যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, নেতা এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের আধুনিক স্থপতি। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (LGED) বর্তমান আকারে প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের জন্ম ২০ শে জানুয়ারী ১৯৪৫ কুষ্টিয়ায়। আর তিনি লোকান্তরিত হন ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর। তাঁর পিতা নূরুল ইসলাম সিদ্দিক আর মাতা বেগম হামিদা সিদ্দিক। কামরুল ছিলেন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান।

কুষ্টিয়া শহরের মিশন স্কুলে কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম হাইস্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক ও ১৯৬২তে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চ- মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বর্তমানে বুয়েট, ঢাকা ) ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

পরে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি ১৯৬৭ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন সরকারের ওয়ার্কস প্রোগ্রামে কুষ্টিয়ায়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী হিসাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্য বহু সড়ক ও সেতুর নকশা তৈরি করে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে তিনি গণপূর্ত বিভাগের সাথে তাঁর পেশাগত জীবন চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে মাস্টার্স অনুসরণ করতে UK গিয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালে University of Sheffield থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন

যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে এসে তিনি পল্লী কর্মসূচির উপ-প্রধান প্রকৌশলী এবং পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় এর নগর কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭-৮৪ সময়কালে।

জনাব সিদ্দিক ১৯৭৭ থেকে ‘৮৪ পর্যন্ত প্রথমে পল্লী পূর্ত কর্মসূচীর উপ-প্রধান প্রকৌশলী ও পরে পূর্ত কর্মসূচিকে উন্নীত করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরোতে ( LGEB ) পরিণত করান এবং ১৯৮৪ থেকে ‘৯২ পর্যন্ত ব্যুরোর প্রধান প্রকৌশল উপদেষ্টা পদে সংস্থা প্রধান হিসাবে দায়িত্বপালন করেন।

এরপর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তখনকার LGEB’র প্রকৌশল উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত সংস্কারসাধন করে একে একটি ব্যুরো থেকে অধিদপ্তরে উন্নীত করেন, যা বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বা LGED, এবং তিনি এই সংস্থার প্রধান হিসাবে প্রধান প্রকৌশলীর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এরপর পর্যায়ক্রমে জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, যমুনা সেতু বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বপালন করেন।

নিয়মিত সরকারি থেকে অবসরগ্রহণের পর তিনি ২০০৩ – ২০০৪ মেয়াদে গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চেয়ারপার্সন ছিলেন।

এই দীর্ঘ কর্মজীবনে জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক বিশেষ করে LGED’র প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালে নিজে উদ্যোগী হয়ে দেশজুড়ে যে অগুনতি সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও পাকা অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন এবং কতো বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তার হিসাব কারো জানা নাই।

এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের উন্নয়নে সাহায্যদাতা দেশ বা সংস্থাগুলি অনুদান ও ঋণের অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে সরকারি মুখপাত্রের চেয়ে সিদ্দিকের মুখের কথাকে বেশি মূল্য দিতো।

তাঁকে যেমন বহু আলোচিত গুলিস্তান — যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের মূল পরিকল্পনাকারী বিবেচনা করা হয়, একইভাবে দেশের অনেকগুলি সৃজনশীল প্রকল্পের উদ্যোক্তা ও বাস্তবায়নকারী গণ্য করা হয়। তিনি ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতি এবং প্রকৌশলীদের সংগঠন IEB’ র সভাপতি হিসাবেও অবদান রেখেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক ও ব্যবস্থাপক এবং কখনো কারো অন্যায় আদেশ বা আবদারের কাছে মাথা নত করেননি । সেবামূলক ও জনহিতকর কাজের জন্য তিনি অনেক পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

এরমধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমির দেওয়া সম্মানসূচক ফেলোশিপ, কুষ্টিয়া সমিতির দেওয়া উন্নয়ন সংহতি পদক, IEB স্বর্ণপদক, JAICA মেরিট অ্যাওয়ার্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলোশিপ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী স্বর্ণপদক, শেরেবাংলা স্বর্ণপদক ইত্যাদি। তিনি নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার অদূরে বরিয়া – তাকিপাড়ায় তাঁর মায়ের নামে স্কুল ও পিতার নামে এতিমখানা স্থাপন করে স্থানীয় উন্নয়নেও অবদান রেখেছেন।

