রূপকথার গ্রাম, নিসর্গ নয়নাভিরাম
কেউ বলেন, বিশ্বের সুন্দরতম গ্রাম। কেউ বলেন ‘হিমবাহের বাগান শহর‘। কেউ বলেন ‘অস্ট্রিয়ার মুক্তো‘, কেউ বলেন ছবি তোলার শ্রেষ্ঠ গ্রাম -এর নাম হলস্ট্যাট।
ইউরোপের সবচেয়ে ছোট দেশগুলির একটি হলো অস্ট্রিয়া। দেশটির ৬০ ভাগ জুড়ে আছে আল্পস পর্বতমালা। এবং দক্ষিণ থেকে পূর্বে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথে বয়ে চলছে ঐতিহাসিক দানিউব নদী।
সারা বছর পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে দেশটিতে। কেউ আসেন আল্পস পর্বতমালার সৌন্দর্য উপভোগ করত, কেউ আসেন এই দেশে স্কি করতে বা বরফ নিয়ে মেতে উঠতে। কেউ আসেন ভিয়েনা আর সালসবার্গের অপরূপ নিসর্গ উপভোগ করতে।
শীতকালে প্রবল তুষারপাত অস্ট্রিয়াকে সাদা চাদরে মুড়ে দেয়। গ্রীষ্মে বরফ গলে গেলে, শ্বাসরোধকারী সৌন্দর্য নিয়ে জেগে ওঠে ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো গ্রাম। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জনপদ। যেখানে সময় থেমে গেছে অতিপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে।
হালস্টাট, আপার অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত।
একসময় লবণের জন্য বিখ্যাত আপার অস্ট্রিয়ার হালস্টাট এখন অধিকাংশ সময় পর্যটকে পূর্ণ থাকে। বিশেষ করে চীনা নাগরিকরা কোনো এক বিশেষ কারণে এই এলাকা ভ্রমণ করেন।
উত্তর অস্ট্রিয়ার সালসকামার্গাট লেক জেলার পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট গ্রামটি। ৩৫০০ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বুকে নিয়ে বাঁচছে হলস্ট্যাট ভিলেজ
এলাকাটিতে আছে এক প্রাগৈতিহাসিক প্রাকৃতিক লবণ খনি। যা বিশ্বের প্রথম লবণ খনি হিসেবে পরিচিত। তখনকার দিনে লবণ ছিল একটি মূল্যবান সম্পদ। তাই সেই খনি থেকে লবণ সংগ্রহর অর্থনীতি, হাজার হাজার বছর আগে জন্ম দিয়েছিল এক জনপদের। তার নাম ছিল হলস্ট্যাট।
তার নামেই এখানকার সংস্কৃতির নাম।
Hallstättersee হ্রদের চারিদিক জুড়ে সবুজ পাহাড়। পাহাড়দের বলা হয় guardian of the Hallstättersee বা হ্রদের অভিভাবক। পাহাড়ের ধাপে ধাপে ‘বারোক’ শৈলীর আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামের বাড়িগুলি। টিম্বার-ফ্রেমিং শৈলীর গির্জা, ক্যাফে ও হোম-স্টে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
এখানকার প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ক্যাফে, রেস্তোরাঁগুলি সবুজ অর্কিড আর নানা রঙের মরশুমি ফুলে মুড়ে রাখা হয়। দেখলে মনে হবে সেগুলি যেন ফুলেরই দোকান।
হ্রদের পাড় থেকে আঁকাবাঁকা গলি পথ উঠে গেছে পাহাড়ের ওপর দিকে।
রাস্তার দুপাশে শত শত বছরের পুরোনো বাড়ি। কিন্তু এতটাই সুন্দর অবস্থায় সাজিয়ে রাখা, যেন কয়েক মিনিট আগে বাড়িগুলিতে গৃহপ্রবেশ হয়েছে।
শুধুমাত্র অর্থ থাকলেই আস্ত একটা পাহাড়ি গ্রামকে ছবির মত সাজিয়ে যায় না। এখানকার বাসিন্দাদের উন্নতমানের নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গীই হল হলস্ট্যাটের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য
