অ্যান্টি ম্যাটার বা প্রতিকণা,

বিজ্ঞানী পল ডিরাক ১৯২৮ সালে একটি গবেষণা পত্র বের করেন, যা ছিল ইলেকট্রিক এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ডে ইলেকট্রনের গতির কোয়ান্টাম থিওরী নিয়ে। কিন্তু সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল এই গবেষণা পত্রে ডিরাক সাহেব ইলেকট্রনের গতির বর্ণনা দিতে গিয়ে একটি ভুতুরে প্রেডিকশন করেন। যেখানে বলা ছিল, প্রতিটা কণা বা পার্টিকেলেরই তার বিপরীত পার্টিকেল থাকা সম্ভব!

তারপর ১৯৩২ সালে ড. কার্ল ডি এন্ডারসন একটি পরিক্ষার মাধ্যমে একটি কণা বা পার্টিকেল আবিষ্কার করেন যার ভর ইলেকট্রনের ভরের সমান, যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ইলেকট্রনের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায় কিন্তু তার চার্জ হল ধণাত্মক!

তিনি এর নাম দেন পজিট্রন (পজিটিভ ইলেকট্রন থেকে পজিট্রন)। ড. এন্ডারসনের এই আবিষ্কার তখন পল ডিরাকের প্রেডিকশনকে সত্যি প্রমাণিত করে। যার জন্য পল ডিরাক ১৯৩৩ সালে এবং এন্ডারসন ১৯৩৬ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পান।

পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ এমিলিও সেগ্রি এবং ওয়েন চ্যাম্বারলাইন অ্যান্টি-প্রোটন (ঋণাত্নক চার্জ বিশিষ্ট প্রোটন) আবিষ্কার করতে সফল হন এবং দুজনেই এই কাজের কৃতিত্ব স্বরুপ ১৯৫৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবাল পুরস্কার পান।

অ্যান্টি-প্রোটনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে লরেঞ্জ বারকেলি ন্যাশনাল ল্যাবে ব্রুস কর্ক এবং তার সহকর্মীরা মিলে অ্যান্টি-নিউট্রন আবিষ্কার করেন।

এভাবে পল ডিরাকের প্রেডিকশন পুরোপুরি বাস্তবে পরিণত হয় এবং অ্যান্টি ম্যাটার বা প্রতিকণা বলতে যে সত্যিই কিছু আছে তা প্রমাণ হয়।

আমাদের পুরো মহাবিশ্বের মত রয়েছে আরেকটা বিপরীত মহাবিশ্ব?

আমাদের পুরো মহাবিশ্বের মত রয়েছে আরেকটা বিপরীত মহাবিশ্ব?

গবেষণা দ্বারা এটি প্রমাণিত যে, যখন বিগ ব্যাংয়ের মহা বিস্ফোরণ হয়েছিল তখন সমান সংখ্যক কণা বা ম্যাটার এবং প্রতিকণা বা অ্যান্টি ম্যাটার তৈরি হয়েছে।

তারপর কণা বা ম্যাটার দিয়ে আমাদের এই পুরো মহাবিশ্ব এবং আমরা তৈরি হয়েছি। তারমানে হল আমরা সবাই ম্যাটার দিয়ে তৈরি। কিন্তু ম্যাটারের সমান সংখ্যক তো অ্যান্টি ম্যাটার তৈরি হয়েছে, তাহলে আমাদের পুরো মহাবিশ্বের মত আরেকটা অ্যান্টি ইউনিভার্স বা বিপরীত মহাবিশ্ব থাকার কথা! এটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে…

আরেকটি গবেষণায় বিগ ব্যাংয়ের ঘটনাকে এভাবেও ব্যাখ্যা করে যে, মহা বিস্ফোরণের পর প্রতি ১০ বিলিয়ন প্রতিকণার সাথে ১০ বিলিয়ন ১ টি করে কণা তৈরি হয়েছে। তারপর সমান সংখ্যক কণা এবং প্রতিকণা মিলে ধ্বংস হয়ে গেছে (১-১=০ হবার মত)। আর প্রতি ১০ বিলিয়ন প্রতিকণায় যে ১০ বিলিয়ন ১ টি করে কণা তৈরি হয়েছে, সেই অবশিষ্ট কণা বা ম্যাটার গুলো দিয়ে আমাদের এই পুরো মাহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে।

১৯৯৫ সালে “ইউরোপীয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ – সার্ন” ঘোষনা দেয় যে তারা প্রজিট্রন, অ্যান্টি-নিউট্রন এবং অ্যান্টি-প্রোটন দিয়ে ৯ টি অ্যান্টি হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করতে সফল হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হল এই অ্যান্টি হাইড্রোজেন পরমাণু গুলো সংরক্ষণ নিয়ে। কারন আমাদের মহাবিশ্বের প্রতিটা জিনিসই ম্যাটার দিয়ে তৈরি আর ম্যাটারের পাত্রে অ্যান্টি ম্যাটার রাখলে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যাবে! তখন সার্নের গবেষকরা একটি উপায় বের করেন। তারা এই অ্যান্টি হাইড্রোজেন পরমাণু গুলো বিশেষ ম্যাগনেটিক ফিল্ডে সংরক্ষণ করে। কারন চৌম্বকীয় বল রেখা কোন ম্যাটার দিয়ে তৈরি নয়।

সব থেকে মজার একই সাথে ভয়াবহ ব্যাপার হল, ম্যাটার এবং অ্যান্টি ম্যাটার যখন পাশাপাশি আশে এবং কলিশন করে তখন তারা বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যায়। আর এই বিপুল শক্তির পরিমাণটা আন্দাজ করতে একটা ব্যাখ্যা দেয়া যাক। পারমাণবিক বোমায় ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের ০.৪-১% ইউরেনিয়াম শক্তিতে রুপান্তর হয়, আর তাতেই যা অবস্থা হয়।

আর এদিকে ম্যাটার এবং অ্যান্টি ম্যাটার কলিশনে ১০০% শক্তির রুপান্তর হয়। তাহলে সমপরিমাণ বিস্ফোরণে পারমাণবিক বোমার থেকে কতগুন বেশি শক্তি উৎপন্ন হবে ম্যাটার-অ্যান্টি ম্যাটার কলিশনে তা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠে!

কিন্তু আশার কথা হল কয়েক গ্রাম অ্যান্টি ম্যাটার তৈরি করতে আমেরিকার মত দেশও দেউলিয়া হয়ে যাবে। কারণ বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি গ্রাম অ্যান্টি ম্যাটার উৎপাদন ব্যায় ৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার!

কিন্তু নাসার দাবি তারা অ্যান্টি ম্যাটার নিয়ে আরো বিষধ গবেষণা করবে এবং এই অ্যান্টি ম্যাটারই হবে আগামীতে দ্রুতগামী ইন্টারস্টেলার মহাকাশযান গুলোর প্রধান জ্বালানি।

তথ্যসূত্র: Scientific American, livescience, Wikipedia

www.scientificamerican.com/article/what-is-antimatter-2002-01-24/

https://www.google.com/amp/s/www.livescience.com/amp/32387-what-is-antimatter.html

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Antimatter

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Antimatter_weapon

লেখকঃ মোহাম্মদ রবিউল হাসান