মেকানিকালকে (ME) বলা হয় মাদার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং। আমাদের পৃথিবীতে প্রকৌশল বিদ্যার সুত্রপাত কিন্তু এই মেকানিকালের হাত ধরেই। তোমরা সবাই জানো যে সভ্যতার ক্রমবিকাশের যাত্রা শুরু হইছিল সেই আদি যুগে যখন মানুষ প্রথম চাকা আবিষ্কার করেছিল। সেই চাকা আবিষ্কার থেকেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর যাত্রা শুরু।

অন্য সব ইঞ্জিনিয়ারিং কে সে অর্থে মেকানিকালের শাখা বলা যায়। যার কারণে মেকানিকালে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সিলেবাসও থাকে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতেও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ গুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট ধরা হয় মেকানিকালকে যা প্রতি সেমিস্টারেই ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রমের শীর্ষে থাকে।

আমাদের সবার প্রিয় মুভি “3 idiots” এও কিন্তু ওই তিনজন ইডিয়ট মেকানিকালেরই ছাত্র ছিল। আর উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রেও মেকানিকালের শিক্ষার্থীদেরই রিসার্চ ফিল্ড বা গবেষণার ক্ষেত্র থাকে সবচেয়ে বিস্তৃত। তাই তারা চাইলেই খুব সহজে মেকানিকাল ছাড়া অন্য ফিল্ডেও উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে পারে যে সুযোগটা অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা এতটা পায় না।

চুয়েটে বর্তমানে ফ্যাকাল্টি সংখ্যা ৫ টি এবং আন্ডার গ্র্যাড লেভেলে ডিপার্টমেন্ট সংখ্যা ১১ টি (http://www.cuet.ac.bd/faculties.php)।

যার মধ্যে মেকানিকাল ফ্যাকাল্টির আন্ডারে মেকানিকাল ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও রয়েছে পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকাট্রনিক্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি আমার চোখে চুয়েটের সেরা ডিপার্টমেন্ট মেকানিকাল। কেন? চলো জেনে নেই।

আমাদের ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে বলতে গেলে সবার আগে বলতে হয় আমাদের অভিজ্ঞ এবং আন্তরিক শিক্ষক মন্ডলির কথা। শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা এবং অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে সকল ডিপার্টমেন্ট প্রায় সমান হলেও তাদের আন্তরিকতার দিক দিয়ে আমার দৃষ্টিতে মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টই সেরা।

বর্তমানে ম্যাকানিকাল ফ্যাকাল্টির ডিন এর দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ডক্টর সজল চন্দ্র বণিক (http://www.cuet.ac.bd/personal_profile.php?user_id=sajal) এবং ডিপার্টমেন্টের হেড হিসেবে নিয়োজিত আছেন প্রফেসর ডক্টর জামাল উদ্দিন আহমেদ (http://www.cuet.ac.bd/personal_profile.php?user_id=jamal)। তাদের সহ বর্তমানে ডিপার্টমেন্টে ইউরোপ অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের স্বনামধন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী শিক্ষক সংখ্যা ১২ জন।

রয়েছেন একজন ডবল পিএইচডি ধারী শিক্ষকও। মোট ৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন ২২ জন আর উচ্চতর শিক্ষা (মাস্টার্স ও পিএইচডি) অর্জনের জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন ৮ জন শিক্ষক।

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায় সকল বিষয়ের উপরই অভিজ্ঞ ও উচ্চতর ডিগ্রীধারী আমাদের এই শিক্ষক পরিবার তাদের প্রতিনিয়ত প্রকাশিত পেটেন্ট, রিসার্চ পেপার, জার্নাল আর্টিকেল তথা গবেষণাপত্রের সংখ্যার দিক থেকেও দেশের বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে আছেন।

এছাড়াও আমাদের শিক্ষকদের পাঠদানের মান আরও উন্নত করতে গত বছর থেকে ডিপার্টমেন্টে চালু করা হয়েছে টিচার্স রিভিউ সিস্টেম যা চুয়েটে অন্য অনেক ডিপার্টমেন্টেই নেই। তো বুঝতেই পারছো মেকানিকাল ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে কতটা বদ্ধপরিকর! আমাদের শিক্ষকদের সম্পর্কে আরও একটু জানতে এই লিংকটি থেকে ঘুরে আসতে পার http://www.cuet.ac.bd/faculty_me.php