তিনি অনেক শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী চাকরিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রশাসনিক পদসমূহ যেমন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৯৯-২০০০), যমুনা সেতু বিভাগের সচিব, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় (২০০০), আবাসন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব (২০০০-২০০১), বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (২০০১), ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক (২০০২-২০০৪) ইত্যাদি।

গ্রামীণ অবকাঠা‌মো উন্নয়‌নের রূপকার- কামরুল ইসলাম সি‌দ্দিক

শ্র‌দ্ধেয় কামরুল ইসলাম সি‌দ্দিক স্যার‌কে মূল্যায়ন, স্মৃ‌তিচারণ ও শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন ক‌রে দেশ-‌বি‌দে‌শের শতা‌ধিক প্র‌থিতযশা ব্য‌ক্তি‌দের লেখা সঙ্ক‌লিত- “গ্রামীণ অবকাঠা‌মো উন্নয়‌নের রূপকার- কামরুল ইসলাম সি‌দ্দিক” শীর্ষক স্মারক গ্রন্থটির কিছু সংখ্যক ক‌পি এখন পাওয়া যা‌চ্ছে- LGED’র ডিজাইন ইউ‌নি‌টে। আগ্রহী‌ ও অনুরাগী পাঠকগণ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ কর‌তে পা‌রেন ০১৭১১ ১৫২৯০০।

সরকার চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পরে। তিনি জিডব্লিউপি-দক্ষিণ এশিয়া-আঞ্চলিক জল অংশীদারিত্বের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও নগর উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি, বাংলাদেশ পানি অংশীদারিত্বের রাষ্ট্রপতি হিসাবে অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় শীর্ষস্থানীয় সংগঠক হিসাবে অব্যাহত রেখেছিলেন।যদিও তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কামরুল সিদ্দিক সরকারের সচিবের দায়িত্ব ও পালন করেন। যা শীর্ষ স্তরের সরকারী সার্ভিস পজিশন।

ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেশনাল হিসাবে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হ’ল এলজিইডি প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯২ সালে এলজিইডি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তিনি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহু পদে একজন প্রকৌশল কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই চাকরিতে তিনি পৌরসভা ও স্থানীয় সংস্থাগুলি দ্বারা সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত গ্রামীণ ও নগর জনসাধারণের পরিকল্পনা, প্রোগ্রামিং এবং তদারকি, নগর কর্মসূচীর প্রকল্পের প্রস্তুতি প্রস্তুতি এবং গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচী সারা দেশে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এই সময়ে, তিনি নিরলসভাবে পল্লী অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন যা তাকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের রোল মডেল করে তুলেছে। এই সময়ে তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী প্রশাসনের ফলস্বরূপ LGEB এর বর্ধন ও আপগ্রেড হওয়ার ফলে শেষ পর্যন্ত LGED প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রকৌশলী কামরুল সিদ্দিক প্রতিষ্ঠাতা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগ দেন। তিনি এককভাবে এলজিইডি একটি সংস্থা হিসাবে বিকাশ করেছিলেন, এটি কম্পিউটার এবং ল্যান সিস্টেম ব্যবহারকারী বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অফিস। খাদ্য উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তিনি রাবার ড্যাম প্রযুক্তি নিয়ে এসেছিলেন যার মাধ্যমে কৃষকরা শুকনো মৌসুমে IRRI ধান চাষ করতে জল সংরক্ষণ করতে পারবেন।

তিনি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসমূহের বেস মানচিত্র ডিজাইনের জন্য ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS) প্রতিষ্ঠার জন্য বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি World Bank, Asian Development Bank, JBIC, KFW, Saudi Development Fund and OPEC Fund সহায়তায় অনেক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সমাপ্ত করেছেন। JICA, USAID, SIDA, SDC, DANIDA, NORAD and UNDP এর সহযোগিতায় তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছিল।

