ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

এটি মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। বিশ্বস্থতা, সাহস, বিশুদ্ধতা এই তিনটি লক্ষ নিয়ে কাজ করে এফবিআই।

ওয়াশিংটন ডিসির জে ইজার হভার ভবনের এফবিআইয়ের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।।

সাধারণ নাম
Federal Bureau of Investigation

সংক্ষেপণ
FBI

নীতিবাক্য
আনুগত্য, নির্ভিকতা, শুদ্ধতা[১]

টপ টেন মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্ট:-এফবিআই

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এই পর্যন্ত এফবিআই প্রকাশিত মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় কারা কারা স্থান পেল, দেখে নেয়া যাক।

•ইয়াসের আবদেল সাঈদ

জন্মস্থান: সিনাই, মিশর
জন্মতারিখ: জানুয়ারি ২৭, ১৯৫৭
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৬’২”
জাতীয়তা: মিশরীয়

•আলেহান্দ্রো ক্যাস্টিলো

জন্মস্থান: অ্যারিজোনা
জন্মতারিখ: নভেম্বর ২৬, ১৯৯৮
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’৬”
জাতীয়তা: আমেরিকান

•অ্যালেক্সিস ফ্লোরেস

জন্মস্থান: হন্ডুরাস
ব্যবহৃত জন্মতারিখ: ১৮ জুলাই, ১৯৭৫/ ১৮ জুলাই, ১৯৮২/ ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০/ ১৭ জুলাই, ১৯৮২
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’৪”
জাতীয়তা: হন্ডুরান

•জেসাস রবার্তো মুঙ্গুইয়া

জন্মস্থান: টরেন্স, ক্যালিফোর্নিয়া
জন্মতারিখ: আগস্ট ১৩, ১৯৭৬
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’৭”
চিহ্নিতকরণ: সারা গায়ের অসংখ্য ট্যাটু, বুকে লেখা ‘মাই বেবি জেসিকা’, কেটে ফেলা মধ্যাঙ্গুলি
জাতীয়তা: আমেরিকান

•রবার্ট উইলিয়াম ফিশার

জন্মস্থান: ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক
জন্মতারিখ: এপ্রিল ১৩, ১৯৬১
চোখের রঙ: নীল
উচ্চতা: ৬’
জাতীয়তা: আমেরিকান

•এডুয়ার্ডো রাভেলো

জন্মস্থান: মেক্সিকো
ব্যবহৃত জন্মতারিখ: অক্টোবর ১৩, ১৯৬৮/ ডিসেম্বর ২২, ১৯৬৫/ অক্টোবর ১৫, ১৯৬৮/ নভেম্বর ১৩, ১৯৬৯
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’৯”
জাতীয়তা: মেক্সিকান

•সান্তিয়াগো ভিয়ালবা মেডেরোস

জন্মস্থান: ট্যাকোমা, ওয়াশিংটন
জন্মতারিখ: জুলাই ৫, ১৯৯১
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’১০”
চিহ্নিতকরণ: বাম কাঁধে ‘এস’ এবং ডান কাঁধে ‘ই’ লেখা ট্যাটু
জাতীয়তা: আমেরিকান

•জ্যাসন ডেরেক ব্রাউন

জন্মস্থান: ক্যালিফোর্নিয়া
ব্যবহৃত জন্মতারিখ: জুলাই ১, ১৯৭৯/ জানুয়ারি ১৭, ১৯৭১
চোখের রঙ: সবুজ
উচ্চতা: ৫’১০”
পেশা: গলফ খেলার সরঞ্জাম আমদানি-রপ্তানি
জাতীয়তা: আমেরিকান

•ভদ্রেশকুমার চেতানভাই প্যাটেল

জন্মস্থান: গুজরাট, ভারত
জন্মতারিখ: মে ১৫, ১৯৯০
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৫’৯”
ওজন: ১৬৫ পাউন্ড
জাতীয়তা: ভারতীয়

•উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড বিশপ জুনিয়র

জন্মস্থান: প্যাসেডিনা, ক্যালিফোর্নিয়া
জন্মতারিখ: আগস্ট ১, ১৯৩৬
চোখের রঙ: বাদামি
উচ্চতা: ৬’১”
পেশা: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক পরিষেবা কর্মকর্তা
জাতীয়তা: আমেরিকান

রবার্ট হ্যানসেন: এফবিআই-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন যিনি

২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই নিজেদেরই এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় সেই কর্মকর্তা একজন এজেন্টের সাথে ‘ডেড ড্রপ’ করছিলেন।

