সবার জীবনেই নাকি নির্দিষ্ট একটি স্বপ্ন থাকে।ছোট বেলায় স্বপ্ন কি তা বুঝতাম ই না।কখনো ইঞ্জিনিয়ার,কখনো পুলিশ কখনো পাইলট।কখনো ডাক্তার হওয়ার কথা কল্পনা ও আসেনি😊।

আস্তে আস্তে বড় হলাম, জ্ঞানের পরিধি স্বভাবতই বাড়ল।তারপর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্টটা অনেক ভালো লাগত।এর পেছনে কারন কি তা এখনো জানিনা।

যাইহোক,আমার জীবনে সবই ঠিকঠাক ছিল।
২০১৫ সাল!তবে,পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাদের সন্তানের কেউ যেন মেডিকেলে পড়ে ডাক্তার হয়ে সেবা প্রদান করে।

অবশ্যই,আমার বোনের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার।২০১৫ সাল!আমার বোন এইচ.এস.সি দিলো।মেডিকেল এর জন্য পড়া শুরু করল।তখন আমি এস.এস.সি দিয়ে স্কুলের বারান্দা পার করিনি।

মেডিকেল এডমিশন টেস্টের পর রেজাল্ট আসল।আমার বোন টিকলোনা।সবার মন খারাপ।সে আর কোথাও এক্সাম দেয়নি,সেকেন্ড টাইম ট্রাই করবে!!আবার প্রস্তুতি নিল।

২০১৬ সাল!ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ থেকেই আমার এস.এস.সি শুরু।ভাল মতো পরীক্ষা দিলাম।রেজাল্ট ও আসল কিছুদিন পর।আলহামদুলিল্লাহ!সব সাব্জেক্টেই এ+।

কলেজে এপ্লাই করলাম,চট্টগ্রাম কলেজ ছাড়া এপ্লাই করা বাকি সব কলেজ এ চান্স ও পেয়েছি।কিন্তু,সংগত কারনে কোথাও এডমিট হতে পারলাম না।

কোনোভাবে এডমিশন নিলাম চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে যে কলেজের নাম শুনলেই অধিকাংশ মানুষ মুখ বাকা করে ফেলত,ভালো হোক আর খারাপ আমারই কলেজ!

তাই,আমার খারাপ লাগতো বেশি।এডমিশনের পর ও অনেক কেদেছি।

যাই হোক,১৬ সালের মেডিকেল এক্সাম ও হল। রেজাল্ট এসেছে ২ দিন পর।ঐ দিন সোমবার ছিল।সন্ধ্যার পরই রেজাল্ট,আমার বোন টিকেনি।মাথার উপর আকাশ ভেংগে পড়ল।

আমার বোনের লালিত স্বপ্ন শেষ!সাথে আরেকটা জিনিস ফ্রি ছিল”আমার পরিবারের স্বপ্ন ও শেষ”।ঐ দিন থেকে আমার স্বপ্ন হলো ডাক্তা হওয়া, এর আগে চিন্তাই করিনি।আমার কলেজ জীবন ও রীতিমত কাটতে লাগল।

১৭ সালে আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।পড়া অনেক কঠিন!বায়োলজি পড়লেই কান্না আসতো,কিছুই বুঝতাম নাম।হিন্দি মুভি”তারে জামিন পার”এর “ঈশান” এর মতো অবস্থা ছিল।

ঈদুল ফিতরের পর বন্ধু রায়হানের কথা মতো গেলাম “মিল্টন দা” এর বায়োলজি ব্যাচে।ঝেদিন গেলাম ঐ দিন “রক্ত সংবহন” চ্যাপ্টার টা শুরু হল।বেসিক ক্লাস!কি অসাধারন ভাবে ভাইয়া পড়া বুঝিয়ে দেয়!!জাস্ট ওয়াও!!

রেগুলার ব্যাচে যেতাম।শুধু একদিন ই ভাইয়ার ক্লাস মিস করেছি ইন্টারের আগে।এই থেকেই মোড় টা ঘুরে গেল।বায়োলজি আর ভয় লাগেনা বরং ভালোই লাগে।টেস্ট এক্সাম হল।

টেস্টের পর লম্বা ক্লাস দিয়ে ভাইয়া বায়োলজি কোনোভাবে শেষ করাল যদিও “ধারাবাহিকতা” চ্যাপ্টার টা পড়ায়নি😅!

২০১৮ সাল!!এইচ এস সি এক্সাম।কেন্দ্রঃহাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ।প্রথম পরীক্ষা বাংলা।ভালোই দিলাম।তবে ঐ দিনই বুঝে গেলাম এই কেন্দ্রে এক্সাম দিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে।

স্যার রা প্রতিনিয়ত খোচা দিত,অবশ্যই আমাদের কলেজের প্রতি সবারই বিরুপ ধারনা ছিল।তাই বলে আমরা সবাই দুর্ভোগ পোহাব সেটা মানতে আজও পারিনা।পরীক্ষা শেষ!

