayPal

ইলন তার ভাগের ২২ মিলিয়ন দিয়ে X. Com নামে একটি অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিস খোলে যেটি পরবর্তীতে PayPal নামকরণ করা হয়।চিন্তা করা যায় অনলাইন ব্যাংকিং এর সূচনাতেও ইলনের এতো ভূমিকা ছিল।সেই সময় PayPal এর সাথে যুক্ত ছিল তারা অনেকেই আজ বিলিয়নিয়ার। (তাই অনেক সময় এদের PayPal মাফিয়া ও বলা হয়!) PayPal পরবর্তীতে ebay এর কাছে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে ইলন তার ভাগের ১৮০ মিলিয়ন ডলার ইনকাম করে!

ইলন মাস্কের সবচেয়ে বড় দুটি কোম্পানি হলো SpaceX এবং TESLA. দুটি কোম্পানিই মানবসভ্যতাকে আরো একধাপ আগায় নিতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আজ আমরা এই দুটি কোম্পানিকেই বেশি ফোকাস করবো!

SpaceX

ছোটবেলায় সাইন্স ফিকশন বই পড়ে অনেকে কতো স্বপ্নই না দেখেছি! সেই স্বপ্ন বাস্তব করতেই হয়তো SpaceX এর প্রতিষ্ঠা। NASA কে মঙ্গলে কলোনাইজ করতে আকৃষ্ট করতে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে চায় ইলন। যার বাজেট মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার। আর তার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় কার্গো স্পেসে পাঠানো। কিন্তু সে সময় NASA এর মাধ্যমে কার্গো পাঠাতেই ৩০ মিলিয়ন এর বেশি ডলার দরকার। তাই সস্তাভাবে পাঠাতে ইলন তার বন্ধুর সাথে রাশিয়া যায় পুরনো কিছু ব্যলাস্টিক মিসাইল কিনতে। কিন্তু সেটার দামও মূল বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। সেই সময় মাস্ক লক্ষ্য করে একটা রকেটের যে দাম তার মাত্র ৩% RAW ম্যাটারিয়াল খরচ। তাই সে নিজেই রকেট বানানোর কথা ভাবলেন(স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হিমুলিয়েট ও হয়েছিল প্রথম প্রাইভেট ভাবে রকেট কিনতে যাওয়ার জন্য)। এখান থেকেই ২০০২ সালে জন্ম হয় SpaceX এর।যেটি বিশ্বে সর্বপ্রথম প্রাইভেট স্পেস কোম্পানি।একটা ফান ফ্যাক্ট যে SpaceX প্রতিষ্ঠার সময় ইলনের রকেট সাইন্স নিয়ে তেমন ধারণাই ছিল না।প্রচুর প্রচুর স্পেস রিলেটেড বই পড়ে SpaceX প্রতিষ্ঠা করে। যেটির নিজেই চিফ ডিজাইনার!!(কতটা জিনিয়াস হলে সম্ভব)
SpaceX এর অনেক অর্জনের মধ্যে অন্যতম হয়তো স্পেস এক্সপ্লোরেশন রেস নতুন করে জীবিত করা। যেটি এপোলো মিশনের (চাঁদে অবতরণ) পর আস্তে আস্তে যেটা স্তিমিত হয়েই যাচ্ছিল। SpaceX এর মতো এখন অনেক কোম্পানিই এখন স্পেস এক্সপ্লোরেশন রেসে সামিল হচ্ছে যেমন জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন, রকেট ল্যাব ইত্যাদি।
SpaceX এ পর্যন্ত ৩ টি রকেট ডেভেলপ করেছে
Falcon 1
Falcon 9
Falcon Heavy
এবং Starship যেটা আন্ডার ডেভেলপমেন্টে আছে(একটু পরেই আসতেছি)
Falcon Heavy হলো বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে পাওয়ারফুল অপারেশনাল রকেট।
যার মধ্যে falcon 9 এবং Falcon heavy দুটিই বিশ্বে প্রথম এবং একমাত্র রিইউজেবল রকেট!
SpaceX এর পূর্বে যতো রকেট ছিল সব রকেট ই ওয়ান টাইম অর্থাৎ মিশন শেষে রকেট গুলো পৃথিবীতে ফেরার পথে বায়ুমন্ডলেই ধংস হয়ে যেতো। ফলে রকেট লঞ্চ কস্ট ও অনেক হতো।(চিন্তা করুন একটা বিমান একবার উড়লেই ধংস হলে ফ্লাইট কতো কস্টলি হতো!)
মজার ব্যপার NASA সহ অন্য স্পেস এজেন্সিও কখনো বিশ্বাস করে নি বর্তমান টেকনোলজিতে রকেট রিইউজ কখনো সম্ভব।তাদের ভুল প্রমান করে ২০১৫ সালে মাটিতে এবং ২০১৬ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে ড্রোনশীপে ৭০ মিটার বুস্টার (প্রায় ২৫ তলা বিল্ডিং উঁচু) ল্যান্ডিং করায় SpaceX. এগুলা ল্যান্ডিং দেখতেও অনেক সময় চোখের কোণে পানি চলে আসে।(প্রথমবারের মতো মাটিতে ল্যান্ডিং ভিডিও https://youtu.be/brE21SBO2j8
এবং মহাসাগরে ল্যান্ডিং ভিডিও https://youtu.be/sYmQQn_ZSys)

* আমদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও কিন্তু SpaceX ই লঞ্চ করেছিল।

Never give up বাক্যটি হয়তো SpaceX এর সাথেই বেশি মানায়। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালের মধ্যেই একটা অপারেশনাল রকেট বানানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তারপরেই আসে শুধু ব্যার্থতা আর ব্যার্থতা। বেশ কয়েকটি রকেট লঞ্চ করা হলেও সবগুলোই অসফল হতে থাকে এবং ইলনের টাকাও শেষের দিকে আসতে থাকে।২০০৮ সাল পর্যন্ত TESLA এবং SpaceX উভয়েরই কোনো ওয়ার্কিং প্রোডাক্ট ছিল না অর্থাৎ এতোদিন ধরে ইলনের জমানো টাকা খরচ করতে করতে টাকা শেষের দিকে।তখন ইলনের হাতে দুটি কোম্পানির যেকোনো একটি বাঁচানোর অপশন ছিল।ইলনের কাছে যে টাকা ছিল তা দিয়ে একটি রকেট ই লঞ্চ সম্ভব এবং সেটি সফল হলেই চলবে না সেটি বিক্রি ও হতে হবে। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে প্রথম Falcon 1 সফল হয়। অনেকটা মিরাকলের মতো ব্যংকক্রাপ্ট হওয়ার ঠিক আগে SpaceX NASA এর সাথে একটা হিউজ ১.৫ বিলিয়ন(!) ডলারের ডিল সাইন করে ISS (International Space Station) এ কার্গো পাঠানোর জন্য।এভাবেই দুটি কোম্পানিকেই সেভ করা সম্ভব হয়।

মানুষকে মাল্টিপ্লানেটরি স্পিসিস হিসেবে গড়ে তোলা SpaceX এর আল্টিমেট গোল। যার প্রথম ধাপ মঙ্গলে কলোনাইজ করা।যদিও এই স্বপ্নের অনেক কাছাকাছি চলেও এসেছে। SpaceX এর বর্তমান টাইমলাইন হলো ২০২২ সালে মঙ্গলে মানুষের বসবাসের উপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্গো পাঠানো এবং ২০২৪ সালে মানুষ পাঠানো।

যদিও Falcon Heavy পৃথিবীর সবচেয়ে পাওয়ারফুল পার্শিয়াল রিউজেবল অপারেশনাল রকেট তারপরও মঙ্গলে যেতে হলে আরও আধুনিক, বড় এবং ফুল রিইউজেবল রকেট দরকার যার পৃথিবীতে ফেরার পথের জ্বালানি মঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করতে হবে।

