তোমরা সবাই জানো সাবজেক্ট চয়েস প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।তাই সবাই এখন কিছুটা উদ্বিগ্ন আছো যে কোন সাবজেক্ট নিবো ! কোন দিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে!আর এখনই সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিজে ঠিক করার। তাই তোমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে এই রিভিউ দেয়া হলো।

আচ্ছা আসো প্রথমেই বলি বর্তমান বিশ্বে চমৎকার একটি সাবজেক্ট হচ্ছে ইটিই(ETE)। EEE এবং CSE এই দুইটা সাবজেক্টের কম্বিনেশন হলো ETE। অর্থাৎ তুমি যদি একসাথে CSE এবং EEE এর স্বাদ নিতে চাও, দুটো সাবজেক্টে পড়তে সমান ভাবে আগ্রহী হও, তাহলে নিঃসন্দেহে ETE তোমার জন্য বেস্ট অপশন। আরো বিস্তারিত যদি বলি , ইলেক্ট্রনিক্স , প্রোগ্রামিং , সি/সি++, জাভা , ওয়েব ডেভেলপমেন্ট , ডাটা স্ট্রাকচার এন্ড এলগোরিদম , সার্কিট ডিজাইন , সিগন্যাল , ডিজিটাল এন্ড এনালগ কমিউনিকেশন সিস্টেম , কম্পিউটার কমিউনিকেশন , HTML , ডিজিটাল সিগন্যাল প্রোসেসিং , মাইক্রোপ্রোসেসর এন্ড মাইক্রোকম্পিউটার , ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন , স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি ইত্যাদি কোর্স , যেগুলো অনেকাংশেই CSE, EEE এর সিলেবাস এর অন্তর্ভুক্ত। তারপরও তোমার সংশয় দুর করার জন্য তুমি সিলেবাস চেক করে দেখে নিতে পারো। মূল কথা হচ্ছে তুমি যদি একাধারে প্রোগ্রামার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার,টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও তাহলে তোমার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে ইটিই তে ভর্তি হওয়া। মজার ব্যাপার হল এই বিভাগ হতে তুমি উপরের যেকোন একটাতে তোমার ক্যারিয়ার গড়তে পারবে।

এবার আসো ETE বিষয় নিয়ে আরো একটু বিস্তারিত বলি, এই বিষয়ের Core Course হল Electronics and Communication । ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি । সমস্যা হয় কমিউনিকেশন এর বেপারটা মাথায় ঢুকে না। ETE এর কোর্স এ প্রথম দিকে থাকে ব্যপকভাবে Electronics এর কোর্স। এক সময় Communication এ প্রবেশ করবা। Electronics এর জ্ঞান ছাড়া Communication সম্ভব না যেহেতু দুটোই পরস্পরের সাথে রিলেটেড।

একজন ছাত্র ETE তে সাধারণত যে কোর্সগুলো পরে থাকে [ কোর্সগুলোর নামে সামান্য বিভিন্নতা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে]-

1.Analog Electronics; 2. Digital Electronics; 3.Electrical Machines and Measurements; 4. Electrical Circuit Analysis; 4. Engineering Electromagnetic and Antenna Theory 5.Industrial and Power Electronics ; 6. Radio and Television Engineering; 7.Advanced Electronic Circuits; 8.Electronic Devices 9.Optical Fiber Communication; 10. Microwave and Satellite Communication; 11. Digital Signal Processing; 12. Scientific, Industrial and Bio Medical Instrumentation; 13.Semiconductor and VLSI Technology; 14. Communication Theory; 15. Advanced Communication Theory; 16. Control Engineering; 17. Mobile Cellular Communication; 18. Telecommunication Network.19. Multi media Communications 20. Image Processing

এছাড়াও Programming C/C++, Microprocessor and Assembly language, Micro Controller, Data Communication and Computer Network, Computer Peripheral and Interfacing, Computer Organization and Architecture, Renewable Energy Technology, Engineering Drawing কোর্স গুলো করতে হয় ।
এছাড়া মাইনর কোর্সগুলো তো আছেই সেগুলোর কথা না বললাম।

তোমাদের অনেকেই ETE/ECE নিয়ে কনফিউজড থাকে। এখানে বলে রাখা ভালো যে বাংলাদেশে কার্যত দুটো সাবজেক্ট নামের পার্থক্য ছাড়া তেমন কোনো বড় পার্থক্য নেই। এছাড়াও দুটো সাবজেক্টের সিলেবাসও একই।অনেক সময় দুই একটা কোর্স ভিন্ন থাকলেও থাকতে পারে।তাই তোমাদের সন্দেহ দূর করতে চাইলে দুটো সাবজেক্টেরই সিলেবাস চেক করে দেখে নিতে পারো।

তাহলে এখন আসি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে একজন টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারের পার্থক্যটা কি? পার্থক্য হল ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের Power Plant Engineering, Power Conversion, High Voltage Engineering, Power Plant Protection, Power System Reliability, Power System Operation and Control এই কোর্সগুলো মেজর হিসেবে পড়তে হয়- যেটাকে CORE কোর্স বিবেচনা করা যেতে পারে । কিন্তু টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারদের CORE কোর্স হল কমিউনিকেশন।

