ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু, কোনো কিছুই মুখস্থ করতে ভালো লাগতো না, বলতে গেলে মুখস্থ বিদ্যা ছিলো অনেক কম। কিন্তু, বুঝতাম ভালোই, আর যা একবার বুঝতাম তা আল্লাহর রহমতে সব সময়ই মনে থাকতো।

এখনো মনে আছে, খেলনা গাড়ি থেকে শুরু করে টিভির নতুন রিমোট পর্যন্ত খুলে দেখতাম যে এটা কাজ করে কিভাবে? যদিও বা কিছুই বুঝতাম না, কিন্তু তাও খেলার ছলে হোক অথবা কৌতুহলের জন্য হোক, এইসব করে জিনিস নষ্ট করতাম।

আব্বু আম্মুও আবার আমাকে কখনো এইসব কাজের জন্য বকা দেন নাই। তাই আরও বেশি বেশিই করতাম।

নবম-দশম শ্রেনীতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো জীববিজ্ঞান। পদার্থ থেকে দুরেই পালাতাম। আমার এখনো মনে আছে, দশম শ্রেনীতে থাকতে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বলেছিলেন, “তোর মতো অপদার্থকে পদার্থ কখনো আপন করে নিবে না”।

মনে মনে বলেছিলাম, চাইওনা যে সে আমাকে আপন করে নিক।

কলেজেও পদার্থ নিয়েই হিমসিম খেয়েছিলাম। মুখস্থ বিদ্যা ছিলো না, তাই সবকিছুই বুঝে বুঝে নিজের মতো করেই মনে রাখতাম।

যাইহোক, অনার্সে Electrical and Electronic Engineering (EEE) পড়তে গিয়ে মন অনেক বেশি খারাপ ছিলো যে ডাক্তার হতে পারবো না।

কিন্তু, EEE পড়ার দরুন অনেক মজা পাচ্ছিলাম। অনেক কিছুই বুঝার উপরেই ছিলো। মুখস্ত করার মতো পড়া এইখানে কম ছিলো।

একপর্যায়ে গিয়ে বুঝতে পারি, (আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন) ইচ্ছা আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক বড় একটা তফাৎ আছে। এরপর থেকে ভালো কিছু করার লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করতে লাগলাম।

টার্গেট ছিলো উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ সহ বাইরে যাওয়া। আমার মনে আছে, Letter of Recommendation (LOR) নেওয়ার জন্য এক শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম। আমি Erasmus এ এ্যাপ্লাই করছি শুনে তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলেন, “Erasmus?

এইসব বাদ দাও। বাবার টাকা আছে। সেল্ফ ফান্ডে এ্যাপ্লাই করো, হলেও হয়ে যেতে পারে তোমার”। আমার উত্তর ছিলো, “আচ্ছা স্যার, ধন্যবাদ”। যাইহোক, সেই শিক্ষক আমাকে LOR দেন নাই।

Advisory Panel Member হিসাবে ELSEVIER এ সিলেক্ট হয়েছি এটা জানানোর পর একজন ডক্টরেট শিক্ষক বলেছিলেন, “It is a trap, you are not enough qualified for this position. এইসব করতে যোগ্যতা লাগে, PhD লাগে।

আমিই এখনো Join করতে পারলাম না, তুমি কিভাবে পারবা? তুমি কে যে ওরা তোমাকে নিবে?”।

আলহামদুলিল্লাহ।

আজ আমি ERASMUS Double Degree Master Graduate (প্রথমতো, Erasmus Mundus Joint MSc in Smart Cities and Communities (SMACCs) from the Heriot-Watt University, Edinburgh, United Kingdom.

দ্বিতীয়তো, second Master’s Degree in Research in Energy Efficiency and Sustainability in Industry, Transport, Building and Urbanism from the University of the Basque Country (UPV/EHU), Bilbao, Spain.)

আজ টানা তিন বছর আমি Advisory Panel Member হিসাবে ELSEVIER এ বাংলাদেশের হয়ে কাজ করছি।

আলহামদুলিল্লাহ।

বিগত দুই বছরে, Head হিসাবে Energy and Technology Research Division, ABCD Laboratory, Bangladesh এ নিয়োজিত আছি।

২০+ National এবং International স্টুডেন্টস আমার সুপারভিশনে কাজ করছে এবং ELSEVIER, OXFORD University Press, Springer Nature, Routledge ইত্যাদি সনামধন্য Publishers এ আমাদের ১০ এর অধিক কাজ Published, In Press, Accepted, Revision, In Review, এবং Submitted অবস্থায় আছে।

আলহামদুলিল্লাহ।

এইছাড়াও, বিগত দুইবছরে আমি-

Editorial Board Member, IEEE Smart Cities.