‘ডেড ড্রপ’ হলো গুপ্তচরদের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের একটি পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে দুজন গুপ্তচর নিরাপত্তার খাতিরে সরাসরি দেখা না করে একটি পূর্বনির্ধারিত জায়গায় তাদের বিনিময়ের বস্তু বা তথ্য ফেলে রেখে আসে।

এরপর সুবিধা মতো সময়ে নিজেদের বিনিময়কৃত জিনিস নিয়ে নেয়। ডেড ড্রপ করার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়া সেই এফবিআই এজেন্টের নাম রবার্ট ফিলিপ হ্যানসেন।

রবার্ট ফিলিপ হ্যানসেনকে এফবিআইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘বিশ্বাসঘাতক’ এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আমেরিকার কোর্ট অব জাস্টিস তার এই বিশ্বাসঘাতকতাকে বর্ণনা করেছিল ‘আমেরিকার ইতিহাসে গুপ্তচরবৃত্তির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়’ হিসেবে।

কিন্তু কেন হ্যানসেনকে ‘সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক’ কিংবা তার কাজকে ‘এফবিআইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো?

আখ্যায়িত করার কারণ, তিনি স্নায়ুযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ার কাছে পাচার করেছিলেন।

এফবিআইয়ের ইন্টেলিজেন্স, কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স এবং আমেরিকার পারমাণবিক প্ল্যান্ট-সম্পর্কিত এসব তথ্য পাচারের জন্য তাকে মোটা অংকের অর্থ দেওয়া হয়েছিল।

হ্যানসেনের তথ্যের ভিত্তিতে সোভিয়েত ইউনিয়নে অন্তত দুজন আমেরিকান গোয়েন্দাকে ধরা হয়, যাদের পরবর্তীতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

এফবিআইয়ের এজেন্ট হিসেবে যে বিলাসী জীবনের প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ না হওয়ায় আক্ষেপ করতেন হ্যানসেন।

একদিকে আর্থিক চাপ এবং অপরদিকে এফবিআইয়ের গোয়েন্দা হতে না পারার হতাশা তাকে ডাবল এজেন্ট হতে প্ররোচিত করে।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ডেড ড্রপ পদ্ধতিতে জিআরইউকে অনেক গোপন তথ্য সরবরাহ করেন। এর বিনিময়ে জিআরইউ তাকে ২১,০০০ ডলার প্রদান করে।

১৯৮১ সালে রবার্ট হ্যানসনকে এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ডিসির অফিসে বাজেট এবং সোভিয়েত অ্যানালিটিক্যাল ইউনিটের দায়িত্ব দিয়ে স্থানান্তর করা হয়।

এসময় তিনি পেশাগত কারণে সোভিয়েত গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্সের বিপুল পরিমাণ তথ্য হাতে পান।

তাকে এফবিআইয়ের সার্ভারে সোভিয়েত গোয়েন্দা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থানরত এফবিআইয়ের সোর্স সম্পর্কে প্রচুর তথ্যে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল। এরপর থেকে তিনি আরও এক ধাপ উপরে ওঠে কেজিবির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৯১ সালে হ্যানসেন কেজিবির কাছে তথ্য পাচার থেকে বিরত থাকেন। এর আংশিক কারণ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। আর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়, তখন এফবিআই নিজেদের ভেতরকার ডাবল এজেন্টদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছিল।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের দিকে এফবিআই-ও নিজেদের ভেতরকার ডাবল এজেন্টদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। সম্ভবত রাশিয়ান এক গুপ্তচরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে হ্যানসেনের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়।

২০০১ সালের জানুয়ারিতে তাকে আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এফবিআইয়ের হেডকোয়ার্টারে স্থানান্তর করা হয়। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অনেক গোপন তথ্যসহ একটি ময়লার ব্যাগ ফেলে রাখার সময় (ডেড ড্রপ পদ্ধতি) হাতেনাতে গ্রেফতার হন।।[২]

হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়:- এফবিআই ও পুতিন

মার্কিন নির্বাচন পরে পরাজয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলছেন হিলারি ক্লিনটন। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড সামিটের এক অনুষ্ঠানে মিস ক্লিনটন বলেছেন, নির্বাচনের প্রচারাভিযান নিয়ে তিনি একটি বই লিখছেন। সে বইয়ের জন্য মিস ক্লিনটন তার নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করার জন্য ব্যাপক গবেষণা করেছেন।

তিনি বলেন, তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে চ্যালেঞ্জ, সমস্যা এবং ঘাটতি ছিল। নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মিস ক্লিনটন তৎকালীন এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কমি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ি করেছেন।