থিওরি ভালোই হল,প্র‍্যাক্টিকাল এ যদি ভালো নাম্বার পাই তাইলে ইনশা আল্লাহ জিপিএ-৫ থাকবে।আর নাহয়,৪.৮ থাকবে।

কিন্তু,৪.৬ এর নিচে রেজাল্ট যাবে তা রেজাল্টের আগ পর্যন্ত চিন্তা করিনি।আচ্ছা,বাকি কথাই আসি।

যেহেতু, মেডিকেল ইচ্ছা ছিল তাই আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম মিল্টন ভাইর মেডিকেল ব্যাচে পড়ব।বাসায় জানালাম,রাজি হল।ভাইয়ার পড়ার প্রতি আমার অনেক আস্তা ছিল।

প্রথম দিকে ব্যাচে যেতাম ই না,এক্সাম ও দিতাম না।হায়েস্ট মার্ক যেখানে ৯৫ সেখানে আমার স্কোর থাকত ৬০ এর ঘরে তাও দুর্নীতি করে😂।প্রথম ১০০ নং এর পরীক্ষায় হায়েস্ট ৯৪।

পেয়েছিল “লাবিবা”। সে এখন হবিগঞ্জ মেডিকেলে।আমি পেলাম ৬০!!এর কিছুদিন পর রেজাল্ট।রেজাল্ট দেখেই আমি অবাক।

৪.৫, মেডিকেল এক্সাম দিলেই ১২.৫ কাটা যাবে।পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ,সবাই হতাশ।তাদের স্বপ্ন আবারো ধ্বংস হতে যাচ্ছে।রেজাল্টের পর থেকেই ভালো ভাবে পড়া শুরু করলাম।

মোটামুটি ভাল নং পেতাম সব এক্সামে।রেগুলার ভালো করার পর মিল্টন ভাইয়ার নজরেও আসলাম,কনফিডেন্স ও বাড়ল।

এর পর সব পরীক্ষাতেই হয়ত আমি প্রথম নয়ত লাবিবা।সে প্রথম হলে আমি সেকেন্ড!!অবশ্যই তাকে ক্রস করতে অনেক বেগ পেতে হতো।

কোচিং প্রায় শেষ।অক্টোবর এর ৫ তাং পরীক্ষা।১২.৫ কাটবে আর এটায় প্রধান বাধা।শুকবার মা কে নিয়ে চ.মে.ক গেলাম এক্সাম দিতে।

প্রশ্ন এত সহজ কেন??আমার মনে হল,এত সহজ প্রশ্নে আমার চান্স হবেনা।এক্সাম ভালো হল,ভয় একটা। ঐ ১২.৫!!

বাসায় এসে প্রথমে মিল্টন ভাইকে কল দিলাম।বললাম,এক্সাম বেশ ভালো হয়েছে।সবার কাছে জানতে পারলাম প্রশ্ন কঠিন ঝদিও আমার মনে হয়নি।

৭ তাং বন্ধু রায়হান কে নিয়ে ঘুরতে গেলাম সি.আর.ভি।ঐ দিন রেজাল্ট দিবে জানতাম না দুপুরে রিকশা থেকে নামলাম,সাথে সাথে হৃদয় এর কল।”বন্ধু রেজাল্ট দিয়েছে,পেয়েছিস?”।

আমি কাপতে শুরু করলাম।বাসায় এসেই মোবাইল নিলাম,কোনোভাবেই রেজাল্ট পাইনা।পাশে ছিল শুধু আম্মু আর বড় বোন।ভাইকে রোল দিলাম,ভাই সাথে সাথে কল দিল।পড়ে শুনালো আমার আমলনামা। টেস্ট স্কোর ৭৫.৫।

১২.৫ কেটে মেরিট স্কোর ২৬৩.allotment:khulna..সাথে সাথেই লাফ দিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম আর আপু আমাকে।আহ!কি শান্তি লাগে!মিল্টন ভাইকে কল দিয়ে জানালাম মিরাকল এর কথা।

ভাইয়া ও অবাক এবং খুশি।আব্বুকে কল করে জানালাম কিছুক্ষন পর।শুনেই কেদে দিল আমিও কাদলাম।খুশির আমেজ এখনো কাটেনা।৭ তারিখ টা যদি আবার পেতাম!!

১২.৫ আমার জন্য lucky number,এই নাম্বারটা আমাকে বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার প্রেরনা হবে ইনশা আল্লাহ।

এখন, আরেকটা স্বপ্ন।বড় ডাক্তার হয়ে বড় কিছু করা।ইনশা আল্লাহ,আমি এটাও পারব।আমি যে মাস্টার আমিনের ছেলে😇!

হুমাইদ আমিন
খুলনা মেডিকেল কলেজ
সেশন ঃ২০১৮-১৯