ঢাকা ইউনিভার্সিটি নামটা মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর কলকাকলিতে মুখরিত সবুজে ঘেরা পরিবেশ। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা একদিকে যেমন ক্লাসে ব্যস্ত তেমনি অন্যদিকে আড্ডা,গান,মজায়, আলোচনায়-সমালোচনায় তাদের জুড়ি নেই। পৃথিবীর অন্য কোনো ইউনিভার্সিটিতে এমন উৎসব মুখর পরিবেশ কম-ই আছে। আর এই পড়াশোনার ব্যস্ততা আর আড্ডার মাঝের একটা অন্যতম বিষয় হল খাওয়া। ক্লাসে যাওয়ার আগে, ক্লাসের ফাঁকে, দুপুরে, আড্ডার ফাঁকে, প্রেমে, বিকালের নাশতায়, রাতের জন্য খাবার তো চাই । আর এই খাওয়ার নানারকম ব্যবস্থা নিয়ে সদা তৈরি অসংখ্য ছোট বড় দোকান। ক্যাম্পাস এ প্রথম যখন ছেলেমেয়েরা আসে বেশির ভাগ ই এতো দোকান আর রকমারি খাবার দেখে অবাক না হয়ে পারে না। আর দাম দেখে তো খুশি আটকে রাখাই কঠিন।

১) টিএসসি চত্বরের সীমানা প্রাচীরের উপরের এই দোকান বসে সকাল ৭টায়, চলে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। মিলবে মালটোভা চা, আদা, লেবু ও পুদিনা পাতার রং চা, টক, ঝাল, মিষ্টি চা, মালটা রং চা, কফি চা, গুড়ের চা, আপেল চা, মিক্সচার চা ।

শীতের সময় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে জলপাই চা, দাম ছয় থেকে ১০ টাকা।
শাহাবুদ্দিনের চায়ের দোকানের ঠিক পাশেই আছে ইউনূস মামার চায়ের দোকান। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে তার এই ব্যবসা।

২)টিএসসির ভেতরের ক্যাফেটেরিয়ায় পাবেন ঐতিহ্যবাহী এক টাকার চা। ক্যাফেটেরিয়ায় আরও পাওয়া যায় শিঙাড়া (৩ টাকা), ফ্রাইড রাইস(২০ টাকা), প্যাটিস(৭ টাকা)।

৩) টিএসসির আকর্ষণ পানি পুরী। মূলত এটি এক ধরনের ফুচকা। তবে পার্থক্য হল আকারে ছোট এবং আলাদাভাবে টক দেওয়ার পরিবর্তে তেঁতুলে টকের মধ্যেই ডোবানো থাকে ফুচকাগুলো। দাম এক বাটি ২০ টাকা।

৪) গ্রন্থাগারের সামনের দোকানে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে স্যান্ডউইচ, পাটিসাপটা ইত্যাদি হালকা খাবার পাওয়া যায়।
মূল বিক্রি শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এর মধ্যে আছে ডিম চপ, চিংড়ি চপ, টোস্ট, পাকোড়া, মাশরুম চপ, চিকেন ফ্রাই, ভেজিটেবল বান, দাম ৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়াও আছে লাচ্ছি ২৫ টাকা ও পেঁপের জুস ৩০ টাকা। দোকান খোলা থাকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

৫) হাকিম চত্বরের বিশেষ সুনাম আছে খিচুড়ি আর ফ্রাইড রাইসের জন্য। পাওয়া যায় দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে। খিচুড়ি প্রতি প্লেট ৩০ টাকা, ফ্রাইড রাইস ৩৫ টাকা।
৬) বাংলাদেশের মিনি পার্লামেন্ট বা দ্বিতীয় সংসদ নামে খ্যাত ছিল ডাকসু। এককালের জাতীয় নেতা তৈরির সূতিকাগার ডাকসু এখন কার্যত অচল থাকলেও অচল হয়নি ক্যান্টিনটি। এখানকার বিখ্যাত খাবার হল এক টাকার চা আর খিচুড়ি। খিচুড়ির দাম প্লেট প্রতি ২০ টাকা, পাওয়া যাবে সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে।

৭) কবির মামার পানিপুরি: ডাকসু ক্যান্টিনের ঠিক পাশেই পাওয়া যায় কবির মামার পানিপুরি। প্রতি প্লেট ২০ টাকা, পাওয়া যায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
৮) মধুর ক্যান্টিনের খাবার সাধাসিধে হলেও সেখানকার ছানা মিষ্টি আর রসগোল্লা চেখে না দেখলে ভুল করবেন। ছানা মিষ্টি এক প্লেট ২০ টাকা, রসগোল্লা প্রতিটি ৫ টাকা।

৯) #শ্যাডোর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়র নাম লেবুর শরবত, লেমনেইডও বলা হয়। মাত্র ১০ টাকা এই ‘লেমনেইড’ গ্রীষ্মকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের বহুল কাঙ্ক্ষিত একটি পানীয়র। এছাড়াও পাওয়া যায় ৫ টাকার দুধ চা ও ১৫ টাকার কফি।
১০) #শ্যাডো ক্যান্টিনের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ডাল-লুচি। প্রতি প্লেটের দাম ১০ টাকা। পাওয়া যায় বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় ভেজিটেবল রোল, পাটিসাপটা, পিৎজা, বার্গার, হটডগসহ বিভিন্ন ফাস্টফুড।

