আজ ৬ই অক্টোবর। আজকের দিনে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া, বাংলাদেশের মাটি জলে বড় হওয়া, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা সবচেয়ে বড় পদার্থবিদ, গবেষক মেঘনাদ সাহার জন্মদিন।

মেঘনাদ সাহার নামে এস্ট্রোফিজিক্সে Saha equation নামে একটি বিখ্যাত সমীকরণ আছে যার মাধ্যমে নক্ষত্রের তাপমাত্রাকে তাদের মৌলিক আয়নকরণ অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে বিজ্ঞানীরা দূরের নক্ষত্রগুলোকে তাপমাত্রার সাপেক্ষে স্পেক্ট্রাল ক্লাসিফিকেশন করে থাকেন। শুভ জন্মদিন!

আমার প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের কতজন মানুষ মেঘনাদ সাহা সম্মন্ধে জানে? কতজন জানে যে তিনি বাংলাদেশের কালিয়াকৈরে এক গরিব পরিবারে জন্মে ছিলেন?

তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের ৮ সন্তানের পঞ্চম। মেঘনাদ সাহার বড় ভাই স্কুলে অকৃতকার্য্য হওয়ায় বাবা ঠিক করল এদের স্কুলে পাঠানো মানে টাকার অপচয়।

তাই বাবা মেঘনাদ সাহাকে তাদের মুদি দোকানে কাজ করতে লাগিয়ে দেন। কিন্তু মেঘনাদের মেধা ও প্রতিভা গ্রামের এক দয়ালু ডাক্তারের নজরে আসে এবং মেঘনাদ সাহাকে একটি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন।

নিচু বর্ণের হওয়ায় তার ক্লাসের অনেক সহপাঠীই তার সাথে একই বেঞ্চে বসতে বা খেতে চাইতো না। কিন্তু উঁচু মনের মানুষ মেঘনাদ সাহা এইসব গায়ে মাখতেন না।

তিনি পড়াশুনার জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়াটাকেই অনেক বড় পাওয়া মনে করে ওসব কষ্টকে নস্যি ভেবে গায়ে মাখতেন না।

কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগকেও সাহা কঠিন করে তোলেন। ১৯০০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যখন বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দুইভাগ করার প্রস্তাব দিলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পরে।

এরই মধ্যে লোকাল গভর্নর মেঘনাদ সাহার স্কুল পরিদর্শনে যায় সেখানে মেঘনাদ সাহা বাংলাকে দুইভাগে বিভক্ত করার বিরুদ্ধে বলায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করে।

সেবারও তিনি আরেকজন ভালো মানুষের সুনজরে পরেন। এক প্রিন্সিপাল তার মেধার পরিচয় পেয়ে তাকে ওখানে ভর্তি করান। এই সুযোগকে সাহা সত্যি সত্যি কাজে লাগায়।

সেখানে অনেকগুলো সাবজেক্ট যেমন অ্যাস্ট্রোনমি কেমিস্ট্রিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবার নজর কারেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।

কতজন জানে যে বিশ্বখ্যাত মেঘনাদ সাহা ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন? ঢাকা কলেজ কি মনে রেখেছে? তার নামে কিছু কি সেখানে আছে? মেঘনাদ সাহা সেখান থেকে পাশ করে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে যান যেখানে গিয়ে সত্যেন বোসের সাথে বন্ধুত্ব হয়।

১৯২৪ সালে মেঘনাদ সাহা যখন কলকাতা থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসেন তখন বন্ধু সত্যেন বোসের জন্য সমসাময়িক কয়েকটি আর্টিকেল নিয়ে আসেন।

সেই আর্টিকেলগুলো থেকেই সত্যেন বোস কোয়ান্টাম তত্বের উপর কাজের উপাদান পান।

মেঘনাদ সাহার এই গল্পটি কেন আমাদের স্কুলের পাঠ্য বইয়ে নাই? থাকলে আমাদের ছেলেয়েরা জানতো এই মাটিতে জন্মে, শত দারিদ্র সত্বেও মানুষ বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী হতে পারে।

আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে “আমরা পারি” এই বীজটা বপন করা খুবই জরুরি।

– কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
ঢাবি