নবীন গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার একটি ভীতিকর অংশ হলো গবেষণালব্ধ ফলাফলকে গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার আকারে লিখা। আমার পিএইচডি বা মাস্টার্স ছাত্রদের হাতে ধরে ধরে সেটা শিখাই। এই লেখায় কীভাবে রিসার্চ পেপার লিখা শুরু করতে হবে, তাই নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখছি।
রিসার্চ পেপারের মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণায় কী পেয়েছেন, সেটাই সংক্ষিপ্ত আকারে জানানো। খেয়াল রাখবেন, আপনি হয়তো বছর খানেক কাজ করেছেন, তাই সবকিছুর খুঁটিনাটি জানেন ঠোটস্থ ভাবে, কিন্তু পাঠকের সেই গভীর জ্ঞান নাও থাকতে পারে। কাজেই রিসার্চ পেপারের শুরুটা করতে হবে গবেষণার বিষয়টির প্রেক্ষিত বা background নিয়ে আলোচনা করে।
* পেপারের শুরুতেই থাকে abstract বা সারাংশ। এই অংশটি ৫/৬ বাক্যের বেশি হওয়া উচিত না। এই অংশের কাজ হলো গবেষণাপত্রটির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা খুব অল্প জায়গায়। যেমন, সমস্যাটা কী, তার সমাধান করলে লাভ কী, আপনি কী করেছেন, এবং এই পেপারে কী তথ্য/ফলাফল/প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে, সেটা।
অনেকেই এই অংশটি অতি দীর্ঘায়িত করে ফেলেন। সেটা ঠিক না। অনেক কনফারেন্স বা জার্নালে অবশ্য শব্দসীমা বেঁধে দেয়া থাকে, তার চেয়ে বেশি দেয়া যায় না। আপাতত এই অংশটিতে সর্বোচ্চ ৬ বাক্য থাকবে এটাই লক্ষ্য স্থির করবেন।
* এবার পেপারের মূল অংশ। পেপারের শুরুতে সাধারণত ভূমিকা বা introduction সেকশন থাকে, শেষে থাকে উপসংহার বা conclusion।
ভূমিকাতে মূল সমস্যা নিয়ে প্রেক্ষিত নিয়ে বলতে হবে। স্টানফোর্ডের ইনফোল্যাবের প্রফেসর জেনিফার উইডোমের এই নিয়ে দারুণ একটা ফরমুলা আছে, সেটা এরকম। ভূমিকাতে ৫টি অংশ থাকবে
– সমস্যাটা কী?
– সেটা সমাধান করা কেনো দরকার (কী লাভ হবে এটা করে)?
– সমস্যাটা সমাধান করা কেনো কঠিন?
– আপনি কী করছেন সেটা সমাধানে? এবং,
– অন্যরা কী করেছে, তার চাইতে আপনার পদ্ধতির সুবিধা কী কী?
কাজেই ইন্ট্রোডাকশন লেখার সময়ে ৫টা প্যারা লিখবেন অন্তত, উপরের ৫টা পয়েন্ট নিয়ে।
এর পরে থাকতে পারে background বা motivation অংশ, যেখানে এই পেপারের বিষয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা সংক্ষেপে দেয়া হবে। মূলত কনসেপ্ট বা ধারণাগুলা সংক্ষেপে লিখে সেসব বিষয়ের নানা পেপারের সাইটেশন দিতে হবে।
এবারে আসবে আপনার পেপারের টেকনিকাল বা কারিগরি অংশটি। পেপার কীসের উপরে, তার উপরে নির্ভর করবে এখানে কী থাকবে। এই অংশে সিস্টেম ডিজাইন/আর্কিটেকচার থাকতে পারে, থিওরির অংশ থাকতে পারে, এক্সপেরিমেন্টাল মেথডলজি থাকতে পারে, ইত্যাদি। অবশ্যই চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে হবে।
পরের অংশে থাকবে আপনার এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট বা ফলাফল ও তার বিশ্লেষণ। এখানে ফলাফল উপস্থাপন (ছক বা চিত্র) করাই যথেষ্ট না, বরং তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই ফলাফল ব্যাখ্যা করা। ডিসকাশন বা আলোচনা অংশে অনেক জোর দিতে হবে। ফলাফল ভালো হলে তো বটেই, খারাপ হলে সেটার সম্ভাব্য ব্যাখ্যাও দিতে হবে।
রিলেটেড ওয়ার্ক বা এই বিষয়ে অন্য কে কী কাজ করেছেন, সেটার অবস্থান নিয়ে একটু দ্বিমত আছে। কেউ কেউ পেপারের সব শেষে সেটা দিতে পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ পেপারের শুরুতে। পেপারের বিষয়ের উপরেও অনেক ক্ষেত্রে এটা নির্ভর করে। তবে এই অংশের মোদ্দা কথা হলো অন্য কে কী কাজ করেছে তা উল্লেখ করা, এবং বিনয়ের সাথে তাদের কাজের সাথে আপনার কাজের পার্থক্য বা সুবিধাগুলা উল্লেখ করা। (বিনয়ের সাথে করাটা গুরুত্বপূর্ণ, অমুকের কাজ “জঘন্য” এই টাইপের কিছু কখনোই লিখতে যাবেন না!)। পার্থক্যগুলা ছক আকারে দিতে পারলে ভালো হয়।
সবশেষে আসে conclusion বা উপসংহার। এই অংশে থাকবে এই পেপারে কী পড়লেন পাঠক, তার উপরে কিছু কথা। এই অংশে এই পেপারে কী কাজ দেখানো হয়েছে তা ছাড়াও এই কাজের ভিত্তিতে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যতে আপনি আর কী করতে পারেন (future work) সেই বিষয়ে বলা চলে।
এবং সবশেষে bibliography/reference এই অংশটি তো থাকছেই, যেখানে আপনার সাইট করা সব পেপারের তথ্য দিতে হবে।
ব্যাস, এই নিয়মগুলা মেনে চললেই লিখতে পারবেন রিসার্চ পেপার। মনে রাখবেন, পাঠক কিন্তু আপনার চাইতে কম জানেন এই বিষয়টা, কাজেই আপনার কাছে জলবৎ তরলং জিনিষও আসলে বুঝিয়ে বলতে হবে।
রিসার্চ পেপার আসলে গল্প বলা — আপনার রিসার্চকে সহজে বুঝিয়ে বলা। কীভাবে শুরু করবেন তার হদিস এখনো না পেলে এক কাজ করুন, আপনার মা বাবা বউ ভাই বোন বন্ধু — এমন কেউ যে এই বিষয়ে কিছুই বোঝেনা, তাকে ১০ মিনিটে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। তার পর কীভাবে বোঝালেন, সেটাকেই ভাষায় লিখেন উপরের কাঠামো অনুসারে।
লেখকঃ রাগিব হাসান
Associate Professor at UAB – The University of Alabama
রিসার্চ এবং পেপার রাইটিং নিয়ে অনুশীলন একাডেমি এবং JBRATRC আয়োজন করেছে মাস্টার কোর্স। এনরোল করতে এই লিংকে ভিজিট করুন।