তোমাকে কাজ করতে হবে কমউনিকেশন এর কথা চিন্তা করে, কিভাবে ইফেকটিভলি তুমি ডাটা ট্রান্সপার করবে।ধরো তোমার কাছে একটা তথ্য আছে সেটা আরেক জায়গায় Transfer করতে হবে। এখন একজন টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তোমার কাজ হবে Data Loss/Attenuation কমানের মাধ্যমে তোমার তথ্যের সঠিক প্রেরণ । সেটার জন্য তোমাকে কখন কোথায় কি উপায় প্রয়োগ করতে হবে সেটা শিখান হবে ETE তে। একটা সময় ছিল মোবাইল এ কথা বলতে খরচ ছিল মিনিটে ১০ টাকা। এখন ১০ পয়সা। এটা সম্ভব হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের উন্নতির কারনে। একসময় ছিল ইন্টারনেট ব্যবহার ছিল কল্পনার ব্যপার। এটা এখন সবার কাছে সবচেয়ে সহজ ব্যাপার। কারণ Fiber Optic Communication সহ কমিউনিকেশন এর উন্নতির কারণে।

 

মনে রাখবা একজন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কখনও শেষ হয় না। এখন পর্যন্ত Bending Loss, Dispersion এগুলো কমানো সম্ভব হয়েছে তবে অনেক Information এখনও Loss এখনো যথেষ্ট কম না। আর এসব নিয়ে কাজ এখনও হয়ে যাচ্ছে । ভবিষ্যতে আরও হবে ।

ইটিই(ETE) ব্যাপারে অনেক কথা হল,এবার বলি চুয়েট ইটিই(ETE) নিয়ে কারণ তুমি যেহেতু চুয়েটের ETE তে পড়বে ,তাই এগুলো জেনে রাখা ভালো । বর্তমানে চুয়েটে অন্যতম সেরা বিষয় এই ইটিই(ETE)। ২০১২ সালে এই ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয় ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। গত বছর থেকে এই ডিপার্টমেন্টের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৬০ জন করা হয়। যাত্রা শুরু থেকেই এই ডিপার্টমেন্ট সগৌরবে এগিয়ে চলছে সুনামের সাথে। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব। বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এই ইটিই (ETE) ডিপার্টমেন্ট এখন সমৃদ্ধ ।এখানকার ল্যাব গুলো হলো:
(1) Electronic Lab
(2) Antenna and Microwave lab
(3) Communication system lab
(4) Computer and Network lab
(5) Digital and Microprocessor lab
(6) Signal Processing lab
(7) VLSI and Simulation lab
(8)TESLA lab

Research Areas:

Electronics, Computer networks, Telecommunication, Wireless Communication, Cellular and Satellite Communication, Semiconductor Technology and Devices, Renewable Energy Technology, Intelligent System Engineering, Digital signal processing, Solid state device networking, Instrumentation, Robotics, Biomedical Technology, Nano Technology, (*Semiconductor technology, Quantum Mechanics, Quantum Optics, Quantum Thermodynamics, Opto-electronics) and many more etc.

Higher field of studies:

M.S/ PhD in EEE, CSE. Microwave/ satellite oriented communication, Nuclear Engineering, Robotics, Biomedical Physics, Theoretical Physics, Physics, Astrophysics, Renewable Energy Technology, Microelectronics, Nano electronics, Control System Engineering etc.
এছাড়া জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া তে উচ্চ শিক্ষার যেমন ভাল সুযোগ আচ্ছে তেমন রয়েছে চাকরির সুবিধাও ।

আমরা বাইরের বিশ্বের তুলনায় টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে অনেক পিছিয়ে আছি যেটা আমরা সবাই জানি। আর সেই জন্যই এয়ারটেল থেকে বিটিসিএল এ ফোন করা হয় তখন ৫ বার নেটওয়ার্ক এরর হয়,এখনো আমাদের কল ড্রপের সম্মুখীন হতে হয়। এটা হবে না যদি ETE এর যথেষ্ট উন্নতি হয়। বাংলাদেশ এ রবি, গ্রামীনফোন, এয়ারটেল , বাংলালিঙ্ক এরা ETE দের recruit করা শুরু করেছে । একটা সময় এদের প্রচুর পরিমানে recruit করতে হবে। 5G এর জন্যই দেখা যাবে আরও নতুন নতুন পোস্ট খোলা হচ্ছে। এছাড়া Wimax company গুলো ETE Graduates দের জব অফার করে থাকে System Engineer/ Network Engineer হিসেবে। তবে যদি একটু বাহিরের দিক তাকাই তাহলে আমার না বললেও চলবে। ভারতেই এখন ETE এর চাহিদা কল্পনাতীত । সেখানে সরকারি ইঞ্জিনিয়ার কোটাতেও ETE ছাত্ররা কোটা পায়। UK তে একজন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার এর বেতনের হিসাবটা এরকম- [http://www.prospects.ac.uk]

