মাহনাজ হোসেন ফারিবা : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কে না ভর্তি হতে চায়। তবে দিকনির্দেশনার অভাবে অনেকেই বিশ্বখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার প্রক্রিয়া কি। যারা জানতে চান তাদের জন্য আমার ছোট্ট প্রয়াস।

১. প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবেন, নাকি পিএইচডি করবেন। কারণ দুইটার স্ট্রাটেজি দুই ধরনের।

২. এরপর বাছাই করবেন কোন প্রোগ্রামে যেতে চান। এখন প্রোগ্রাম বাছাই করবার জন্য যেতে হবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। সেখানে সকল কোর্স এ টু জেড লিস্টিং করা আছে। সেখান থেকে আপনার পছন্দমত কোর্সগুলোকে বাছাই করে নিয়ে সেই কোর্সগুলোর ওয়েবপেজ দেখেন। সেখানেই সকল ক্রাইটেরিয়া লিস্ট করা থাকে, যে কী কী এলিজিবিলিটি চায় তারা।

৩. যদি বলা থাকে ৪ এর মধ্যে সিজিপিএ ৩.৪ চায়, অথবা ৩.৬ চায় অথবা ৩.৮ চায় সেক্ষেত্রে টেনশন করার কিছু নাই। কারণ আমেরিকান সিজিপিএ সিস্টেম আমাদের দেশে ফলো করা হয়। আপনার সিজিপিএ দিয়েই হবে। যদি সিজিপিএ চায় ৩.৬ আর আপনার সিজিপিএ এর নিচে থাকে, তাহলে সেটাতে এপ্লাই করবেননা। তবে একদম ৩.৬ থাকলেও এপ্লাই করে দেখতে পারেন। সাধারণত যাদের সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৯৯ এর কাছাকাছি অর্থাৎ হাই সিজিপিএ হোল্ডার, এ ধরনের মানুষকে প্রেফারেন্স দেয়া হয় এটা সত্য।
তবে আপনার যদি ৫-৬ টা পাবলিকেশন থাকে, তাহলে আপনার সিজিপিএ কে ওভারলুক করে যাবে এডমিশন কমিটি। তাই বলে পাবলিকেশন থাকাটা মাস্টার্সের ক্ষেত্রে ম্যান্ডেটরি না। পাবলিকেশন না থাকলেও চলবে। আমার ক্ষেত্রে, আমার অনার্সের সিজিপিএ ছিল ৩.৬৬ ও মাস্টার্সের ৩.৫৩। আবার পাবলিকেশন ছিল ৬টা, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে ছিল ৪টা। আরও ২টা ছিল সাবমিটেড।

এমনও অনেকে অক্সফোর্ডে আছে, যাদের সিজিপিএ ৩.৮ এর উপরে, পাবলিকেশন নাই। কাজেই সিজিপিএ ও পাবলিকেশন নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নাই।

তবে আইইএলটিএস এর ক্ষেত্রে ক্ষমা নাই। আপনার আইইএলটিএস স্কোর ৭.৫ চাবে ও প্রতিটি কমপোনেন্টে ৭ অথবা তার উপরে চাবে। খুব রেয়ার কেসেই এইটা কনসিডার করে, যদি এপ্লিকেন্ট খুবই ভালো হয়, সিজিপিএ ৩.৯৯ এর কাছে থাকে, অনেকগুলো পেপার থাকে, তাহলে হয়ত কনসিডার করতে পারে, কিন্তু সাধারণত করেনা। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা জানি তাই লিখলাম।

এ ধরনের ক্ষেত্রে যা হয়, ডিপার্ট্মেন্টকে/কোর্সকে যে ইমেইল এড্রেস দেয়া আছে সেটাতে ইমেইল করতে হয়, যে আপনার সব ক্রাইটেরিয়া ঠিক আছে, শুধু আইইএলটিএস কম এটা কি কনসিডার করবে কিনা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোনো ইমেইলের রিপ্লাই তারা দেয়না। যদি দিল তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান। আমার ক্ষেত্রে আমি কোনো কোর্স থেকেই ইমেইলের রিপ্লাই পাইনি এপ্লিকেশনের আগে। ইমেইলের রেস্পনস করলে আপনি আপনার উত্তর জেনে যাবেন।

