When We Rest,The World Rust” – এই একটি বাক্যই যথেষ্ট এমএসই ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে!

বর্তমান বিশ্বের সবথেকে অগ্রসরমান এবং সম্ভাবনাময়ী ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলোর মধ্যে সবথেকে যে সাবজেক্টটি এগিয়ে সেটি হল এমএসই।

কি ভাবছ?এমএসই আবার কি সাবজেক্ট!কখনো তো নাম শুনি নি!আসলে তা নয়। এটি অনেক পুরোনো সাবজেক্ট।সিভিল বা মেকানিকালের মত এটিও অনেক পুরাতন ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা।মানুষ যখন থেকে তামা আবিষ্কার করে তখন থেকেই মূল যাত্রা শুরু।১৯৬০ সালে Northwestern University তে এই সাবজেক্টটির পথচলা শুরু হয়।এর ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। তো আগে এই সাবজেক্টটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না,সেটি একদমই ভিত্তিহীন কথা। অস্তিত্ব অবশ্যই ছিল,কিন্তু বর্তমানের মত বড় পরিসরে ছিল না।

বর্তমান বিশ্বের অফুরন্ত চাহিদা সামনে রেখে কুয়েট এ ২০১৬ সাল থেকে এ সাবজেক্টটির যাত্রা শুরু হয়। আগে শুধু কুয়েট থেকে এ বিষয়ে MSC ডিগ্রি দেওয়া হত।
ইঞ্জিনিয়ারস ডায়েরী – Engineers Diary

বর্তমানে এ বিষয় পড়ানো হয় MIT,Stanford,Harvard,University of California,Tokyo,Singapore,Imperial College of London,Caltech,Seuol এবং বাংলাদেশের মধ্যে বুয়েট(MME নামে পরিচিত),রুয়েট আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তো আশা করি বুঝতেই পারছ এই সাবজেক্টটির ব্যাপক চাহিদার কথা।

এবার কথার মধ্যে কথা হলো আসলে সাবজেক্ট টা নিয়ে পড়ে কি শিখব ??এখানেই হচ্ছে মজা।। তুমি এই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে সব খাবারের মজা পাবা।মানে হচ্ছে এর কোর্স ডিজাইনটা এমন ভাবে করা যার ফলে তুমি Electrical,Mechanical,Civil সব বিষয় সম্পর্কে ঘাটতে পারবা আর জানতে পারবা। মানে তোমার জানার পরিধি টা হবে বিস্তর।।

তো চলে যাচ্ছি এখানে কি পড়ানো হয়, এখানে পড়ে কি কি করতে পার আর এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায়।

কি পড়ানো হয়ঃ

আমাদের চারপাশের সব কিছুই কোনো না কোনো ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। আর এইসব নিয়ে পর্যালোচনাই এমএসই ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ। আমাদের হাতের স্মার্টফোন থেকে শুরু করে চলাচলের যানবাহন,কিংবা থালাবাসন থেকে শুরু করে চেয়ার টেবিল সব কিছুতেই কিন্তু রয়েছে এমএসইর ছোঁয়া।প্রধানত ৫টি প্রধান ভাগ(মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট) নিয়ে কাজ করে এমএসই।

#মেটালঃ বর্তমান এর সবথেকে আকর্ষণীয় জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম। ৯/১০ এ নিশ্চয়ই পড়েছ খনি থেকে আকরিক সংগ্রহের কথা,তা থেকে আবার ধাতু নিষ্কাশন এর কথা। মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল তখন?আশা করি সকল প্রশ্নের উত্তর এমএসই তে পাবে।এছাড়া ধাতু কিভাবে তৈরি করলে তা মানুষের বেশি কাজে আসবে কিন্তু খরচ হবে কম, কিভাবে রিসাইকেল করে কোন ধাতব বস্তুকে কাজে লাগানো যায়, জাহাজ, প্লেন, মহাকাশযান, গাড়ির বডি,ইঞ্জিনের উপাদান কি হবে যেন তা সহজে নষ্ট না হয়, পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এরকম হাজারো ব্যাপার নিয়ে আলোচনাই এমএসইর কাজ।

