যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ এটি শুধু পঁয়ত্রিশ একরের এক টুকরো ভূমিখন্ড নয়। এটি একটি আবেগ ও ভালবাসার প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়তই জন্ম হচ্ছে হাজারো স্বপ্ন – মানুষ হওয়ার এবং দেশ গড়ার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সমাদৃত হয়েছে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুধু আমাদের দেশে নয়, বৈশ্বিকভাবেও আলোচিত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র বিশ্ব যখন স্থবির তখনও থেমে থাকেনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।

সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে (৪২%) যা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।

স্কোপাস ডেটাবেইস এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে রিসার্চ সেক্টরে দেশের সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যবিপ্রবির অবস্থান দ্বিতীয়।

সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃক গবেষণাপত্রের সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত রিপোর্টে বিশ্বের সেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর মধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষক।

চারিদিকে এতো এতো অরাজকতার খবর শুনতে আর ভালো লাগে না বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে।

সুতরাং, এ খবরগুলো নিঃসেন্দহে স্বস্তির অনুষঙ্গ। গবেষণায় যবিপ্রবির যে অগ্রগতি তার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন এর অবদান অপরিমেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি গবেষণার ব্যাপারে সবসময়ই শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি বিশেষ বরাদ্দ ও সম্মাননার বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছেন।

শিক্ষকেরাও আন্তরিকভাবে শিক্ষা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বল্প সময়ের মধ্যে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, সুতরাং এর প্রতিষ্ঠালগ্নে যারা কাজ করেছেন তাদের অবদানের পাল্লাটাও কোন অংশে কম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অগ্রগতির সূচনা করেন।সর্বোপরি, সকলের সমন্বিত উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ভবিষ্যতে আরো সুদূরপ্রসারী হবে এটিই হোক আমাদের আকাঙ্ক্ষা।

গবেষণার বাইরেও শিশু বিশ্ববিদ্যালয়টির গর্ব করার মতো আরো অনেক বিষয় আছে।

বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশীপে অ্যাথলেটিকস ও ব্যাডমিন্টনে বর্তমানে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব ও গবেষক দ্বারা যবিপ্রবি-ই শুরু করে করোনা ভাইরাসের টেস্ট।

শনাক্তকরণের পাশাপাশি এ ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সিং এর কাজটিও দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যবিপ্রবি-ই সম্পন্ন করে।

সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম (২২ হাজার ২৮০ বর্গফুট) সুবিশাল ও আন্তর্জাতিক মানের জিমনেশিয়ামের উদ্বোধন হয়ে গেল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এখানে স্থাপিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম হ্যাচারী এন্ড ওয়েট ল্যাব এবং অ্যানিমেল হাউজ, যা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের জৈব গবেষণায় বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের সম্ভাবনা আছে। সমস্যাও কম নয়। সামর্থ্য হয়ত সীমিত কিন্তু থেমে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অসামঞ্জস্যতা দূর করে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অসমতা আছে সেগুলোর সুষ্ঠু ও সুষম সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম।

নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।

বিষাক্ত রাজনীতির ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে অবদান রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিরন্তর শুভকামনা। শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক- নতুন বছরে এই প্রত্যাশা ও প্রত্যয় আমাদের সবার।

লেখকঃ Faruk Aronno

পড়ুনঃ গবেষণায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কতদুর?