রুয়েটে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ২০১৬ সালে ডিপার্টমেন্টটি খোলা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ডিপার্টমেন্টটির আসন সংখ্যা ৬০ এ উন্নীত করা হয়েছে। বুয়েটে ডিপার্টমেন্টটি Material and Metallurgical Engineering নামে পরিচিত। কুয়েটেও ২০১৬ সাল থেকে MSE বিভাগটি খোলা হয়েছে।

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সব কিছু কোন না কোন উপাদান দিয়ে তৈরি। আর এই ‘উপাদান’ নিয়েই এমএসই। নামে দেখে ভাবার দরকার নেই শুধু ধাতু এবং সংকর ধাতু নিয়ে এমএসই। বরং আমাদের বাড়ির চামচ থেকে যুদ্ধের ময়দানের ট্যাঙ্ক, পানির নিচের সাবমেরিন থেকে মহাকাশযান- সব কিছুর সাথেই এমএসই এর সম্পর্ক। একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করে দেখো, তিনি বলবেন যে কোন মেশিন ডিজাইনে প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো ম্যাটেরিয়ালের ধর্ম; তোমার ম্যাটেরিয়াল যতো টেকসই হবে, তুমি ততো অভিনব ও শক্তিশালী মেশিন ডিজাইন করতে পারবে।

ম্যাটেরিয়ালের এই ধর্ম নিরুপণ ও নির্ধারণই MSE গ্র্যাজুয়েটদের কাজ। মেকানিক্যালের সাথে ম্যাটেরিয়ালসের এক্ষেত্রে সাযুজ্য রয়েছে।

আমাদের দেশের ইন্ডাসট্রির প্রেক্ষাপটের কারণে মূলত ধাতবশাস্ত্রের উপর বেশি জোর দেয়া হয়। তার মানে এই না যে অন্যগুলো নিয়ে কিছুই নেই। সিরামিক, পলিমার নিয়ে কোর্স আছে। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশোনা প্রতিটি টপিকেই করানো হয়।

ইন্টারে বাত্যচুল্লীতে লোহা/স্টিল তৈরি নিশ্চয়ই পড়ার কথা। আচ্ছা খেয়াল করেছ সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ১৫০০-১৬০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত চলে যায়? কিংবা রকেটের জ্বালানীর সময় যে কয়েক হাজার ডিগ্রী তাপমাত্রার সৃস্টি হয় সেখানে রকেট কিভাবে টিকে থাকে? আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ পরিচিত জিনিস এই তাপমাত্রায় টিকবে না, তাহলে? রিফ্র্যাক্টরি নামে এক বিশেষ ধরণের ম্যাটেরিয়াল আছে এসব উচ্চ তাপমাত্রায় টিকে থাকার জন্য। কি এই রিফ্র্যাক্টরি? কিভাবে বানায়? কী কী কাজে লাগে? উত্তর পাবে এমএসইতে

এছাড়া বাসার নিত্য প্রয়োজনীয় থালা-বাসন,মেঝের টাইলস ছাড়াও সিরামিকের বিশাল একটা ক্ষেত্র আছে।

উচ্চশিক্ষা এবং কাজের ক্ষেত্রঃ
১. যদি কারো উচ্চশিক্ষা কিংবা গবেষণার ইচ্ছা থাকে তবে নিশ্চিন্তে এমএসই নিতে পারো। এর কারণ – বিশ্বে যত গবেষণা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স।
যেকোন ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় অপটিমাম কার্যক্ষমতা, পরিবেশ-উপযোগিতা ও খরচসাশ্রয় উপযুক্ত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার ও উদ্ভাবনের উপর নির্ভর করে, তাই ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স রিসার্চ প্রোজেক্ট হিসেবে স্পন্সরদের কাছে খুবই উচ্চ প্রায়োরিটির। তাই ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারো আর নিজের মত নতুন একটি ম্যাটেরিয়াল আবিষ্কার করে পৃথিবীকে চমকে দিতে পার।
গুগলে একটু সার্চ করলেই অনেক কিছুই পাবে। গুগলের কথা বলতেই মনে হল গুগলের বর্তমান CEO কিন্তু IIT MSE এর ছাত্র। তিনি গুগলে যোগদানের আগে সিলিকন ভ্যালিতে Applied Materials নামক এক শীর্ষ ন্যানোম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানে ম্যাটেরিয়ালস ইজিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।