। মিস ক্লিনটন দাবি করেন, তিনি নির্বাচনে জয়ের পথে ছিলেন। কিন্তু অক্টোবরের ২৮ তারিখে তৎকালীন এফবিআই ডিরেক্টরের চিঠি এবং রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার কারণে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি।

২০১৬ সালের অক্টোবরের ২৭ তারিখে নির্বাচন হলে জয়লাভ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন হিলারি ক্লিনটন। মিস ক্লিনটন বলেন, তার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ ১০দিনে সব কিছু পাল্টে যায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় একটি দলের হয়ে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেন। সেটিও তার পরাজয়ের জন্য একটি বড় কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এটা সত্যি। নারীদের প্রতি বৈষম্য রাজনীতি, সমাজ এবং অর্থনীতির একটি অংশ। তার নির্বাচনে জয়লাভ করা নারী অধিকারের জন্য বিশ্বের একটি বড় বিষয় হতে পারতো বলে মিস ক্লিনটন মনে করেন।[৩]

এক বানানভুলো স্পাইয়ের সাথে লড়াইয়ের গল্প:- এফবিআই

১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রায়ান রিগ্যান পুরোদমে কাজে লেগে পড়েন। তিনি ইন্টেলিঙ্ক ব্যবহার করে লিবিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান এবং চীনের কাজে লাগার মতো বিভিন্ন তথ্য এবং ছবি অনুসন্ধান করতে শুরু করেন।

তিনি জানতেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই দেশগুলোই ছিল আমেরিকার সবচেয়ে বড় শত্রু। কাজেই আমেরিকার গোপন তথ্যের জন্য এরা প্রত্যেকেই মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে রাজি হবে।

রিগ্যান ইন্টেলিঙ্কে গিয়ে Top Secret Iran এবং Top Secret Libya লিখে এসব দেশ সম্পর্কে গোপন তথ্য এবং ছবি খুঁজে বের করে প্রিন্ট করতে শুরু করেন। অবশ্য ডিসলেক্সিয়ার কারণে তিনি Libya’র পরিবর্তে একাধিকবার Lybia এবং Libia লিখেও সার্চ করেন।

এসব দেশের কাছে বিক্রি করার জন্য তিনি ইসরায়েল সম্পর্কেও বিভিন্ন গোপন তথ্য ডাউনলোড করে রাখেন। এছাড়াও আমেরিকার সামরিক সক্ষমতা এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য তো ছিলই।

অফিসে রিগ্যানের এবং তার পাশের ভদ্রলোকের কিউবিকলের মাঝামাঝি স্থানে একটি লকার ছিল। রিগ্যান প্রিন্ট করা ডকুমেন্টগুলো সেই লকারের ভেতর জমা করে রাখতে শুরু করেন।

কয়েকদিন পরপরই তিনি নতুন নতুন ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতেন এবং সবার চোখের সামনে দিয়ে লকারটি খুলে আগে থেকে জমানো ডকুমেন্টগুলোর সাথে সেগুলো যোগ করে আবার লকারটি বন্ধ করে দিতেন।

কেউ কখনও তাকে জিজ্ঞেস করত না, কী আছে সেখানে।

১৯৯৯ সালের শেষের দিকে একবার রিগ্যানকে অফিসের কাজে কয়েকদিনের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিল। ফিরে এসে তিনি দেখতে পান, তার লকারটি গায়েব হয়ে গেছে!

রিগ্যানের সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। তিনি কি তাহলে ধরা পড়ে গেছেন? কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কাছে বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টের অফিস থেকে একটি ফোন আসে।

অপরপ্রান্তের লোকটি জানতে চায়, লকারের ভেতরে থাকা কাগজপত্রগুলো কি তার?

অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। রিগ্যান স্বীকার করেন, হ্যাঁ, সেগুলো তারই। লোকটি জানায়, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টের কর্মীরা অফিস গোছাতে এসে লকারটির কোনো মালিক না পেয়ে সেটি তুলে নিয়ে গিয়েছিল।

পরে ভেতরে কাগজপত্র আছে বুঝতে পেরে তারা সেটি খোলার চেষ্টা করে। চাবি না থাকায় তারা ড্রিল মেশিন দিয়ে লক খুলে ডকুমেন্টগুলো বের করে।

গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় তারা সেগুলো জমা করে রাখে এবং তার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে।

চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা আস্তে করে ছেড়ে দেন রিগ্যান। তার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক ছিল। ডকুমেন্টগুলো দেখেও বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টের কর্মীরা কিছু সন্দেহ করেনি।