৪. স্টেটমেন্ট অফ পারপাস, সিভি বানানোর নিয়ম, রিকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহের নিয়ম সবই মোটামুটি একই, বিভিন্ন হায়ার স্টাডিজ গ্রুপে এগুলো নিয়ে আগেও অনেক কথা হয়েছে এবং ডকুমেন্ট আছে সেসব গ্রুপে। তবে স্টেটমেন্ট অফ পারপাস যেন গৎবাঁধা না হয়।

তারা দেখতে চায় আপনি আসলে মানুষ হিসেবে অলরাউন্ডার কিনা এবং এরপরেও আপনি আপনার লক্ষ্যে ফোকাসড কিনা। নিজের সকল ইউনিক গুণাবলী তুলে ধরবেন, যা অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করবে। তারা এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ এর উপরে খুব গুরুত্ব দেয়, যদি দেখাতে পারেন সিভিতে এবং SOP তে এর কিছু কাহিনী লিখে দিতে পারেন তাহলে খুবই ভালো হবে।

SOP যদি ওয়ার্ড কাউন্টের চেয়ে একটু বড় হয়ে যায় তাহলে খুব একটা সমস্যা নাই। আমার ৫০০ ওয়ার্ড বেশী ছিল, সমস্যা হয়নি। সিভিও ২ পাতা বেশী ছিল, এতেও সমস্যা হয়নি। অনেকেরই বেশি থাকে।

৫. পিএইচডি এর ক্ষেত্রে আপনাকে আগে একজন সুপারভাইজার ম্যানেজ করতে হবে। তিনি নিতে রাজি থাকলে আপনার অক্সফোর্ডে চান্স পাওয়া এবং কম্পিটিশনের ক্ষেত্রে কোনোই বাঁধা নাই। সাধারণত অক্সফোর্ডের সুপারভাইজরেরা চেহারায় না চিনলে কাউকে নিতে চায়না। ইমেইল করলেও খুব একটা লাভ হয়না।

কিছুদিন তাদের সাথে রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতে হয়। আবার যারা এখানে থেকেই ব্যাচেলর্স/মাস্টার্স করেছে তাদের জন্য অনেক সহজ, প্রফেসরেরা চেহারায় চিনে, কাজেই সহজে নিয়ে নেয়। পিএইচডির অফার পাওয়া সম্পূর্ণরূপে সুপারভাইজরের উপর নির্ভরশীল। আপনি ইমেইলের চেষ্টা করে, রেস্পন্স পেলে এরপর কিছুদিন প্রফেসরের সাথে আরএ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এরপর প্রফেসর রাজি হলে পিএইচডি এর অফার পাওয়া ১ সেকেন্ডের ব্যাপার।

৬. ইন্টারভিউ : মাস্টার্সের ক্ষেত্রে আপনার এপ্লিকেশন শর্টলিস্টেড হলে আপনার ইন্টারভিউ নেয়া হবে। ইউকে অথবা ইইউ এর ক্যান্ডিডেট হলে আপনাকে অক্সফোর্ডে গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়। আর ওভারসিজ ক্যান্ডিডেট হলে তারা স্কাইপেতে ইন্টারভিউ নেয়। ক্যান্ডিডেটকে জাজ করার জন্য ওই পুরো কোর্সের এডমিশনস কমিটি বসে থাকে। নানারকম প্রশ্ন করে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে।

আমি আমার জীবনে চাকরির ইন্টারভিউ, ফেলোশিপের ইন্টারভিউ, বিসিএস ভাইভা সব দিলেও, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এডমিশনস ভাইভা ছিল আমার লাইফের সবচেয়ে কঠিন ইন্টারভিউ ট্রাস্ট মি অন দিস।

