তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। সেজ ফুপির বিয়ে। ফুপ্পা তখন বুয়েট থেকে গ্র‍্যাডুয়েট করে নোকিয়ার হেড কোয়ার্টার ফিনল্যান্ডে জব করেন।

তখন আনমনে আব্বুকে বলছিলাম, আমি আংকেলের মত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব, বিদেশে বড় অফিসে চাকরি করতে পারব। এরপর আম্মু আব্বু আমাকে কোনদিন বলেনাই তোমাকে এই হতে হবে, সেই হতে হবে। সবসময় বলেছে তোমার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে হবে।

খুব ইচ্ছা ছিল বুয়েট এর সিএসই পড়ব। তাই অন্য কোথাও তেমন কেয়ার করিনি। প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম ওটার জন্যেই।

জাহাঙ্গীরনগরে সিএসই পড়ার কথা মাথায়ও ছিলনা। ফর্ম কেনার দিন আমি আর আমার খালাত ভাই গুলিস্তান ধামরাইতে করে গেলাম জাহাঙ্গীরনগর।

বাসা থেকে হিসাব করে টাকা দিছে ঠিক যা লাগবে। বাস মামা নিল বেশি ভাড়া। তারপর যেয়ে শুনি ফর্মের দাম আর ও বেশি।

লাগবে ৩৫০/৩০০ (ঠিক মনে নাই), আমার কাছে বাস ভাড়ার হিসাব বাদ দিয়ে ছিল আরও ৫০টাকার কম৷

“ধুর, পরীক্ষা দিবনা ভাইয়া, চল, যাইগা”, খালাত ভাইকে খুব ভাব নিয়ে বললাম, যেন বুয়েট এ সিএসই পেয়েই গেছি৷

বলে ফর্ম এর লাইন থেকে দুইজন বের হলাম।

“ওই নিলয়!!! কই যাস?”
“আরে Najmul? ফর্ম কিনবি নাকি? আমার ধুর টাকা নাই, তাই ফর্ম না কিনেই বাসায় যাচ্ছি”

“এক্সাম দিবিনা মানে? কত লাগবে?”
“দোস্ত ৫০টাকা”

“এই নে ধর! যা ফর্ম কেন৷ তোর খুব শখ না সিএসই পড়বি, দেখবি তোর হবেই”।

নাজমুল আমার স্কুলের ফ্রেন্ড। হঠাৎ ও এসে আমাকে হেল্প করল। তখন বিকাশ ছিলনা, ওকে টাকা দিছিলাম ফোন রিচার্জ করে। তারপর? বাকিটা হয়ত আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে অনেকেই জানে…

বুয়েট এ পেলাম ইউআরপি। ভর্তি হলাম এখন আমার প্রাণপ্রিয় জানবিবিতে। কী দিলনা জানবিবি আমাকে? সবগুলা স্কলারশিপ পেলাম জানবিবি থেকে, Shovon ভাইয়ের মত বড় ভাই পেলাম, ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ, আইসিপিসি চ্যাম্পিয়নশিপ, দুইটা ওয়ার্ল্ড ফাইনাল।

ইভেন আমার পাশে বসে যে আমার সাথে যাচ্ছে, সেটা আমার জীবনে জানবিবির সবচেয়ে বড় উপহার..

আমার জীবনে আমার মা বাবার অবদানের শেষনেই। আমার বাবা মা আমার জীবনকে সুগম করতে কি কষ্টই না করেছেন, তারপরও সারাজীবন বলেছেন লক্ষ্যে তোমাকে পৌছাতে হবেই।

আজ সেই মা বাবা যখন আমাকে বিদায় দিল, তাদের চোখে জল ছিল, তারপরও তাদের কথা, এই পানি খুশির পানি, অনেক বড় হউ জীবনে, আমাদের আরো গর্বিত কর।

জীবনে সব কাজে যাওয়ার আগে আমার একটাই কথা – ‘“আম্মু দোয়া কইর”, আজও সেটা বলেই বিদায় নিলাম। আর সারাজীবন সেটাই বলে যাব, সেটা সামনে বসে হোক আর হোক দূর থেকে ফোনে।

আর নাজমুলের কথা কি বলব! ওকে জীবনে কখনও ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না! আজকের আমি হওয়ার পিছনের কারণ টা যে সেই।

লেখক: Raihat Zaman Neloy,

Jahangirnagar University,

Software Engineer, GOOGLE.