টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) এর ১৭ টি অভিষ্টের মধ্যে অন্যতম হলো অভিষ্ঠ -৬ নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন। বর্তমান সময়ে নিরাপদ পানির সহজপ্রাপ্যতা কমছে আনুপাতিক হারে।
বিশ্বের প্রয়োজনীয় সুপেয় পানির চাহিদা অনেকাংশেই মেটাচ্ছে হ্রদ সমুহ । তবে সবকটি হ্রদ এখন আর পূর্বের মতো পানি সরবরাহ করতে সক্ষম নয়। এর অন্যতম উদাহরণ হল চাদ হ্রদ (Lake Chad)।
পৃথিবীর একমাত্র হ্রদ যার নামে একটি দেশের নামকরণ করা হয়েছে সেই হ্রদ হলো চাদ হ্রদ। আফ্রিকায় অবস্থিত এই হ্রদ নাইজেরিয়া, নাইজার, চাদ ও ক্যামেরুন চারটি দেশের সীমানা বেষ্টিত।
যার মধ্যে নাইজার এবং চাদ হলো ভূমিবেষ্টিত বা ল্যান্ড লক কান্ট্রি। এবং এই দেশগুলোর জন্য পানির একমাত্র এবং অন্যতম উৎস হল চাদ হ্রদ। এরই সূত্র ধরে দেশসমূহে চাদ হ্রদ কে নিয়ে চলছে বিরোধ।
দক্ষিণ সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত চাদ হ্রদ আফ্রিকার প্রাণকেন্দ্র। কেননা এর মাধ্যমে চার পাশে অবস্থিত চারটি দেশের প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষের প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করা হয়।
১৮২৩ সালে একদল ব্রিটিশ অভিযাত্রী প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে এই হ্রদ এর দেখা পায়। এবং তখন এই হ্রদ কে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম হ্রদ বলে মনে করা হতো।
এর পেছনে অবশ্য কারণও ছিল।তৎকালীন সময়ে এই হ্রদ প্রায় ১০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।যা বর্তমান ক্যাস্পিয়ান সাগর বা হ্রদের চেয়েও বড়।
এই হ্রদের পানির উপর নির্ভর করে এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জীবনযাত্রা, চাষাবাদ, মৎস্য চাষ ও জৈব বৈচিত্র্য।
এই হ্রদের পানি আসে মূলত চারি ও এর শাখানদী লাগোন থেকে যারা হ্রদের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং হ্রদের উত্তর দিকে প্রবাহমান।
বছরের বিভিন্ন সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে হ্রদের উপরিভাগের বেশ পরিবর্তন হয়।
বিগত কয়েক শতক এর উপরিভাগ সংকুচিত ও প্রসারিত হয়েছে। ১৯৬০-৭০ এর দিকে ক্রমশ সংকুচিত হতে শুরু করে এ হ্রদ।
পরবর্তীতে ২০০৪ সালে তার কিছুটা প্রসারণ হলেও বর্তমানে এর অবস্থা খুবই খারাপ বলা যায় নিঃসন্দেহে।
এখন বর্ষাকালে ২৫,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন দেখা গেলেও গ্রীষ্মকালের তা কমে দাঁড়ায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার। যার প্রেক্ষিতে হ্রদ এলাকায় দেখা যায় খরা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অধিক ও অপরিকল্পিত ব্যবহার এর ফলে হ্রদের আয়তন ও গভীরতা ক্রমশ কমছে।
এবং এর পার্শ্ববর্তী জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় ১৯৬৪ সালে নাইজার, নাইজেরিয়া, চাঁদ ও ক্যামেরুন মিলে Lake Chad Basin Commission (LCBC) গঠন করে। যে কমিশনে পরবর্তীতে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (১৯৯৬) ও লিবিয়া (২০০৮)যোগদান করে।
LCBC এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, দূষণ ও সংকোচন এর হাত থেকে হ্রদ কে রক্ষা করা। একই সাথে হ্রদের পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষম বন্টন , হ্রদের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।
তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে LCBC কমিশনের পক্ষে তেমন কিছু উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।
তাদের গৃহীত নানা প্রস্তাব বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ফলে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চাদ হ্রদ।
নাদিয়া কানিজ
২২ সেপ্টম্বর,২০২০