জাহিদ হাসানের নাম তোমার শুনে থাকবে। জাহিদ হাসান হলেন বাংলাদেশের এক সন্তান। তিনি মেধাবীদের মেধাবী। প্রিন্সটন ইউনির্ভাসিটির ফিজিক্সের অধ‍্যাপক। প্রিন্সটন হলো পৃথিবীর প্রথম পাঁচটি ইউনির্ভাসিটির একটি। সে ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হওয়া যে কতো কঠিন একটা বিষয়—সেটা তোমাদের বেশিরভাগেরই কল্পনাতীত! জাহিদ ভাই পিএইচডি করেছেন স্ট‍্যানফোর্ড ইউনির্ভার্সিটি থেকে। পোস্টডক করেছেন প্রিন্সটনে। তার বয়স এখন পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি, কিন্তু গবেষণায় তিনি সাফল‍্য পেয়েছন অনেক। আমেরিকার অনেক খ‍্যাতনামা পুরস্কার তার ঝুলিতে উঠেছে। বিজ্ঞানের জন‍্য আমেরিকার বিখ‍্যাত সংগঠনগুলো থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। তার প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক আর্টিকেল সাড়া জাগিয়েছে সারা দুনিয়ায়। তার ছাত্ররাই এখন আমেরিকার নানান বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমান দুনিয়ায় তিনি হলেন অন‍্যতম ‘মোস্ট সাইটেড’ সাইন্টিস্ট। তার প্রকাশিত আর্টিকেল উদ্ধৃত (Cited) করা হয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার বার!
এই যে জাহিদ হাসান, তাকে কিন্তু আমাদের তরুণরা সবাই চেনে না। তার কোন ফেইসবুক নেই। টুইটার নেই। অথচ তিনি খ‍্যাতি পেয়েছন সারা দুনিয়াতেই। নিভৃতে, নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। সে কর্ম তাকে তুলেছে অনেক উঁচুতে। কতো উঁচুতে তিনি উঠেছেন, সেটা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষ একটি লেখায় তুলে ধরতে পারবো না। জাহিদ হাসানের মতো এমন বহু নায়ক আছেন, যাদের স‍্যেশাল মিডিয়াতে পরিচয় নেই। তারা অলীক জগতের নায়ক নন—তারা সত‍্যিকারের নায়ক। তাদের কর্ম পৃথিবী বাঁচায়। তাদের কর্ম মানুষকে বাঁচায়। সভ‍্যতাকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের কর্ম।
জাহিদ ভাইয়ের এক বন্ধুর নাম সাইফ ইসলাম। বাংলাদেশে তারা ছিলেন একই ব‍্যাচের ছাত্র। সাইফ ভাই হলেন ইউনিভার্সিটি অব ক‍্যালিফোর্নিয়া—ডেভিসের অধ‍্যাপক। সাইফ ভাই তার ব‍্যাচে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি-তে সারা বাংলাদেশে প্রথম হয়েছিলেন। ইউসি-এলএ থেকে পিএইচডি করা এই ছাত্র খুবই তরুণ বয়সে ইউনিভার্সিটি অব ক‍্যালিফোর্নিয়া—ডেভিসের শিক্ষক হয়েছেন। এই সাইফ ইসলামকে কী আমাদের তরুণরা চেনে? —খুব একটা চেনে না। এমন অনেক নায়ক আছেন, যারা বাস্তব পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের অলীক জগতের তরুণদের নজরে তারা পড়েন না।
আমাদের তরুণরা যেন ভুলে না যায়, অলীক জগতের বাহিরে একটা সত‍্যিকারের জগত আছে। পৃথিবী আছে। সেখানের নায়কদের চিনতে হবে। জানতে হবে। তাদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। এইসব নায়কদের চিনতে না পারলে, জীবনেকে এগিয়ে নেয়ার তিয়াস জাগবে না। এইসব নায়কদের চিনতে না পারলে, জগতের এই বিশালতার সৌন্দর্য অনুধাবন করা যাবে না। এইসব নায়কদের চিনতে না পারলে, নিজের ক্ষুদ্রতাকে কখনোই পরিমাপ করা যাবে না। মানুষ যদি নিজের ক্ষুদ্রতাই পরিমাপ করতে না পারে, সে কখনো বড়ো হতে পারে না। পরিপূর্ণতার অত্মতৃপ্তি তাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম করে তুলে।
…….
Rauful Alam
ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।