এবার আমাদের ল্যাবগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেই। মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে যে ল্যাবগুলো রয়েছে তা হলঃ
1. Incompressible Fluid Mechanics & Fluid Machinery Laboratory
2. Compressible Fluid Mechanics & Renewable Energy Laboratory

3. Heat Transfer Laboratory
4. Heat Engine & Automobile Laboratory
5. Strength of Materials Laboratory

6. Applied Mechanics Labotaroy
7. Metallurgy & Metrology Laboratory
8. Computer Laboratory
9. Mechanics & Control Engineering Laboratory

10. Robotics & Research Laboratory
11. Postgraduate Research Laboratory
12. Drawing Laboratory
13. Workshop

এই প্রত্যেকটি ল্যাবেই রয়েছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি সহ গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। এছাড়াও প্রতিটি ল্যাবে কর্মরত রেয়েছেন একজন করে অভিজ্ঞ ল্যাব সহকারী যারা শিক্ষকদের সাথে মিলে ল্যাবে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝতে সর্বাত্বক সহযোগীতা করে থাকেন।

এছাড়াও কিছু ল্যাবে রয়েছে একাধিক বিভাগ। যেমন আমাদের ওয়ার্কশপের কথাই ধরা যাক। প্রতিষ্ঠাকালে তিনতলা বিশিষ্ট চুয়েটের এই ওয়ার্কশপটিই ছিল তৎকালীন সময়ে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মেকানিকাল ওয়ার্কশপ।

যার একেকটি তলায় রয়েছে Welding and Foundry shop, Sheet Metal Shop, Wood Shop এবং Machine shop. এবং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির স্বাদ দিতে ওয়ার্কশপ পরিবারে নতুন সদস্য হিসেবে গত বছরই যুক্ত হয়েছে একটি Water Tunnel, দুইটি 3d Printer এবং একটি Automated CNC Machine.

চারটি বছর যেহেতু তোমরা এই ডিপার্টমেন্টে থাকবে তো এই সময়ে তোমাদের কি কি বিষয় পড়ানো হবে এবার চল সেই সম্পর্কে একটু জেনে নেই। মূলত মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সকল বেসিক সাবজেক্টগুলোই ধাপে ধাপে পড়ানো হবে তোমাদের। এখানে সেমিস্টারের ক্রমানুসারে বিষয়গুলোর একটি লিস্ট দেয়ার চেষ্টা করেছিঃ

1. Thermal Engineering
2. Welding and Foundry
3. Mechanical Drawing and Auto CAD

4. Machine and Fitting Shop
5. Mechanics
6. Production Process
7. Auto CAD and Design Softwares

8. Mechanics of Solids
9. MATLAB
10. Conduction and Radiation
11. Fluid Mechancs

12. Mechanics of Machinery and Vibration
13. Measurement and Quality Control
14. Numerical Methods in Engineering
15. Convection and Mass Transfer

16. Machine Design
17. Engineering Metallurgy
18. Power Plant Engineering
19. Production and Operations Management

20. Machine Tools and Tool Engineering
21. Refrigeration and Air-conditioning
22. Applied Thermodynamics

23. Fluid Machinery
24. Industrial Management
25. Mechatronics

26. Automobile Engineering/ Petroleum Engineering/ Aerodynamics/ Robotics/ Renewable Energy Technology

এখানেই শেষ নয়। এগুলো তো গেল শুধু মেকানিকাল এর বেস সাবজেক্টগুলো। আগেই বলেছি মেকানিকাল এর সিলেবাস বিশাল বিস্তৃত। যার দরুণ, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে আরও বেশী ডায়নামিক করে তুলতে সিলেবাসে রয়েছে এই সাবজেক্ট গুলোওঃ

1. Physics
2. Chemistry
3. Math

4. Sociology and Industrial Psychology
5. Electrical Circuits and Machines
6. Computing Basics and Programing
7. Technical English and Communication Skill
8. Economics
9. Electronics and Microprocessor
10. Industrial Law and Accounting

তবে এত্ত বড় লিস্ট দেখে ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রতিটি বিষয় সহজ ও মজার করে তুলে ধরতে আমাদের বন্ধুসুলভ স্যাররা তো আছেনই। তবে শুধু কি পুথিগতবিদ্যা নিলেই চলবে? বাস্তব জীবনের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে তো ছাত্র জীবনেই কিছুটা ধারণা পাওয়া উচিৎ, তাই না? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। সে ব্যবস্থাও করা আছে আমাদের ডিপার্টমেন্টে। যার নাম ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট!