পেশাদার দায়িত্ব ছাড়াও, প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজেও জড়িত ছিলেন। তিনি আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের উপদেষ্টা, সিদ্দিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি, কুষ্টিয়া, বেগম হামিদা সিদ্দিক কলেজিয়েট স্কুলের সভাপতি, কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সভাপতি, গুলশান সোসাইটির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ চক্ষু সেবা সমিতির সহ-সভাপতি (বিইসিএস),কাজী আবু মোকাররম ফজলুল বারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেন্টার এর উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি BMSRI ও BIRDEM এর আজীবন সদস্য ছিলেন।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক বাংলাদেশের প্রকৌশল সম্প্রদায়ের প্রচার ও অগ্রগতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ২০০১ সালে আইইবির বাংলাদেশ পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিস্ট্রেশন বোর্ড (BPERB) প্রতিষ্ঠায় তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন যাহা পেশাদার এবং অভিজ্ঞদের P.Engg সনদ প্রদান করে।

চার দশক ধরে তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি অনেক সেমিনার এবং সভায় অংশ নিয়েছিলেন এই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে এদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োগ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনঃ জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে খুলনার কাজী আবু মোকাররম ফজলুল বারীর কন্যা সাবেরা কাজীর সঙ্গে ( পরে সাবেরা সিদ্দিক ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

২০০৮ খ্রিস্টাব্দের পয়লা সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে পুত্র সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকের বাড়িতে থাকার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মরদেহ দেশে এনে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এরআগে কুষ্টিয়ার প্রধান ঈদগাহে এক বিশাল জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও তিন কন্যা ( পুত্র সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক এবং কন্যা আরিফা সিদ্দিক জিনিয়া, মারেফা সিদ্দিক তানিয়া ও তাসনিমা সিদ্দিক ফারিয়া ) রেখে গেছেন।
করুণাময় আল্লাহতালা তাঁর আত্মাকে শান্তিতে রাখুন

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
তাকে নিয়ে বিভিন্নজনের লেখাঃ

১।  প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক
“A Visionary Technocrat”
— ড. প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৬২ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে ভর্তি হন-আমি তখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

১৯৬৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে আমি পুরকৌশল বিভাগে লেকচারার হিসাবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করি; আমার উপর দায়িত্ব পড়ে মূলত তৃতীয়বর্ষে Structure বিষয়ে পড়ানো, তবে কোন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে বিভাগীয় প্রধান আমাকে দ্বিতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত কামরুলদের ক্লাসেও মাঝে মাঝে পাঠাতেন। সেই হিসাবে কামরুল আমাকে সারাজীবন শিক্ষক হিসাবে সম্মান দেখিয়েছেন।

১৯৬৬ সালে পুরকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর কামরুল Works Program- এর জেলা পর্যায়ে চাকুরি নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে যান-তাই বহু বছর তার সাথে যোগাযোগ ছিল না।

মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন শেষে তিনি ৭০-এর দশকে আবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন URP-এর স্নাতকোত্তর ছাত্র হিসাবে। তখন ও মাঝে মাঝে দেখা হত।

১৯৮৪ সালে Local Government Engineering Bureau প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর Engineer Advisor হিসাবে বিভিন্ন সময়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে নানা কাজে আমার কাছে আসতেন।

তাঁর মধ্যে একটা কাজ ছিল Earthwork Manual প্রণয়ন করা; আরেকটি ছিল Bridge Design Manual তৈরি করা-এই দুটি Manual তৈরির সম্পূর্ণ দায়িত্ব USAID অর্পণ করেছিল বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগে আর সেই সুবাদে কামরুলের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। LGEB-কে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে LGED-তে উন্নীত করার পিছনে ছিল কামরুলের নিরলস প্রচেষ্টা।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে-বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে –যে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আঘাত হানে তাতে প্রায় ১,৩৮,০০০ লোক প্রাণ হারান এবং অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর পরপরই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগে যাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় তার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে।

আমাদের সভায় যখন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ডিজাইন ও নির্মার্ণের ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম তখন কামরুল উপস্থিত ছিলেন এবং Cyclone Shelter-এর কয়েকটি ডিজাইন উপস্থাপন করেন। এর আগে LGEB-এ ধরনের কাজে জড়িত ছিল না কিন্তু তাঁরই উদ্যোগে অত্যন্ত অল্প সময়ে estimated cost সহ কয়েকটি সম্ভাব্য ডিজাইন-এর রুপ রেখা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন।

অত্যন্ত দ্রুততার সাথে গ্রহণ করা তাঁর এই উদ্যোগের ফলে LGED সরকারের এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে উপকূল অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে আমাকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিতে হয়। আমাদের সামনে প্রধান দায়িত্ব ছিল ৯০ দিনের ভিতর জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সহয়তা করা।

