প্রথমেই বলে নেই, আমি ওপিটিতে থাকা অবস্থায় যতগুলো চাকুরীর আবেদন করেছি কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে, একটাও আমাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকে নাই।

আমি যতগুলো ইন্টারভিউ কল পেয়েছি সবগুলোই এসেছে আমার লিংকডইন নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে। সবার জন্য এই কথা সত্য নাও হতে পারেএকবার বইমেলায় একটা বই দেখেছিলাম, ফেসবুক ব্যবহারের নিয়মাবলি।

দেখে মনে হয়েছিল, এইটা একটা বই লেখার মতো বিষয় হলো! মানুষকে ফেসবুকের ব্যবহারও শিখিয়ে দিতে হবে?

লেখক আসলে আমার চেয়ে স্মার্ট ছিলেন বলেই ব্যাপারটা তিনি অনেক আগেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন।

জব রিক্রুটার কিংবা প্রফেসরের সাথে নেটওয়ার্কিং এর একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে লিংকডইন।

আমি ফেসবুক ব্যবহার শুরু করি ২০০৮ সালে, কলেজে ভর্তি হবার পর। সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে একটা জিমেইল একাউন্ট খুলেছিলাম।

সেটা দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে ব্যবহার করতে শুরু করি। সার্চ অপশনে গিয়ে সবার আগে খুঁজেছিলাম- মোহাম্মদ আশরাফুল! রিকুয়েস্ট দিলাম, এক্সেপ্টও করলো!

এরপর ভাইয়ার ফোনের ইন্টারনেট দিয়ে ফেসবুক চালাতাম। মোহাম্মদ আশরাফুলকে আমি সব সময় দেখতাম অনলাইনে থাকে সকাল ৬টার দিকে। আমি তক্কে তক্কে থাকতাম কখন বেটাকে অনলাইনে পাব আর চ্যাট করবো।

নক দিয়েই যাই, দিয়েই যাই, রিপ্লাই আর দেয় না। পরে এক সময় বুঝতে পারলাম ফেক একাউন্ট।

সেই বয়সে ফেক একাউন্ট দূরে থাক, ট্যাগ করা ব্যাপারটাও বুঝতাম না।

লিংকডইনের একটা ভালো দিক হচ্ছে, আপনার যদি কোনো প্রফেসরের ওয়েবসাইট কিংবা পেপার দেখে ভালো লেগে থাকে, তাকে লিংকডইনে একটা মেসেজ সহ রেক্যুয়েস্ট পাঠান।

এক্সেপ্ট করলে চাইলে তাকে নক দিয়ে কথা বলতে পারেন, তাতক্ষণিকভাবে কথা বলার মতো কিছু না পেলে, তার প্রোফাইলে সব সময় লাইক কমেন্ট দিয়ে নজরে থাকতে পারেন।

প্রফেসরের লিংকডইন প্রোফাইল মোহাম্মদ আশরাফুলের ফেসবুক প্রোফাইলের মতো ফেক হবার সম্ভাবনা খুবই কম।

লকডাউন সিচুয়েশনে আমি লক্ষ্য করেছি আমার লিস্টে থাকা প্রফেসররা লিংকডইনে বর্তমানে খুবই একটিভ।

গ্রুপে অনেক ব্যক্তি পোস্ট করেন ‘অমুক ইউনিভার্সিটি’তে কেউ আছেন? ইমার্জেন্সি কিছু তথ্য দরকার।’

তাদের জন্যও একই কথা। লিংকডইনের সার্চ অপশনটা খুবই ভালো।

ধরেন আপনি University of South Florida তে কাউকে খুঁজছেন। লিংকডইনে যান, সার্চ অপশনে ক্লিক করুন।

Then click on the people option. Select country – Bangladesh, Go to all filters. Select school – University of South Florida. Then click on apply button.

দেখেন কি তেলেসমাতি হয়, বাংলাদেশি যেসব শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়নরত আছেন অথবা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, প্রায় সবাইকেই লিংকডইনে পাবেন আপনি।

রিকুয়েস্ট দিন, প্রফেশনাল সাহায্যের জন্য প্রফেশনালভাবে approach করুন।

এবার আসি বন্ধু সংখ্যার ব্যাপারটায়। কালের বিবর্তনে ফেসবুকে বন্ধু সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে।

এরপর বুঝতে পেরেছি, এত মানুষ আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা দরকার নেই। এরপর শুরু করলাম ফিল্টারিং।

এখন আছে আড়াই হাজারের মতো। ফেসবুক যদি আপনি ৫ বছর ধরে ব্যবহার করেন নিয়মিতভাবে, তাহলে মোটামুটিভাবে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে ২০০০ মানুষ থাকবে।