আর সেটার জন্যই Starship আন্ডার ডেভেলপমেন্ট এ আছে।

যেটিতে ব্যাবহার করা হবে Raptor ফুল ফ্লো মিথেইন ফুয়েলড ইঞ্জিন(Falcon 9 এবং Falcon Heavy তে ব্যাবহার করা হয় Merlin 1D ইঞ্জিন। সেটিও অনেক রেকর্ড ধারণ করে যদিও)। অর্থাৎ মিথেইন মঙ্গলেই উৎপাদন সম্ভব।যেমন স্পিডে Starship ডেভেলপমেন্ট আগাচ্ছে হয়তো এই বছরের শেষ হওয়ার আগেই আমারা ফুল ফাংশনাল Starship পেতে পারি! বর্তমানে প্রায় দুই সপ্তাহে একটি Starship প্রোটোটাইপ বানানো হচ্ছে। এখন SN4 (৪ নং) প্রোটোটাইপ (মোট প্রায় ২০ টি প্রোটোটাইপ বানানোর মাধ্যমে ফুল ফাংশনাল Starship তৈরি হবে)টেস্ট করা হচ্ছে। গতো ২৬/২৭ তারিখে ক্রায়ো প্রেসার টেস্ট সফল হয়েছে এবং আগামী ১/২ মে একটা Raptor ইঞ্জিন দিয়ে স্ট্যাটিক ফায়ার দেওয়া হবে এবং ভাগ্য ভালো থাকলে SN4 এ ই ১৫০ মিটার হপ টেস্ট ও দেখতে পারি!

( যারা স্টারশিপ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আগ্রহী তারা এখানে লাইভ https://youtu.be/0i_JaexmP4Q
এবং কিছু চ্যানেল বিশ্লেষণ সহ উইকলি আপডেট দেয় যেমন: https://www.youtube.com/user/ZSSolomon
স্পেস বা রকেট রিলেটেড অনেক বিশ্লেষণধর্মী একটি চ্যানেল হলো Everyday Astronaut
https://www.youtube.com/channel/UC6uKrU_WqJ1R2HMTY3LIx5Q)

Starlink

Starlink হলো SpaceX এর একটি সাইড প্রজেক্ট যার উদ্দেশ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের প্রতিটি কোনায় হাই স্পিড লো লেটেন্সি ইন্টারনেট প্রভাইড করা।

বর্তমানেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব কিন্তু প্রবলেম হলো স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে অনেক উচুতে থাকায় ডাটা পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে আবার সেখান থেকে পৃথিবীতে আসতে অনেক টাইম নেয়(হাই লেটেন্সি)।ফলে অনেকটাই ব্যাবহার অযোগ্য হয়ে পরে। তবে Starlink স্যাটেলাইটের বিশেষত্ব হলো এগুলা পৃথিবীর অনেক কাছে থাকবে (খালি চোখেও অনেক সময় দেখা যায় https://youtu.be/pgysWWwESfU) ফলে ডাটা ট্রাভেল টাইম ও অনেক কম হবে (লো লেটেন্সি)।

কিন্তু কাছে থাকার প্রবলেম হলো পুরো পৃথিবী কভার করতে অনেক অনেক স্যাটেলাইট দরকার। (আর এখানেই SpaceX অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারন তারাই সবচেয়ে কম খরচে অনেক বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে পারে!)।প্রথমধাপে মোট ১২ হাজার স্যাটেলাইট অরবিটালে দেওয়ার কথা যার মধ্যে গতো ২২ এপ্রিলের লঞ্চকৃত ৬০ টি স্যাটেলাইটসহ মোট ৪২০ টি স্যাটেলাইট অরবিটালে আছে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাইভেট ভাবে নর্থ আমেরিকা এবং কানাডায় পরিক্ষা করা হবে এবং ছয় মাসের মধ্যে পাবলিকভাবে।বিলিভ মি Starlink যদি সফল হয় তবে বর্তমান পুরো ইন্টারনেট ব্যাবস্থাই (ফাইবার অপটিকস) চ্যালেঞ্জের মুখে পরবে।

SpaceX যেহেতু প্রাইভেট ফান্ডেড কোম্পানি তাই মঙ্গল কলোনাইজ মিশন বাচায় রাখতে যে অর্থের দরকার তা অনেকটা Starlink ই প্রোভাইড করবে।

TESLA

ইলনের ভিশন অনেকটা এমন যে প্লান A হলো পৃথিবীকে বাচানো ( যার জন্য টেসলা)। আর প্লান B হলো পৃথিবীর কিছু হলে বিকল্প হিসেবে মানুষকে অন্য প্লানেটে স্থানান্তর (যার জন্য SpaceX). অর্থাৎ টেসলা এর উদ্দেশ্য হলো বিশ্বকে ফসিল ফুয়েল ডিপেনডেন্সি কমিয়ে সাস্টেইনেবল এনার্জি ডিপেনন্ডেন্সি করা। যার জন্য টেসলা একাধারে ইলেকট্রিক গাড়ি , সোলার প্যানেল, সোলার রুফ,পাওয়ার ওয়াল, গ্রিড মেগা প্যাক নির্মাতা।

