জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-২০১০ সেশনের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান এমিল। ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২য় স্থান অধিকার করেছেন।

তার গল্প লিখেছেন— এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।

জ্ঞান পিপাসা ছিল এমিলের বিসিএস’র সফলতার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তার জ্ঞান পিপাসা।

এমিল বলেন, জ্ঞান অর্জন করার অনেক মাধ্যমের মধ্যে বই হলো একটা মাধ্যম। এছাড়াও অসংখ্য মাধ্যম আছে যেখান থেকে জ্ঞান অন্বেষণ করা যায়। আমি সব জায়গা থেকে জ্ঞান আহরণ করার চেষ্টা করতাম। বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, আলোচনা সভায় গিয়ে বসে থাকতাম।

কেন জানি এসব প্রোগ্রামে যেতে আমার খুব মন টানত। ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই, পত্রিকা পড়তাম। হয়ত এই পড়ার অভ্যাসটাই বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

মানিকগঞ্জ এর কাকুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাসিবুর রহমান এমিল। পিতা মো. রওশন উদ্দীন আহমেদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাতা আন্নী আহমেদ গৃহিণী।

ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত পড়ালেখা করতেন তাই প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত সব সময় ক্লাসে প্রথম হয়েছেন। খাবাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান।

সাফল্যের ধারাবাহিকতায় খাবাশপুর লাবণ্য প্রভা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। ২০০৫ সালে একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ঐ স্কুলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোন। তারপর সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তি ঘটান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজির বিএসসি ইন ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।

কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল অনুজীববিজ্ঞান বিভাগে পড়ে উচ্চতার গবেষণা করার তাই দ্বিতীয় বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুজীববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। শুরু থেকেই নিয়মিত পড়ালেখা করতেন।

৪র্থ বর্ষ থেকে জিআরই এর জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। অনার্সে সিজিপিএ ৩.৯৫ পেয়ে ৩য় স্থান অর্জন করেন। ভাল ফলাফলের জন্য মাস্টার্সের থিসিস করার সুযোগ পান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডি আরবি এর ভাইরোলজি ল্যাবে।

মাস্টার্সে থিসিসের জন্য বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ পান। সিজিপিএ ৩.৭৬ পেয়ে ৬ষ্ঠ স্থানঅধিকার করার মাধ্যেমে মাস্টার্স শেষ করেন। অনুভূতির কোঠরে: মূলত মাস্টার্স শেষ করেই বিসিএস এর জন্য তার প্রস্তুতি নেয়া।

তার এই প্রস্তুতিতে পরিবার, বন্ধুবান্ধবের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

৩৫তম বিসিএস নন ক্যাডার হতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চকারি করেছি। এমিল বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করা।

তাই পরবর্তীতে বিসিএস এর জন্য নিজেকে ভালভাবে প্রস্তুত করি এবং ৩৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২য় স্থান অধিকার করেছি।

এছাড়াও এর কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে কিছুদিন চাকরি করেছি।

এমিল জানান, একই সাথে বিসিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মত অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দুটি পরীক্ষায় সাফল্যের পিছনে রয়েছে তার কৌশলগত প্রস্তুতি। ভবিষ্যত লক্ষ্য প্রশাসন ক্যাডারে দেশের অর্পিত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করব।

আর বিদেশে উচ্চতর গবেষণা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।