একইভাবে লিংকডইনেও যদি আপনি ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই একটিভ থেকে কার্যকরী বন্ধু নিয়মিতভাবে এড করতে থাকেন, ভার্সিটি লাইফ শেষে যেদিন জব পাবেন কিংবা প্রফেসর ঘাপাবেন কিংবা একটা সামার ইন্টার্নশিপ পাবেন, সেদিন মনে মনে আমার এই পোস্টের জন্য মন থেকে দুয়া করবেন।

I wish আমি যেদিন MS শুরু করি, সেদিন যদি কেউ আমাকে বলতো কাওসার সুন্দর করে লিংকডইন প্রোফাইল গুছাও, লিংকডইনে মানুষের সাথে কথা বলো, মানুষের পোস্টে লাইক,

কমপক্ষে ৫ শব্দের গঠনমূলক কমেন্ট দিয়ে একটিভ থাকো, কমিউনিকেশন ও টেকনিক্যাল স্কিল বাড়াও, informative post share করো। I wish কেউ আমাকে এই কথাগুলোর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতো!

২০১৬ সালে জিয়ারই টোফেল দেওয়ার পর যখন প্রফেসর ইমেইল করা শুরু করলাম।

ইন্টারনেট, ফেসবুক গ্রুপ ঘেঁটে বুঝতে পারলাম, প্রফেসরের সময় ঠিক সকাল ৮টায় ইমেইল দিতে পারলে ইমেইল seen হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমেরিকার একেক স্ট্যাটে সময়ের হেরফের থাকে।

এক প্রফেসরের যখন সকাল ৮টা, আরেকজনের তখন ৯টা কিংবা ১০টা।

বাংলাদেশে তখন সন্ধ্যা ৬/৭/৮টা। সেই সময়ে আমি ১১টা টিউশনি করাই, ৩টা কোচিংয়ে পড়াই। রাতে জেগে প্রফেসরদের প্রোফাইল ঘাটি, একদিনে ৪-৫টা ইমেইল লিখতে পারি।

সন্ধ্যায় যখন ইমেইল করার সময় আসে, সে সময় আমি হয়তো কোচিঙয়ে অথবা স্টুডেন্টের বাসায়। সন্ধ্যা ৭টায় ইমেইল সেন্ড করতে হলে আমি ৬.৫৫ তে আমার ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখতাম।

এরপর ড্রাফট ইমেইল সেন্ড করে দিতাম। এভাবেই চলেছে পুরোটা সময়। আপনি কি জানেন জিমেইলে schedule option আছে?

আপনার সেট করে দেওয়া নির্ধারিত সময়েই ইমেইলটা সেন্ড হবে। আমি অধম এই বিষয়টা জানতাম না।

জেনেছি লিংকডইন লার্নিং এ জিমেইলের উপর দেড় ঘণ্টার একটা ছোট্ট কোর্স দেখে।

যদি এমন হয় আপনি আমেরিকায় জব খুঁজছেন তাহলে লিংকডইনের পেইড ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন।

তাছাড়া পেইড ভার্সন ব্যবহার করার তেমন প্রয়োজন নেই। প্রথম এক মাস ফ্রি। লকডাউন সিচুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে এক মাস ফ্রি লিংকডইন লার্নিং ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় কিছু স্কিল বাড়িয়ে নিতে পারেন।

যেমন ধরুন MS Word এর যথাযথ ব্যবহার শিখতে ৪-৫ ঘণ্টার একটা কোর্স করে ফেলতে পারেন। এখন জ্ঞানীরা বলবে এমএস ওয়ার্ডও কোর্স করে শেখা লাগবে?

এই মিনি কোর্সের সার্টিফিকেটটা important না, important হচ্ছে ভালো formatting শেখা। মাত্র দুই বছর TA করেছি, চারটা কোর্সে। হোমওয়ার্ক দেখলেই বুঝা যায় কার MS Word এর স্কিলের দৌড় কতটুকু।

প্রেজেন্টেশনের বাহারি স্লাইড দেখে আমরা সবাই জীবনে অনেকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছি। MS PowerPoint এর উপর ৪ ঘণ্টার একটা কোর্স করে ফেলুন, এরপর লিংকডইনে ১৫ মিনিটের একটা কুইজ দিয়ে ফেলুন।

৭০ পার্সেন্টাইলের উপরে পেলে আপনি যে MS PowerPoint এর উপর দক্ষ তার স্বীকৃতিস্বরূপ লিংকডইনে আপনার স্কিলের পাশে একটা ব্যাজ দেখাবে।

এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাপে আপনার প্রোফাইলটাকে strong করুন। It’s all about crack the LinkedIn algorithm and get on top of the applicant list.

© Kawser Farhad

ইঞ্জিনিয়ার’স ডায়েরি লিংকডইন পেজ

https://www.linkedin.com/company/Engineersdiary