কেমন হবে যদি তুমি লেখাপড়া কিভাবে করতে হয় এবং করাতে হয় এর উপর পড়াশোনা এবং গবেষণা করো?

শিক্ষা ও গবেষণা – সাবজেক্টির নাম শুনে কাটখোট্টা মনে হলেও ভিতরে এটা মোটেও তেমন না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যা পড়ে এসেছি এবং পড়বো, সেটাই কিভাবে পড়াতে হয় সেটার এটি একটি প্র‍্যাকটিকাল ট্রেনিং এবং গবেষণার মতোই পড়াশোনার বিষয়। এটি ১৯৫৯ সালে USAID এর সহায়তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইন্সটিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বলতে গেলে বর্তমান সময়ের সাথে মিল রেখে যুগোপযোগী একটি সাবজেক্ট। হ্যাঁ অনেকটা নতুন এই সাবজেক্ট টি নতুন নতুন পাবলিক ভার্সিটি গুলোতে খোলার সাথে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে ঢাবি,জবি,রাবি,চবি,বিইউপি তে এবং নতুন করে নোবিপ্রবি এবং খুবিতে(প্রসেসিং) নতুন বিভাগ এবং ইন্সটিটিউট এর নামে নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।

সবাই কোনো বিষয় পড়ার আগে জানতে চাই যে এর ভালো দিকগুলো কি। আসলে যারা পড়াশোনা কে ভালোবাসি আর চাই যে কিভাবে আমরা পড়াশোনার মান উন্নত করতে পারি এবং সেই বিষয়ে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে চাই তাদের জন্যই এই বিষয়।

অনেকের কাছে পরিচিত না হলেও ধীরে ধীরে আই ই আর ব্রান্ডে পরিণত হওয়ার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। উদাহরন হিসেবে চবি আই ই আরের কথা একটু বলি, এখানে প্রতি বছর আইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের পর সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী আই ই আরে একটি সিটের জন্য লড়াই করে।

গেল বছরের আগের বছর আই ই আরে প্রতি সিটের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল ৯৬ জন, যেখানে গেল বছরে প্রতি সিটের জন্য পরীক্ষা দিয়েছে ১১১ জন। তফাৎ টা নিজেই বিবেচনা করবা। শুধু তো বললাম চবি আই ই আর এর কথা, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবি আই ই আরের সুনাম সেই ১৯৫৯ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে সেটি আজ এপেক্স একটি ইন্সটিটিউট এ পরিণত হয়েছে।

কি নেই আই ই আরের এই বিল্ডিং টিতে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রায় সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সম্পূর্ণ আলাদা বিলাস বহুল বিল্ডিং নিয়ে নিয়মিত জ্ঞানের আলো বিতরণ করে চলেছে ঢাবি আই ই আর।আই ই আরে পড়তে চাইলে এখানে সর্বপ্রথম কষ্ট করার মানষিকতা তৈরি করে তোমাকে প্রবেশ করতে হবে। শিক্ষা বিষয়ের পাশাপাশি তোমাকে তোমার স্ট্রিম অনুযায়ি বিষয়াদি যেমন বাংলা ভাষা,ইংরেজি ভাষা, মনোবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত কিংবা জীববিজ্ঞান কোর্স অংশগ্রহণ করতে হবে। পড়ালেখা শেষ করে এবার আমরা আসি জব অপরচুনিটি সম্পর্কে, যেটা সবচাইতে বেশি ইম্পরটেন্ট আর কি। চাকুরীর বাজারেও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও বর্তমান সময়ে আই ই আর উপরের সারীতে।


ইউ আর সি ইন্সট্রাক্টর, পিটিয়াই ইন্সট্রাক্টর, থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, ডিস্ট্রিক্ট ট্রেনিং কো অর্ডিনেটর, ব্যাংকার (সরকারি ও প্রাইভেট), বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য, বিভিন্ন এনজিও তে কারিকুলাম ডেভেলপার, লার্নিং ম্যাটেরিয়াল স্পেশালিস্ট, রিসার্চার, প্রাইভেট-পাবলিক ভার্সিটি লেকচারার ক্যাডার-নন ক্যাডার পোস্ট বাদই দিলাম।

শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষার্থীদের জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন বোর্ড,নায়েম,নেপ,বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড,ন্যাশনাল + ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে এজুকেশনাল প্রজেক্টে রিসার্চার হিসেবে কাজ করার সুযোগ,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রচুর আই ই আর ইয়ান রা পিএইচডি সহ অনেক পোস্টে কর্তব্যরত রয়েছে।

কর্মক্ষেত্র হিসেবে বলতে গেলে IER এ পড়ে ভবিষ্যৎ শুধু শিক্ষকতা করতে হবে বা গবেষক হতে হবে ব্যাপারটা তেমন না। IER এর সাথে পড়াশোনার সাথে বিসিএস সিলেবাসের অনেকাংশেই মিল।

ফলে কেউ চাইলে অনায়েসে পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে পারো। শুধুমাত্র IER পড়ুয়াদের জন্য সুবিশাল কর্মক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে TTC, NAEM, NAPE, NCTB। IER এ পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলোতে (UNICEF, UNESCO, UNDP) কাজ করার অঢেল সু্যোগ রয়েছে। আর তুমি যদি চাও যেকোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক এও কাজ করতে পারবে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যদি তুমি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক থাকো তাহলে এটা তোমার জন্য সেরা সাব্জেক্টের মধ্যে একটি। কারণ ভালো রেজাল্ট থাকলে পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েট এবং পিএইচডি তে ফুল স্কলারশিপেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

ডিমেরিটস এর দিক থেকে বলতে গেলে এখানে প্রেজেন্টেশন আর এসাইনমেন্ট এর চাপ অন্য ডিপার্টমেন্ট এর চাইতে একটু বেশি কারণ এটা গবেষণাধর্মী বিষয়।

স্ট্রিম চয়েজ- শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়টি ব্যাচেলর্স অফ এডুকেশন এর অধীনে ৫টি স্ট্রিম অর্থাৎ শাখায় বিভক্ত। ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষা, জীববিজ্ঞান শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা ও ভাষা শিক্ষা এই ৫টি বিষয়ের ভিত্তিতে আলাদা স্ট্রিম গঠন করা হয়।

*বিজ্ঞান বিভাগের জন্য- ভৌত ও জীববিজ্ঞান এই দুইটি শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, যারা ক (A) ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা নিবে তারা এই দুইটি স্ট্রিম নিতে পারবে। ঘ (D) ইউনিট এর মাধ্যমে আসলে বাকি ৩টি (সামাজিকবিজ্ঞান, বিশেষ ও ভাষা শিক্ষা) নিতে পারবে।

*মানবিক বিভাগের জন্য – খ (B) ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা নিলে সামাজিক বিজ্ঞান, বিশেষ ও ভাষা শিক্ষা নিতে পারবে।

*ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য – ঘ (D) ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা নিলে সামাজিক বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষা নিতে পারবে।

কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস এর দিক থেকে IER অনেক সমৃদ্ধ। ল্যাংগুয়েজ ও কালচারাল, ডিবেটিং ক্লাব, IER YES, IER এর স্টুডেন্ট দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত EES ইত্যাদি ক্লাবের মাধ্যমে তুমি তোমার নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে পারবে।

IER এ কোনো র‍্যাগিং নেই আর এখানে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক অনেক ভালো। তাই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।