১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর প্রশাসন অনেক নীলকর সাহেবকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করে বিদ্রোহী ভারতীয়দের দমন করার জন্য।

এ ক্ষমতার ব্যবহার হয় গরিব চাষিদের ওপর, নীলচাষে বাধ্য করত। পরে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে নীলচুক্তি আইন রদ হয় এবং ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নীল উৎপন্ন আরম্ভ হলে নীল অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ হলো আমাদের নীল কষ্টের কষ্টগাথা। আগে নীল কবিতা দিয়ে কিছু কষ্টগাথা তুলে ধরা হলো এভাবে.ঃ-

নীলকর বিষধর বিষফোড়া মুখ, অনল শিখায় ফেলে দিল যত সুখ।

অবিচারে কারাগারে পিতার নিধন, নীলক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হলেন পতন।””

নীল (Indigoferra sp.) কে প্রাকৃতিক নীলও বলা হয়। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে নীল সাধারণত মৌসুমি গাছ ৬ মাসের জীবনকাল বিশিষ্ট বৃক্ষ নয় তবে আধা শক্ত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।

এটা আচ্ছাদন ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। অনুর্বর জমিতে অনাদরেই বেড়ে ওঠে নীল কষ্টের নীলকণ্ঠ। নীলের অন্তত ৭৫০টি প্রজাতি আছে বিশ্বময়।

নীলগাছ উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলে বেশি জন্মে। তবে বেশি প্রচলিত জাত হলো Indigofera আর এরা Fabaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত উদ্ভিদ।

বিভিন্ন রকমের ফুল হয়। পৃথিবীর কোনো কোন দেশে নীল তাদের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত। নীল বা Indigo কে বলা হয় The color of Kings।

নীল সাধারণত সব ধরনের সুতি উলেন সিল্ক টাইপের জামা কাপড়ের রঙ উজ্জ্বল ঝকঝকে চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

একজোড়া জামাকাপড় নীল দিতে ৩ থেকে ৭ গ্রাম নীলের প্রয়োজন হয়। সাধারণ হিসাবে জানা যায়, বছরে ২ মিলিয়ন কিলোগ্রাম নীল উৎপাদিত হয়।

নীলের ব্যবহার শুধু নীল হিসেবেই নয়। নীলগাছ উৎকৃষ্ট জ্বালানি এবং জৈবসার।

লাভ শুধু নীল উৎপাদন করেই নয় কেন্দ্র থেকে যে নাইট্রোজেন ভরপুর বর্জ্য বেরিয়ে আসছে তা আবার ড্রামে ড্রামে চলে যাচ্ছে ফসলের মাঠে সোনালি ফসলের বাহারি ফলনের জন্য।

কৃষক তা ব্যবহার করছে ইউরিয়া সারের বিকল্প পরিবেশবান্ধব জৈবসার হিসেবে।

তাছাড়া নীল দেয়া জামা কাপড় পরলে বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরমুক্ত রাখা যায় এবং এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গে আশীর্বাদ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে নীল চাষ। ক’বছর আগে শুরু হওয়া নীল চাষ নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে গরিব কৃষককে।

এরাই নীলগাছের নাম দিয়েছে মাল গাছ। সারা পৃথিবীতেই এখন প্রাকৃতিক রঙের কদর অনেক বেশি। রাসায়নিক রঙের পারিবেশ বিনষ্টকারী প্রভাব সম্পর্কে পরিবেশবিদেরা এখন সরব।

জরিপ বলে শুধু ভারতেই প্রতি বছর দরকার হয় ৩০০ মেট্রিক নীলের। সবচেয়ে ভালো নীলের প্রতি কেজি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দুনিয়াজুড়ে নীলের মূল বেশির ভাগ চাহিদা মিটিয়ে আসছে এল সালভাদর। কিন্তু উত্তরবঙ্গের চাষিরা স্বপ্ন দেখছেন তাদের উৎপাদন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যাবে দেশের আয় হবে।

তারা আন্তর্জাতিক বাজারে গর্বিত বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন যে কোনো দেশের। এ মানুষই আগে জুলাই-আগস্টে মঙ্গার প্রস্তুতি নিতেন কষ্টজাগানিয়া রাত পোহানোর জন্য।

আর সে সময়ের কষ্টের রাত পোহানোর পর এখন এ এলাকার মানুষগুলো ব্যস্ত নিজেদের নীল উৎপাদন প্রক্রিয়া চালানোর কাজে।

নীল তামাকের শতভাগ বিকল্প চাষ হতে পারে লাভ, পরিবেশ আর সার্বিকতা চিন্তা করে।

লেখক : আলসাবা উদ্দিন আহমেদ
মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আপনিও লিখুন আমাদের বিজ্ঞান গ্রুপে