একজন রুয়েটিয়ান মুক্তিযোদ্ধার গল্প ।
হতে পারতেন দেশের স্বনামধন্য একজন প্রকৌশলী। শুয়ে থাকতে পারতেন চন্দন পালঙ্কে। কিন্তু দেশের জন্য, মানুষের জন্য করেছেন আত্মত্যাগ।
রয়ে গিয়েছেন ইতিহাসের স্বর্নালী পাতায়। বলছি বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ সিরিজের ছাত্র সেলিম মোঃ কামরুল হাসান এর কথা।
সেলিম মোঃ কামরুল হাসান ১৯৪৮ সালে যশোরের অভয়নগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকেই গণিতে ছিল অসাধারণ মেধা।
১৯৬৪ সালে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। কলেজ শেষে ১৯৬৭ সালে ভর্তি হন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
মাঝে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত পড়েন থেকে গেলেন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টে।
সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার ভেতর। ছোট থেকেই নেতৃত্ব দেয়ার মনোবল ছিল তার। শিশুবয়সে একবার মিছিলের সামনে গিয়ে অবাক করে দিয়েছিলেন অনেককে। রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে যোগ দেন ছাত্রলীগে।
সেখানে তিনি কেবল একজন আপোষহীন ছাত্রনেতাই ছিলেন না, একজন অসাধারণ অ্যাথলেট ও কৃতী খেলোয়াড় হিসেবে কলেজ ও বিভাগীয় পর্যায়ের অধিকাংশ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
ইনডোর ও আউটডোরের একাধিক গেইমসে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন সেলিম। প্রথম বছরই হয়েছিলেন কলেজ ছাত্র সংসদের সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক।
পাশাপাশি জেভেলীন থ্রোতে আন্তঃকলেজ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছিলেন ১ম রানার আপ।
ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে ৬৯-এর আন্দোলনে এবং ৭০-এর নির্বাচনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মানবিক গুণে বন্ধুবাৎসল্যে রাজশাহীর মতিহারে সবার প্রাণের মণি হয়ে উঠেছিলেন সেলিম।
রুয়েট সে সময় রাজশাহী বিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল। প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছিলেন নিজ কলেজের শিক্ষক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আসগর ও ড. জোহার কাছে।
১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসে মানুষের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।
অস্তিত্ব সংকটে যখন দেশের মাটি, তখনই এলো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই অগ্নি ঝরা ভাষণ। সেই ভাষণ শুনে সবাই উদীপ্ত। তখন সেলিম ঢাকাতে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় সমগ্র ঢাকা শহর যখন পাকিস্তানিদের আক্রমণে স্তম্ভিত, বিমূঢ় এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভীতসন্ত্রস্ত, তখন দুই ভাই সেলিম ও আনিস এক প্লাটুন পুলিশ নিয়ে পাকিস্তান সার্ভে অফিস, তেজগাঁ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সাতরাস্তার মোড় এবং সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরের সামনে ঘুরে প্রতিরোধকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন।
৩১ মার্চ দুই ভাই যোগ দেন ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এরপর ২ এপ্রিল সরাইলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুদ্ধে অংশ নেন। ১৪ এপ্রিল লালপুরে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন সেলিম এবং আনিস।
এরপর শাহাবাজপুর, শমশেরনগর, নাসিরনগর, তেলিয়াপাড়া, হরষপুর, বেলোনিয়া, পরশুরাম, মুকুন্দপুর, ফুলগাজী, আখাউরা যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন তিনি।
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও দেশের অনেকগুলো জায়গা শত্রুমুক্ত করা বাকি ছিল। যেমনটি ছিল মিরপুর। মিরপুর শত্রুমুক্ত হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি।
বিহারী এবং লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে মিরপুরকে মুক্ত করতে অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেদিন ৩০০ জন পুলিশ এবং ১৪০ জন সৈনিক মিরপুরকে শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রবেশ করে সকাল ১১টায়।
এই অপারেশনে ছিলেন সেলিম নিজেও। সেলিম পৌছানো মাত্রই গোলাগুলি শুরু হল। ওই সময় ১২ নম্বর পানির ট্যাঙ্কের পেছন থেকে প্রথম গুলি ছোড়া হল।
রাস্তার অপর পাশে কাঁঠাল গাছের ফাঁক দিয়ে একটা গুলি আসে এবং সেটা সেলিমের ডান বুকে লাগে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যান তিনি এবং কাভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টে সরে যেতে সাহায্য করছিলেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন। সেদিন হয়তো তিনি ভাবছিলেন তাঁকে বাঁচাতে কেউ আসবে।
নির্মম সত্য হল, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। সেদিন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তা মঈন এবং সফিউল্লাহ। পরবর্তীতে অত্যধিক রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ মিশনে লেফটেন্যান্ট সেলিমসহ মোট ৪১ জন সেনা কর্মকর্তা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে।
১৯৭২ সালে বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হলের নামকরণ করা হয় শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম হল।
He could have been a renowned engineer of today’s Bangladesh. He could lie on the sandalwood couch. But for the country, for the people he sacrificed. Remained within the golden pages of history.
