বর্তমান যুগে সফলতার সাথে যে সেক্টরটি পূর্ণোদ্দমে উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে সেটি হল গ্লাস এবং সিরামিক সেক্টর

উন্নত দেশ গুলো ইতোমধ্যে এ সেক্টরে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।যদিও আমরা উন্নত দেশ নই কিন্তু আমরা সে পথেই এগোচ্ছি।তাই আমাদের পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নাই।না! আমরাও পিছিয়ে নেই, আমাদের এই অগ্রযাত্রার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে বগুড়ায় ‘তাজমা সিরামিকস’ নামক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কিন্তু আমরা বেশ বিলম্বেই গ্লাসের যাত্রা শুরু করেছিলাম।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫০টির উপরে সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে যেগুলো প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার টন সিরামিক প্রোডাক্ট উৎপাদনে সক্ষম।যা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও ভূমিকা রেখে চলেছে।

ই.প.বি. এর ডাটা অনুযায়ী ২০১১-১২ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৩.৭৫ মিলিয়ন ইউ.এস.ডলার।গ্লাস ইন্ডাস্ট্রির পরিমাণও অতি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এ সংখ্যা অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় ডজনের কোঠা ছাড়িয়েছে।

সবই ছিল কিন্তু মুদ্রার এপিট-ওপিটের অসামঞ্জস্যতার মতো একটা জিনিসের অভাব ছিল আর তা হল গ্লাস এন্ড সিরামিকের দক্ষ প্রকৌশলীর।যদিও বাংলাদেশে গ্লাস এন্ড সিরামিকের উপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট ছিল কিন্তু বাংলাদেশে কোন গ্লাস এন্ড সিরামিকের উপর কোন বি.এস.সি সনদধারী প্রকৌশলী ছিল না।

তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট খোলার সিদ্ধন্ত গ্রহণ করে।অবশেষে ২০১০ সালের ২৩শে এপ্রিল

ইউ.জি.সি কর্তৃক ডিপার্টমেন্ট তার একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছিল এবং ২০১১-১২ সেশনে প্রথম ৩০ জন স্টুডেন্ট নিয়ে গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট যাত্রা শুরু করেছিল এবং বর্তমানে ৫টি সিরিজের প্রায় ১৫০ জন স্টুডেন্ট রয়েছে।

গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার দের চাহিদা দেশের বাইরে এবং দেশের ভিতরে সমান তালে বেড়ে চলেছে।বিদেশে যেমন:ইউ.এস.,ইংল্যান্ড,জাপান,কোরিয়া ,ব্রাজিল,ইউরোপ,ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেশগুলোতে সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধির সাথে সাথে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার দের ডিমান্ড ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাদের ইনকামও বেশ সন্তোষজনক।

ইঞ্জিনিয়ারদের সিরামিক সেক্টর ছাড়াও ডেকোরেটিভ ইন্ডাস্ট্রি, রিসার্চ ফার্ম,ইঞ্জিন কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ফার্ম,এনামেল ফ্যাক্টরিস,প্লাস্টিক এন্ড পলিমার ইন্ডাস্ট্রি, হার্ডওয়ার ইন্ডাস্ট্রি,নিউক্লিয়ার প্লান্ট এবং বায়োমেডিকেল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ রয়েছে।

যদিও ডিপার্টমেন্ট এর নাম গ্লাস এন্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং তা সত্ত্বেও এখানে মেটাল,মেটালার্জি,এ্যাডভান্স সিরামিকও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।এছাড়া বিষয়বস্তুর মধ্যে আরো রয়েছে রিফ্রাক্টোরিস,সিমেন্ট,কংক্রিট,ন্যানোটেকনোলজি ইত্যাদি।

শুধু যে এখানে ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কিত পড়াশোনা করানো হয় তা নয়।এখানে ফিজিক্স,কেমিস্ট্রি, ম্যাথ,মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং,ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়েরিং,ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামক ননডিপার্টমেন্টাল কোর্সও পড়ানো হয়।

বর্তমানে ডিপার্টমেন্টে ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন যার মধ্যে একজন অধ্যাপক, তিনজন সহকারী অধ্যাপক এবং ৭জন লেকচারার রয়েছেন।যাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় ডিপার্টমেন্টের উন্নতির ধারা বজায় রয়েছে।

পাঠের অন্তর্গত বিষয়ের পাশাপাশি প্রাক্টিক্যাল ধারণা প্রদানের নিশ্চিতকরণে আমাদের এখানে ৮টা ল্যাব রয়েছে (সিরামিক ফরমিং ল্যাব,গ্লাস ফরমিং ল্যাব,কেমিকেল অ্যানালাইসিস ল্যাব,এক্স আর ডি ল্যাব,এস ই এম ল্যাব,ন্যানোটেকনোলজি ল্যাব, মাইক্রো স্ট্রাকচার ল্যাব এবং ক্যারেক্টারাইজেশন ল্যাব)। এছাড়াও একটি নির্মাণাধীন ল্যাব রয়েছে যেখানে ম্যাটেরিয়ালস এর যাবতীয় সবরকম টেস্ট করা সম্ভব হবে।

গ্লাস এন্ড সিরামিকের উপর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনেরও সুযোগ রয়েছে।বাংলাদেশে বুয়েটে গ্লাস এন্ড সিরামিকের উপর এম এস সি ডিগ্রী চালু রয়েছে,সেখানে এ বিষয়ের উপর এম এস সি কোর্স করা যাবে।তাছাড়া বিদেশে এম এস সি, পি এইচ ডি এবং এম ফিল করারও সুবর্ণ সুযোগ সবাইকে হাতছানি দিচ্ছে. জাপান,জার্মানি, কোরিয়া,চিন,আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সমূহ তাদের মধ্যে অন্যতম।এসব দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ন স্কলারশিপ অথবা বিশেষ স্কলারশিপের মাধ্যমেও উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ প্রদান করে থাকে।

গ্লাস এবং সিরামিক এখন আর থালাবাসন বা কমোড বোঝায় না।এখন গ্লাস সিরামিকের পরিধি উচ্চতর প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ করেছে যেখানে রয়েছে সোলার প্যানেল,চিপ,কার্বন ন্যানোটিউব,গ্লাস ফাইবার,কম্পিউটার পার্টস,বায়োমেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, ইলেক্ট্রিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস এমনকি রোবটের পার্টস তৈরীতেও গ্লাস সিরামিক ব্যবহার করা হচ্ছে।

সর্বোপরি নিজের মেধা মূল্যায়নের পূর্ণ সুযোগ রয়েছে এখানে যেটাকে আমরা কাঁচ সাম্রাজ্য নামে আখ্যায়িত করি। রাজা-রাণীর সাম্রাজ্যে যেমন প্রজাদের জন্য কিছুটা বাধ্যবাধকতা ছিল কিন্তু আমাদের এ সাম্রাজ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।এখানে মেধা হচ্ছে বিহঙ্গ আর ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে খোলা আকাশ যার কোন সীমানা নাই।তাই এই মুক্ত আকাশে বিচরণের জন্য সবাইকে স্বাগতম।

Welcome to GCE
RUET
(ছবি তে RUET GCE Building)