তারা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছে, সেগুলো তার কাজেরই অংশ। তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে এবং ডকুমেন্টগুলো তার অফিসে পাঠিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়ে ফোন রেখে দেন রিগ্যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের একজন সবগুলো ডকুমেন্ট একটি প্যাকেটের ভেতর ভরে তার অফিসে দিয়ে যায়।

এবার রিগ্যান ডকুমেন্টগুলো লুকিয়ে রাখেন তার মাথার উপরে দেয়ালের সাথে লাগানো একটি ক্যাবিনেটের ভেতর। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে আসেন, আর বেশিদিন এগুলো অফিসে রাখা নিরাপদ হবে না।

দ্বিতীয়বার অন্য কারো চোখে পড়ার আগেই ধীরে ধীরে এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে অন্য কোনো জায়গায়।

হাই স্কুলে ওঠার পর থেকেই ব্রায়ান রিগ্যান নিয়মিত জিমে যাওয়ার অভ্যাস শুরু করেছিলেন।

এনআরওতে যোগ দেওয়ার পর থেকে জিমে যাওয়া তার জন্য আরো সহজ হয়ে যায়। এনআরও ভবনের বেজমেন্টেই এর কর্মচারীদের জন্য একটি জিম ছিল।

রিগ্যান প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় জিমে যাওয়ার ব্যাগে করে বাড়তি জামা-কাপড় সাথে নিয়ে যেতেন।

এরপর অফিস শেষে ব্যায়াম সেরে, কাপড় পাল্টে, আবার সেই ব্যাগ কাঁধে করে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়তেন।

২০০০ সালের মার্চ মাসের এক বিকেলে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রিগ্যান তার গোপন ডকুমেন্টগুলো থেকে এক গাদা কাগজ বের করে নেন।

এরপর সেগুলো তার জিমের ব্যাগের ভেতর ঘামে ভেজা জামা-কাপড়ের নিচে লুকিয়ে সবার সামনে দিয়ে কিউবিকল থেকে বেরিয়ে আসেন।

রিভলভিং ডোর দিয়ে বের হওয়ার সময় রিগ্যানের বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছিল। তার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি সিকিউরিটি গার্ডরা তাকে পেছন থেকে ডাক দিলো!

কিন্তু বাস্তবে শেষপর্যন্ত কিছুই ঘটল না। সিকিউরিটি গার্ডরা তাকে বছরের পর বছর ধরে এই একই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আসতে-যেতে দেখেছে।

সেদিন তাকে নতুন করে সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না। কোনো রকম তল্লাশি ছাড়াই বেরিয়ে এলেন তিনি।

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে রিগ্যান অল্প অল্প করে সবগুলো ডকুমেন্ট অফিস থেকে নিজের বাসায় সরিয়ে নেন।

স্ত্রী এবং সন্তানদের অলক্ষ্যে সেগুলো তিনি লুকিয়ে ফেলেন তার বেজমেন্টের একটি ক্যাবিনেটে।

ততদিনে সেখানে প্রিন্ট করা কাগজের সাথে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু সিডি এবং ভিএইচএস টেপও। জুলাই মাসে তিনি যখন সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, তার কাছে বিক্রি করার মতো যথেষ্ট তথ্য জোগাড় হয়েছে, তখন তার বেজমেন্টে সিডি এবং টেপের বাইরে শুধুমাত্র প্রিন্ট করা কাগজের সংখ্যাই ছিল প্রায় ২০,০০০!

২০০০ সালের এপ্রিল মাস থেকেই রিগ্যান বিদেশি গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করেন।

তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ঝুঁকি এড়ানোর জন্য তিনি কখনই সরাসরি কারো সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। প্রথমে তিনি ডকুমেন্টগুলো লুকিয়ে রাখবেন উন্মুক্ত, কিন্তু নির্জন এবং গোপন কোনো স্থানে।

এরপর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করবেন সাংকেতিক চিঠির মাধ্যমে। যদি তারা টাকা দিতে রাজি হয়, তাহলে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তাদেরকে লুকানো স্থানগুলোর স্থানাঙ্ক সরবরাহ করবেন।

আর অধিকতর নিরাপত্তার জন্য বার্তা আদান-প্রদানে প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন।

জুলাই মাসে রিগ্যানের স্ত্রী অ্যানেট যখন তাদের চার সন্তানকে নিয়ে সুইডেনে বেড়াতে যান, তখন একদিন রিগ্যান বেজমেন্টে গিয়ে সবগুলো ডকুমেন্ট গোছাতে শুরু করেন।