#সিরামিকঃ সিরামিক!দৈনন্দিন জীবনের অত্যাবশকীয় একটি উপাদান।বাসার নিত্য প্রয়োজনীয় থালা-বাসন,মেঝের টাইলস ছাড়াও সিরামিকের বিশাল একটা ক্ষেত্র আছে। উচ্চতাপমাত্রায় কাজ করার যন্ত্র, অপটিক্যাল ফাইবার, ইনস্যুলেটর, সিমেন্ট, কৃত্তিম অঙ্গ তৈরি এরকম অনেক জায়গায় সিরামিক লাগে।

#সেমিকন্ডাক্টারঃ ইলেক্ট্রিক চিপ এখন সব যায়গায়। আর এমএসই এর কাজের একটা বড় ক্ষেত্র এখানে।কিভাবে কোন ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়াল কাজ করবে, কত ভোল্টেজ, তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারবে এসবই নির্ভর করে উপাদানের উপর। আর উপাদান মানেই তো এমএসই।কিভাবে ইলেক্ট্রনিক স্ট্র্যাকচার চেঞ্জ হয়, ব্যান্ড থিওরি, কোয়ান্টাম স্ট্র্যাকচার যেমন quantum well , quantum dot এসব নিয়েও কাজ হয় এমএসইতে।

#পলিমারঃ পলিমার আমাদের নিত্যদিনের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পলিমারের প্রচুর জিনিস আমরা ব্যবহার করি। মোবাইল এর কভার থেকে শুরু করে কম্পিউটারের কীবোর্ড কিংবা হাতের কলম থেকে শুরু করে খাওয়ার প্লেট সবই পলিমারার অবদান! এসবের প্রস্তুতি,গুনগত মান রক্ষা সবই এম এসইর আওতায় পড়ে।

#কম্পোজিটঃ উপরের ৪ প্রকার ম্যাটেরিয়ালের সমন্বয়ে যেসব বস্তু বানানো হয় তারাই এর অন্তর্ভুক্ত। শুধু ধাতু বা সিরামিকের তৈরি কোন কিছুর মান উন্নয়নে অন্য কিছু যোগ করে তৈরি হয় কম্পোজিট। খেলার র্যারকেট, আধুনিক উচ্চ গতির প্লেনের বডি, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট বা গ্লাসসহ আরো অনেক কিছুই কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালসের আওতায় পড়ে।
এছাড়া Optical Microscope এ মেটাল কিংবা সিরামিকের. Microstracture দেখা এমএসই ইঞ্জিনিয়ারদেরই কাজ। পৃথিবীতে খুব কম লোকই কিন্তু এই সুযোগটা পায়।
এসবই পড়ার মূল বিষয়। আগামি ৪ বছর এসবেরই বিভিন্ন ধর্ম, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে ডিজাইন করে এসব নিয়ে পড়তে হবে। চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস দেখে নিতে পার( Materials Science And Engineering (MSE)- KUET )

তবুও কি কি পড়ানো হয় তা সম্পর্কে একটু প্রাথমিক ধারণা দিলাম –

১.Materials Structure
২.Electronic&Mechanical Properties of Materials
৩.Bio&Polymeric Materials
৪.Materials Processing
৫.Polymer Engineering

৬.Crystallography
৭.Materials Manufacturing Process
৮.Extractive Metallurgy and Ore Dressing
৯.Computational Materials Science
১০.Smart and Bio Materials

১১.Materials for Nuclear&Renewable Energy
১২.Composition&Microstructural Analysis
১৩.Ceramic and Glass
১৪.Corrosion and Surface
১৫.Micro/Nano Processing Technology etc.

শঙ্কা এ সাবজেক্ট নিয়ে?অমুক ভাই এই সাবজেক্ট থেকে বের হয়ে এত টাকার স্যালারি করে,তমুক আপু ওই সাবজেক্ট থেকে বের হয়ে দেশের বাইরে ভালো অবস্থানে আছে -এসব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?তো আসো কিছু কাজের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করি

১.গবেষণার খুব ইচ্ছা?চোখ বন্ধ করে নিয়ে নিতে পার এমএসই।বর্তমানে বিশ্বে যত গবেষণা হয় তার মধ্যে অত্যধিক একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল এমএসইতে। যেকোনো কার্যক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় সাশ্রয়ী এবং উদ্ভাবনী ম্যাটেরিয়ালস এর। তাই ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পার আর নিজের মত করে একটি নতুন ম্যাটেরিয়াল আবিষ্কার করে চমকে দিতে পার পুরো বিশ্বকে। হয়ত সামনের কোনো বিজ্ঞানের চমকে অপেক্ষা করছে তোমারই নাম!

