আত্মহত্যার প্রবনতা ছিল, জীবনে দুইবার তিনি সুইসাইডাল চিন্তা করেছিলেন। একবার শৈশবে অভাবের বঞ্চনায়, আবার পরিণত বয়সে যখন তার সব আছে, তখন।
শৈশব দিয়েই শুরু করি, তার পরিবারে তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা ছিল না, দুপুরে রান্না হলে, রাতের খাবার ছিল অনিশ্চিত।
অনেকেই শৈশবে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু তিনি কখনো শৈশবে ফিরতে চান না।
প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণা, অভাব আর বঞ্চনার অনুভূতি তার স্মৃতিতে প্রবল।
ক্ষুধা পেটে রাস্তায় যখন হাটতেন তখন দেখতেন বিত্তবানরা দামী খাবার খাচ্ছে, তিনি তাকিয়ে থাকতেন ওদের দিকে, যদি কখনো কেউ একজন তাকে করুণা করে হলেও খাবার তুলে দেয়! কেউ দেয়নি।
আশেপাশের ধনী মানুষগুলোকে দেখে তিনি তিনি অবাক বিস্ময়ে ভাবতেন ওদের অনেক আছে তবুও কেন ওরা আমাদের টেনে তুলছে না?
খুব ছোট বয়সেই তিনি বুঝে যান ধনী গরীবের বৈষম্য।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের কারনে প্রায় সব সদস্য দেশ ছেড়ে বহু আগেই চলে গিয়েছিল, কেবল টিকে ছিল তার পরিবার।
তিনি কখনো তার আত্মীয়দের দেখেননি। বিপদে কখনো পাননি নির্ভরতার ছায়া।
বাবা ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির সরকারী কর্মচারী। যে সামান্য আয় তাতে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো প্রতিনিয়ত।
অভিমান হতো খুব, বাবা মার প্রতি, এই সমাজের প্রতি।
শারিরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা কারনে স্কুলে কেউ তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেনি, পরিবারেও তিনি ছিলেন আলাদা, একাকী।
পড়াশুনায় মারাত্মক খারাপ ছাত্র ছিলেন। ফেল করতেন অন্তত ছয় সাত সাবজেক্টে।
বন্ধুহীন ভালোবাসাহীন তিনি শুয়ে শুয়ে কেবল সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতেন- আমাকে একটা সুযোগ দাও, আমি ভালো কিছু করবো।
মিরাকেল ঘটল যেন, যেই ছেলে কখনো অংকে পাশ করতে পারেনি, সে নব্বই পচানব্বই করে পাওয়া শুরু করল।
কিন্তু ঐ যে অভাব যার নিত্যসঙ্গী পথ তার এতো মসৃণ নয়, এসএসসি পর টাকার অভাবে দুই বছর বন্ধ ছিল পড়াশুনা, তিনি দমে যাননি। নিজে টিউশনি করিয়ে টাকা জমিয়ে ইন্টারে ভর্তি হন।
এরপর কেবল এগিয়ে চলা। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন, একের পর এক সিভি ড্রপ করেন,সিও পোস্ট থেকে কেরানী। কোন কাজই তার কাছে ছোট নয়, অবহেলার নয়।
অল্প সময়ের ব্যবধানেই চাকুরী পেয়ে যান, একে একে দেশের টপ প্রাইভেট অর্গানাইজেশনের উচ্চ পদে কাজ করেন তিনি, আরও বড় পোস্টে বড় কর্মকর্তা করে পাঠানো হয় বিদেশে।
কিন্তু বিদেশের মাটিতে প্রবল সম্পদের মাঝে থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, আচ্ছা, এই জীবনটার অর্থ কী?
একদিন তার টাকা ছিল না, টাকার অভাবে ঘরে ভাত ছিল না, আজ টাকা আছে কিন্তু এই টাকা দিয়ে কি হবে?
ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে তিনি ভাবে যদি লাফিয়ে পড়ি, মরে যাব, দুইদিন সবাই কাঁদবে, তারপর ভুলে যাবে। তবে কেন এতো সংগ্রাম, তবে কেন এই মানবজনম?
জীবনের অর্থ খুঁজতে তিনি বের হন। পথে খুঁজেন কিছু বোকা মানুষ। কারন তিনি বিশ্বাস করেন বোকারাই গড়তে জানে, চালাকরা খোঁজে স্বার্থ।
কিছু বোকা মানুষ পেয়েও যান, মাত্র পাঁচজনকে নিয়ে গড়ে তুলেন একটি সংগঠন।
গুটি কয়েক বোকাদের নিয়ে গড়া সেই সংগঠনটি আজ লাখ লাখ অভুক্ত, বঞ্চিত, আশাহীন মানুষের বেঁচে থাকার ভরসা, আশার প্রদীপ।
জীবনের প্রতি তার এক্সপেকটেশন নেই, তিনি পরিশ্রম করতে জানেন, সফলতা চান না, কেবল হেঁটে যেতে চান
তার হাতে গড়া সংগঠনটির নাম বিদ্যানন্দ। এক টাকার আহার।
তিনি কিশোর কুমার দাস
আজ কিশোর কুমার দাসের হেঁটে যাওয়া পথের সঙ্গী সমগ্র বাংলাদেশ
#তিনি_আমাদের_সময়ের_আশার_বাতিঘর
লেখাঃ রাফিউজ্জামান সিফাত