ফাহিম উল করিম – জন্মগ্রহন করেন মাগুরার এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে।
আট দশজন ছেলে মেয়ের মত স্কুলে যাওয়া হতো বন্ধুদের সাথে।

সবে মাত্র অষ্টম শ্রেনির পরিক্ষা শেষ করলেন।
হঠাৎ করেই ফাহিম দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন – ম্যাসিকুলার ডিস্ট্রপি।

ডাক্তার জানায় জেনেটিক প্রবলেম ভালো হওয়ার আশা নাই,তবে ফিজিও থেরাপি দিয়ে কিছুটা সুস্থ করা যাবে।

আর মোটা অংকের টাকা খরচ করে ভারত নিয়ে গেলে হয়তো একটু ভালো পজিশনে আসতে পারে,তবে এটা শতভাগ ঠিক হবে না।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে তা সম্ভব ছিলো না।
ফাহিম হয়ে পড়ে বিছানা বন্দী ।

এমনকি নিজের খাওয়াটাও খেতে পারতো না,
গোসল থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কাজ করতো ফাহিমের মা বোন।

মাঝে মাঝে হয়তো তারা বিরক্ত হয়ে যেতো।

বাবা- মা ও বোনের সাথে ফাহিম উল করিম। ছবি- ফাহিমের ফেসবুক প্রোফাইল 

বিচানায় শুয়ে বসে ঘরবন্দী ফাহিম ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলো অনলাইন থেকে ঘরে বসে আয় সম্ভব।

ফাহিমের ইন্সপাইরেশন ছিলো স্টিফেন হকিং।
ফাহিম ভাবতে লাগলো হকিং যদি পারে আমি কেন পারবো না।

ফাহিম শুরু করে দিলো চেষ্টা।

কয়েকমাস কাজ শিখার পর ফাহিম ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ফাইবারে একাউন্ট খুলে।

পরের দিনই পেয়ে যায় অর্ডার।
অর্ডার কমপ্লিট করে ৫ ডলারের, বায়ার খুশি হয়ে ফাহিমকে ১০ ডলার টিপসও দেয়।

শুরু হলো ফাহিমের নতুন জীবন।

বিছানায় বসেই যার হাত পা চলে না,ঠিক মত কথা বলতে পারে না,এসকল প্রতিবন্ধকতাকে গুমরে দিয়ে ফাহিম দেখতে থাকে নতুন স্বপ্ন। ইনকাম চলছিলো ভালোই। ২০১৪ থেকে যাত্রা শুরু।

ফাহিম ছিলো পরিবারের বড় সন্তান,
অসুস্থ হওয়ার পর পিতা যখন বোঝ ভাবতে যাবে তখন ফাহিম আশির্বাদ হয়ে যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে সংসারের হাল ধরে প্রতিবন্ধি ফাহিম।

এখন ফাহিমের একাউন্টে হাজার ডলার জমা হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাসিস কর্তৃক প্রতিবছর জেলা ভিত্তিক সেরা একজনকে পুরুষ্কার দেওয়া হয়।
নাম আসে ফাহিমের, টাকার পাশাপাশি সম্মানের ঝড়িও ভরতে থাকে।

পুরুষ্কার নিতে ও দিতে আসা অনেকেই ফাহিমকে দেখে তব্দা খেয়ে যায়।

ফাহিম চলতে থাকে দূর্বার গতিতে।
বিশ্বের হাই প্রোফাইল টপ ফ্রিল্যান্সিং সাইট (যেখানে বর্তমানে সবাই একাউন্ট করার সুযোগ পায় না) আপওয়ার্কের সর্বোচ্ছ ব্যাজ টপ রেটেড সেলার ব্যাজ পায় ফাহিম।

এছারাও ফাইভার ডটকমে ফাহিম সর্বোচ্ছ টপরেটেড সেলার হিসেবে তার সার্ভিস প্রধান করছিলো।

ফ্রিল্যান্সার ডটকম, এডোবি স্টক, গ্রাফিক রিভার, ফ্রিপিক সহ সব সাইটে ফাহিম ছিলো সেরাদের একজন।

ফাইভারে ফাহিমের সাকসেসফুল ওর্ডার কম্পিটিশন ও গুড রিভিউ এবং গুড কমিউনিকেশন থেকে ফাইবার অথরিটি ফাহিম উল করিমকে বাংলাদেশের ফাইবার কমিউনিটি লিডার হিসেবে নিযুক্ত করে।

কমিউনিটি লিডার হওয়ার পর থেকে ফাহিম সেবা দিয়ে যাচ্ছিলো নতুন ফ্রিল্যান্সারদের।

ফাহিমের স্বপ্ন ছিলো টাকা উপার্জন করে একটা নিজের ব্যাবসা দাড় করানো৷ যেখানে তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করবেন।

নতুনদের সবসময় গাইডলাইন দিতেন ফাহিম উল করিম। এবং নানান ভাবে ইন্সপায়ার করতো ফহিম।

বেশ কয়েকবার বেসিস কর্তৃক পুরুষ্কার পান পাহিম।
বাংলাদেশের আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রি জুনায়েদ আহমেদ পলক স্যার নতুন প্রজন্মকে যখনই কোন উদাহরণ দিতেন।

তখনই প্রথম নামটি থাকতো ফাহিমের।
কারন ফাহিম লড়েছে প্রতিবন্ধকতার সাথে।
লড়েছে সমাজের অবহেলার সাথে।

একজন সফল ফ্রিল্যান্সার শুধু নয়। ফাহিম ছিলেন অতন্ত্য শান্ত ও নিরহংকারী।

যখনই নতুন কেউ ফাহিমকে কোন সমস্যা নিয়ে নক করতো তখনই ফাহিম সমস্যা টা সুন্দর ভাবে সলভ করে দিতো।

ফাহিম লাখো ফ্রিল্যান্সারের ইন্সপাইরেশন ছিলো।
গতকাল রাতে ফরিদপুরের একটি হসপিটালে বাংলাদেশের এই নাম না জানা রত্ন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাহ ইলাহি রাজিউন।

ফাহিমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আল্লাহ ওনাকে বেহেস্ত নসিব করুক-আমিম

“ফাহিম তুমি রবে নিরবে,
আমাদের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে”।

লেখকঃ মোঃ নুরুল আফসার ভুঁইয়া