কী কী প্রশ্ন করবে, এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে তারা আপনার কাছে কী চায়। আপনাকে আপনার কাজের উপরে ছোট্ট একটা প্রেজেন্টেশন দিতে বলতে পারে, অথবা আপনার পূর্ববর্তী রিসার্চ কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে। যদি এমন হয়, আপনার পেপারপগুলো ভালো মানের, তাহলে আপনাকে আপনার পেপার নিয়ে কোনো প্রশ্নই করবেনা, যেমন আমাকে করেনাই। কিন্তু আমারই অনেক ক্লাসমেটকে করেছে।

আবার অনেকের পেপার থাকেনা বেশী। তাদেরকে প্রেজেন্টেশন দিতে বলে তার সর্বশেষ রিসার্চ প্রজেক্টটির উপরে। আমার কয়েকজন ক্লাসমেটকে দিতে বলেছিল এবং তাদের দিতে হয়েছিলও। স্কাইপেতে স্ক্রিনশেয়ারের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। আমাকে প্রেজেন্টেশন বানাতে বললেও প্রেজেন্টেশন দিতে হয়নি। তারা কাকে কী ধরবে, আর কার সাথে কীভাবে ইন্টারভিউতে আচরণ করবে, এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভরশীল।

পরে এখানে এসে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ওরা প্রতিটা সিভি, SOP, রিকমেন্ডেশন লেটার খুব মনযোগ দিয়ে পড়ে দেখে। ওরা যেসব বিষয়ে সম্পূর্ণ সিউর হয়ে যায়, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করেনা। আর যদি তাদের মনে সন্দেহের অবকাশ থাকে, অথবা কনফিউশন থাকে, তাহলেই সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করে। আপনি হয়ত একটা কাজ করেননি, অথচ সিভিতে/এসওপি তে লিখেছেন, আর তাদের সন্দেহ হয়েছে, তাহলেই সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে ইন্টারভিউতে।

আমাদের দেশের অনেকেরই পেপার থাকার পরেও দেখা যায় নিজের কাজ সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া নাই। আবার থিসিস/রিসার্চ প্রজেক্ট সম্পর্কে নিজেরই ক্লিয়ার ধারনা নাই। সম্পূর্ণ Plagiarised Material without any proper referencing. এ ধরনের plagiarised সন্দেহ হলে এগুলো নিয়ে ধরে বসে।

 

আমাকে ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করেছিল সম্পূর্ণ সাবজেক্টভিত্তিক। এই যেমন আমি যে কোর্সে পড়তে আসতে চাচ্ছি এটার তিনটা টার্মিনোলজি আছে, এইগুলার অর্থ কী। এই কোর্সে এটা এটা পড়াবে, এটা বলতে আমি কী বুঝি। এইটা সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা, ওটা সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা ইত্যাদি।

আমি কিছুই জানতামনা ও পারতামনা। ভয়ে আমতা আমতা করছিলাম। সবই এটেম্পট নিয়েছিলাম। দেখা গেল, শেষে তারাই বলল আমাকে যা জিজ্ঞাসা করেছে আসলে সেগুলোর কোনোই সঠিক উত্তর নাই, তা তারা নিজেরাও জানে। তারা শুধু আমাকে টেস্ট করার জন্য প্রশ্নগুলো করেছে। শেষে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি কি প্রেসার নিতে পারি কিনা কারণ অক্সফোর্ডে পড়ার অনেক প্রেসার। আমি বলেছিলাম এটা ব্যাপারই না, কারণ আমি যে চাকরি করি, তার প্রেসার সবচেয়ে বেশি।

এই হল শর্টকাট অভিজ্ঞতা। তবে পিএইচডির ক্ষেত্রে এমন কোনো ইন্টারভিউ দিতে হয়না। একজন প্রফেসর নিতে রাজি থাকলেই কাজ হয়ে যায়। আন্ডারগ্র্যাড আর মাস্টার্সে এডমিশন প্রচন্ড কমিপিটিটিভ পিএইচডি এর তুলনায়।

 