আমরা প্রথমেই যে চ্যালে্ঞ্জ সমূহের সম্মুখীন হই তার মধ্যে ছিল বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি করা। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপদেষ্টা পরিষদের “আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত সাব-কমিটি” কে অস্ত্র উদ্ধারের পরিসংখ্যান দিতেন।

কিন্তু আমি লক্ষ করলাম যে, অভিযানের অগ্রগতি প্রতিদিনই নতুন করে হাতে এঁকে মানচিত্রে বিভিন্ন রং (Colour Code) ব্যবহার করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

আমার কাছে মনে হল, সনাতনী এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে GIS ব্যবহার করে খুব সহজেই অল্প সময়ে কাজটি করা সম্ভব। আমি জানতাম, কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের ব্যক্তিগত আগ্রহে LGED ততদিনে GIS ব্যবহার করে সমগ্র বাংলাদেশের উপজেলাভিত্তিক মানচিত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে।

আমি কামরুলকে এ ব্যাপারে সহায়তা করার অনুরোধ করলাম। তিনি পরদিনই GIS-এর দায়িত্বে থাকা কয়েকজ প্রকৌশলীকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করেন এবং অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি মনিটরিং-এর জন্য একটি GIS ভিত্তিক পদ্ধতি develop করেন।

এর ফলে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায় এবং Cabinet Sub-Committee এ ব্যাপারে তদারকি করতে এবং বিশেষ করে বেআইন অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।

সরকারি দায়িত্বপালন ছাড়াও কামরুল ইসলাম সিদ্দিক প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনীয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কর্মকান্ডের সাথে সত্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তাঁর দুই বছর মেয়াদে এই সংগঠনের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়।

প্রকৌশল পেশায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ IEB-এর পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান (মরণোত্তর) IEB Gold Medel প্রদান করা হয়।

যে কোন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হলেই কামরুল ইসলাম সিদ্দিক তা কীভাবে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগানো যায় তার চেষ্টা করতেন। ১৯৯০ দশকের প্রথম দিকে আমাদের দেশে সবেমাত্র PC আমদানি শুরু হয়েছে।

LGEB-তে তিনি কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু করেন্ এবং Internet সংযোগ যখন ১৯৯৬ সালের দিকে প্রথম আসে তখনই LGED-র Website তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে LGED-কে আমরা দেখতে পাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে।

তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন যে তাঁর প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা এই প্রযুক্তির সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন।

তাঁরই অধীনে কর্মরত আমার এক প্রাক্তন ছাত্র আমাকে একটি ঘটনার কথা বলেছিল যাতে তাঁর এই আগ্রহের প্রতিফলন দেখা যায়। আশির দশকের শেষের দিকে Fax মেশিন সবেমাত্র আমাদের দেশের সরকারি অফিসে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

কামরুল LGEB-র সব জেলা অফিসে এই মেশিন install করেন এবং অফিসে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে এই মেশিন কীভাবে operate করতে হয় তা শিখে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কোন এক জেলায় Fax পাঠাতে গিয়ে দেখেন যে তাঁর চিঠিটি Fax transmission হচ্ছে না। তিনি তখনই telephone করে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে Fax machine টি on করতে বলেন।

এই মেশিন কীভাবে on করতে হয়ে তা জানেন না বলে সেই প্রকৌশলী তার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলামকে জানান। তখন কামরুল তাকে বলেন যে অফিসের অন্য কাউকে ডেকে আনতে যে এই মেশিনের ব্যবহার জানে।

এটি on করার পর প্রথম Fax-টি যায় সেই প্রকৌশলী-যে মেশিন on করা শিখে নাই – তার কৈফিয়ত তলব-কেন নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও সে মেশিনটি ব্যবহার করা শিখে নাই।

 কামরুল ইসলাম সি‌দ্দিক

কামরুল ইসলাম সি‌দ্দিক

২০০৪ সালের দিকে যখন ঢাকা মহানগরীর জন্য একটি Strategic Transport Plan বা STP প্রণয়নের কাজ চলছিল তখন কামরুল Dhaka Transportation Coordination Board-এর নির্বাহী পরিচালক।

