আইএসআই বিশ্বের সব থেকে বিতর্কিত গোয়েন্দা সংস্থার নাম পাকিস্তানের আইএসআই (ISI)।বিতর্কের দিক থেকে এই গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বের প্রথম। ‘

সরকারের ভিতরে সরকার’ পাকিস্তানের মাটিতে এই নামে বহুল পরিচিত ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থাটির নাম আইএসআই।

জন্ম

১৯৪৮ এর মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অস্ট্রোলীয় বংশদ্ভূত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল রবার্ট চাওথামের পরামর্শে ও তত্বাবধানে আইএসআই তৈরি হয়।

প্রাথমিকভাবে এর কাজ তিন বাহিনীর প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সমন্নয় সাধন করা হলেও ১৯৫০ সাল থেকে একে আদালা করে শুধুমাত্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজায় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।

তিনজন ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেলের অধীনে তিনটি কোর বিষয়ের জন্য ৭ টি বিভাগ কাজ করে। ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এর সব কাজ মুলত ৭টি ডাইরেক্টরেটে দ্বারা পরিচালিত হয়।

পরিচালক বৃন্দ

  • আকতার আবদুর রহমান
  • হমিদ গুল
  • আসাদ দুররানি
  • মাহমুদ আহমেদ
  • এহসান উল হক
  • আশফাক পারভেজ কিয়ানি
  • নাদিম তাজ
  • আহমেদ সুজা পাশা
  • জহিরুল ইসলাম

প্রধান কাজ:-আইএসআই

[•]পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বার্থ রক্ষা ও অখন্ডতা বজায় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।

[•]যে সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, বৈদেশিক গোয়েন্দাসংস্থা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের উপর নজরদারি করা ও প্রয়োজনে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পরিচালনা করা।

[•]বিদেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

[•]ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অগ্রবর্তী রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী সব দেশকে প্রভাবিত করা।

[•]সরকার ও সেনা বাহিনীকে বাইরে ও ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

[•]সরকারের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করা।

নিয়োগ

আইএসআই কর্মীরা সাধারণত সেনাবাহিনীর এসএসজি, নৌ বাহিনীর ও বিমান বাহিনী থেকে আসে। তবে নিচু স্তরের কর্মীদের অনেক সমইয় প্যারা মিলিটারি ও পুলিশ বাহিনী থেকেও নেয়া হয়।

এজেন্ট

দেশে-বিদেশে সংস্থাটির সম্ভাব্য সদস্য সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি এবং এর মধ্যে অনেক তথ্য প্রদানকারীও রয়েছে।

আইএসআই:-বাংলাদেশে

ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মো. মাজহার খান । ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে মাজহার খানকে আইএসআইয়ের (ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস- পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাজহার আলী দূতাবাসের সহকারী ভিসা অফিসারের ছদ্মবেশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইএসআইয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছিলেন। এ পরিকল্পনার বিবরণ পরে দিচ্ছি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মাজহার খান ভারতীয় নকল টাকা বাংলাদেশ ও ভারতে ছড়িয়ে দিতেন এবং তার মাধ্যমে হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে কাজ করতেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জামায়াতের যে লোকজন জড়িত তাদের সঙ্গেও মাজহারের যোগসূত্র ছিল বলে জানা গেছে।

তার কাছ থেকে যে কাগজ উদ্ধার করা গেছে সেখানে হিযবুত তাহরীর তিনজন দাগি সদস্যের পাসপোর্টের নম্বর পাওয়া গেছে। তা ছাড়া মাজহারের আগেও আরও অনেক পাকিস্তানি নাগরিক ভারতীয় নকল টাকাসহ ধরা পড়েছে।

ভয়ানক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক ১০ কোটি বিদেশি টাকাসহ ২০১২ সালে ঢাকায় ধরা পড়ে। সবাই তো আর ধরা পড়ে না, সম্ভব নয়।

কথায় বলে দশ দিন চোরের একদিন গেরস্থের। তাই বাকি নয় দিনের হিসাব কত বড় হতে পারে সেটি অনুমান করলে তো অাঁতকে উঠতে হয়। সেজন্যই বলছি মাজহার খানের কাহিনী কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

মাজহার খানের কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা পাওয়া গেল তাতে এটা স্পষ্ট যে, তিনি আইএসআইয়ের এজেন্ট নন, আইএসআইয়ের নিজস্ব লোক। একটি ওপেন সিক্রেট বিষয় হলো- প্রতিটি দূতাবাসে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দু’য়েকজন লোক ছদ্মবেশে কাজ করে।

