আপনি হতাশায় আছেন এর কারণ এই না যে আপনার অনেক দুঃখ আছে। এর কারণ হল আপনি নিজেকে একজন দুঃখী মানুষ ভাবছেন। আপনি আসলে আপনার ব্রেইনে ব্যাপার গুলো এভাবেই প্রোগ্রামিং করে রেখেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছে, আমাদের আবেগ ও আচরণের ধরন নির্ধারিত হয় কী ধরণের জীবন আমরা মনের ভেতরে গড়ে তুলেছি সেটার উপর।
যে ঘটনা আপনার সাথে ঘটে গেছে একই ঘটনা ঘটে যাওয়া আরেকজন মানুষকে দেখবেন বেশ আশাবাদী; কেননা সেই মানুষটি অন্যভাবে সব কিছু তার ব্রেইনে প্রোগ্রামিং করেছেন।
আপনি যতবেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাচ্ছেন ততবেশি নেতিবাচক চিন্তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার মস্তিস্কের ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকবে। একটি সময় ব্যাপার গুলো আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন এবং আরও বেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাবেন। আপনি চাইলেই সব কিছু ইতিবাচক ভাবে ভাবতে পারছেন না কেননা আপনার ব্রেইনে সব কিছু যেভাবে আপনি সেট করে রেখেছেন ঠিক সেভাবেই সে আপনাকে দিয়ে চিন্তা করাবে।
তাই প্রথমেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অন্যদের বিশ্বাসের কথা চিন্তা করে। অথচ শব্দটি ‘অন্যদের বিশ্বাস’ না শব্দটি ‘ আত্মবিশ্বাস’ ।
অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী বিশ্বাস করছে সেটি অন্যদের বিশ্বাস। আপনি নিজের প্রতি কতটা আস্থা এবং বিশ্বাস রাখছেন সেটি আত্মবিশ্বাস। সবাই যখন আপনাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করবে তখনও আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আপনি নিজেই যদি নিজের কাজে বিশ্বাস রাখতে না পারেন তাহলে আপনি কীভাবে আশা করেন যে অন্যরা আপনার প্রতি আস্থা রাখবে?
আপনার জীবনের স্বপ্ন কী , জানতে চাইলে আমি হরহর করে স্বপ্নের কথা বলতে শুরু করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনি কী কী করছেন , জানতে চাইলে আপনি চুপ করে থাকছেন। ব্যাপারটি কী পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল না ?
আপনি নিজেকে যেভাবে সময় দিবেন সময়ও আপনাকে ঠিক সেরকম একটি জীবন দেবে। গ্রেনভিল ক্লিসার তার ‘ হাউ টু সাকসিড ইন লাইফ ‘ বইটিতে লিখেছেন, ”আমার জীবনের পরিকল্পনা অত্যন্ত নিখুঁত; আমি দৈনিক কত ঘণ্টা ঘুমাব সেটাও আমার পরিকল্পনায় ছিল ”
নিচের উদাহারণটি আমার জীবন থেকে নেয়া।
সকাল ৭ টা বাজে এলারর্ম বাজছে। ৯ টা বাজে পরীক্ষা। আমার ঘুম ভাঙ্গল। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি। আমার ঘুম পরিপূর্ণ হয়নি। বিশ্রাম দরকার। পরীক্ষা দেয়াটাও বেশি জরুরী। আমি কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। বেলা বারোটায় যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন প্রচণ্ড আফসোসে বুকের ভেতর দুমড়ে গেল। কয়টা ঘণ্টা বিশ্রাম নেবার জন্য পরীক্ষাটা আমাকে পরের সেমিস্টারে আবার দিতে হয়েছে কেননা আমি সেদিন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারিনি।
কথায় আছে কেউ ঠকে শিখে আর কেউ ঠেকে শিখে। যেভাবেই হোক শেখা নিয়ে কথা। কিন্তু আর একদল আছে, যারা ঠকে এবং ঠেকেও কিছু শিখে না। তাদের জীবনের সব থেকে বড় বাঁধা চারপাশের ঘটনা না; সব থেকে বড় বাধা- তারা নিজেরাই। শ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ হবার প্রধান শর্ত দ্রুত দৌড়ানো না; প্রধান শর্ত হল , আমি শ্রেষ্ঠ হতে পারব এই চিন্তাটির উপরে বিশ্বাস রাখা।
আপনি যদি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষটিকে দেখতে চান তাহলে আয়নার সামনে দাড়ান। আপনি যদি পৃথিবীর সব চাইতে বিপর্যস্ত মানুষটিকে দেখতে চাও তাহলেও আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ান। আপনি নিজেকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন আপনি আসলে তাই।