শীতকালে বরফে সাদা হয়ে যায় চারদিক। হ্রদ,পাহাড়, গ্রামের রাস্তা ঘাট, বাড়ির ছাদ, পুরু বরফের চাদরে মোড়া থাকে। দেখলে মনে হবে পৃথিবীর বাইরের কোন জায়গায় এসেছেন।
চিনে নকল হলস্ট্যাট বানিয়েছে চিনারা
পৃথিবীতে নকল করতে চিনাদের জুড়ি মেলা ভার। ২০১২ সালে, চিনের গোয়াংডং প্রদেশে হলস্ট্যাটের অনুকরণে আরেকটি হলস্ট্যাট তৈরি করেছে চিন। নকল হলস্ট্যাট গ্রামটি বানিয়েছে মিনমেটালস নামে চিনের এক নির্মাণকারী সংস্থা।
নকল হলস্ট্যাট তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৯৪০ মিলিয়ন ডলার। অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাটের নিঁখুত অনুকরণে বাড়ি ঘর, চার্চ, রাস্তা, সব কিছুই ছবির মতো সাজিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছে চিন। এবং সবই হয়েছে আসল হলস্ট্যাটের বাসিন্দাদের ও প্রশাসনকে না জানিয়ে।
খবর পেয়ে আসল হলস্ট্যাটের মেয়র ও কিছু বাসিন্দা আসেন চিনের নকল হলস্ট্যাট গ্রামে। চিনাদের নকল করার কেরামতি দেখে বিস্মিত হয়ে হয়ে যান তাঁরা। প্রথম দিকে তাঁরা ক্ষুব্ধ হলেও পরে নাকি গর্বিত এবং খুশি হয়েছিলেন। তবে কিছু স্থাপত্যের অনুমতি না নেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন আসল হলস্ট্যাটের মেয়র।
এতক্ষণ যে গ্রামের অবর্ণনীয় রুপের কথা শুনেছিলাম চলুন এবার সেই গ্রামের দেশটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ অস্ট্রিয়া। এর সীমান্তবর্তী দেশসমূহের মধ্যে উত্তরে রয়েছে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড এবং লিশটেনস্টাইন।
নয়নাভিরাম প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যঘেরা এই দেশটি আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়।
অস্ট্রিয়াকে তিনটি অসম ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে বৃহত্তম অংশটি (৬২%) হল আল্পস পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নবীন পাহাড়গুলি। এদের পূর্বে আছে পানোনীয় সমভূমি, এবং দানিউব নদীর উত্তরে আছে বোহেমীয় অরণ্য নামের একটি পুরানো কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু গ্রানাইট পাথরে নির্মিত পার্বত্য অঞ্চল।
পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটির মোট আয়তন ৮৩,৮৫৫ বর্গকিলোমিটার (৩২,৩৭৭ বর্গমাইল)
অস্ট্রিয়ার জনসংখ্য বর্তমানে ৮,৭২৫,৯৩১ জন যার ৭৩.৬% ই রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। অস্ট্রিয়াতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে(উইকিপিডিয়ার সূত্রমতে)। এছাড়াও হিন্দু,শিখ,বৌদ্ধ ও ইহুদী বাস করেন।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হচ্ছে ভিয়েনা। শুনতে অবাক হলেও সত্যি যে এদেশের সরকারী ভাষা হচ্ছে জার্মান।
এদেশে মুদ্রা হলো ইউরো (€)d (EUR)।
জাতীয় আইন অনুযায়ী গাড়ী চালনার দিক ডানদিক এবং কলিং কোড +৪৩
অস্ট্রিয়া একটি সংসদীয় গণতন্ত্র। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
NB: ছবিগুলো মাস্ট বি দেখবেন,না হয় বিশাল জিনিস মিস করবেন😊😊
লিখা: Abid Rahat
তথ্য সংগ্রহ: যথাক্রমে গুগল,উইকিপিডিয়া, ব্রিটিশ জার্নাল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল🙂