প্রতি বছর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে ৩ সপ্তাহের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানীতে। সেখানে তারা যেমন বিভিন্ন মেকানিকাল ডিভাইস ও প্রসেস সম্পর্কে হাতে কলমে ধারণা পায় তেমনি একই সাথে কর্মজীবনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কর্মজীবনে ঢোকার আগেই জেনে নিতে পারে। তো এবছর আমাদের ডিপার্টমেন্ট যেসকল কোম্পানীতে আমাদের এটাচমেন্ট এর ব্যবস্থা করেছিল চল সেগুলো এক নজরে দেখে নেইঃ

1. BITAC, Sagoraika Rd, Chittagong
2. BITAC, Tejgaon, Dhaka
3. Saleh Steel Industries LTD, Nasirabad, Chittagong

4. Unilever Bangladesh LTD, Kalurghat, Chittagong
5. Globe Soft Drinks LTD, Begumganj, Noakhali
6. Energypac Engineering LTD, Ashulia, Dhaka
7. Milnars Pumps LTD, Tongi, Gazipur

8. KSRM, Kumira, Chittagong
9. Pragoti Industries LTD, Barbkunda, Chittagong
10. RPCL, Raozan, Chittagong

11. Eastern Cables LTD, Patenga, Chittagong
12. Gazi Wires LTD, Kalurghat, Chittagong
13. Industrial Hand Protection LTD, CEPZ, Chittagong
14. Western Marine Shipyard LTD, Patiya, Chittagong

15. BSRM Steel LTD, Fouzdarhat, Chittagong
16. Bangladesh Railway, Eastern Zone, CRB, Chittagong
17. ECPV Chittagong LTD, Patiya, Chittagong

18. Aftab Automobiles LTD, Fouzdarhat, Chittagong
19. Baizid Steel Industries LTD, Bayazid, Chittagong
20. GlaxoSmithKline, Salimpur, Chittagong

21. BSRM Steel LTD, Bayazid, Chittagong
22. National Tubes LTD, Tongi, Gazipur
23. Runner Automobiles LTD, Valuka, Mymensingh

তো বুঝতেই পারছো দেশসেরা সব ইন্ডাষ্ট্রিতে গ্র্যাজুয়েশনের আগেই তাদের সাথে একটা সখ্যতা গড়ে তোলার অসামান্য এক সুযোগ রয়েছে এখানে।

এছাড়াও এখানে ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীদের তার পছন্দের টপিক নিয়ে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রজেক্ট বা রিসার্চ করতে হয় যার অর্থায়ন বা ফান্ডিং ডিপার্টমেন্ট থেকেই দেয়া হয়। যার ফলে একইসাথে যেমন ওই শিক্ষার্থীর তার পছন্দের টপিক নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ হয় তেমনি বাস্তব জীবনের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রব্লেমগুলো কীভাবে সমাধান করা যায় সে সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে।

তো এতক্ষণতো শুধু ডিপার্টমেন্টের একডেমিক কার্যক্রম নিয়েই কথা বললাম। আমাদের ডিপার্টমেন্ট কিন্তু শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। প্রতি বছর ডিপার্টমেন্ট থেকে নানা ধরণের প্রোগ্রামও আয়োজন করা হয়ে থাকে।