৭. ফান্ডিং ইস্যু এরপরে সবচেয়ে বড় ইস্যু, কারণ অক্সফোর্ডে পড়ার খরচ অনেক বেশী। আপনি যদি ডিসেম্বর ডেডলাইনে এপ্লাই করেন, তাহলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অনেকগুলো ফান্ডিং এই এপ্লাই করতে পারবেন আপনার মূল আবেদনের সাথে। জানুয়ারি ডেডলাইনে এপ্লাই করলে আর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফান্ডিংগুলোতে (যেমন ক্ল্যারেনডন, উইডেনফিল্ড হফম্যান, রোডস, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ইসলামিক সোসাইটি স্কলারশিপ ইত্যাদি) এপ্লাই করতে পারবেননা।

তবে আপনার কোর্স অথবা ডিপার্ট্মেন্টের যদি কোনো ফান্ডিং থাকে, তাহলে তারা আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে। যেমন আমার সাথে ফিজির এক ছেলে পড়ে, সে জানুয়ারি ডেডলাইনে এপ্লাই করেছিল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আর কোনো ফান্ডিং এ তখন এপ্লাই করার আর সুযোগ নেই। তাকে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইন্টারন্যাল স্কলারশিপ জনসন্স এন্ড জনসন্স স্কলারশিপ দিয়েছে।

এধরনের ক্ষেত্রগুলোতে আপনার এপ্লিকেশন সাকসেসফুল হবার সাথে সাথেই জিজ্ঞাসা করে ফান্ডিং এর ব্যবস্থা আছে কিনা। আপনি যদি বলেন আপনার ফান্ডিং নাই, তাহলে তারাই আপনার জন্য ইন্টারন্যাল ফান্ডিং এরেঞ্জমেন্ট করে দিবে (যদি কোর্সের থাকে তো)। কিন্তু অনেক কোর্সেই ইন্টারন্যাল ফান্ডিং থাকেনা, সেটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে এই রিস্ক নেয়াটা ঠিক নাও হতে পারে। এইসমস্ত ইন্টারন্যাল ফান্ডিং এর কথা আপনি ওয়েবসাইটে পাবেননা। এগুলো কোর্স ম্যানেজমেন্ট জানে এবং শুধুমাত্র আপনার এপ্লিকেশন সাকসেসফুল হলেই আপনাকে এই তথ্য জানাবে।

পিএইচডির ক্ষেত্রেও সেম। অনেক প্রোগ্রামেই ফান্ডিং থাকে, অনেকটাতেই থাকেনা। যদি আপনার সুপারভাইজরের ফান্ড থাকে, আর আপনাকে তার খুবই পছন্দ হয়, সেই আপনাকে ফান্ড দিয়ে দিবে। অনেক ডিপার্ট্মেন্টে তাই হয়। আবার অনেক ডিপার্ট্মেন্টে ফান্ডিং না থাকলেও তারা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির যে সেন্ট্রাল ফান্ডিং গুলো আছে, যেমন ক্ল্যারেনডন, এগুলোতে কল দিয়ে দেয় অথবা কমিটির পরিচিত কাউকে বলে দেয়। এতদূর পর্যন্ত আপনার প্রফেসরেরাই আপনার জন্য করতে পারে।

এমনকি মাস্টার্সের ক্ষেত্রেও কোর্স ম্যানেজমেন্ট আপনার জন্য এমন লবি করতেই পারে। It’s all about your communication and networking skills but remember, it only works after an application has been successful. আপনি আবেদনই করেননাই এখনও, চান্স পাওয়া দূরের কথা, তার আগেই আপনি এইসব বিষয়ে প্রফেসরকে ঘাঁটালে অথবা এডমিশন কমিটিকে ঘাঁটালে আপনাকে প্রথমেই তারা বাতিলের খাতায় ফেলে দিবে।

