কখনো কি মনে হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ইংরেজীতে India কেন বলা হয়? আপনি যে কোনো দেশের কথা ভাবুন, দেখবেন যে সেই দেশটিকে ইংরেজীতে একই নামেই ডাকা হয়?
এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম শুধু ভারত, মিশর সহ অল্প কয়েকটি দেশ। আজকের আলোচনা শুধু ভারতকে নিয়ে। এর কারণ ভারতের india নামকরণের ইতিহাসটা বেশ ইন্টরেস্টিং।
ভারতের “ভারত” নামটা এসেছে মহাভারতের একটি ক্যারেক্টারের নাম থেকে। সেই কাহিনী অন্যদিন বলা যাবে। তো শুরু করা যাক ভারতের india হয়ে ওঠার ইতিহাস!
খুব সংক্ষেপে বললে india নামটা এসছে ইরান/পার্সিয়া এবং গ্রীস এই দুটি দেশের কল্যানে। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছি।
বাংলা মিডিয়ামে যারা পড়েছেন তারা সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে সিন্ধু সভ্যতার কথা শুনে থাকবেন। সিন্ধু নদীর অববাহিকায় যেই বিশাল জনগোষ্ঠির বাস ছিলো তাদের বোঝানো বা চিহ্নিত করার জন্য পুরো জনগোষ্ঠীকে “সিন্ধু” নাম ডাকা হতো।
আর এই বিশাল জনগোষ্ঠীই হচ্ছে মডার্ন ডেইজ এর ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানের বাসিন্দারা। ম্যাপে দেখলে দেখবেন সিন্ধু নদী বয়ে গেছে এখনকার দিনের পাকিস্তান এর পাশ দিয়ে।
মুঘল শাসকরা যখন সিন্ধুতে আসলো তখন তাদের পার্সিয়ান ভাষার কল্যানে “সিন্ধু” হয়ে গেলো “হিন্দু”! কারণ পার্সিয়ান ভাষায় সিন্ধু কে বলা হয় হিন্দু। তো মুঘলরা এই অঞ্চলের নাম রেখে দিলো “হিন্দুস্তান”/ Hindustan।
পার্সিয়ান ভাষায় “stan” শব্দের মানে হচ্ছে “land of”। তার মানে Hindustan এর অর্থ দাঁড়ায়, “land of Hindus” বা “হিন্দুদের/সিন্ধুদের আবাস্থল”।
আর এ কারণেই দেখবেন মুসলিম প্রভাবিত অনেক দেশের নামই “stan” দিয়ে শেষ হয়। যেমন, Pakistan, Afghanistan, Uzbekistan ইত্যাদি। এই হিসেবে আমরা সবাই আসলে “হিন্দু”, কারণ হিন্দু মানে হচ্ছে আসলে সিন্ধু আর আমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই সিন্ধু জনগোষ্ঠীরই অংশ!
সবচেয়ে বড় হিন্দু হচ্ছে পাকিস্তানিরা কারণ সিন্ধু নদ তাদের দেশের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে! এতোক্ষনের আলোচনায় নিশ্চই বুঝে গেছেন যে “হিন্দু” শব্দটা আসলে কোত্থেকে এসেছে। যে অর্থে “হিন্দু” শব্দটা এখন ব্যবহৃত হয় তার ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক পরে এবং অযৌক্তিকভাবেই।
ভারতের হিন্দুস্তান হয়ে ওঠার গল্প জানলেও India হয়ে ওঠার কাহিনী কিন্তু এখনো শেষ হয়নি।
পার্সিয়ান এম্পায়ারের অন্য পাশের প্রতিবেশী গ্রীকদের কল্যানে এই “Hindu” শব্দটিই হয়ে যায় “Indos” (ইন্ডোস)। সবশেষে রোমানদের হাতে পড়ে Indos হয়ে যায় “indus”(ইন্ডাস) আর এভাবেই আজকের ইংলিশ স্পিকিং ওয়ার্ল্ডের কাছে সিন্ধু নদ “Indus River” নামে পরিচিত।
শেষপর্যন্ত “Indus” এর India হয়ে ওঠার পেছনে শেষ অবদান রেখেছে ল্যাটিন ভাষা। ল্যাটিনে “ia” হচ্ছে একটি কমন সাফিক্স যেটা দিয়ে “land of” বোঝানো হয়। খেয়াল করে দেখবেন এমন অনেক দেশ আছে যার শেষ হয় “ia” দিয়ে।
যেমন Bolivia, Arabia, Malaysia ইত্যাদি। Malaya এর সাথে “ia” যুক্ত হয়ে হয়েছে Malaysia, মানে ” land of Malaya”. আর এভাবেই “indus” এর সাথে “ia” যুক্ত হয়ে হয়েছে, “India” মানে “land of Indus”!!
ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ শাসন করতে আসে তখন এই India শব্দটাকে লুফে নেয় এবং অফিসিয়ালিও ব্যবহার করতে থাকে। প্রথমদিকে ভারতীয়দের মধ্যে India নামের ব্যবহার নিয়ে অনাগ্রহ ছিলো। ওরা ভাবতো অন্যের দেয়া নাম ওরা কেন মেনে নেবে।
কিন্ত ব্রিটিশদের ঢালাও ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে একসময় ভারতীয়দের মধ্যেও India নামের গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়। সবশেষে ১৯৪৭ এ ভারতের সংবিধানে “ভারত” এবং “India” দুটো নামকেই সমান মর্যাদা এবং বৈধতা দেয়া হয়।
© মাহফুজুর রহমান রানা