এর মধ্যে অন্যতম বড় প্রোগ্রাম হল Internation Conference on Mechanical Engineering and Renewable Energy (ICMERE). আন্তর্জাতিক এ কনফারেন্সটি আমাদের ডিপার্টমেন্ট দুই বছর পর পর আয়োজন করে থাকে যা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর আয়োজিত দেশের অন্যতম সেরা কনফারেন্স। যেটা কিনা আমাদের ছাত্রদের মানসম্মত প্রজেক্ট বা গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার বিশাল এক মঞ্চ। শুধু আমাদের ছাত্র কেন? দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাও তাদের গবেষণাপত্র তুলে ধরেন এখানে।

এই যেমন ICMERE-2017 মাত্রই কিছুদিন আগে শেষ হল (http://www.cuet.ac.bd/icmerecomplt17.php)। বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট সহ দেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

আর দেশের বাইরে থেকেও এসেছিলেন খ্যাতনামা সব প্রফেসর যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঃ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট মিশিগান ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর ড. আলমগীর চৌধুরী, ভারতের আই আই টি দিল্লি এর মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টের হেড প্রফেসর ড. সুবির কুমার সাহা, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া এর প্রফেসর ড. রইসুদ্দিন খান এবং জাপানের সাগা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. আকিও মিয়ারা (http://www.cuet.ac.bd/icmere/speaker.php)।

এ কনফারেন্সটি যে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য কত বড় আনন্দের উপলক্ষ্য ছিল তা জানতে চাইলে আমাদের চতুর্থ বর্ষের ভাইয়া আপুদের প্রোফাইল গুলোতে একটু ঢু মারতে পার।
পড়াশোনার বাইরেও খেলাধুলা, কালচারাল প্রোগ্রাম সবদিকেই কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্ট অলরাউন্ডার।

ক্যম্পাসে শুধুমাত্র আমাদের ডিপার্টমেন্টই প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে মেকানিকাল ডে, মেকানিকাল জুনিয়র রিসিপসন, মেকানিকাল প্রিমিয়ার লিগ (ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট), মেকানিকাল ফুটবল লিগ সহ আরও নানা ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকে।

যার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে ক্রিকেট ও ফুটবল লীগ ক্যাম্পাসে একমাত্র মেকানিকালই প্রতিবছর আয়োজন করে থাকে যা অন্য অন্য কোন ডিপার্টমেন্ট এখনও করতে পারে নি। আর মেকানিকাল ডে? দুই দিনব্যাপী এ প্রোগ্রামতো তর্ক সাপেক্ষে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় প্রোগ্রাম হিসেবে স্বীকৃত। ডিপার্টমেন্টের ঈদ খ্যাত এ প্রোগ্রাম আমাদের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সব্বাইকে এক সূঁতোয় বেঁধে ফেলে।

যার ফলে লেখাপড়া আর গবেষণার পাশাপাশি খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ থাকে। ফলে এসকল বিষয় যেমন বিভিন্ন খেলা, প্রোগ্রাম অর্গানাইজ, ইভেন্ট মেনেজমেন্ট, নাচ, গান, অভিনয়, মাইম ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে মেকানিকালের ছেলেমেয়েদের রয়েছে আলাদা সুনাম।

এছাড়াও আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলো যেমন সাংস্কৃতিক (জয়ধ্বনি, ডিবেটিং সোসাইটি), গবেষণাধর্মী (RMA, ASRRO), রাজনৈতিক (ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন) এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোতেও (গ্রিন ফর পিস, ক্যারিয়ার ক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ফিল্ম সোসাইটি, স্পোর্টস ক্লাব ও অন্যান্য) মেকানিকালের ছেলে মেয়েদের রয়েছে স্বচ্ছন্দ উপস্থিতি।

আচ্ছা এতক্ষণ তো আমাদের ক্যাম্পাস লাইফ নিয়েই সব কথা বললাম। তো গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করার পর কি করবে বা কি কি করার সুযোগ আছে সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই এতক্ষণে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছো। তো চল এখন আমাদের ক্যারিয়ার গড়ার কি কি ক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