হয়তো ইতিমধ্যে সবাই টেসলা নাম শুনেছি কারন বর্তমানে কার ইন্ডাস্ট্রিতে টেসলা ওয়াইল্ডলি পপুলার এবং বিশ্বের দ্বিতীয় (প্রথম টয়োটা) ভেলুয়েবল কার কোম্পানি। ২০০৮ সালে প্রথম ইলেকট্রিক স্পোর্টস কার (রোডস্টার) বাজারে নিয়ে আসার মাত্র ১২ বছরের মধ্যে এমন সাকসেসফুল কোম্পানি হওয়ার জন্য হয়তো মোস্ট টেকনোলজিকেল এডভান্সড গাড়ি ই দ্বায়ী!

বর্তমান বিশ্বে quickest প্রডাকশন গাড়ি TESLA MODEL S ( ০-৬০ mph মাত্র ২.৩ সেকেন্ড! যা fastest কার Bugatti Chiron থেকে ০.২ সেকেন্ড কম)

বিশ্বের ৩০% এর ও বেশি কার্বন নির্গত হয় ট্রান্সপোর্ট সেক্টর থেকে। ফলে গাড়িগুলোকে ইমিশন ফ্রী করতেই হতো। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে কম্পিটেটিভ ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে কার ইন্ডাস্ট্রি অন্যতম। এই ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হওয়া সহজ কথা নয়! তার অন্যতম উদাহরণ ই হলো বর্তমানে যতোগুলো নামি-দামি কার ব্র‍্যান্ড দেখা যায় তার প্রায় সবগুলোই শতবর্ষী।আর শুধু টেসলাই ইমিশন ফ্রী গাড়ি বানালে চলবে না পৃথিবীর সব গাড়িকেই ইমিশন ফ্রী হতে হবে।এক্ষেত্রে ইলনের প্লান ছিলো সিম্পল।

এমন কিছু ইলেক্ট্রিক (জিরো ইমিশন) গাড়ি বানানো যা প্রায় সবদিক থেকে ট্রাডিশনাল গ্যাস/পেট্রোল /ডিজেল পাওয়ারড গাড়ি থেকে উত্তম! ফলে মানুষ বেটার কার হিসেবে ইলেক্ট্রিক গাড়ি কিনবে এবং টেসলার সাথে কম্পিট করতে ট্রাডিশনাল অটোমেকারদেরও ইলেকট্রিক গাড়ি বানাতে হবে নয়তো হারিয়ে যাবে।(যেমনটা হারিয়ে গিয়েছে নোকিয়া বা ব্লাকবেরির মতো মাইটি কোম্পানি। বেটার টেকনোলজি (এন্ড্রয়েড বা আইওএস) এডপ্ট না করায়)

টেসলা এর উদ্দেশ্য শুধু যে ইলেকট্রিক গাড়ি বানানো তাই ই না ইলেক্ট্রিসিটিও যেনো রিনিউয়েবল সোর্স থেকে আসে সেটিও নিশ্চিত করা এবং সেটা যেনো মোস্ট ইফিসিয়েন্ট ওয়েতে আসে।যার জন্য টেসলা সোলার প্যানেল তো বিক্রি করেই সাথে সোলার রুফ( কনভেনশনাল রুফের মতোই দেখতে কিন্তু বিদ্যুৎ উতপাদন করতে পারে) এগুলো স্টোরেজের জন্য পাওয়ার ওয়াল, বিশাল আকারে ইলেকট্রিক গ্রিডকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য মেগা প্যাক। এগুলো সবগুলোই এতো সফটওয়্যার নির্ভর যা অনেক স্মার্টলি এবং ইফিসিয়েন্টলি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে!