কোন দেশের কাছে কী ধরনের তথ্য বিক্রি করা যাবে, সে অনুযায়ী তিনি ডকুমেন্ট, সিডি এবং টেপগুলো একাধিক স্তূপে সাজিয়ে রাখেন। এর বাইরে আরেকটি স্তূপে তিনি প্রায় ৫,০০০ পৃষ্ঠা জড়ো করেন, যেগুলোতে ছিল তার জোগাড় করা সবচেয়ে স্পর্শকাতর তথ্য।

এরপর প্রতিটি স্তূপের ডকুমেন্টগুলো প্রথমে একাধিক পৃথক পৃথক প্লাস্টিকের ব্যাগে এবং এরপর সেই ব্যাগগুলো আবার আবর্জনার পলিথিনে ভরে রেখে দেন

জুলাই মাসের এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় রিগ্যান তার বাসা থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত ম্যারিল্যান্ডের পাটাপস্কো ভ্যালি স্টেট পার্কে গিয়ে উপস্থিত হন।

সেখানকার জঙ্গলের গহীনে গিয়ে তিনি কোদাল দিয়ে মাটিতে গভীর একটি গর্ত করেন।

এরপর ব্যাকপ্যাকে করে বয়ে আনা গোপন ডকুমেন্টগুলোর একটি ব্যাগ সেখানে ফেলে দিয়ে আবার গর্তটি সমান করে বুজে দেন।

কপালের ঘাম মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ান রিগ্যান। আশেপাশে তাকিয়ে পা গুণে গুণে হাঁটতে শুরু করেন নিকটবর্তী গাছটির দিকে।

এরপর এক পকেট থেকে একটি পেরেক বের করে গেঁথে দেন গাছটির গায়ে, আর অন্য পকেট থেকে একটি জিপিএস লগিং ডিভাইস বের করে গাছটির স্থানাঙ্ক নির্ণয় করে টুকে রাখেন একটি নোটবুকে।

পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে একই পদ্ধতিতে এক এক করে সাতটি প্যাকেট জঙ্গলের ভেতর বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ফেলেন রিগ্যান।

কিন্তু এসব প্যাকেটের একটিও তার বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা অন্য বারোটি প্যাকেট তিনি লুকিয়ে ফেলেছিলেন এর কয়েকদিন আগেই, ভার্জিনিয়ার অন্য একটি স্টেট পার্কে।

ম্যারিল্যান্ডের স্টেট পার্কে লুকানো এই সাতটি প্যাকেটের মধ্যে রিগ্যান রেখেছিলেন সেই অতি সংবেদনশীল তথ্যগুলো।

তিনি এগুলো পৃথক স্থানে লুকিয়েছেন তার ইনস্যুরেন্স প্ল্যান হিসেবে। যদি কোনো কারণে তিনি ধরা পড়েই যান, তখন এই অতি গোপনীয় তথ্যগুলোই তাকে রক্ষা করবে।

এগুলো দিয়ে তিনি ব্ল্যাকমেইল করবেন মার্কিন সরকারকে!

২০০১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে রিগ্যানের সন্দেহ হতে থাকে, তার কার্যক্রম হয়তো ফাঁস হয়ে গেছে।

সেই নভেম্বর মাসে তিনি লিবিয়ানদের উদ্দেশ্যে তিনটি প্যাকেজ পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু কয়েকমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। প্যাকেজগুলো কি তবে তাদের কাছে পৌঁছেনি?

সেগুলো কি সিআইএ বা এফবিআইর হাতে পড়ে গেছে? তারা কি তার উপর নজরদারি করছে? রিগ্যান সিদ্ধান্ত নেন, তিনি ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন।

২০০১ সালের মে মাসের ২৩ তারিখ সকাল বেলা তিনি তার ভার্জিনিয়ার নতুন কর্মস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

প্রায় নির্জন রাস্তা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় রিয়ার ভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে তিনি বোঝার চেষ্টা করতে থাকেন, কেউ তার পিছু পিছু আসছে কি না।

মূল সড়ক থেকে হঠাৎ প্রচণ্ড বাঁক নিয়ে তিনি পাশের একটি সরু রাস্তায় ঢুকে পড়েন এই আশায় যে, কেউ তাকে অনুসরণ করলে তাকেও তার মতোই বাঁক নিতে হবে।

আরো কিছুক্ষণ এলোমেলো গাড়ি চালিয়ে তিনি উপস্থিত হন ম্যানাসাস ন্যাশনাল ব্যাটেলফিল্ড পার্কের সামনে।