একদিন আমার অফিসে এসে বললেন যে, এই Plan প্রস্তুতের জন্য যে বিদেশি ও দেশি Consultant যৌথভাবে কাজ করছে তাদের দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেওয়ার জন্য তিনি একটি Steering/Advisory Committee গঠন করতে চান এবং আমাকে এই কমিটির নেতৃ্ত্ব দিতে অনুরোধ জানান। আমি অন্যান্য ব্যস্ততা থাকা ও transportation planning-এ আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে এই দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করি-কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁর বিশেষ অনুরোধে আমি সম্মতি প্রদান করি।

দুর্ভাগ্যবশত কাজটি শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে অন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর সময়ই ঢাকার যানবাহন অবকাঠামো নির্মাণ গতিশীলতা লাভ করে এবং এই STP প্রণয়নের বেশির ভা০

কামরুল ইসলামের প্রধান কৃতিত্ব হলে একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান থেকে LGED-কে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ এবং dynamic প্রকৌশন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা। তরুণ প্রকৌশলীরা যাতে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকো্ত্তর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করে তার জন্য Scholarship/Fellowship-এর ব্যবস্থা করায় তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট।তাঁর নেতৃত্বে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশি দাতা সংস্থা দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যে কোন প্রকল্পগ্রহণ করলে LGED-কে সবচেয়ে প্রথম বিবেচনা করত। এ ছাড়া LGED-র মডেলটি অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার জন্যও বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও আমাদের দেশে আসে এবং কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের উপদেশ গ্রহণ করে।

গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন যে দারিদ্র দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে, কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের নেতৃত্বে LGED-র কার্যক্রম তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘসময় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কামরুল সিদ্দিককে সারা দেশবাসী দীর্ঘদিন মনে রাখবে। সরকারের প্রশাসনে অন্যান্য শীর্ষপদে কর্মরত অবস্থায় কামরুল ইসলাম সিদ্দিক তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন ও উন্নয়ন প্রকল্পপ্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সরকারি চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পরও তিনি দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। আমার মনে আছে-মৃত্যুর আগের দিন আমাকে একটি e-mail পাঠান STP সম্পর্কে সর্বশেষ অগ্রগতি তাঁকে জানাতে এবং এ সম্পর্কে তাঁর কিছু সুপারিশ জানিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাতে গিয়েও তিনি দেশের সমস্যা নিয়ে যে সবসময় চিন্তা করতেন, উপরের দৃষ্টান্ত তার একটি উদাহরণ। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা তাঁর মতো একজন Visionary Leader-এর অবদান থেকে বঞ্চিত হলাম।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

২।

স্মৃতি হাতড়ে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল হাসান এক নিবন্ধে লিখেছেন, ১৯৯৯ সালে কামরুল ইসলাম সিদ্দিক এলজিইডি থেকে অবসর নিলেও তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানকে কখনও ভোলেননি। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর আগের দিন নিউজার্সি থেকে এক ই-মেইল বার্তায় তিনি তখন সদ্য অবসরে গমনকারী এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে লিখেছিলেন, ‘এলজিইডি চিফ ইঞ্জিনিয়ার নেভার রিটায়ারস’।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

৩।

সেদিনের ঐ প্রোটোকলটাই যে উনার জন্য আমার জীবনের শেষ প্রোটোকল ছিল তা কল্পনাও করতে পারিনি!!!! উনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ক’য়েকদিন পরেই এলজিইডি’র চীফ স্যারের পরিবর্তন হলো। চার্জ গ্রহণ/প্রদান অনুষ্ঠানের সময়ই আমি স্যারকে ল্যান্ডফোনে চীফ স্যারকে মিলিয়ে দিলাম, তখন হয়তো ফোনটা না মিলিয়ে দিলে আর স্যারের সাথে চীফ স্যারের কতা বলা হতো কিনা জানি না? কারণ তারপর আর স্যারের সাথে চীফ স্যারের সরাসরি কোন কথা হয়নি। প্রতিদিন কয়েকবার করে আমার সাথে যোগাযোগ চলতো- ই-মেইলে অথবা সরাসরি ফোনে। যাওয়ার আগ মূহুর্তে যে সব কাজগুলো দিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রতিটা কাজের ফলো-আপ প্রতিদিন নিতেন। অনেকগুলি কাজের মধ্যে গুলশান সোসাইটি মসজিদের কাজের অগ্রগতির প্রতিটি ধাপে ধাপে জানতে চাইতেন আমার মাধ্যমে, আজ যে সুন্দর একটা সাত তলা বিল্ডিং-এর মসজিদ ঠিক বনানী কবরস্থানের পূর্বপ্রান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, তা যেন উনার সাথে সার্বক্ষণিক সখ্য হয়ে আছে..... অথচ ৯৯% লোকই হয়তো জানেনই না যে, এই মসজিদটা কার উছিলাই, কার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? কে একটার গোড়া পত্তন করে গেছেন? যারা জানেন, তারও হয়তো প্রচারবিমূখ...... আল্লাহ্ স্যারকে জান্নাতের সবোচ্চ মাকামে আসীন করুন। সবাইকে হেদায়েত করুন। সবার মঙ্গল হোউক! আমিন।।

