‘জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’, ‘বায়োটেকনোলজি’- অনেকের কাছেই হয়তোবা শুধুমাত্র দুটি শব্দ। কিন্তু পৃথিবী-মানবসভ্যতার কাছে একেকটি বিপ্লব।
ছোট্ট একটা উদাহরন দেই, “ইনসুলিন” বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগীর কাছে ‘অক্সিজেনের’ মতই প্রয়োজনীয় এক বস্তু। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর অগ্নাশয় কেটে তা সংগ্রহ করা হত। যা ছিল পরিমাণে অতিসামান্য আর দুর্মূল্যও বটে। আর আজ আপনি তা আপনার গ্রামের মুদি দোকানেও পাচ্ছেন!!! চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে একদম সাধারণ মানুষও।– বিপ্লবটা এখানেই!!
আরেকটা ছোট্ট উদাহরণ হল, ১৯৯৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত নোবেল বিজয়ীর সংখ্যা ১৭২, আর এর মধ্যে বায়োটেকনোলজি ভিত্তিক কাজের জন্যই নোবেল পেয়েছেন ৪২ জন!!!!
এরূপ আরো সহস্র উদাহরন দেয়া যায়।
কেন পড়বেন জিইবি????
বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক যুগের সূচনা ঘটেছিল গণিত চর্চার মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগে তা পদার্থবিদ্যার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে নিউটন, গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, বোরের তত্ত্ব একে আধুনিক যুগে নিয়ে আসে। কিন্তু, 1920 এর আবিষ্কারের ধারা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তখন, বিজ্ঞানীরা ঝুকতে থাকে পরিবেশ, পৃথিবী, মানুষ, জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার দিকে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীকে তাই নিঃসন্দেহে বলা হচ্ছে The Century of Biological Science. এর কারণ 1972 সালে পল বার্গের রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর আবিষ্কার।
প্রাণ রসায়ণের সবচেয়ে আধুনিক এ শাখায় জীবনকেসংজ্ঞায়িত করা হয় অণু-পরমাণু পর্যায়ে, একে বলা হয়”The Molecular Logic Of Life”। A-T-C-G এই মাত্র চারটিহরফে লেখা এ বিষয়কে বলা হয় Language of GOD. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ট্রান্সজেনিক (উন্নত বৈশিষ্টধারী) উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতেকাজ করে। নামের শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং যোগ করার কারণ হচ্ছে, জীববিজ্ঞানের কেবলমাত্র এ শাখাটিতেই নিজের ইচ্ছামত ডিজাইন করেএকটি প্রাণী সৃষ্টি করা যায়, ডিজাইন করা যায় নিজের পছন্দের ই.কোলাই যে কিনা নিজের কথামত উঠবে বসবে। কাজটা অনেকটা একটা কম্পউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন করার মত, যা তোমার আদেশ সম্পূর্ণ মেনে চলে। চিন্তা করে দেখ,ব্যাপারটা একজন আবিষ্কারকের জন্য কতটা রোমাঞ্চকর যখন সম্পূর্ণজীবন্ত কিছু একটা নিজের ডিজাইন মত কাজ করছে?
খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এ বিষয়টির সাথে জুড়ে দেয়া হয় বায়োটেকনোলজিকে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি ক্ষুদ্র অংশ। বায়োটেকনলজির অন্যান্য শাখা গুলো হল মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োস্ট্যাটিসটিক, ইমিউনোলজি, ওর্গানিক কেমিস্ট্রি, এনজাইমোলজি,ইনসিলিকো (কম্পিউটেশনাল) বায়োলজি, টিস্যু কালচার ইত্যাদি।একারণেই একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ায় একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট কারণ, নিজের ব্যাকটেরিয়াগুলো তাকে পেটরি ডিসে জন্মাতে হয়; সে একজন বায়োকেমিস্ট কারণ নিজের সৃষ্টি জীব থেকে সংগৃহীত প্রোটিনতাকে বিশ্লেষণ করতে হয়; সে একজন পরিসংখ্যানবিদকারণ 3.2 বিলিয়ন বেস পেয়ারের মাঝে তাকে ধারণা করেকাজ করতে হয়; সে একজন অর্গানিক কেমিস্ট কারণ নিজের আবিষ্কৃতওষুধের মলিকিউলার গঠন তাকে বের করতে হয় এবং পরিশেষে একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী কারণ বিশালডিএনএ এনালাইসিসের জন্য তাকে সফট ওয়ার ডিজাইন করতে হয়। তুমি সত্যিই হয়ে উঠবে “Jack of all traits, master of SOME”.