তাদের প্রধান কাজ নিজ নিজ দেশের নাগরিক, যারা বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে আছে তাদের প্রতি নজরদারি অর্থাৎ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব পালন করা। তা ছাড়া অন্যান্য দেশের দূতাবাসের একই পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে এক প্রকার সংযোগ রক্ষা করা।

হোস্ট কান্ট্রি অর্থাৎ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক গলানোর কোনো বৈধ অধিকার তাদের নেই। সুতরাং মাজহার খান কূটনীতির সীমা চরমভাবে লঙ্ঘন করেছেন।

বাংলাদেশি কালপ্রিট মুজিবুরকে মাজহারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মাজহারের পূর্বসূরি। অর্থাৎ মুজিবুর এই কাজে বহুদিন জড়িত। তাতে প্রমাণিত হয় পাকিস্তানের নির্ধারিত বৈদেশিক নীতির আওতায় ধারাবাহিকভাবে এ কর্মকাণ্ড করে চলেছে তাদের গোয়েন্দ সংস্থা।

আইএসআইয়ের  বৃহত্তর লক্ষ্য বোঝার জন্য আরও কিছু তথ্য এবং বিচার বিশ্লেষণ তুলে ধরছি।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র নীতির একটি চূড়ান্ত রূপ দেন জেনারেল আইয়ুব খান। এর মধ্যে এক নম্বর নীতি হলো-

১.পাকিস্তানের ১ নম্বর এবং চিরশত্রু হলো ভারত।

২.ইসলাম রক্ষা করা এবং একমাত্র ইসলাম ধর্মই পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হতে পারে।

৩.ভারতকে পরাজিত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে এবং তার জন্য আমেরিকার সাহায্য গ্রহণ অপরিহার্য।

আইয়ুব খানের এই নীতিকে বিশ্লেষকরা অবহিত করেছেন ট্রাইপড নীতি হিসেবে ।এই নীতি এখনো বহাল আছে। তবে একাত্তরের শোচনীয় ও চরম লজ্জাজনক পরাজয়ের পর বর্ধিত আকারে যোগ হয়, যে কোনো মূল্যে পাকিস্তানকে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হবে।

এই নীতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশে আরও অনেক বাংলাদেশ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করলেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই পাকিস্তানের প্রতিশোধপরায়ণ কৌশলের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

এই প্রতিশোধপরায়ণ কৌশলের বাস্তব রূপ দেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক। ভারতের আউটার সার্কেলের কয়েকটি রাজ্যের আঞ্চলিক অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহের সৃষ্টি করা এবং বিদ্রোহীদের সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা।

এতে কোনো একটি রাজ্য যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে সেটাই হবে ভারতের বিরুদ্ধে একাত্তরের উপযুক্ত প্রতিশোধ।

আর সেটা সম্ভব না হলে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যে নিদেনপক্ষে সক্রিয় বিচ্ছিন্নবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহ জিইয়ে রাখতে পারলে অনবরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর রক্তক্ষরণ হবে এবং পশ্চিমে কাশ্মীর ফ্রন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করা পাকিস্তানের জন্য সহজ হবে।

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতিশোধ কৌশলের সঙ্গে জড়িত আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প।

কারণ, ভারতের বিরুদ্ধে যে প্রতিশোধপরায়ণের কৌশল, তা বাস্তবায়ন করতে হলে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের একটা রাষ্ট্রীয় পরিবেশ বাংলাদেশে যেন থাকে তা নিশ্চিত করা পাকিস্তানের জন্য জরুরি।

২য়  হলো- উন্নয়নে সব সূচকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে থাকে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের আপসোস হবে এবং সেটাই হবে প্রতিশোধের পরিপূর্ণ রূপ।

প্রতিশোধপরায়ণ কৌশলের আওতায় তৈরি সূত্রের ইকুয়েশনে  গ্রেনেড আক্রমণের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা। এত বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তান আজ অবধি বাংলাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নেয়নি।

১টা জ্বলন্ত প্রমাণ কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ।

সংযুক্ত পাকিস্তানের  পুঞ্জীভূত সম্পদের ভাগ বাংলাদেশকে এখনো তারা দেয়নি। পাকিস্তানের নাগরিক বিহারিদের আজও ফিরিয়ে নিল না।