TESLA এর আরো বড়ো একটি সেক্টর হলো সেল্ফ ড্রাইভিং কার। অনেকে সেল্ফ ড্রাইভিং কারকে মানবজাতির জন্য চাঁদে যাওয়ার মতোই মাইলফলক মনে করে। কারন হয়তো ড্রাইভিং এর মতো জটিল কাজ মেশিন করা মানে মেশিন অনেকটাই মানুষের সমকক্ষ হওয়া!

অনেক কোম্পানিই (গুগল, উবার) সেল্ফ ড্রাইভিং টেকে ইনভেস্ট করছে বাট এর মধ্যে টেসলার সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি এবং সেটাও এক বা দুই বছরের মধ্যেই!
কারণ ইতিমধ্যেই টেসলা কারগুলো হাইওয়েতে অটো স্টেয়ারিং, ব্রেকিং ,একসেলারেট করা,ট্রাফিক লাইট রিকোগনাইজেশন সহ আরো অনেক কিছুই করতে পারে।

আরো মজার ব্যাপার হলো ২০১৯ সালের পর যতোগুলো টেসলা কার বানানো হয়েছে সবগুলো কারই সেল্ফ ড্রাইভিং ক্যাপাবল।অর্থাৎ আস্তে আস্তে সেল্ফ ড্রাইভিং টেক উন্নতি হবে এবং শুধুমাত্র সফটওয়্যার আপডেটর মাধ্যমেই সেগুলো গাড়িতে ইনক্লুড করা হবে।

ফুল সেল্ফ ড্রাইভিং সম্ভব হলে পুরো ট্যাক্সি ইন্ডাস্ট্রি ও বদলে যাবে। টেসলা যাকে রোবোট্যাক্সি বলছে।তখন আপনি কোথাও যেতে চাইলে ড্রাইভারকে আর আপনার কাছে আসতে হবে না গাড়ি নিজেই আপনার কাছে আসবে এবং আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে।এর ফলে আপনি অফিসে থাকবেন এবং আপনার গাড়ি রোবোট্যাক্সির এর মাধ্যমে আপনার জন্য টাকা ইনকাম করবে। তখন ট্যাক্সি ভাড়াও ড্রামাটিক্যালি কমে আসবে।

The Boring Company

আমরা যেমন কোনো সমস্যা ফেস করলে অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করি সেটা সমধানের জন্য। কিন্ত ইলনের জন্য একটু অন্যরকম। সে সমস্যা দেখেলে সেই সমস্যা সমাধানে নিজেই এগিয়ে আসে।ট্রাফিক জ্যাম যেকোনো মেগাসিটির জন্যই মাথাব্যথার বিষয়। আর এই সমস্যা কমানোর লক্ষ্যেই The Boring Company প্রতিষ্ঠা যার কাজ হলো মাটির নিচ দিয়ে রাস্তা বানানো। আইডিয়াটা এমন যে আমাদের প্রচলিত রোড ব্যাবস্থা হলো দ্বিমাত্রিক। যার ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও রাস্তার প্রসস্ত অনেক সময় বাড়ানো সম্ভব হয় না।তাই মাটির নিচ দিয়ে যতো ইচ্ছা রাস্তা বানানো(ত্রিমাত্রিক)। বিষয়টি অনেকটা টানেলের মতো শোনালেও এটা টানেলের চেয়ে বেশ আলাদা, আধুনিক, দ্রুতগামী এবং ইকোনমিক। বর্তমানে লস এঞ্জেলস, ওয়াসিংটন ডিসির মতো শহরে বেশকিছু সফলতা এসেছে।কে জানে একদিন হয়তো বোরিং কোম্পানিই পুরো রোড ব্যাবস্থাই বদলে দিতে পারে!

Neuralink

নিউরোলিংক হলো এমন একটি কোম্পানি যেটি কম্পিউটার এবং মস্তিষ্কের মধ্যে কানেকশন স্থাপন নিয়ে কাজ করে।বর্তমানে আমরা কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি কিবোর্ড, মাউস বা টাচপ্যাডের মাধ্যমে। যেটা আমাদের মস্তিষ্ক বা কম্পিউটার যতো দ্রুত কাজ করে তার থেকে অনেক অনেক স্লো।একবার ভেবে দেখুন তো আপনি যদি শুধু ভাবার মাধ্যমেই কম্পিউটারকে কমান্ড করতে পারছেন তাহলে কতো কাজই না আরো দ্রুত ও সহজভাবে করতে পারতেন! এছাড়াও নিউরোলিংক উদ্দেশ্য হলো ব্রেন টিউমার বা প্যারালাইসিস রোগী সহ অনেক মস্তিষ্ক রিলেটেড সমস্যার চিকিৎসা বের করা!