২. যাদের বিদেশে যাবার ইচ্ছা নেই, দেশেই থাকার ইচ্ছা তাদেরও হতাশ হবার কোন কারণ নেই। দেশে মূলত স্টিল ফ্যাক্টরিতে যথেস্ট সুযোগ আছে। সেই সাথে এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সরকারি সেক্টরে কাজ করার। গত কয়েকবছরে বিভিন্ন কোম্পানি এবং সরকারি সার্কুলারে আলাদা করে এমএসই গ্রাজুয়েট চাওয়া হয়। সরকারি চাকরির মধ্যে অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন, বিসিএসসিআই এর মত লোভনীয় চাকরিতে যোগ দিতে পারো যদি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পার। আর্মিতে যেমন মেটালার্জির চাকুরী আছে, আর্মি থেকে অনেক কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আমাদের ডিপার্টমেন্টে ডিগ্রি নিতে আসেন।

৩. এমএসই এর কাজের ক্ষেত্র আরো বড়। ন্যানোটেক, বায়ো মেডিকেল, ইলেকট্রনিক্স প্রভৃতি বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল, ইচ্ছা ছিল ইইই পড়ে ওসব করবে কিন্তু ইইই পাচ্ছো না, তাদের বলছি তোমাদের আশা এখনো আছে। ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাসট্রিতে প্রায় শতভাগ খাঁটি সিঙ্গেল ক্রিস্টাল সেমিকন্ডাকটর নির্মান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এই সেমিকন্ডাকটরের মধ্যেই ফটোলিথোগ্রাফির মাধ্যমে তড়িৎ বর্তনী অঙ্কন করা হয়। সেই সেমিকন্ডাকটরে কণা পরিমাণ খাদ থাকলেও প্রসেসিং ক্ষমতা কমে যায়। এধরণের সংবেদনশীল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া, তার উপর সোলডারিং এর মাধ্যমে তড়িৎ যন্ত্রাংশ ঢালাই করা, ইনসুলেটিং কোটিং প্রয়োগ করা প্রভৃতি ম্যানুফ্যাকচারিং ও ফ্যাব্রিকেশন ঘরানার কাজ একজন ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তুমি করতে পারবে।

আমাদের অনেক অ্যালামনাই বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করছেন। MIT, Carnegie Mellon, UC Davis, UT Arlington, McGill, KTH Royal Institute of Technology প্রভৃতি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের এলামনাইরা ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাসট্রি, অটোমোটিভ ইন্ডাসট্রি, এরোস্পেস ইন্ডাসট্রির জন্য ম্যাটেরিয়াল উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন।এতো বিচিত্র ইনডাসট্রিতে এমএসই গ্র্যাজুয়েটদের বিচরণ Materials Science and Engineering এর বিশাল স্কোপের উপর আলোকপাত করে।

চাকুরীর ক্ষেত্র :–

দেশে চাকুরীর ক্ষেত্র: Steel industry, Ceramic Industry, Food Packaging Industry, Gas Fields, Power Generation Company, High tech manufacturing industries such as Walton and Linde group

সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত/সশস্ত্রবাহিনীতে চাকুরি: BCSIR, Atomic Energy Commission, BITAC, PDB, Bangladesh Machine Tools Factory, Bangladesh Ordinance Factory(সশস্ত্র ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বন্দুক, কার্তুজ, গ্রেনেড প্রস্তুতকারক), Bangladesh Army EME Corps, Bangladesh Air Force Engineering Corps.

বিদেশে গবেষণা ও চাকুরির ক্ষেত্র: Automotive industry, Aerospace Industry, Semiconductor Industry, Polymer Industry, Mining industry, Drilling and pipelines, Biomedical industry.
চাকুরীতে পদবী – Production Engineer, Quality Control Engineer, Welding Engineer, Process Engineer, Foundry Engineer, Heat Treatment Engineer, Coating Engineer.

বর্তমান ও ভবিষ্যৎঃ
শুরুতেই বলেছি বাংলাদেশে খুব বেশি পরিচিত না। এর একটা বড় কারন পাশ করে বেশিরভাগ ছাত্র স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে যায় অথবা চাকরিতে ঢুকে যায়। আর তাই এমএসই এর ভাইয়ারা কোচিং সেন্টারে সহজলভ্য না ফলে তাদের ডিপার্টমেন্ট এর নাম-গুণ শোনা হয় না খুব একটা। আগে হয়ত আমাদের কাজ যা মেকানিকাল বা ইলেক্টিকাল ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে করানো হত কিন্তু এখন পন্যের চাহিদা বাড়ায় মান নিশ্চিত করতে এমএসই এর ইঞ্জিনিয়ারদেরই লাগছে।

ফলে গত কয়েক বছরে এমএসই এর চাহিদা অনেক বেড়েছে এবং তা বাড়বেই। যেহেতু দেশে একমাত্র রুয়েট,বুয়েট,কুয়েট, রাবি ছাড়া আর কোথাও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট হিসেবে নেই তাই অন্যদের মত চাকরি নিয়ে প্রতিযোগিতাও কম। আর বহির্বিশ্বে এর চাহিদা অনেক আগে থেকেই বেশি।

So you are mostly welcome in our respectful department of MSE(Material Science and Engineering)
RUET.