পৃথিবীর প্রথম দ্বিমাত্রিক পদার্থ যা স্টিলের তুলনায় ২০০ গুন শক্তিশালী এবং কাগজের থেকেও পাতলা। এটি হীরার চেয়ে শক্ত কিন্তু রাবারের থেকেও স্থিতিস্থাপক এবং একইসাথে স্বচ্ছ।

হ্যাঁ, এতক্ষণ আমরা গ্রাফিন নিয়ে কথা বলছিলাম। গ্রাফিন কার্বন পরমাণুর একটি একক স্তর (মনোলেয়ার) যা ষড়ভুজের পুনরাবৃত্তিমূলক প্যাটার্নে একত্রে আবদ্ধ এবং এতে SP2 সংকরায়ন ঘটে।

গ্রাফিন সর্বপ্রথম গ্রাফাইট থেকে ২০০৪ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আন্দ্রে গেইম এবং প্রফেসর কোস্ট্যা নভোসেলভ (Geim and Novoselov) আবিষ্কার করেন এবং এজন্য ২০১০ সালে তারা পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান।

গ্রাফিনের অনন্য এবং অতিপ্রাকৃত বৈশিষ্ট্য একে কল্প রাজ্যের পদার্থে পরিনত করেছে।

যেমন আমাদের এতদিনের জেনে আসা বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ প্লাস্টিকের সাথে মাত্র ১% গ্রাফিন মিশিয়ে দিলেই তা অনায়াসে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। গ্রাফিনের ইলেকট্রন মবিলিটি সিলিকনের চেয়ে ১০০ গুণ দ্রত এবং ইলেকক্ট্রিক্যাল কন্ডাক্টিভিটি তামার চেয়ে ১৩ গুণ ভালো।

গ্রাফিন একটি স্বচ্ছ ও স্থিতিস্থাপক পদার্থ হলেও এর ঘনত্ব এতই বেশি যে গ্যাস, এমনকি হিলিয়াম অথবা ক্ষুদ্রতম গ্যাস পরমাণুও এর মধ্যে দিয়ে যেতে পারেনা।

একইসাথে গ্রাফিন প্রতিফলিত আলোর মাত্র ২.৩% শোষণ করে। গ্রাফিন যে কত হালকা সেটা বুঝতে আমরা যদি কোন ফুটবল মাঠকে গ্রাফিন দ্বারা কভার করতে চাই তাহলে মাত্র ৩ গ্রাম গ্রাফিনই যথেষ্ট (ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে ৬ গ্রাম প্রয়োজন কারণ ২৬৩০ বর্গ মিঃ/গ্রাম হলো উভয় পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল)।

গ্রাফিন কুলিং এজেন্ট হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য। ইতোমধ্যে ২০১৮ সালে হুয়াওয়ে তাদের মেট ২০x স্মার্টফোনে থার্মাল কুলিং এজেন্ট হিসেবে গ্রাফিন ব্যবহার করেছে। আবার ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে বর্তমানের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির পরিবর্তে গ্রাফিন ব্যাটারির (যেমনঃ গ্রাফিন এলুমিনিয়াম ব্যাটারি) ব্যবহার শুরু হবে অচিরেই।

কারণ গ্রাফিন এলুমিনিয়াম ব্যাটারি ও লিথিয়াম ব্যাটারির তুলনায় ৬০ গুন দ্রæত চার্জ করতে পারে, ৩ গুন বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, আগুন ধরার ঝুঁকি কম এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির তুলনায় অনেক হালকা বলে কুলিং সিস্টেমের প্রয়োজন পড়ে না।

কুলিং সিস্টেম অতিরিক্ত ওজন যোগ করে তাই গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহারের ফলে ডিভাইস গুলো আরও স্লিম এবং স্মার্ট হয়ে উঠবে। রোবোটিক্সে গ্রাফিনের ব্যবহারে রোবোটিক মেশিনটিকে দ্রত রেসপন্স করতে সাহায্য করে যা ন্যাচারাল রেসপন্সের মতই। অর্থাৎ গ্রাফিনের ব্যবহার সেন্সরকে অতি সংবেদনশীল করে তোলে।

নির্মাণ কাজেও গ্রাফিনের জুড়ি মেলা ভার। কংক্রিটের সাথে গ্রাফিন মেশানো হলে কম উপাদান ব্যবহার করেই শক্তিশালী স্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। এতে স্থাপনার জীবনকাল ১৫-২০ বছর থেকে ৩০-৪০ বছর বা প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত করে এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ কমিয়ে দেয়। একইসাথে অধিক ভারী ওজন নিতে সক্ষম হয়।

এতসব বৈশিষ্ট্যের পরেও গ্রাফিনের বাণিজ্যিকিকরণ বিলম্বিত হওয়ার কিছু কারণ আছে। উচ্চ খরচ যার মধ্যে অন্যতম । গ্রাফিনের মান যত ভালো হবে এর উৎপাদন খরচ ও সময় ততই বেশি লাগবে।

বিকল্প হিসেবে কার্বন ন্যানো-টিউব গ্রাফিনের জনপ্রিয় বিকল্প। এটি কম ব্যায়বহুল এবং সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য। তবে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে গ্রাফিন অনন্য। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আসতে গ্রাফিনের আরও ১০ বছর সময় লাগবে।

Writer: মো: জাহিদ হাসান