OpenAI

নিউক্লিয়ার ওয়ার থেকে AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) যে মানবজাতিকে টেকওভার করে নিবে এই ভয়েই ইলন বেশি সংকিত!তাই AI এর ইভিলনেস থেকে বাচতে কিভাবে AI ডেভেলপ হচ্ছে তা অবশ্যই রেগুলেটরি এবং মানুষকে সচেতন করার দরকার আছে। আর এখান থেকেই OpenAI এর প্রতিষ্ঠা।

Hyperloop

হাইপারলুপ হলো ফিউচারিস্টিক দ্রুতগামী ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা।যেটির আইডিয়াও ইলন মাস্কের ই। এই টেকনোলজিকে বাস্তব রূপ দিতেও SpaceX এ টেস্ট ফ্যাসিলিটি আছে। তাছাড়াও বিশ্বের অনেক কোম্পানিই ই টেক কে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে।(নিচের ভিডিও লিংকে বর্তমান হাইপারলুপের অগ্রগতি নিয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে চাইলে দেখতে পারেন https://youtu.be/luDqbIZGgQM)

কিছু আবিষ্কার বা টেকনোলজির উন্নয়ন সমাজ বা সভ্যতাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।যেমন
জেমস ওয়াট এর বাষ্প ইঞ্জিন এর ফলে শিল্প বিপ্লব।
নিকোলা টেসলা/এডিসন এর জন্য বৈদ্যুতিক বিপ্লব।
বিলগেটস/স্টিভ জবস এর জন্য কম্পিউটার বিপ্লব।
তেমনি আমরা ছোট করে দেখবো ইলন তার কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কিভাবে পুরো বিশ্বকে বদলে দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে!

PayPal
-অনলাইন ব্যাংকিং
-অনলাইন কেনাকাটা

SpaceX
-পুরো স্পেস ইন্ডাস্ট্রি (সস্তা রকেট এবং রিইউজিবিলিটি)
-মাল্টি প্লানেটরি স্পিসিস হিসেবে মানুষকে গড়ে তোলা।
-Starlink এর মাধ্যমে পুরো ইন্টারনেট ব্যাবস্থা।
-এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি (Starship এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো দূরত্ব আধা ঘণ্টার মধ্যে গমন)

TESLA
-কার ইন্ডাস্ট্রি
– এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি
-সেল্ফ ড্রাইভিং কার
-কার ডিলারশিপ ইন্ডাস্ট্রি
– কার ইন্সুইরেন্স ইন্ডাস্ট্রি

The Boring Company
-পুরো রোড ব্যাবস্থা

Neuralink
-কম্পিউটার এবং মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন

OpenAI
-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)এর হুমকি থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা

আমি তার ফ্যান হওয়ার জন্য যদিও তার শুধু ভালো দিকগুলোই আলোচনা করলাম কিন্তু সে নিজেও অনেক কন্ট্রোভার্সাল একজন মানুষ। যেমন হরহামেশাই টুইটারে বেফাঁস মন্তব্য করা বা জো রোগ্যান এর শো তে গিয়ে উইড স্মোক করা কিম্বা কোনো কিছু নিয়ে ওভারএস্টিমেট করা।

এতো কিছুর পর মাঝে মাঝে মনে হয় ইলন হয়তো সুপার হিরোই( কিম্বা সুপার ভিলেন?)।
অবশ্য সুপার হিরো মুভি আয়রন ম্যান (টনি স্টার্ক)ক্যারেক্টরটি ইলন মাস্ক থেকেই ইন্সপায়ার্ড।রবার্ট ডাউনি জুনিয়র নিজেই সেটা বলেছেন।এবং আয়রন ম্যান মুভিতে ইলনের একটি ক্যামিও রোল ও ছিল!
ইলন মাস্ক সুপার হিরো বা ভিলেন যাইহোক আমি বিশ্বাস করি তার মতো এমন জিনিয়াস হয়তো শতাব্দীতে একজন ই আসে।
©তারেক হোসাইন