‘শক্তি সৃষ্টিও করা যায় না, ধ্বংসও করা যায় না’, উক্ত পদসমষ্টির সহিত আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। উহা পদার্থবিজ্ঞানের একখানি মৌলিক স্বীকার্য এমনকি ‘দ্যা প্রিন্সিপাল অব কনসারভেসন অব এনার্জি’ নামে আখ্যায়িত । ফিজিক্স উহাকে প্রাকৃতিক আইন (law of Nature) হিসেবে স্বীকার করিয়া লইয়াছে।

এইখানে স্বয়ং আপনার কিঞ্চিৎ ঘৃণতা বিদ্যমান। কেননা, যাহার অস্তিত্ব রহিয়াছে, তাহা অবশ্যই কেহ না কেহ সৃষ্টি করিয়াছে। বাক্যটিকে এইভাবে লিখিলেই শান্তি পাইতাম,’ এনার্জিকে মানবের পক্ষে সৃষ্টি বা বিনষ্ট সম্ভব নহে, উহা এক ঈশ্বরের কম্ম ‘।
মনুষ্য তাহার অসাধ্য কার্যগুলি আল্লাহর কর্তৃত্বে না দিয়া প্রকৃতির কৃতিত্বে রাখিতেছে।
যাহাই হউক, ভুমিকা বাদে মূলধারায় ফিরিয়া আসি।

উপস্থিত বসুন্ধরায় যতগুলি শক্তি (Energy) খুঁজিয়া পাওয়া যায়, তন্মধ্যে বিদ্যুৎ সবচাইতে জনপ্রিয়। আফসোসের ব্যাপার হইলো, প্রকৃতি থাকিয়া সরাসরি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বিভিন্ন শক্তি প্রক্রিয়াজাত করিয়া বিদ্যুৎে পরিণত করা হইয়া থাকে। আবার বিদ্যুৎও আবিষ্কৃত সবগুলি শক্তিতে রুপান্তর যোগ্য। যথা, তাপ, আলোক, শব্দ, যান্ত্রিক ইত্যাদি সকল শক্তি থাকিয়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায় এবং ইহা উভমুখী প্রক্রিয়া।

‘মোটর’ নামক কল বিদ্যুৎকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপায়ণ করে।

‘জেনারেটর’ নামক যন্ত্র যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎে রূপ দেয়। এই জেনারেটরই আমাদিগের আলোচ্য বিষয়।
দুঃশ্চিতার বিষয় হইলো, ‘মোটর’ আর ‘জেনারেটর’ একই মেশিন। ঘটনাটি ইংরেজি নয় এবং ছয়ের মত। ব্যাক্তি প্রয়োজন অনুসারে দুইটা মানে ব্যবহার করিতে পারে ।

জেনারেটরের দুইটা অংশ। একটাতে তামার তার প্যাঁচানো থাকে, অন্যটাতে চুম্বক লাগানো থাকে। এবার আপনি চুম্বক স্থির রেখে যদি তামার তার ঘোরাইতে থাকেন, তবে তারের মধ্য দিয়া বিদ্যুৎ বাহিত হইতে থাকিবে। একইরকম ভাবে, যদি তার স্থির রাখিয়া চুম্বক ঘোরাইতে থাকেন, তবুও তারের মধ্য বিদ্যুৎ প্রবাহ পাইবেন।

এইরকম চুম্বক ক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিস্টেম অনেকেই আবিষ্কার করেছিলেন, তথাপি মাইকেল ফ্যারাডের নামই আমাদিগের নিকট সুপরিচিত। ফ্যারাডের বয়স যখন আঠাশ, তখন বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেড বিদ্যুৎ থেকে চুম্বক বানিয়েছিলেন।

বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে শক্তিশালী চুম্বকের দরকার, তাই জেনারেটরে বৈদ্যুতিক চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
বৈদ্যুতিক চুম্বক বিদ্যুৎ ছাড়া কাজ করে না। তাই তাহাকে চালাইতে বাহির হইতে কিছু বিদ্যুৎ দিতে হয়। দই বানাইতে যেইরূপ দুগ্ধের খুঁটিতে চামচ খানেক দই দিয়ে রাখিতে হয়।

জিজ্ঞাসা হইতে পারে, জগতে চামচ খানের দইয়ের আকাল পরিলে দই কীরুপে বানাইবো? জবাবে বলিব, প্রাকৃতিক চুম্বক দিয়া চামচ খানেক দই বানাইয়া তারপর কার্য সম্পন্ন করো।

জেনারেটরের স্থির অংশের নাম স্টেটর আর ঘুর্ণনমান অংশের নাম রোটর। ব্যাক্তির প্রয়োজন অনুসারে রোটরে চুম্বক ; স্টেটরে তার, বা স্টেটরে চুম্বক রোটরে তার বসাইতে পারে।

.
এইবার প্রশ্ন হইবে, রোটর বাবাজিকে না ঘুরাইলে বিদ্যুৎ পাইবো না, তাহা হইলে, উহাকে অনবরত ঘুরাইবো কিরূপে?

আপনার হস্তদ্বয় সক্ষম না হইলে পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, বাষ্প ইঞ্জিন ইত্যাদি যা ইচ্ছা তাই দিয়া ঘুরাইয়া বিদ্যুৎ পাইতে পারেন।

আরেকটা কর্দমসম বুদ্ধি দেই, একখানি বৈদ্যুতিক মোটর কিনিয়া জেনারেটরের রোটর ঘুরাইতে পারেন। ইহাতে একই সহিত বিদ্যুৎ অপচয় এবং বিদ্যুৎ তৈরি উভয়ের স্বাদই উপভোগ করিতে পারিবেন।

লেখকঃঃ  (তানভীর মাহাতাব নাদিম)