তাহলে ইকুয়েশন চিহ্নের কোনদিকে কার অবস্থান তা বুঝতে মনে হয় না কষ্ট হবে। সুতরাং উল্লিখিত বহুমুখী প্রতিশোধপরায়ণ কৌশলের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য বহু আগে থেকেই পাকিস্তান তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ব্যাপক বিস্তার ।।

শক্তিশালী নেটওয়ার্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারে।

উপমহাদেশে আইএসআইয়ের নেটওয়ার্ক বিস্তার ও তার লক্ষ্য সম্পর্কে একটি সরস নাতিদীর্ঘ বর্ণনা পাওয়া যায় ।।

লিখাটা হলো:- ‘পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি গ্রন্থে’। শুধু ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আইএসআইয়ের কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধা পাওয়ার জন্য পাকিস্তানের দুই প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে জেনারেল জিয়াউল হক ১৯৮৫ সালে এবং জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ২০০০ সালে মিয়ানমার সফর করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের স্থান ছিল না।

কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রীয় অবস্থান ছিল তাতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সহজেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে। তাতে কাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, কারা এর পেছনে ছিল, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের ভিতরে কত জায়গায় কত মাজহার খানেরা বসে আজ ষড়যন্ত্রের জাল বিছাচ্ছে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিশ্চয় সজাগ আছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

২৯ মে, ১৯৯৯: কার্গিলের আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল ফাইটার জেটের ধোঁয়ায়:-কার্গিল যুদ্ধ

১৯৯৯-এ শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। আজও সেই সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। তবে সেদিনের যুদ্ধে ভারতের জয় লেখা আছে ইতিহাসে। কার্গিল যুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যাবে কি হয়েছিল এই দিনে।

তখন ভারতীয় সেনা জানতে পেরেছে যে কাশ্মীরের সীমান্ত পেরিয়ে কারা যেন ঢুকে পড়েছে দেশের ভূখণ্ডে। সীমান্ত না পেরিয়ে সেই অনুপ্রবেশ বন্ধ করে উদ্যোগী হয় ভারতীয় সেনা। শুরু হয় চিরুণি তল্লাশি। কার্গিল-লে সেক্টর জুড়ে মোতায়েন করা হয় বিশাল বাহিনী। শ্রীনগর-লে হাইওয়ের নিরাপত্তা বজায় রাখতে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।

১১ মে বায়ুসেনা অপারেশনে অংশ নিতে চায়। অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ২৫ থেকেই শুরু হয়ে যায় শত্রু-নিধন অভিযান।

২৯ মে: এই দিনেই কার্গিলের আকাশ থেকে একাধিক অভিযান চালায় ভারত। এছাড়া শত্রুদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে, পায়ে হেঁটেও অভিযানে নামে সেনাবাহিনী।

এদিনই বাটালিক সেক্টরে শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হন মেজর এম সারাভানন। বাতালিক সেক্টরে পয়েন্ট ৪২৬৮ জয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি।

শত্রুদের দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে যান তিনি। গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর।

তবে..

প্রকাশ্যেই কার্গিল যুদ্ধকে পাকিস্তান সেনার বড়সর সাফল্য বলে দাবি করে বসেছেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট।

তাঁর বিরুদ্ধে প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে কার্গিলের পরাজয়ের জন্য মুশারফ সরাসরি দায়ি করেছেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে।

মুশারফের দাবি, নওয়াজ শরিফ সেই সময় মার্কিন সফরে না গেলে ভারতীয় ভূখণ্ডের তিনশো বর্গমাইল এলাকার দখল নিতে পারত পাক সেনারা।

জানার বিষয় হলো… কার্গিল যুদ্ধ সুউচ্চ পার্বত্য এলাকায় যুদ্ধের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। উচ্চতার কারণে দুই দেশকেই রসদ সরবরাহ ও সেনাবাহিনীর অভিযান চালাতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও কার্গিল যুদ্ধ হল পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত দ্বিতীয় তথা সাম্প্রতিকতম প্রত্যক্ষ যুদ্ধ।

কার্গিলকে টার্গেট করার অন্যতম কারণ এই যে কার্গিল সংলগ্ন অঞ্চলটি মুক্ত সামরিক অবস্থানের জমিদখলমূলক যুদ্ধের জন্য আদর্শ অঞ্চল ছিল।

শৃঙ্গগুলির উপর সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষিত পোস্টগুলির কৌশলগত গুরুত্বের কারণে প্রতিরক্ষাকারীর একটি দুর্গের সুযোগসুবিধা ভোগ করা সম্ভবপর ছিল এখানে।