ফেরদৌস আলী মোল্লা’র স্মৃতিচারণ

৪।

সেদিনের ঐ প্রোটোকলটাই যে উনার জন্য আমার জীবনের শেষ প্রোটোকল ছিল তা কল্পনাও করতে পারিনি!!!!

উনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ক’য়েকদিন পরেই এলজিইডি’র চীফ স্যারের পরিবর্তন হলো। চার্জ গ্রহণ/প্রদান অনুষ্ঠানের সময়ই আমি স্যারকে ল্যান্ডফোনে চীফ স্যারকে মিলিয়ে দিলাম, তখন হয়তো ফোনটা না মিলিয়ে দিলে আর স্যারের সাথে চীফ স্যারের কতা বলা হতো কিনা জানি না? কারণ তারপর আর স্যারের সাথে চীফ স্যারের সরাসরি কোন কথা হয়নি।

প্রতিদিন কয়েকবার করে আমার সাথে যোগাযোগ চলতো- ই-মেইলে অথবা সরাসরি ফোনে। যাওয়ার আগ মূহুর্তে যে সব কাজগুলো দিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রতিটা কাজের ফলো-আপ প্রতিদিন নিতেন।

অনেকগুলি কাজের মধ্যে গুলশান সোসাইটি মসজিদের কাজের অগ্রগতির প্রতিটি ধাপে ধাপে জানতে চাইতেন আমার মাধ্যমে, আজ যে সুন্দর একটা সাত তলা বিল্ডিং-এর মসজিদ ঠিক বনানী কবরস্থানের পূর্বপ্রান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, তা যেন উনার সাথে সার্বক্ষণিক সখ্য হয়ে আছে…..
অথচ ৯৯% লোকই হয়তো জানেনই না যে, এই মসজিদটা কার উছিলাই, কার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? কে একটার গোড়া পত্তন করে গেছেন? যারা জানেন, তারও হয়তো প্রচারবিমূখ……

আল্লাহ্ স্যারকে জান্নাতের সবোচ্চ মাকামে আসীন করুন। সবাইকে হেদায়েত করুন। সবার মঙ্গল হোউক!
আমিন।।

১ সেপ্টেম্বর ২০২০:

আইইবি স্বর্ণপদক, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী স্বর্ণপদক, শেরেবাংলা স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমি সম্মাননা, মাহাত্মা গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ড এবং জাইকা মেরিট অ্যাওয়ার্ডের মতো ডজন খানেক পুরস্কার জয়ী প্রচারবিমুখ প্রয়াত এই কর্মবীরকে স্মরণ করেছেন সংবিধান প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেন, পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সাংবাদিক নঈম নিজামের মতো সমাজের নানা স্তরের বিদগ্ধ জনেরা। প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের চিন্তা এখনো সমান প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন প্রত্যেকেই।

তাকে নিয়ে আলোচনার ভিডিও:

https://www.facebook.com/Engr.Quamrul.Islam.Siddique.Sir.Fans/videos/2665399680400581/

২. https://www.facebook.com/Engr.Quamrul.Islam.Siddique.Sir.Fans/videos/1203132593404980/

৩. https://www.facebook.com/Engr.Quamrul.Islam.Siddique.Sir.Fans/videos/336551297490841/

৪. https://www.facebook.com/Engr.Quamrul.Islam.Siddique.Sir.Fans/videos/949530415560625/

৫. https://www.facebook.com/Engr.Quamrul.Islam.Siddique.Sir.Fans/videos/751575152298415/

৬. https://www.facebook.com/LGED.Info/videos/296471988077865/