বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বুয়েট ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলার মোটামুটি সবগুলারই ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে। এর মাঝেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপে কোন ভার্সিটি বেটার, কোন সাবজেক্ট বেটার নিয়ে পোস্ট কমেন্ট।

আরো ঠিক তিন বছর আগে আমিও সেম সিচুয়েশন পার করে আসছিলাম। তো সেসময় করা কিছু উদ্ভট ডিসিশন নিয়ে আজকে লিখলাম যেন অন্য কেউ ডিসিশন নেওয়ার আগে একটু বিবেচনা করতে পারে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বো এইটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে অনেকেই ছোট থেকেই পড়ার ইচ্ছা, অনেকে বিভিন্ন কোচিং এ ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাইয়াদের ম্যাথ ফিজিক্সে বস টাইপ জ্ঞান দেখে ওমন হতে চায়, কেউ এসব ভাইয়াদের বাইরের চিল+পশ লাইফ দেখে।

এখানে চলে আসে ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর কিরন দত্তের ঐ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বানানো ভিডিওটার কথা। ও সাথে কেউ আবার থ্রি ইডিয়টসের রাঞ্চো হতে চায়।

এবার আসি আসল কথায়। ভাই তোমার ফিজিক্স, ম্যাথে বস হওয়া লাগবে? এপ্লাইড ফিজিক্স- ম্যাথ, পিওর ফিজিক্স- ম্যাথে পড়লেও হইতে পারবা, তারজন্য ইঞ্জিনিয়ারিং দরকার নাই।

বাইরের চিল+পশ লাইফ দেখো? ভিতরে এসে দেখবা হয়তো ৩০% আসলেই ঐরকম। বাকী ৭০% এর ই শো অফ। ভিতরে সবাই প্যারায়।

এরপর আসে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপার। এই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে শিওর বিদেশ, এটায় জব, ঐটায় জব টাইপ বিভিন্ন কমেন্ট দেখা যায়। গুড, এবার নিজে একটা কম্পেয়ার কর।

ঐ সাবজেক্টে গত ৩ বছর কতজন স্টুডেন্ট এডমিট হইছে আর কতজন বিদেশ গেছে, কতজন ঐসব কোম্পানিতে চাকরি পাইছে। মনে হয় না ৫% এর বেশি হবে। তারমানে তুমি যেটা শিওর ভাবতেছো সেটা আসলে ১০০ জনে ৫ জন পায়। ঐ লাকি ৫ থাকার মতো ভাগ্য নিয়ে আসছো কিনা কে জানে।

এরপরে মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট টাকার ব্যাপার। অমুকটায় এত টাকা স্যালারী, প্রতি বছর বিদেশ ট্যুর এমন টাইপ যারা ভাবতেছো ভাইরে তোমারে খাটাইয়া আমার ২০ টাকা লাভ হলে তোমারে ১০ টাকা দিতে আমার লাগবে না। জিনিসটা এমনই।তোমাকে দিয়ে কোম্পানি যে লাভ করবে তার কিছু অংশ তোমার স্যালারি।

সুতরাং এটা ভাবা বাদ দেও এখানে মনে হয় কম কষ্টে অনেক ভালো স্যালারী। কি পরিমান কষ্টের পর ঐ স্যালারী পাওয়া যায় তা যে ভদ্রলোক পাইছে উনিই জানে। আর এই স্যালারি শিওর ৬,৭ ডিজিট এসব ব্যাপারগুলার ৯৫% ভুয়া। ঐ আগের পয়েন্টের মতো।

১০০ তে ৫ জন পায়।ওরাই হাইলাইট হয়। বাকী ৯৫ যে হারায় যায় সে খবর কেউ রাখে না।

এরপর আসে ঐ যে থ্রি ইডিয়টস ফ্যানরা। ভাইরে মুভি আর বাস্তবতা আকাশ পাতাল ফারাক। মুভির ঘটনা সত্য হইলে ভারত কতবার পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে দখল করা শেষ😛

থ্রি ইডিয়টসের ওদের কতদুর পড়তে দেখছো?সারাদিন ঘুরবা? পরীক্ষা শেষে দেখবা বিশাল লগের লিস্ট। রাঞ্চোর মতো ক্লাস না করে বিভিন্ন কাহিনী করে বেড়াইবা? ফাইনালেই বসতে দিবে না ৭০% ক্লাস না করলে।

এখানে কেউ রাঞ্চো হয় না। সবার ঐ চতুরের মতো সিস্টেমের মাঝে নিজেকে পুশ করতে হয়। এরমাঝে লগ, সেশনজট থাকলে তো এক্সট্রা প্যারা।

এবার যারা উপরেরটুক পড়ার পরও ১০০% শিওর তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বাই, কোনো কিছুই তোমাকে ডিপ্রেসড করতে পারবে না তাদের জন্য আসি সাবজেক্ট/ডিপার্টমেন্ট চয়েস নিয়ে।

তোমাদের কোন সাবজেক্ট ভালো হবে এই টাইপ কমেন্ট গুলায় বিভিন্ন গ্রুপে অনেক ভাই রিপ্লাই দিবে ফিজিক্স ভালো লাগলে এটা, কেমেস্ট্রি এটা, এই ভালো লাগলে ঐটা টাইপ।

ভাই তোমার যে ভালোলাগার অংশ ছিল ঐ সাবজেক্টের উপর, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে ঐটার আকাশ পাতাল তফাত।

এখানে সব এপ্লাইড সাবজেক্ট পড়ানো হয়। তুমি কেমেস্ট্রি ভালোবেসে কোনো ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখবা ঐখানের কেমেস্ট্রি আর নিতে পারতেছো না!