আপনার যদি একটা ফান্ডিং থাকে, আর তা আপনার জন্য যথেষ্ট না হয়, তাহলে আপনার পার্শিয়াল ফান্ডিং এর জন্য আপনার কলেজ এবং আপনার ডিপার্ট্মেন্ট ব্যবস্থা করবে। আপনার জন্য স্যুটেবল কোনো পার্শিয়াল ফান্ডিং আছে কিনা, আপনি আপনার ডিপার্টমেন্ট/কোর্স/কলেজের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন, তাহলে তারাই আপনার জন্য খুঁজে দিবে, এরপর সেখান থেকেই আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে এবং আপনি ইমেইলের লিংক ধরে এপ্লাই করবেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে মেইন আবেদনের সময়ে আপনাকে একটা কলেজ চয়েজ করতে বলবে, কলেজ চয়েজ এই পার্শিয়াল ফান্ডিং এর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই কলেজের থাকা খাওয়ার রেট দেখে চয়েজ দেয়। এই ভুল জীবনেও করবেননা। কলেজে কত প্রকারের ফান্ডিং ও স্কলারশিপ আছে সেটা দেখে এরপর কলেজ চয়েজ দিবেন। এটাও বেশ রিসার্চের বিষয়। অক্সফোর্ডের কিছু কলেজকে ধনী কলেজ বলা হয়, কারণ প্রচুর ফান্ডিং ও স্কলারশিপ আছে (পার্শিয়াল)।

একটু গুগল সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন এই কলেজগুলোর নাম এবং মূল আবেদনের সময়ে সে অনুযায়ী চয়েজ দিবেন।

 

আমার ক্ষেত্রে আমি হারুন উর রশীদ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ পেয়েছিলাম সেন্ট ক্রস কলেজের। আমাকে গ্রীন টেম্পলটন কলেজে প্রথমে নেয়া হয়েছিল, সেন্ট ক্রসে এই স্কলারশিপ পাবার কারণে আমাকে সেন্ট ক্রসে শিফট করে এনেছে, এগুলো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাল প্রসিডিউর।

 

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কমনওয়েলথ/কমনওয়েলথ শেয়ারড/শেভেনিং এই কয়টাতে এপ্লাই করে। কমওয়েলথ এপ্লাই করতে হয় ইউজিসির মাধ্যমে, আর কমনওয়েলথ শেয়ারড এপ্লাই করতে হয় ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে, আপনার এপ্লিকেশন এক্সেপ্ট হবার পরে। কমনওয়েলথের সমস্যা হল, এটাতে শিক্ষক/অথবা শিক্ষকের পরিবারের বাইরের কেউ ফান্ডিং পায়না এমন অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে, আর এপ্লাই করলেও এপ্লিকেশনের সময়ে তিনটা ইউনিভার্সিটি অথবা প্রোগ্রামে চয়েজ দিতে হয়।

কমনওয়েলথ যা করে, তা হল যদি আপনি আপনার চয়েজের তিনটাতেই সুযোগ পেয়ে যান, তাহলে আপনার চয়েজের তিনটাতেই ওরা কোর্সের টিউশন ফি কমিয়ে দেয়ার জন্য এক ধরনের ডিসকাশন করে কোর্স ম্যানেজমেন্টের সাথে। সমস্যা হল, যদি কোর্স ম্যানেজমেন্ট রাজি না হয়, তাহলে কমনওয়েলথ আপনাকে আপনার তিনটা চয়েজের মধ্যেই অন্যটায় দিবে, যেটাতে তারা টিউশন ফি কমাতে পেরেছে। আমাদের কোর্সে এর আগে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়েছে এমন বিভিন্ন দেশের মানুষ অফার পেলেও পড়তে পারেনি, কারণ টিউশন ফি কমায়নি কোর্স।

কমনওয়েলথ পরে এপ্লিকেন্টদের তিনটা চয়েজের মধ্যে থেকে অন্য একটাতে ফান্ড করেছে, এপ্লিকেন্টরা আর এই কোর্সে আসতে পারেনি। ঘটনা হল, চান্স পাবার দায়িত্ব আপনার, আর এরপরে আপনার তিনটা চয়েজের মধ্যে থেকে কোনটাতে পড়ার জন্য কমনওয়েলথ আপনাকে ফান্ড করবে সেই সিদ্ধান্ত কমনওয়েলথের।