২. যাদের বিদেশে যাবার ইচ্ছা নেই তাদেরও হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশেও এমএসইর অনেক চাহিদা রয়েছে। দেশে মূলত স্টিল ফ্যাক্টরিতে সুযোগ আছে। সেই সাথে সিরামিক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, গ্যাস ফিল্ড ছাড়াও প্রায় সকল প্রকার ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

৩.এমএসই এর কাজের ক্ষেত্র আরো বড়। ন্যানোটেক,বায়ো মেডিকেল, ইলেকট্রিক্স,নিউক্লিয়ার ইজ্ঞিনিয়ারিং এরকম বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারছ না আশা করি ভুল কোনো সাবজেক্ট এর ধারস্থ হও নি।কেননা এমএসইতে পড়ে এসব বিষয়ে রয়েছে উচ্চশিক্ষার অনেক বড় সুযোগ। তাই ভবিষ্যতে এসবের পড়ার ভালো সুযোগ এখনো তোমার আছে। Intel,IBM এর মত প্রতিষ্ঠানে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে এখান থেকে।একটু গুগল করলেই আরো বিস্তারিত জানতে পারবা। ও আচ্ছা!গুগল থেকে মনে পড়ল। বর্তমানে গুগলের CEO পদে অধিষ্ঠিত Sundar Pichai কিন্তু এমএসইর ই ছাত্র।

৪.ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের গবেষণায় এমএসই এখন অনেক ভুমিকা রাখছে। হাড়,দাঁত প্রতিস্থাপন, কৃত্তিম পা, হাত সবই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্টিস্টরা করছে। কারণ মানুষের দেহে এসব প্রতিস্থাপন করতে হলে এমন উপাদান হতে হবে যা শরীরের কোন ক্ষতি করবে না। আর উপাদান মানেই তো এমএসই।হয়তো তোমাদের মধ্যেই কেউ কম খরচে কৃত্তিম কিডনি বা সেরকম কিছু বানাবে, ক্যান্সারকে নির্মূল করবে- বাঁচাবে হাজার হাজার প্রান।

আসলে এটি এমন এক সাবজেক্ট যেখানে তোমার চাকরি খুঁজতে হবে না,চাকরি নিজেই তোমাকে খুঁজবে!
বর্তমান বিশ্বের Highly Paid জব এর লিস্টে top 10 এর মধ্যে রইছে এই Material Engineer এর জব।।তবুও চাকরির চিন্তা??বাংলাদেশ কি কি সুবিধা দিবে?? গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন কম্পানি এবং সরকারি সার্কুলার এ আলাদা করে এমএসইতে গ্রাজুয়েটদের চাওয়া হয়। বাংলাদেশে Gas,Coal,Pharmaceuticals এ রয়েছে এমএসই ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা। দেশের মধ্যে তোমার জন্য তো রইছেই Atomic energy commission,BCSCI, Bangladesh Tobacco int.,Uniliver,Renata,Partex, Walton,BSRM,KSRM সহ বিভিন্ন টপ র‍্যাঙ্কড কোম্পানিতে চাকরি করার লোভনীয় সুযোগ। এছাড়া “রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র” যে এমএসই ইঞ্জিনিয়ারদের পদচারণায় মুখর থাকবে তা আর বলতে!

NASA,CERN এর মত জায়গায় প্রতিবছর ব্যাপক Materials scientist লাগে। তো বুঝতেই পারছো এর ভবিষ্যৎ !

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়াররা গাড়ি বানাবে,সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রা বাড়ি বানাবে,ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা চিপ বানাবে আর এর জন্য নিশ্চয়ই উপাদানের প্রয়োজন হবে। তখন দরকার হবে তোমায়।
তাই চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে আগামী ৪ বছরের সঙ্গী করে নিতে পার এমএসই কে। কুয়েট কিংবা বাংলাদেশ কিংবা পুরো পৃথিবী রয়েছে তোমারই অপেক্ষায়। নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রতীক্ষায়।

পৃথিবীকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কল্পনায়।
শুভ কামনা সবার জন্য।