লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটা কি? কি হবে এই সাবজেক্টটা পড়ে? আর তোমাদের এই কনফিউশন দূর করতেই আমার এই প্রচেষ্টা।

বাংলাদেশে প্রধানত লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটা পড়ানো শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে ইস্ট পাকিস্তান লেদার টেকনোলজি নামক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেদার টেকনোলজিতে নামকরন করা হয় এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটির আন্ডার এ আনা হয়। বর্তমানে আবার এর নামকরণ করা হয়েছে ইনস্টিটিউট অফ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত মূলত ৩টি সাবজেক্ট রয়েছে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং।

এবার কুয়েটের কথা বলি, ২০০৩ সালে বিআইটি,খুলনা থেকেযখন এই প্রতিষ্ঠানকে কুয়েট এ নামকরন করা হয় তখন থেকে কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটি খোলার পরিকল্পনা চলছিল কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূ্লতার কারনে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ৬০টি সিট নিয়ে এই ডিপার্টমেন্ট চালু হয়। কুয়েটে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৩টি সাবজেক্ট(লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং) একসাথে পড়ানো হয়।

বাংলাদেশে এই দুইটি ইউনিভার্সিটিতেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রয়েছে। বুঝতেই পারছো মিলিওন ডলারের এই সেক্টরের জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর মাত্র (১২০+৬০)=১৮০ জন লেদার,ফুটওয়্যার এবং লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। সুতরাং চাকরি পেতে গেলে তোমাকে তোমাদের নিজেদের সাথেই নিজেদের কম্পিটিসন করতে হবে। আর জবতো তোমাদের সামনে অনেক থাকবে।

জবের কথাটা যেহেতু আসলো তাই তোমাদের লেদারের জবসেক্টর সম্পর্কে একটু ধারনা দেই, বাংলাদেশে লেদার বিজনেস এর মূল জায়গাটা হল হাজারীবাগ,ঢাকা। যদিও লেদার সেক্টরের এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে তা সাভার,ঢাকাতে স্থানান্তর এর কাজ চলছে।

তোমরা হয়তো ভাবছো শুধু হাজারীবাগেই তোমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু না। আশুলিয়া,সাভার,গাজিপুর, চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশে আরো অনেক লেদার ফ্যাক্টরী আছে যেখানে তোমাদের জব রয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো যেমন বাটা,এপেক্স,পিকার্ড,বে ফুটওয়্যার গুলো রয়েছেই। তাছাড়া চট্টগ্রামে ৪৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান নিয়ে গত বছরে চালু হয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেডের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী সুজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক বিশ্বের সর্ববৃহৎ জুতা কারখানা।

কর্ণফুলী সুজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাজ শুরু হওয়ার আগে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জুতা তৈরির কারখানা ছিল তাইওয়ানে। কিন্তু শ্রমের মূল্য সেখানে দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন নতুন উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কারখানা গড়ে ওঠায় শ্রমিকরা সেখানে কাজ করতে চলে যাওয়ায় তাইওয়ানে এ ধরনের কারখানা চালানোর জন্য শ্রমিক সংকট এখন তীব্র। এ সুযোগে ইয়ংওয়ান বাংলাদেশে এ বিশাল জুতা কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বুঝতেইতো পারছো এতবড় ইন্ডাস্ট্রিতে কতজন ইঞ্জিনিয়ার দরকার। তাছাড়া শুধু জুতার ফ্যাক্টরী নয় তোমরা কাজ করতে পারবে বিভিন্ন দেশি বিদেশি লেদার প্রোডাক্টস,লেদার কেমিক্যাল এবং ডিজাইনিং কোম্পানিতেও।

এবার আসি বাইরের দেশে লেদার সেক্টরের অবস্থান নিয়ে। মূলত জাপান,ভারত,ইতালি এই তিনটা দেশ লেদার বাণিজ্যে সামনের কাতারে অবস্থান করছে। জাপান বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য প্রতিবছর স্কলারশিপ দেয়। তোমরা যারা বাইরে পড়তে চাও তাদের জন্য ও দরজা খোলা থাকছে।

তাছাড়া ইতালি,ইংল্যান্ড,জার্মানি সহ আরো অনেকদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে পারবে এবং কাজও করতে পারবে। আর একটা কথা , বিশ্বাস রাখতে পারো লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করলে চাকরীর জন্য অন্তত তোমাকে বসে থাকতে হবে না।

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি

Mahfuz Al Shams Akash‎

KUET