এতটা ফারাক স্বপ্নেও ভাবো না। আসল কথা হলো সব যদি কেমেস্ট্রি বেসডই হতো তাহলে ঐটায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর কি দরকার ছিল। তার জন্য তো কেমেস্ট্রির গ্রাজুয়েট মানুষজনই ছিল! ভিন্ন দেখেই তো আলাদা সাবজেক্ট খুলছে😂

ভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্ট চয়েসের ব্যাপারে ছোট একটা জ্ঞান দেই। কমেন্ট বক্সের দরবেশ বাবাদের ৫ % বিশ্বাস করবা। বাকী ৯৫% এর জন্য ঐ ভার্সিটি /ডিপার্টমেন্টে পড়ে এমন স্কুল/কলেজের কোনো ভাই খুঁজে বের করে কথা বলো।

এখন ব্যাপারগুলা সোজা। তোমাদের স্কুল/কলেজের গ্রুপগুলাতেই খুঁজলে ঐসব ভাইদের পাবা। উনার কাছে জানো ঐ ভার্সিটি/ডিপার্টমেন্টে কি কি সুযোগসুবিধা পাবা, সীমাবদ্ধতা কি কি, এখানে পড়া ঠিক হবে কি না, অন্য কোনোটার সাথে কম্পেয়ার এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট উনি তোমার জায়গায় থাকলে কোন অপশন চয়েজ করতেন।

তাহলেই তুমি বুঝে যাবা কেন কমেন্ট বক্সকে ৫% বিশ্বাস করতে বলছি।

এবার অনেকেই বলবে, আপনি সিস্টেমকে মেনে নিতে পারেন নাই,  তাই এসব বলেন। ইয়েস, আমি এটা মেনে নিতে পারি নাই। একটা সিস্টেম বাইরে থেকে আকাশের চাঁদ ভিতরে আসলে কয়লা এমনটা কখনোই ভাবি নাই।

কিন্তু সিস্টেমের মাঝে আমি ঠিকই নিজেকে পুশ করেছি,খাপ খাইয়ে নিয়েছি। এখানে চলার সিস্টেমই এমন। নিজেকে খাপ খাওয়াইতে না পারলে তুমি লুজার।

এইযে এতকিছু লিখলাম,কেন লিখলাম? যাতে স্রোতে শরীর ভাসিয়ে দিয়ে পরে ডিপ্রেশনে না পড়। প্রতিটা প্রাণ, জীবন ইম্পর্ট্যান্ট।

লাস্ট ১ বছরে ইঞ্জিনিয়ারিং এর কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিপ্রশনে পড়ে সুইসাইড করেছে। তুমি নাহয় তোমার ডিপ্রেশনের বোঝা নিয়ে চলে গেলা, তোমার ফ্যামিলি?

ঐ মানুষগুলা তোমারে নিয়ে যে কেমন ভেঙ্গে পড়বে ভাবো। তোমার জীবনটা শুধু তোমার কাছেই ইম্পর্ট্যান্ট না, তোমার বাবা মায়ের কাছেও।

শেষকথা, আমাকে একবার একজন খুব ভালো একটা কথা বলেছিল।

“পড়ালেখার জন্য জীবন না, জীবনের জন্য পড়ালেখা।”

আমাদের জীবনটা শুধুই পড়ালেখার জন্য স্রষ্টা দেন নাই। আমাদের জীবনে একটু ভালো পজিশনে থাকতে, একটু সম্মান, ভালোলাগার জন্যই আমরা পড়ালেখা করি।

এই পড়ালেখাই যেন ঐ জীবনের জন্য হুমকি না হয়। পড়ালেখা, চাকরি ছাড়াও জীবনে অনেক কিছু আছে। সব কিছু নিয়েই ভাবো, চলো।

আমি কাউকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অনুৎসাহিত করতেছি না। শুধু তোমাদের বাইরের থেকে দেখা ব্যাপারগুলা ভিতরে আসলে কেমন কম্পলিকেটেড হয়ে যায় তা তুলনা করলাম।

ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে তোমার খুব বেশি প্যাশন, অনেক তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কোনো কিছুই তোমাকে হতাশ করবে না এমন মনোবল থাকলে ওয়েলকাম। এই সেক্টরটা তোমাদের জন্যই।

Written by সাহাব শিহাব
বুটেক্স

বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক রিভিউ পড়তে ভিজিট করো এই লিংক

সাব্জেক্ট ভিত্তিক রিভিউ পড়তে ভিজিট করো এই লিংক 

এডমিশন নিয়ে যেকোনো জিজ্ঞাসায় যোগ দাও আমাদের ফেসবুক গ্রুপে