কমনওয়েলথ শেয়ারড একটা খুবই ভালো স্কিম। আপনার কোর্সে এপ্লিকেশন সাকসেসফুল হলে আপনার ডিপার্ট্মেন্ট আপনাকে কোর্স থেকে কমনওয়েলথ শেয়ারড এর জন্য রিকমেন্ড করবে। আমি এটাতে ডিপার্ট্মেন্ট থেকে এপ্লাই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে বলেছিল, আমার দেশ এখন মিডল ইনকাম কান্ট্রি, যে কারণে ওরা আমার থেকে পোর কান্ট্রির ক্যান্ডিডেটকে কমনওয়েলথ শেয়ারড এর জন্য রিকমেন্ড করবে। কমনওয়েলথ শেয়ারড ও রিস্ক। আপনার কোর্স আপনার জন্য রিকমেন্ড করে দিলেও স্কলারশিপ আপনি না পেতেই পারেন।

শেভেনিং এর সমস্যা হল তারা সায়েন্সের বিষয়গুলোতে মোটামুটি দেয়ইনা। আর ২ বছরের ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স চায়। আমার ক্ষেত্রে যা একটা বাধা ছিল।

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে দিয়ে থাকে। এখানে ডেডলাইনের মধ্যে অফার লেটার সহ এপ্লাই করতে হয়। মূলত আপনার রেজাল্ট, আপনার রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স এবং আপনার পাবলিকেশন হচ্ছে সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া। আর প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের সিলেকশন ও মার্কিং ক্রাইটেরিয়া পাওয়া যাবে প্রাইম মিনিস্টার্স গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের ওয়েবসাইটে। সেখানে সব তথ্যই পাওয়া যাবে। পিএম ফেলোশিপে ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং এ প্রথম ৩০০ ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া ক্যান্ডিডেটদেরকেই শুধু কনসিডার করে। এখানে ক্যাডার অফিসার ও গভর্মেন্ট সার্ভিসহোল্ডারদের জন্য ৮০% সংরক্ষিত। আর বাকী ২০% বেসরকারি চাকরিজীবি প্রার্থীদের জন্য। স্টুডেন্ট/বেকারদের পাওয়ার সম্ভাবনা শূণ্যের কাছাকাছি। আর বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ সারা দেশের সবার জন্য উন্মুক্ত। স্টুডেন্ট, টিচার, চাকরিজীবি সবাই এতে আবেদন করতে পারে। এতে র‍্যাঙ্কিং ব্যারিয়ার নেই কোনো। সাধারণত আমার মত সরকারি চাকরি করলে, তাদের জন্য সরকারি ফান্ডিং নিয়ে আসাটা সুবিধাজনক, কারণ আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি, জিও, ভিসা এসবের কিছু ইস্যু থাকে। আর ভিসার ক্ষেত্রে গভর্নমেন্ট স্পন্সরড ক্যাটেগরি দেখানো যায়। আমি বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছি।

৮. অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে ফান্ডিং ডিক্ল্যারেশন চায়, একমোডেশন প্রেফারেন্স চায়। এগুলো সময়মত করবেন। দেরি করে করলে ঝামেলা হয়ে যাবে, পরে মনমত বাসা পাবেননা। এখানে বাসাভাড়া খুবই বেশী। আর কলেজের অন সাইট একমোডেশনগুলো আগেই বুক হয়ে যায়। আর নির্দিষ্ট পেমেন্ট ডেটের মধ্যে অবশ্যই সম্পূর্ণ টিউশন ফি পে করে দিবেন, নাহলে আপনাকে ম্যাট্রিকুলেট করবেনা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।

এত দূর আসার পরে আপনার আর ভিসা বা অন্যান্য কিছু নিয়ে সমস্যা থাকবার কথা না। অক্সফোর্ডে এসে পৌঁছানো কঠিন হলেও, একবার ঢুকে গেলে সবই খুব সহজ। আশা রাখি ভবিষ্যতেও আরও বাংলাদেশী ছেলেমেয়ে দিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ভরে যাবে।

লেখক : মাহনাজ হোসেন ফারিবা
– বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলো
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
– অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নাফিল্ড ডিপার্ট্মেন্ট অফ ক্লিনিক্যাল মেডিসিন এর অধীনে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এমএসসি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত) এবং হারুন উর রশীদ স্কলার, সেন্ট ক্রস কলেজ
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।
– সহকারী সচিব, (৩৫তম বিসিএস প্রশাসন)
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
– বিএস, এমএস, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।