চাকরী থেকে এখানে গবেষণার ক্ষেত্র অনেক বেশী। চাকরীর ক্ষেত্র এ দেশে বেশী না থাকলেও (ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির কথা বাদ দিলে বিদেশে প্রচুর, সেখানে বেতনটাও অনেক অনেক চড়া।
বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারহিসেবে ধরা হয়, পাটের এবং এর পরজীবী ছত্রাকের জিন নকশা আবিষ্কারকে। এই নকশা কাজে লাগানোটা এ দেশের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদেরই দায়িত্ব। এ বিভাগের অনেক ছাত্রই এই প্রোজেক্টে কাজ করেছেন। নেচার ম্যাগাজিনের কভারের প্রতিদিনিই জায়গা করে নিচ্ছে জাপান, আমেরিকার জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার রা। টিস্যু কালচার টেকনোলজি নোবেল পেল 2012 সালে! বায়োকেমিস্টরাতো কেমিস্ট্রির সবগুলো নোবেলই প্রতি বছর পকেটে পুড়ছে। আমাদের সরকার বর্তমানে এ বিষয়ে গবেষণাতে বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে। দেশের গবেষণাগার গুলো উন্নত হয়ে উঠছে দিন দিন। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ-কৌতুহলও গগণচুম্বী। তাহলে, “ডাক্তারদের ইঞ্জিনিয়ার” হিসেবে 2025 সালের “নেচার” ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবি কি দেখতে চাও?
শাবিপ্রবির জিইবি বিভাগ কেন অনন্যঃ
দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় জিইবি। DU,SUST,JU,CU,KU,MBSTU,NSTU etc.
এর মধ্যে ১২ বছরের পথচলায় GEB,SUST দেশের অন্যতম সেরা জিইবি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিভাগের রয়েছে ৯ টি সুপ্রতিষ্ঠিত ল্যাব।যা দেশের জিইবি বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। Microbiology ,Fermentation and Environment Biotechnology Lab; Animal Biotechnology Lab; Biochemistry and Molecular Biology Lab; General Lab; Plant Genetic Engineering Lab; Pathogenesis Lab;TWAS Lab; USDA( United States Department of Agriculture) Lab এ প্রতি নিয়তই চলে নানা ধরনের গবেষনা কার্য। Production of Enzyme for Industrial Use, Use of natural product for anti-arthritic disease, Renewable Energy Production, Increase fish production and prevention of fish diseases, new crop variety development through Tissue Culture, Research for Genetic diseases,toxicology and health impact etc. এই বিভাগের কিছু উল্লেখ যোগ্য গবেষনা কার্য।ভার্সিটির রিসার্স সেন্টারে সবচেয়ে বেশি অবদানও রাখছে এই বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে টানা তিনবার প্রথম পুরষ্কার অর্জন করে এই বিভাগ। যেখানে DU,JU,CU সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে জিইবি,শাবিপ্রবি। দুইবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেস্ট ডিপার্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ডও লাভ করে এই বিভাগ। এছাড়া UGC অ্যাওয়ার্ড, বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রী গোল্ড অ্যাওয়ার্ড সহ আছে নানা অর্জন।
বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের রয়েছে সুনামের সাথে সারাবিশ্বে বিচরন। কৃত্তিম ফুসফুস নিয়ে গবেষনায় উদ্ভাবনের ‘অষ্কার’ বিজয়ীদের একজন আয়েশা আরেফিন এই বিভাগের ই গ্র্যাজুয়েট। এছাড়া ৪০% গ্র্যাজুয়েট বিশ্বের বিভিন্ন সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষনা প্রতিষ্ঠানে তাদের উচ্চ শিক্ষা , গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিভাগেরই ২০ জন গ্রেজুয়েট দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন অল্প সময়েই। এছাড়া বিভিন্ন রিসার্স ইনস্টিটিউটে(NIB,ICDDRB etc) , ফার্মাসিউটিকালস কোম্পানিতে বিজ্ঞানী হিসেবে সাস্ট-জিইবিয়ানদের রয়েছে সফল পদচারনা।বিসিএস সহ অন্যান্য জবেও রয়েছে তাদের বিস্তার।
ভর্তিচ্ছুদের জিইবি-সাস্ট এ ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রন।
মাহফুজুর রহমান লিহান
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ
শাবিপ্রবি