সেখানকার কাঁচা রাস্তা দিয়ে অর্ধেক পথ যাওয়ার পর গাড়ি থামিয়ে তিনি আশেপাশে তাকালেন। নাহ, কেউ তার পিছু পিছু আসেনি।

তারপরেও সন্দেহজনক গতিবিধি চোখে পড়ে কি না, তা দেখার জন্য আরো ২০ মিনিট তিনি সেখানে বসে রইলেন।

পুরানো আমলের একটি পিকআপ ট্রাক সামনে দিয়ে ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই ঘটল না।

গাড়ির ভেতর থেকে রিগ্যান পুরোনো কয়েকটি ম্যাগাজিন বের করে হাতে নিলেন। এরপর পার্কের ভেতর একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে একটি গাছের নিচে সেগুলো পাথর চাপা দিয়ে রেখে ঘরে ফিরে গেলেন।

সেদিন সন্ধ্যার সময় তিনি আবারও হাজির হলেন সেই পার্কে। গিয়ে দেখলেন ম্যাগাজিনগুলো হুবহু একইভাবে জায়গামতো পড়ে আছে।

কেউ সেগুলো স্পর্শও করেনি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন রিগ্যান। নাহ, কেউ তাকে অনুসরণ করছে না।

কিন্তু রিগ্যানের ধারণা ছিল ভুল। গত কয়েকমাস ধরে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তিনি ছিলেন এফবিআই এর নজরে।

তার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ফোনালাপ তারা রেকর্ড করছিল। জঙ্গলের ভেতর সেই পুরোনো আমলের পিকআপ ট্রাকটিও ছিল তাদেরই ভাড়া করা।

রিগ্যান অত্যন্ত প্রতিভাবান ছিলেন সত্য, কিন্তু এফবিআই এর দুর্দান্ত টিমওয়ার্কের সাথে পাল্লা দেওয়া তার কাজ ছিল না।

চার.

এফবিআই এর স্পেশাল এজেন্ট স্টিভেন কার এবং তার এনএসএ-র সহকর্মীরা ব্রায়ান রিগ্যানকে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন ২০০১ সালের এপ্রিল মাসেই।

কিন্তু তাদের হাতে শক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না। আদালতে কাউকে দোষী প্রমাণ করার জন্য শুধু বানান ভুল শনাক্ত করাই যথেষ্ট না।

তাছাড়া এফবিআইর তখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি ছিল। কাজেই তারা দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা রিগ্যানের উপর নজরদারির ব্যবস্থা করে। কিন্তু রিগ্যানের একঘেয়ে বিরক্তিকর জীবনে নতুন কিছুই ঘটছিল না।

২০০১ সালের জুন মাসে একদিন রিগ্যান স্থানীয় একটি পাবলিক লাইব্রেরিতে যান। তার পেছনে পেছনে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন এফবিআই এর দুজন এজেন্ট।

ঘণ্টাখানেক ইন্টারনেট ব্যবহার করে যাওয়ার পর এজেন্ট দুজন ছুটে যান দিকে। তাদের ভাগ্য ভালো, রিগ্যান ব্রাউজার বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন।

এজেন্ট দুজন ব্রাউজারের হিস্টরি ঘেঁটে জানতে পারেন, রিগ্যান পুরো সময়টা কাটিয়েছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত লিবিয়া এবং ইরাকের দূতাবাসগুলোর ঠিকানা অনুসন্ধান করে। অর্থাৎ আমেরিকার ভেতরে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় রিগ্যান সম্ভবত ইউরোপে গিয়ে লিবিয়া এবং ইরাকের দূতাবাসে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করছেন।

২০০০ সালের আগস্ট মাসেই বিমানবাহিনী থেকে রিগ্যানকে অবসর নিতে হয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাস পরেই তিনি টিআরডাব্লিউ নামে একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি কনট্রাক্টরের অধীনে চাকরি পান।

তারা রিগ্যানের পূর্বের অভিজ্ঞতা জানতে পেরে তাকে আবারও এনআরওতেই তাদের কন্ট্রাক্টের অধীনে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালের আগস্ট মাস থেকে রিগ্যান পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেন।

কিন্তু এবার তার অজান্তে অফিসে তার প্রতিটি মুহূর্তের কর্মকাণ্ড রেকর্ড করছিল এফবিআই কর্মকর্তারা।