১১)শ্যাডো ক্যান্টিনের ঠিক বিপরীত দিকে একটি বিশেষ আইসক্রিমের মেশিন নিয়ে বসেন একজন আইসক্রিম বিক্রেতা। সেখান থেকে আইসক্রিম বের করে, তা কোন-আইসক্রিম আকারে বিক্রি করেন তিনি। বসেন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। চমৎকার স্বাদের কারণে অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই শ্যাডোর আইসক্রিম।

১২) চারুকলার সামনের চিকেন ফ্রাই: ইন্সটিটিউটের গেটের সামনে একটি ভ্যানগাড়িতে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি হয় চিকেন ফ্রাই। এছাড়াও আছে আলুর চপ ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। চিকেন ফ্রাই প্রতিটি ১০ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্লেট প্রতি ২৫ টাকা।

১৩) ছবির হাট: চারুকলার ইন্সটিটিউটের বিপরীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথে অবস্থিত ছবির হাট নামে পরিচিত জায়গাতেও বসে মুখরোচক সব খাবারের পসরা। দুপুর তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পাওয়া যায় এসব খাবার।
এর মধ্যে আছে পাকোড়া (৫ টাকা), আলুর চপ (৫ টাকা), মাশরুম চপ (৫ টাকা), ডিম চপ (৫ টাকা), পুদিনা পাতার চপ (৫ টাকা)সহ হরেক রকমের খাবার।

১৪) কার্জন হল এলাকার একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হচ্ছে, আলুপুরি। হলের শেষ মাথায় বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের পেছনে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে একটি টং দোকানে এই পুরি বিক্রি হয়। পাওয়া যায় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আলু পুরি প্রতিটি ৫ টাকা
১৫) এছাড়াও শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন পুকুর পাড়ের শেইড দেওয়া খাবারের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন মৌসুমি ফলের জুস। যেমন এখন পাওয়া যাচ্ছে, আনারসের জুস ও পেঁপের জুস। গ্লাস প্রতি ২০ টাকা।

১৬) ডাস চত্বর: টিএসসির বিপরীতে ভাস্কর শামীম শিকদারের ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ নামক ভাস্কর্যের সঙ্গেই আছে ডাস ক্যান্টিন। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পাওয়া যায় লাচ্ছি, ৩৫ টাকা। কোল্ড কফি, ৩৫ টাকা)। এর বাইরেও আছে বিভিন্ন স্ন্যাকস ও ফাস্টফুড।

১৭) এফবিএস ফুডকোর্ট: যদি একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত ও একটু দামি বিদেশি খাবার খেতে চান এবং হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তাহলে যেতে পারেন এফবিএস বা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ‘ফুডকোর্ট’য়ে। কুক, বাবুর্চি- ইত্যাদি স্বনামধন্য খাবারের দোকানের শাখা আছে এফবিএস ক্যান্টিনে।

১৮) আই, বি ,এ ক্যান্টিনের লাঞ্চ ও নাশতার সমাহার। এখানে মেঝেতে বসে আড্ডা দিতে দিতে খেতে পারেন মজাদার সসের সাথে পিঁয়াজু, ফ্রায়েড চিকেন। লাঞ্চ হিসাবে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি ছাড়াও আছে ফ্রায়েড রাইস উইথ ভেজিটেবল এন্ড চিকেন। এখানকার খাবারের দাম কিছুটা বেশি।

১৯) রোকেয়া হলের সামনের চানাচুর মাখা
২০) মৈত্রী হলের সামনের চটপটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর বিভিন্ন বড়া
২১) জগন্নাথ হলের জিলাপি সাথে রকমারি লাঞ্চ আইটেম – যেন জামাই ষষ্ঠী
২২) হলের ডিম বার্গার আর নুডুলস সহ প্রায় সব হলেই আছে কোনো না কোনো বিশেষ খাবার।
২৩) মুহসীন হলের ২২ প্রকার এর ভাজা মাছ আর ভর্তা

২৪) কেন্দ্রীয় মসজিদ/ কলা ভবনের পাশে আমলকি, জাম্বুরা, পেয়ারা, কাঁচা আম, কলা ইত্যাদির ভর্তা। [লিখতে গিয়েই জিভে পানি চলে এলো!  ]
২৫) বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে স্ট্রবেরির ভর্তা, ঝালমুড়ি, ছোলা বুট।
২৬) IER ক্যানটিনের পরোটা।

২৭) INFS (পুষ্টি ইন্সটিটিউট) এর পিছনের ক্যান্টিনের পুরি; কেউ কেউ বললেন পরোটা-ভাজি।
২৮) মেডিকেলের সামনে নেসক্যাফে ক্যাফের চিংড়ি চপ, খিচুড়ি, সমুচা।
২৯) মোগলাই, নুডলস, কফি, মোরগপোলাও (বেশ ভাল)-এর জন্য ঢুঁ মারতে পারেন এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের ক্যান্টিনে।
৩০) কার্জন এ জাহির এর দোকানের পাশে মজার লাচ্চি

এছাড়াও এফরহমানের সামনের ছানা মিষ্টি, পলাশীর মোড়ের চিকেন চাপ বিফ চাপ , হালিম , ফ্রাইড রাইস; আর রকমারি মৌসুমি খাবারের নানা আয়োজনে মুখরিত প্রাণের ঢাবি 


সৌজন্যেঃ Obydul Rana
তথ্যঃ নিজেস্ব অভিজ্ঞতা, ইন্টারনেট, ফুড ব্যাংক , বিভিন্ন পেইজ