সাবলিল ও স্বচ্ছন্দ ক্যারিয়ার গড়ার প্রথম সুযোগটা তোমাকে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট থেকেই অফার করা হবে। প্রতি ব্যাচ থেকেই ভাল ফলাফল অর্জনকারী ছেলে মেয়েরা ডিপার্টমেন্টে লেকচারার হিসেবে জয়েন করার সুযোগ পেয়ে থাকে। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইলে এর বাইরেও বিভিন্ন পাব্লিক ও প্রাইভেট ভার্সিটি এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট গুলোতে লেকচারার পদে জয়েন করা যায়।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রি ও কোম্পানিগুলোতে রয়েছে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ। গার্মেন্টস কোম্পানি, ফুড প্রসেসিং কোম্পানি, বেভারেজ কোম্পানি, ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোবাইলস ইন্ডাষ্ট্রি, রড-সিমেন্ট কোম্পানি থেকে শুরু করে পাওয়ার প্ল্যান্ট পর্যন্ত এককথায় যেখানেই মেশিন সেখানেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

এর বাইরে পিডিবি, পি ডাব্লিউ ডি এর মত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ব ও প্রাইভেট ব্যাংক গুলোতেও প্রতিনিয়ত মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়। দেশের বাইরেও ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক সুযোগ। এ বিষয়ে তোমরা একটু কষ্ট করে গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি তোমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিবেন।
আর একটি বিষয়, চুয়েটে মেকানিকাল ডিপার্টমেন্ট আগামী বছর ৫০ বছরে পদার্পন করবে।

এই সুবিশাল সময়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করে গেছেন দেশ ও বিশ্ব বরেণ্য অনেক অনেক খ্যাতনামা ব্যাক্তিবর্গ। যারা সকলেই নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে নিজের ও চুয়েটের নাম আলাদাভাবে স্মরণীয় করে রেখেছেন। যার কারণে আমাদের ডিপার্টমেন্টের এলামনাই পরিবারও যথেষ্ট শক্তিশালী। ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তাঁরা যথাসম্ভব ফ্রেশার গ্র্যাজুয়েটদের সাহায্য সহযোগীতা করে থাকেন যা কিনা আমাদের চলার পথকে আরও একটু মসৃণ করতে সাহায্য করে।

এই বিশাল এলামনাই এর একটা ছোট্ট লিস্ট যাদের লিঙ্কড-ইন আইডি আছে তারা এই লিংক থেকে দেখে নিতে পার https://www.linkedin.com/school/870187/alumni/…

শেষ করার আগে আর একটি কথা বলতে চাই, চুয়েটের এই ডিপার্টমেন্টে ভাললাগার অনেক অনেক উপকরণ রয়েছে। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশী যে ব্যাপারটা ভাল লাগে তা হল, এখানে পুরো ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেকটা প্রাণীই একটি পরিবারের অংশের মত বাস করে।

এই পরিবারের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক যে ভালবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ তুমি দেখতে পাবে তা তোমাকে অবাক করতে বাধ্য। এখানে সবাই সকলের বন্ধু। সুখ-দুঃক্ষ, হাসি-কান্না মিলিয়ে চুয়েট পরিবারের ভেতর আমরা আরও একটি পরিবার। পরিবারটির নাম “মেকানিকাল পরিবার”। 😊

অনেক সময় নিয়ে অনেক কষ্ট করে তোমাদের জন্য এ লেখাটি তৈরী করেছি। যদি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ে থাক তাহলে তোমাকে অভিনন্দন। আর যদি মনে কর লেখাটি পড়ে তোমার মধ্যে ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে একটু হলেও আগ্রহ জন্মেছে তবে তোমাদের কাছে আমার ছোট্ট একটি অনুরোধ। বাসা থেকে আশার সময় সবাই তোমাদের এ বড় ভাইয়ের জন্য মায়ের হাতের রান্না করা সামান্য কিছু খাবার নিয়ে আসবে। অনেকদিন হলো বাসার খাবার খাই না 😞

পরিশেষে সবুজের এ সমারোহে ১৭ কে জানাই স্বাগতম। আশা করি তোমাদের পদচারণায় ভালবাসা আর আবেগে মোড়ানো এ ডিপার্টমেন্ট নতুন মাত্রা পাবে। পরিবারের নতুন সদস্যদের বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

Faisal Aziz
Student of 4th year
Department of Mechanical Engineering
Chittagong University of Engineering and Technology.
President
Andromeda Space and Robotics Research Organization (ASRRO)