২০০১ সালের ২৩ আগস্ট রিগ্যান কাজের ফাঁকে দিয়ে ২০ মিনিটের জন্য ইন্টেলিঙ্কে প্রবেশ করে একটি চীনা মিসাইল সাইটের ঠিকানা খুঁজে বের করেন এবং নিজের নোটবুকে টুকে রাখেন।

এরপর তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে এক সপ্তাহের ছুটি চান এই বলে যে, স্ত্রী-পরিবারসহ তিনি লং ড্রাইভে অরল্যান্ডো শহরে বেড়াতে যেতে চান।

কিন্তু ছুটি পাওয়ার পর অরল্যান্ডোর পরিবর্তে সেদিন বিকেলেই তিনি উপস্থিত হন ওয়াশিংটন ডালাস এয়ারপোর্টে, বিকেল ৪টার ফ্লাইট ধরে জুরিখে যাওয়ার জন্য।

এফবিআই কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, রিগ্যান সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন সেখানকার বিদেশি দূতাবাসগুলোতে গিয়ে চুরি করা ডকুমেন্টগুলো বিক্রি করার জন্য। রিগ্যান যখন প্লেনে চড়ার জন্য বাসে উঠতে যাবেন, ঠিক তখন তার সামনে গিয়ে হাজির হন স্টিভেন কার এবং তার এফবিআইর সহকর্মীরা।

তারা রিগ্যানকে আটক করে তার দেহ তল্লাশি করেন। তার ডান পায়ের জুতার ভেতর তারা ঠিকই একটি চিরকুট খুঁজে পান, যেখানে ইংরেজিতে দুটি ঠিকানা লেখা ছিল। ঠিকানা দুটি ছিল জুরিখের ইরাকি এবং চীনা দূতাবাসের।

রিগ্যানের সাথে আরো কিছু কাগজও ছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল সব সাংকেতিক ভাষায় লেখা। তার ব্যাগের ভেতর একটি ট্রাউজারের পকেটে একটি স্পাইরাল প্যাডের গায়ে বিচ্ছিন্নভাবে ১৩টি শব্দ লেখা ছিল, যেমন: tricycle, rocket, switch ইত্যাদি।

আরেকটি ইনডেক্স কার্ডের গায়ে লেখা ছিল এরকম আরো ২৬টি বিচ্ছিন্ন শব্দ। তার ওয়ালেটের ভেতর একটি চিরকুটের গায়ে লেখা ছিল অর্থহীন কতগুলো অক্ষর এবং শব্দ, যার শুরুটা ছিল এরকম: 5-6-N-V-O-A-I …।

আর তার ব্যাগের ভেতর একটি ফোল্ডারের ভেতর চার পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা ছিল কতগুলো তিন অঙ্কের সংখ্যা, যেমন: 952, 832, 041 …।

স্টিভেন কারের বুঝতে বাকি ছিল না, এগুলোর প্রতিটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্যের সাংকেতিক রূপ।

এর কিছু হয়তো গোপন কোনো স্থানের ঠিকানা, আর বাকি কিছু হয়তো কোড ভেঙে সেই ঠিকানা উদ্ধার করার চাবি। কিন্তু রিগ্যান কোনো কিছুই স্বীকার করতে রাজি হচ্ছিলেন না।

তিনি দাবি করছিলেন, এগুলো অর্থহীন কিছু সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই না। অবসর সময়ে তিনি সংখ্যার খেলা খেলতে পছন্দ করেন, এগুলো তারই অংশ।

রিগ্যানকে গ্রেপ্তার করতে পেরে কারের খুশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি খুশি হতে পারছিলেন না।

তিনি বুঝতে পারছিলেন, তারা রিগ্যানকে গ্রেপ্তার করেছেন ঠিকই, কিন্তু রিগ্যানের চুরি করা তথ্য উদ্ধার করতে তাদের তখনও অনেক দেরি।

স্টিভেন কার এবং এফবিআইর ক্রিপ্টোলজিস্টরা কাজে লেগে পড়েন। ওয়ালেটের ভেতরে থাকা চিরকুটের গায়ে লেখা 5-6-N-V-O-A-I … অংশটুকুর অর্থ উদ্ধার করা ছিল তুলনামূলকভাবে সহজ।

প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এফবিআইর ক্রিপ্টোলজিস্ট ড্যানিয়েল ওলসন বুঝতে পারেন, এটি এনক্রিপ্ট করা হয়েছে সিজার শিফটের (Caesar Shift) মাধ্যমে।

সিজার শিফট হচ্ছে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি এনক্রিপশন পদ্ধতি, যেখানে প্রতিটি অক্ষরকে তার পরবর্তী নির্দিষ্টতম কোনো একটি অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