Publication Committee Member, IEEE Smart Cities.

National Committee Member, Smart Cities Group, International Electrotechnical Commission (IEC).

-দের সাথে যুক্ত আছি।

পাশাপাশি, ৩০+ IEEE Flagship Conference থেকে Session Chair, Program Committee, এবং Review Committee member হিসাবে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি।

বর্তমানে আমার ২৩ Published, ৫ Accepted, এবং ১০+ Revision, In Review, এবং Submitted Paper আছে।

আলহামদুলিল্লাহ।

আমাদের স্বভাবে এটা এসে গিয়েছে, যদি কেউ সৎ উপায়ে, নিজের চেষ্টায়, কষ্টে সফলতা অর্জন করতে চায় তাহলে আমরা তাকে কথার মাইরে মেরে ফেলতে চাই।

কেননা, আমরা বুঝতে পারি যে সেই সফল ব্যাক্তি খুব দ্রুত বাকিদের ছাড়িয়ে যাবে। আমরা ভুলেই গিয়েছি যে, কাউকে Motivate, Inspire করতে টাকা লাগে না, এমনকি নিজের কোনো ক্ষতিও নাই।

আমার আজকের এই সফলতার পিছে আমার আব্বু আম্মুর দোয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি। ভাইয়ার (Md. Junaid) হাত ধরে ঢাকা আসা এবং আমার প্রত্যকটা কাজে আমাকে সাপোর্ট দেওয়া, আজকের আমিতে রুপান্তরিত হওয়ার পিছনে অবদান ভাইয়ার অনেক বেশি।

আমার স্ত্রীর (শারমিন সুলতানা ইমু) সবসময় বলা, “তুমি যাই করো পাশে আমি আছি, চিন্তা কইরো না, আমি জানি তুমি পারবা, ইন শা আল্লাহ।”, যা আমাকে অনেক সাহস, মানশিক শক্তি দেয় ভালো কিছু করার এবং সফলতা অর্জন করার।

আমার ছোট ভাইদের (Md. Shehzad, Masum Ahmed) সাপোর্ট সবসময়, সকল পরিস্থিতিতে আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে অনেক বেশি সাহায্য করেছে।

এইছাড়াও, আমার Respected Undergraduate Supervisor, Assistant Professor, Susmita Ghosh Ma’am, AIUB, Bangladesh এর কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি।

পরিশেষে, আমার Master Thesis Supervisor, Associate Professor, Alvaro Campos Celador, UPV/EHU, Spain নাম নিতে চাই।

স্যারের সাথে বিগত ১০ মাস কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। স্যার সবসময় আমার উপর বিশ্বাস করেছেন, যার কারনে আমি অনেক ভালো এবং ইউনিক একটা কাজ করে শেষ করতে পেরেছি।

Professor সবসময় আমাকে বলেছেন, আমি Academia তে অনেক ভালো কিছু করবো এবং একই কথা উনি আমার Diary তেও লিখেছেন (All the best for a bright future in Academia).

মনে রাখতে হবে, সফলতা অর্জনে করতে হলে অন্যের অহেতুক কথা দিয়ে নিজেকে থামানো যাবে না। অন্যকে দেখানোর জন্য না, নিজেকে খুশি করার জন্য কাজ করতে হবে।

এই দুনিয়াতে আমরা সবাই ই আমার মতো কারো না কারোর কাছে জীবনে কিছু না করতে পারার “মহান লাইন” শুনেছি।

এই “মহান লাইন” গুলোকেই জীবনের সফলতা অর্জনের চাবি বানিয়ে ফেলতে হবে। অনেকেই বলেন যে তিনি Talented না। আবার, ভালো প্রোফাইল থাকার পরেও রিজেকশন পিছু ছারছে না।

তাদের জন্য দুই লাইন বলে আমার লেখা শেষ করবো,

“Hard work beats talent when talent doesn’t hard work.”
– Tim Notke

“Before getting a logical Acceptance, prepare yourself enough to Accept a lot of illogical REJECTION.”

– Mohammad Zeyad

Keep me in your prayers.