গনিম-আল-মুফতাহ্: কাতারের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি।
কারণ, এনার হাত ধরেই বেজে উঠলো ফিফা বিশ্বকাপের দামামা।
2022 সালের বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলের আসরের উদ্বোধন করলেন গনিম-আল-মুখতাহ্।” আল বাইয়াত ষ্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করলো গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমী মানুষ।
“গনিম-আল-মুখতাহ্” এর শরীরের নিচের অংশ নেই, জন্মের আগেই দুটো পা হারিয়ে ফেলেন।
“কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম” রোগে আক্রান্ত গনিমের শরীরের নিম্নাংশ না থাকা সত্বেও তিনি গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ভক্ত, সমর্থকবৃন্দ।
খুব কম মানুষেরই এই রোগ দেখা যায়। কিন্তু সেই সব বাধা টপকে একাধিক মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন গানিম।
তাঁর ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তিনি মানুষকে অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন কথা বলেন। তাঁর আইসক্রিমের ব্যবসাও রয়েছে।
তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পীকার। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন।
গনিম যখন মাতৃগর্ভে রয়েছেন, তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তাঁর শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের নিদান দেন।
কারণ, অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেয়ে তাকে জঠরে হত্যা করে দেওয়া শ্রেয়।
গনিমের মাতা-পিতা এই সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারলেন না। কারণ, ইসলামের বিধান অনুযায়ী গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।
মাতা “ইমান-উল-আবদেলি” এবং পিতা “মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ্” এটাকে মহান আল্লাহর সিন্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন।
মাতা পিতার উদ্দেশ্যে বলেন – “আমি হবো সন্তানের বাম পা, আর তুমি হবে তার ডান পা। আমরা দুজনে সন্তানকে কখনো নিম্নাংশের অভাব টেপ পেতে দেবো না।”
5-ই মে 2002 সালে পৃথিবীর আলো দেখেন গনিম। শিশুকাল থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন তিনি।
স্কুল, খেলার মাঠ সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে অপমানিত করা হতো। তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতেন নিজ পথে, একেবারে নিজস্ব ছন্দে।
বন্ধুদের বোঝাতেন – তাঁর অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। আল্লাহ তাঁকে যে পরিমাণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদান করে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
নিজের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব-কে এসব বোঝাতে বোঝাতে নিজের অজান্তেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন মোটিভেশনাল স্পীকার।
একদিন যাঁর ভুমিষ্ট হওয়া নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো, তাঁর হাতে উদ্বোধন হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এক প্রতিযোগিতার আসর।
কাতারের 20 বছর বয়সী প্রতিবন্ধী যুবক আজ সেদেশের শান্তির দূত হিসাবে গোটা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছেন। এছাড়া তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পীকার, কবি, সাহিত্যিক, দারুণ বক্তা হিসাবে আরব দুনিয়া তথা গোটা বিশ্বের কাছে সমাদৃত।
আজ তিনি কাতার সরকারের প্রধান প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বের দরবারে নিজের পরিচিতি তুলে ধরলেন।
ধন্যবাদ, গনিম-আল-মুফতাহ্।”
আপনি প্রমাণ করে দিলেন, শারিরীক প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে কোনো অন্তরাল হয়ে উঠতে পারে না।
লেখকঃ রবিউল আলম রবিন