ছোটবেলা থেকে খুব দুরন্ত ছিলাম। একাধারে শুধু পড়াশোনা করব আর দুনিয়ার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকবে না, এমনটি কোনোকালেই ছিলাম না।

স্কুলজীবন থেকেই পড়াশোনা করার পাশাপাশি একাধারে বিতর্ক করতাম, বক্তৃতা দিতাম, আবৃত্তি করতাম, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সরব ছিলাম।

তাই সারা জীবন শুধু বইয়ের পাতায় আ’ট’কে না থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও যখন যেভাবে পেরেছি জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করেছি।আমা’র জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমা’র মা-বাবা আর বিয়ের পর আমা’র শ্বশুর।

বাসায় পড়াশোনা নিয়ে মা-বাবা কখনোই চাপ দেননি। সব সময় বলতেন, সার্থক মানুষ হও। পড়াশোনা করেছি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জে’লা পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

পঞ্চ’ম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পাই। মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। তারপর ঢাকায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে এ প্লাস পাই।

তারপর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযু’ক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছি।

স্নাতক সম্পন্ন করার পরপরই নিজ ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করেছি বছরখানেক। রুয়েটের গত কনভোকেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছি।

স্নাতক সম্পন্ন করার পর ৩৭তম বিসিএস ছিল আমা’র জীবনের প্রথম বিসিএস। প্রথমবারেই বিসিএসে সফল হওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিসিএসের পেছনে সবচেয়ে বেশি

অনুপ্রেরণা ছিল আমা’র শ্বশুরের। তিনি নিজেও প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মক’র্তা হিসেবে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। বিসিএস প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শুরুতে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম।

এত এত পড়া আর এত কম সময়ে কিভাবে সম্ভব? তাই শুরুতে কিছুদিন হতাশ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর কিছুদিন বিরতি দিয়ে চিন্তা করলাম, আমি কোন বিষয়ে ভালো পারি।

বিজ্ঞানের ছা’ত্রী হওয়ায় বিজ্ঞান আর গণিতই আমা’র সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। ভাবলাম, এ দুই বিষয়ের প্রস্তুতি

এমনভাবে নিতে হবে, যেন এখান থেকে ১ নম্বরও মিস না হয়। প্রিলিমিনারির জন্য বাজারের ভালো মানের এক সেট বই কিনে পড়াশোনা শুরু করলাম। গণিত ও বিজ্ঞানের সিলেবাস যখন শেষ করলাম, তখন বেশ আত্মবিশ্বা’স পেলাম।

তারপর ধীরে ধীরে বাংলা, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বাংলাদেশ বিষয়াবলির সিলেবাস দেখে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। প্রতিটি সিলেবাস ভাগ করে নিলাম। টার্গেট নিতাম ছোট ছোট।

যেমন—আজকে ৩০ পৃষ্ঠা পড়ব, ওই ৩০ পৃষ্ঠা খুব ভালো’ভাবে পড়ে নিজে নিজেই পরীক্ষা দিতাম। এভাবেই খুব অল্প সময়ে সিলেবাস শেষ করেছি। আর প্রচুর মডেল টেস্ট দিয়েছি।

এটা খুব উপকারে আসে। ঘড়ি দেখে সময় ধরে মডেল টেস্ট দিতাম। যাঁরা প্রথমবারের মতো বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁরা এই কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়েছি।

পত্রিকার সম্পাদকী’য় পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা ও অর্থনীতির পাতা সময় নিয়ে পড়েছি। যার ফলে সাধারণ জ্ঞান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেকবার

মনে হয়েছে যে শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নয়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান এবং দেশ-বিদেশের চলমান পরিস্থিতি স’ম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত।

লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয় পয়েন্ট আকারে লেখার চেষ্টা করেছি। সংবিধান ভালোমতো পড়ায় মোটামুটি সব জায়গায় এর উদ্ধৃতি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।

আপনি যা জানেন তা যদি সঠিক হয় তাহলে সেটার ব্যবহার অবশ্যই করবেন এবং এমনভাবে করবেন, তা যেন পরীক্ষকের চোখে পড়ে। জীবনে প্রথম বিসিএসে ২৬তম মেধাক্রম অর্জন করে প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডারে আসতে পারা সত্যি আমা’র জন্য অনেক বড় পাওয়া।

প্রশাসন ক্যাডারে সামনে যাঁরা আসতে চান, তাঁদের বলব, জীবনে স্বপ্ন দেখলে আর সেই স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করলে সে স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়!