We are talking about Selim Md. Kamrul Hasan, student of 67 series of present Rajshahi University of Engineering & Technology(RUET). Selim Md. Kamrul Hasan was born in 1947 in Abhaynagar, Jessore.
He had an unprecedented talent in mathematics since childhood. After studying at Notre Dame College in 1964, he was admitted to Rajshahi Engineering College in 1966.
Meanitime he was admitted to Dhaka Medical College but within the end he studied in the Mechanical Engineering department of Rajshahi Engineering College.
He wanted to figure for the commoner. He had the morale to steer from the front. So he joined Chatro League.
There he wasn’t only an uncompromising student leader but also a champion in most events at the school and departmental level as a unprecedented athlete and accomplished player.
Selim was the champion in multiple indoor and outdoor games. In his first year, he became the Assistant Sports Secretary of the school Students’ Parliament.
He was also the first runner up within the inter-college championship in javelin throw.
RUET was an engineering college under Rajshahi university at that time. Being the leader of Chhatra League, he played a big role within the movement of ’69 and within the election of ’70.
Selim became the jewel of everyone’s life in Motihar, Rajshahi, thanking to his human qualities. Became a favourite of his college teacher and Rajshahi University Professor Asgar and Dr. To Johar.
within the catastrophic tsunami of 1970, he devoted himself to the service of the people. Bangabandhu’s eloquent speech on March 7 came when the country was in crisis of existence.
most are excited to listen to that speech. Then Selim was in Dhaka. At 11:30 pm on Annunciation, 1971, when the entire city of Dhaka was stunned, bewildered and terrified by the Pakistani attack, two brothers Selim and Anis with a platoon of police stood up to prevent the Pakistanis – Pakistan Survey Office, Tejgaon polytechnic, Satarastar Junction and Central center.
On 31 March the 2 brothers joined the 2nd East Bengal Regiment. Then on 2 April Saraile and Brahmanbaria took part within the battle.
Selim and Anis took part in Lalpur on 14 April as platoon commanders. He then showed courage within the battles of Shahbazpur, Shamshernagar, Nasirnagar, Teliapara, Harashpur, Belonia, Parashuram, Mukundpur, Fulgazi and Akhaura.
At the top of April 1971, Selim did an adventurous job within the battle of Teliapara. Although Bangladesh won on 16 December 1971, many parts of the country remained to be liberated.
Bangabandhu ordered the return of the country – to recover weapons from the Biharis of Mirpur and therefore the hiding Pakistanis.
On 30 January 1972, 300 policemen and 140 soldiers entered Mirpur to liberate the enemy. The gunfire started as soon as Selim reached the spot at 11 am.
At that point the primary shot was fired from behind the cistern number 12. On the opposite side of the road, a bullet came through a niche within the jackfruit and hit Selim within the right chest.
Fighting continued during a bullet-riddled condition and with cover fire, helping the comrades cross the bill and enter the cantonment. Waiting to be shot. Maybe he thought someone would come to his rescue that day.
The cruel truth is, nobody visited rescue him. Army officers Moin and Safiullah failed completely that day. He later died of excessive bleeding.
A total of 41 army officers including Lieutenant Selim were martyred during this mission of Bangladesh Army. For his outstanding contribution to the war of liberation, the govt of the People’s Republic of Bangladesh awarded him the title of Bir Pratik in 1972.
In 1982, the first hall of today’s Rajshahi University of Engineering and Technology was renamed as Shaheed Lieutenant Selim Hall.
Lieutenant Selim Md. Kamrul Hasan (Bir Pratik)
67 Series
Department of Mechanical Engineering
Rajshahi Engineering College.
কৃতজ্ঞতায় –
১। না বলা গল্প: মুক্তিযোদ্ধা সেলিম,
লেখকঃ ডা. এম এ হাসান (শহীদ লে. সেলিমের অনুজ লে.আনিস)
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক,
প্রতিষ্ঠাতা | ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
২। শেষ রণাঙ্গনের শহীদ সেলিম কামরুল হাসান , গেরিলা ১৯৭১ (ফেইসবুক পেইজ)
৩। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেঃ সেলিম স্মরনে… – আশিকুর রহমান অমিতের ব্লগ
৪। সেই সময় এই সময় থেকে, প্রকাশনাঃ সিভিল ডিপার্টমেন্ট, রুয়েট
৫। শহীদ লে সেলিমের স্বীকৃতি মিলবে কবে লিখেছেন – ঝর্না মনি । দৈনিক ভোরের কাগজ ।
©Human’s of RUET