বাংলাদেশের খ্যাতিমান একজন শিক্ষাবিদ এবং প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ। একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি স্থাপনার নকশা, নির্মান, মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন করে চলেছেন।
সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রথম শ্রেনিতে অনার্সসহ প্রথম স্থান অধিকার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি মাস্টার্স করেন বুয়েট থেকে।
২০০১ সালে সাইফুল আমিন জাপানের সায়তামা ইউনিভার্সিটি থেকে ভূমিকম্প রোধক সেতু ডিজাইনের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১০ সাল থেকে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। অধ্যাপনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি তাঁকে বুয়েটের দূর্যোগ প্রতিরোধ ও নগর নিরাপত্তা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।
দেশের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং দূর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস কল্পে গবেষণা এবং অধিকতর দক্ষ জনবল তৈরি করা এই ইনস্টিটিউটের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট পদ্মা বহুমুখী সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে দলনেতা হিসাবে সহায়তা করছেন।
এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা সেতু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ছোট বড় সেতু এবং গুরুত্বপূর্ণ দালান ও অবকাঠামোর নকশা, নির্মাণ ও রক্ষনাবেক্ষনে বিশেষজ্ঞের দায়িত্বে আছেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের তিনি আজীবন ফেলো। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স এর প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সরাসরি আমন্ত্রিত ফেলো।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সেতু ও স্থাপনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক পেশাজীবি সংগঠন, আইএবিএসই এর বাংলাদেশ শাখার সভাপতি।
প্রকৌশল শিক্ষারমান উন্নয়নের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের এক্রিডিটেশন বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মোহনপুর গ্রামে। তাঁর জন্ম ১৯৭১ সালে। জন্ম ও বেড়েওঠা ঢাকায়। বাবার নাম ড: মুহাম্মদ নূরুল আমিন।
তিনি পাট গবেষক ছিলেন। মা অধ্যাপিকা হোসনে আরা আমিন। তিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সাইফুল আমিন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি হয়েছেনও একজন সফল প্রকৌশলী।
২০০১ সালে সায়তামা ইউনিভার্সিটি থেকে ভূমিকম্প রোধক সেতু ডিজাইন এর উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে, বিদেশের স্বপ্নযাত্রা কে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে দেশে ফিরে এসে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন।
এর মাঝে ২০০৪ সালে জার্মান সরকারের আমন্ত্রণে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার আমন্ত্রন পান।
বাংলাদেশের প্রথম প্রকৌশলী হিসেবে ২০০৭ সালে জার্মান সরকারের সম্মান জনক আলেকজান্ডার ভন হাম্বলড্ ফাউন্ডেশনের ফেলো হিসেবে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে গবেষণার আমন্ত্রন পান।
২০০১ সালে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ২০১০ সালে একই বিভাগে অধ্যাপকের পদে যোগ দেন।
অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন এর কাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুরাতন চিন্তা ধারার বাইরে এসে নতুনত্বকে খুঁজে নিয়ে অগ্রগতির পথে হাঁটা, মানবতার কল্যাণে গবেষণা ভিত্তিক প্রফেশনাল ধর্মী কাজ, সাংগঠনিক কাজ, নবীন-প্রবীন সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করা।
বর্তমান যুগে প্রকৌশল শিক্ষার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত প্রকৌশল শিক্ষা পদ্ধতি হালনাগাদ করা হয় নাই বহু দিন।
মান উন্নয়ন এর বিষয়টাও উপেক্ষিত বহুদিন থেকে। আমরা অধ্যাপক ড: এম.এ. রশীদ স্যারের উত্তরসূরী। উনার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আজকের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
যার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রকৌশল শিক্ষা আজকে সারা বাংলাদেশে প্রসারিত। তবে সারা পৃথিবীতে প্রকৌশল শিক্ষার প্রয়োগ বৃদ্ধিকল্পে “আউটকাম বেসড এডুকেশন” এখনকার প্রকৌশল শিক্ষার মানদন্ড হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে কয়েক যুগ আগে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট সহ উন্নত, এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থা আউটকাম বেসড এডুকেশনের দিকে আধুনিকী করণ হয়েছে বহু আগে।