এই কমিউনিকেশনের স্বর্ণযুগে ইটিই ইঞ্জিরিয়ারদের জব ফিল্ড অনেক বেশি । টেলিভিশন কোম্পানি , স্যাটেলাইট চ্যানেল কোম্পানি , টেলিকম কোম্পানি , নেট সেবাদাতা (যেমন : amra ) কোম্পানি , থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের আইটি সেক্টর এমনকি সশস্ত্র বাহিনীতেও জব ফিল্ড আসে ইটিইর । আর যদি গবেষণার বিষয়ে আসি , সেই ব্যাপারে একটা কথা শুনো । জাপানের মোনোবসু স্কলারশিপের কথা জানো ? এটা জাপান সরকার দে । এটা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বৃত্তি বলা হয় । ওইখানে কিন্তু কম্পিউটার সাইন্স বলে কোন কিছুর উপর বৃত্তি দেয়া হয় না বরং আইটি নামে একটা বিষয়ে দেয়া হয় যা তুমি ইটিই হিসাবে চুয়েটে পড়তে চাও । এখন দেখো , জাপানের মত উন্নত একটা দেশ যেখানে এখনো তথ্য ও যোগাযোগ খাতে দক্ষ ইঞ্জিরিয়ার চায় , সেখান তুমি যখন ইটিই গ্র্যাজুয়েট হবে , তুমি বিশ্বের একজন “প্রার্থিত” ইঞ্জিনিয়ার হবে সেটা বলা বাহুল্য ।
.
Career opportunities:

# Telecommunication and Mobile companies
# Wimax and Broadband Technology companies
# Bangladesh Radio (radio Engineer) (*)
# BCS Telecom Cadre
# Scientific Officer at BAEC (*)
# Scientific Officer, BCSIR (*)
# BCS Economic Cadre( Assistant Chief)
# Petro Bangla ( Assistant Manager, Electronics)
# Software Companies and Networking
# Bio Medical Instrumentation Engineer
# General Cadre Service, PSC (BCS)
# In abroad- Communication Engineer in
Telecom and Satellite sector and Wireless
Communication, Microwave Engineer.

এসব কিছুই তোমার সম্ভব- যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা ভাল CGPA ও দক্ষতা নিয়ে বের হতে পার। মেধা আছে বলেই বাংলাদেশর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেড়েছ । এখন সেই মেধাকে ঝালাই করার সময়।

যোগ্যতা দিয়েই সব অর্জন করতে হয়। চাকরিটাও করতে হবে। তাই নিজের মেধাকে কাজে লাগাও- তোমাকে বলতে হবেনা আমি পাশ করে বসে আছি। যদি নিজের লেভেলটাকে আরেকটু উপরে নেয়া যায় তাহলে হয়ত এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে যেখানের কথা চিন্তাও করনাই। তাই প্রথম থেকেই ভাল করে চেষ্টা করে যাও। ETE এর একটা কোর্স আরেকটার সাথে খুব related. তাই প্রত্যেক কোর্সের সময় সেটা ভালমত আয়ত্তে নিবে। যেকোন শিক্ষক এর কাছ থেকেই যা বুঝনা শিখে নিবে। কারণ শিখার সময় কিন্তু মূলত ৪ বছরই। এর পর সেটা প্রয়োগ করার সময়।

চুয়েট ইটিই (ETE) নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়, সেটা হলো এই ডিপার্টমেন্টে পাবে তুমি অনেকগুলো দক্ষ, হেল্পফুল , আন্তরিক শিক্ষকমন্ডলী যারা সর্বদা তোমাকে যেকোনো বিষয়ে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে, যারা তোমার যেকোনো সমস্যায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী শিক্ষক সম্পর্ক অন্য সবার জন্য আদর্শ। এছাড়াও এই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক ডিপার্টমেন্টের সূচনালগ্ন থেকেই পুরো ক্যাম্পাসে প্রশংসিত, সবার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাই এই ইটিই (ETE) ডিপার্টমেন্ট কে বলা হয় ETE পরিবার।

তাছাড়া খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিতর্ক , সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অন্ত: বিশ্ববিদ্যালয়, আন্ত: বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিটিশন , সব জায়গায় ইটিই(ETE) শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকে এবং তাদের বিভিন্ন অর্জনের সাথে পুরো ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায় এই ইটিই শিক্ষার্থীরা। পুরো ক্যাম্পাসে ETE শিক্ষার্থীরা সমান ভাবে সমাদৃত তাদের বিভিন্ন প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ডের জন্য। 🙂

সর্বোপরি শুভকামনা রইল তোমাদের জন্যে, গ্রিন হেভেনে তোমাদের ভাবী ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন গর্বিত শিক্ষার্থী হিসেবে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় তোমাদের সকল সিনিয়র ভাই এবং আপুরা

© তাহজীব তাজোয়ার ইবনে কামাল
ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
ব্যাচ’১৮
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

Chittagong University of Engineering & Technology – CUET

Full Review