ওলসন দেখতে পান, এটি আসলে সিজার শিফটের সরলতম রূপ, যেখানে কী-এর মান হিসেবে ১ ব্যবহার করা হয়েছে।

অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষরকে মাত্র ১ ঘর ডানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। A-কে লেখা হয়েছে B, B-কে লেখা হয়েছে C, C-কে D… এরকম। এটি সমাধান করতে হলে প্রতিটি অক্ষরকে শুধু উল্টোদিকে ১ ঘর সরিয়ে দিলেই হবে। অর্থাৎ 5-6-N-V-O-A-I … এর প্রকৃত অর্থ হবে 4-5-M-U-N-Z-H …।

চিরকুটটির প্রথম লাইন সম্পূর্ণ ডিক্রিপ্ট করার পর তার অর্থ দাঁড়ায় 45 MUNZHOF BANHOF STR, যেটি শুনতেই অর্থহীন কোনো শব্দের পরিবর্তে জার্মান শব্দের মতো শোনায়।

ওলসন গুগল সার্চ করে দেখতে পান, এটি হচ্ছে জুরিখে অবস্থিত একটি সুইস ব্যাঙ্কের ঠিকানা।

একই পদ্ধতিতে পরের লাইনগুলো ডিক্রিপ্ট করে তিনি দেখতে পান, সেগুলো হচ্ছে আরেকটি সুইস ব্যাংকের ঠিকানা, ব্যাংক দুটির অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ এবং অ্যাকাউন্ট দুটির নাম্বার।

রিগ্যানের পরিকল্পনা ছিল, এসপিওনাজের ফলে প্রাপ্ত ১৩ মিলিয়ন ডলার তিনি এই অ্যাকাউন্টগুলোতেই জমা রাখবেন।

স্পাইরাল প্যাডের পৃষ্ঠায় বিচ্ছিন্নভাবে লেখা ১৩টি শব্দের অর্থ উদ্ধার করা ছিল সেই তুলনায় একটু কঠিন।

কিন্তু স্টিভেন কার লক্ষ্য করেছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার দিন সকালবেলা রিগ্যান ইন্টেলিঙ্ক ব্রাউজ করার সময় যে প্যাডটিতে নোট নিয়েছিলেন, এটি ছিল ঠিক সেই প্যাডটিই।

এমন কি হতে পারে, এই শব্দগুলো আসলে রিগ্যানের ব্রাউজ করা চীনা মিসাইল সাইটের ঠিকানা? অথবা তার স্থানাঙ্ক? কার ইন্টেলিঙ্কে প্রবেশ করে মিসাইল সাইটটি খুঁজে বের করেন এবং দেখতে পান, সাইটটির অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশে সর্বমোট ১৩টি অক্ষরই আছে।

অর্থাৎ প্যাডের প্রতিটি শব্দ আসলে একেকটি অক্ষরকে নির্দেশ করছে!

কার আবার শব্দগুলোর দিকে তাকালেন: tricycle, rocket, switch … হঠাৎ তার মনে হলো, তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পারছেন।

রিগ্যান প্রতিটি সংখ্যাকে এমন একটি জিনিসের নাম দিয়ে প্রকাশ করেছেন, যে জিনিসটির ছবি তার মনে ভেসে উঠলেই ঐ সংখ্যাটির মান মনে পড়ে যাবে।

যেমন ট্রাইসাইকেলের যেহেতু তিনটি চাকা, তাই এই শব্দটি দেখলেই বোঝা যাবে এর মান আসলে ৩। একইভাবে রকেট যেহেতু লম্বা একটি জিনিস, তাই এর মান হবে ১। সুইচ যেহেতু শুধু অন এবং অফ করা সম্ভব, তাই এর মান হবে ২।[৪]

এফবিআই,এনএসআই,সিআইএ গোয়েন্দা সংস্থা তিনটি যুক্তরাষ্ট্রের ভীত বলা যায়। ওদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা অনেক কঠিন হলেও ওরা ঠিকই সবার তথ্য স্টোরেজ রাখে।

পৃথিবীর সকল গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের নজরে রাখেন। এফবিআই পৃথীবীর অন্যতম ও দুর্দর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি।

সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

  1. সোর্স: উইকিপিডিয়া। রো’আর.মিডিয়া।
  2. ছবি:-উইকিপিডিয়া
  3. সিএনএন, বিবিসি।
  4. হুবুহু তুলে ধরা হলো(স্পাই স্টোরিস বই-৩)

লেখক: মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন

শিক্ষার্থী

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়