পার্বত্য যুদ্ধে উচ্চভূমি থেকে প্রতিরক্ষাকারীর প্রতি শানিত যে কোনো আক্রমণ চালাতে গেলে আক্রমণকারীর উচ্চতার অনুপাত প্রতিরক্ষাকারীর অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন।

তার উপর অতিরিক্ত উচ্চতা ও হিমশীতল তাপমাত্রা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের একটি শহর থেকে কার্গিলের দূরত্ব মাত্র ১৭৩ কিলোমিটার ।এখান থেকে পাকিস্তানি যোদ্ধাদের যুদ্ধের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা খুবই সহজ ছিল।।

ফলাফল:-

       ।।আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যস্থায় যুদ্ধ বিরতি।।

ভারতের মুম্বাইয়ে হামলা:-আইএসআই

সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির স্বীকারোক্তি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে অর্থ, অস্ত্র ও নৈতিকভাবে সাহায্য দিয়ে আসছে।আইএসআইয়ের সহায়তায়ই মুম্বাই হামলা হয়।

পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া হেডলি এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর কারাগারে বন্দী। মুম্বাই হামলায় এই অভিযুক্ত এই ব্যক্তি ।

মুম্বাইয়ের টাডা আদালতে চলা জেরার জবাবে  হেডলি বলেন, লস্কর-ই-তাইয়েবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে আইএসআই নিয়মিত সাহায্য দিয়ে এসেছে।

এই তিন সংগঠনই ইউনাইটেড জিহাদি কাউন্সিলের অধীনে কাজ করে আসছে। জেরার মুখে হেডলি বলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছাড়াও তিনি আইএসআই ও লস্কর-ই-তাইয়েবার হয়ে কাজ করছিলেন।

তার স্বীকারোক্তি…

।। আইএসআই কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার রিয়াজ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন লস্কর কমান্ডার জাকিউর রহমান লাকভির সঙ্গে। তাঁকেই তিনি সব রকম সাহায্য করতেন।

রিয়াজ ছিলেন লাকভির ‘প্রশিক্ষক’। এই লাকভিই ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার মূল হোতা বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত। ।।

হেডল্র বিরুদ্ধে মুম্বাই হামলার চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি।

সন্দেহ এড়াতে ভারতে এসে হেডলি নাম পাল্টে হন ডেভিড কোলম্যান হেডলি। ভুয়া তথ্য দিয়ে আমেরিকা থেকে ভিসা নিয়ে মোট নয়বার তিনি ভারতে আসেন।

প্রথম আসা ২০০৬ সালে; লস্কর শীর্ষ নেতা সাজিদ মীরের নির্দেশে। তখনই তিনি মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভিডিওগ্রাফ করেন।

জেরায় তিনি বলেছেন, তাঁর দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই হাফিজ সাঈদ মুম্বাই হামলার নির্দেশ দেন—যদিও সেই বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুবার হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

কেন ব্যর্থ, সেই কথাও জেরায় হেডলি জানান। বলেন, ৮ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য করাচি থেকে যে নৌকায় তাঁরা আসছিলেন, তা সাগরের নিচে পাথরে ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সাগরে পড়ে যায়। নৌকায় মোট ১০ জন ছিলেন। পরের মাসেও তাঁরা বিফল হন। চূড়ান্ত হামলা অবশ্য ওই ১০ জনই করেছিলেন বলে হেডলির দাবি।।

আফগান যুদ্ধে:- আইএসআই

আফগানিস্তানে রাশিয়ার সৈন্যরা যখন তাদের নীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের সৈন্য আফগানিস্তানে প্রবেশ করায় তখন আমেরিকা চায় নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। এই যুদ্ধে আমেরিকাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে আইএসআই।

আইএসআইয়ের আরো অপারেশন রয়েছে। তবে তারা কোনো অপারেশনে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ সফলতা পায়নি

আইএসআই পাকিস্তানের এক অন্যতম শক্তি। তারা দেশের সরকারের মধ্যে আরেক সরকার। তারা সরকারকে নিয়ন্ত্রন করে এমন একটা অবস্তা। উপমহাদেশে ও পৃথীবিতে তাদের ভালোই দাপোট রয়েছে।

লেখকঃ মোঃ ইসমাইল হোসেন

শিক্ষার্থী

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সাহায্য:-

*কলকাতা টাইমস্

*উইকিপিডিয়া

*অবলম্ববনে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এর কনসেপ্ট থেকে নেয়া