মোহ জিনিসটা অত্যাধিক খারাপ!

জীবনের নানা সময়ে নানা মোহে আমরা নিজেদের জড়িয়ে ফেলি। কখনও সেটা কারো প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে,আবার কখনও প্যাশন, ইচ্ছা ভেবে ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এসব দামী, ভারী শব্দ যখন একটা ছেলেকে শোনানো হয়, সেও এটাকে স্বপ্ন ভেবে আগায়।

কিন্তু সেই ছেলেটাই যখন এই এপ্লাইড ফিল্ডে এসে কোনোমতে টেনেটুনে পাশের কথা ভাবতে বাধ্য হয়, নিতে পারে না, সেটা আর তখন স্বপ্ন থাকে না, সেটা একটা মোহ হয়ে থাকে তার কাছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং এ একটা ছেলে বা মেয়ে যত সময় যায় তত হতাশ হতে থাকে, তার স্বপ্ন ফিকে হয়, শুধু কোনোমতে বের হতে পারলে বাঁচা যায় এ ভাবনায় থাকে।

ইঞ্জিনিয়ারিং মানেই এপ্লাইড ফিল্ড। তাই কঠিন হওয়াটা অস্বাভাবিক না। কিন্তু এই ফিল্ডটায় কীভাবে পড়ানো হয়, কিংবা কোন ফিল্ড কীভাবে কাজ করে এগুলো একটা ইন্টারের ছেলেকে জানানো হয় না কখনও।

গৎবাঁধা নিয়মে পাশের বাসার ভাবির ছেলের মতো নিজের ছেলেকে বড় ইঞ্জিনিয়ার বানানো, ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়ানোর শখ মাথায় ঢুকে গার্ডিয়ানদের। এই যে না জেনে আসাটা, এতে করে ভার্সিটি ঢুকেই ছেলেটা যা ধারণা করে নেয় নিজে এর উল্টা পিঠ দেখে।

এই উল্টা পিঠ দেখেই তার আগ্রহ বলে কিছু থাকে না,সম্ভব না। একাডেমিক লাইফটা চলে অসহনীয় যন্ত্রণায়,আফসোসে।

ইন্টারে ম্যাথ ফিজিক্সকে ভয় পাওয়া কিংবা নামেমাত্র বা ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে বোর্ডে টপ-নচ রেজাল্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং এ এসে কুলানো সহজ না। তার উপর যদি হয় ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনাগ্রহী তবে তার ভার্সিটি লাইফ হয়ে যায় দোযখখানা।

আপনি চাইলেই একটা ইন্টারের ছেলের ব্রেইন ওয়াশ করে দিতে পারেন। মা-বাবার আগ্রহের চাপে ছেলেও না বুঝে নাম হবে ভেবে হয় ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। অধিকাংশের ক্ষেত্রে আমার এমনটাই মনে হয়েছে।

আমি এমন ছেলে বা মেয়ে এখন পর্যন্ত দেখি নাই যে এই দুই ফিল্ডের বাইরে কিছু চাইসে। এই যে পারিপার্শ্বিক-পারিবারিক আবেশ, এটা একটা মস্ত বড় ধোঁকা হয় অধিকাংশের জন্য।

আচ্ছা তাই বলে কী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিষেধ করবেন? না কখনও না। ইন্টারের স্টুডেন্টকে আপনি তার প্রাথমিক আগ্রহের ফিল্ড নিয়ে বেসিক আইডিয়া দেন, কেমন হয় সেই লাইফ সেটা জানান, সেই অনুযায়ী তাকে মেন্টালি প্রিপেয়ার হতে দেন যেন ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে গিয়ে তার মেন্টাল স্ট্যাবিলিটি থাকে।

সাবজেক্ট ,ভার্সিটি লাইফ নিয়ে যেন অন্তত আফসোস না করে।

এই কালচার হয়তো এদেশে গড়ে উঠবে না। তবে অন্তত ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির অবসাদগ্রস্ত পোলাপানদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রাখা উচিত।

৪ বছর সারভাইব করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা রূপকথার কাহিনী না।ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হতে পারে হাতে গোনা কিছু ছাত্র।

কেন সবাই পারে না, কী করা যেতে পারে অন্যদের জন্য,ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের পোলাপানেরা ২ মাস না যেতেই কেন হতাশায় ভোগে, গলদ কোথায় এসব কখনও পাবলিক ভার্সিটির অথোরিটি ভাবে না।

শেষ পর্যন্ত নামের পাশে ইঞ্জিনিয়ার লাগানো যাবে ভেবেই হয়তো সান্ত্বনা খুঁজে নিতে হয় আমাদের…..

– Nazmul Reza

CUET