এই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য প্রকৌশলীকে সমাজ ও যুগের প্রয়োজন উপযোগী করে নিশ্চিত ভাবে গড়ে তোলা। শিক্ষা এবং শিল্পের মধ্যে সেতু বন্ধন গড়ে তোলার উপায় তৈরি করা। প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে প্রকৌশল শিল্পের প্রয়োজনের নিরিখে।
আর প্রকৌশল শিল্প প্রসার লাভ করে সমাজের চাহিদা মেটাতে। প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থাকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রকৌশল শিল্প ও আগত প্রায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে তৈরি করার জন্য আউটকামবেসড এডুকেশন এর কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু এই জায়গাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাপান, বাংলাদেশ ও জার্মানিতে ভূমিকম্প থেকে সেতুকে রক্ষার জন্য হাইড্যাম্পিং রাবার বিয়ারিং এর ওপর মৌলিক গবেষণা করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সম্প্রতি নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর-মেঘনা-গোমতি সেতু নির্মাণে আন্তর্জাতিক ভাবে পরিক্ষিত ও সফল এই প্রযুক্তির সরাসরি প্রয়োগ হয়েছে।
ভূমিকম্প জনিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ জনিত ঝুঁকির হ্রাস কল্পে জাপানের সহায়তায় পরিচালিত দেশের সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রকল্পে মূল ভূমিকায় থেকে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এর ফলাফল সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দেশের নীতি নির্ধারনে ভূমিকা রাখবে। বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সভায় মূল বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের সাথে ২০০১ সাল থেকে নিবিড় ভাবে যুক্ত আছেন।
সেতু-প্রকৌশল বিদ্যায় বাংলাদেশের জন্য লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আহরণ, বিকাশ ও প্রয়োগের জন্য সম্পূরক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের মূল আয়োজকের ভূমিকায় ২০০৫ সাল থেকে আছেন।
২০০৫, ২০১০, ২০১৫ ও ২০২০ সালে পরপর চারবার এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন বৃহৎ থেকে বৃহত্তর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সফল ভাবে আয়োজনের মাধ্যমে দেশের সেতু-প্রকৌশল বিদ্যার উন্নয়নে সম্পুরক উপাদান হিসেবে এই অবদান আবির্ভূত হয়েছে।
এই সকল আয়োজনের মাধ্যমে ২০১৫ সালে তিনি হার্ডিঞ্জ সেতুর ১০০ শতবর্ষ পালনের মাধ্যমে আপামর জনগণকে সেতু-প্রকৌশল শাস্ত্রের সরাসরি প্রয়োগের গুরুত্ব অনুধাবনের সাথে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন।
প্রকৌশল শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা প্রকৌশলী সমাজের কাছে তুলে ধরতে দেখা গেছে ২০২০ সালে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে।
২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং অসাধারণ অবদানের জন্য জাপান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্টের বিশেষ আমন্ত্রণে সম্মানজনক ফেলো শীপে ভূষিত হন।
২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউশন অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের ২০০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দূত হিসেবে লন্ডনে নাগরিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানের আমন্ত্রণ পান।
সারাবিশ্ব থেকে আমন্ত্রিত ১৩ জন বিশেষ সম্মান প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন। ২০১৯ সালে জাপানের সায়তামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতী ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক, ছাত্র ও বৃহত্তর টোকিও শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সম্মানজনক আমন্ত্রণ পান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন বলেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে আমার সাধ্যের মধ্যে আমি কাজ করতে চাই।
সেটা প্রকৌশলীর অবস্থান থেকে হোক বা শিক্ষকতার অবস্থান থেকে হোক। আমি দেশের জন্য গবেষণা, প্রকৌশল পেশা এবং প্রকৌশল শিক্ষার নীতি নির্ধারনী কাজে সহযোগিতা করতে চাই। আমি বাংলাদেশকে একটা সুখী, সমৃদ্ধশালীও নিরাপদ দেশ হিসেবে দেখতে চাই।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পূরুষরা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন যার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি। জাতি গঠনে বর্তমান সমাজকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্ম অবশ্যই এর সুফল ভোগ করবে।
কার্টেসি: শাহ সিমেন্ট সুইট হোম