অনেকেই আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সবকিছু ডিটেইলসে জানতে চাচ্ছিলে, তাদের জন্য নিচের লিখাটি-

আপনি কি ম্যাথমেটিক্যাল অথচ পিউর (ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি) নয় এমন সাবজেক্টে অনার্স করতে চান, তবে আপনার জন্যই হয়তো আবহাওয়া বিজ্ঞান সাবজেক্টটি।

বাংলাদেশে শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ২০২০-২১ সেশন থেকে অনার্স করানো হচ্ছে এই সাবজেক্টে। তবে নতুন সাবজেক্ট হওয়ায় অনেকেরই এই সাবজেক্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

আসুন জেনে নেই আবহাওয়া বিজ্ঞান সাবজেক্টের আদ্যোপান্তঃ-

বংলাদেশে কেন এই সাবজেক্ট?

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ন্যায় দূ্র্যোগেই বছরে প্রায় দেড়শ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যেখানে সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

তাছাড়া আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে রয়েছে একটি দেশের অর্থনীতির যোগসূত্র। সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে যেকোনো দেশের অর্থনীতি পড়তে পারে হুমকির মুখে।

এছাড়াও সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০ টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বংলাদেশের ন্যায় প্রাকৃতিক দূর্যোগপ্রবণ দেশে এই সাবজেক্টের গুরুত্ব অপরিসীম।

ডিপার্টমেন্টে যে সকল ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে রয়েছে প্রযুক্তিগত সুব্যবস্থাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ, হাই পারফর্মেন্স কম্পিউটার সুবিধা, গবেষণাগার, উন্নতমানের ইনস্ট্রুমেন্টসমৃদ্ধ ফিজিক্স ল্যাব, ফ্লুইড ল্যাব, অ্যাটমোসফিরিক অবজারবেটরি ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরী।

তাছাড়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিতকরণে আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের নতুন সংযোজন “স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন।”

আবহাওয়াবিদ-

একজন আবহাওয়াবিদ আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে আমাদেরকে জানান দেন। গুরুত্বপূর্ণ এ পেশায় নিয়োজিতরা ভূমি, বায়ু ও আবহাওয়া পরিমণ্ডল থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে আবহাওয়ার নির্দিষ্ট গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নিয়মিত গবেষণা করেন।

একজন আবহাওয়াবিদ কী ধরনের কাজ করেন?

একজন আবহাওয়াবিদের কাজ দুই ধরনের হতে পারে – পূর্বাভাস ও গবেষণা।

পূর্বাভাসের কাজে স্যাটেলাইট চিত্র, রিমোট সেন্সর, রাডার ও আবহাওয়া স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা;

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে বায়ুচাপ, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয় পরিমাপ করা;
সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করা;

বিভিন্ন কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া;

পূর্বাভাসের কাজে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন গাণিতিক ও কম্পিউটার মডেল তৈরি করা বা আগের মডেলের উন্নয়ন ঘটানো;

জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা ও রেকর্ড রাখা।

একজন আবহাওয়াবিদ যে সকল ক্ষেত্রে গবেষণা করতে পারেন-

১) হাইড্রোমিটিওরোলজি
২) অ্যাগ্রোমিটিওরোলজি
৩) ট্রপিক্যালমিটিওরোলজি
৪) নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন সিস্টেম
৫) রাডার এন্ড স্যাটেলাইট মিটিওরোলজি
৬) ক্ল্যাইমেটোলোজি এন্ড ক্ল্যাইমেট চেইঞ্জ
৭) এভিয়েশন মিটিওরোলজি

একজন আবহাওয়াবিদের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে এন্ট্রি লেভেলে সাধারণত সহকারী আবহাওয়াবিদ নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে।

পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও গবেষক হিসাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

পূর্বাভাসের কাজে প্রাইভেট সেক্টরে, যেমন বিমান সংস্থা, এনভায়রনমেন্টাল কনসালটেন্সি সেবাদানকারী সংস্থা বা রেডিও-টেলিভিশন চ্যানেলে আবহাওয়াবিদ হিসাবে যোগদান করা সম্ভব।

তাছাড়া বাহিরে স্কলারশিপের ক্ষেত্রেও রয়েছে অবর্নণীয় সুযোগ।

এছাড়াও বিসিএস, ব্যাংক ও সরকারী ১ম, ২য় শ্রেনীর সব জায়গায় আবেদন করতে পারবেন।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২” উৎক্ষেপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

যার কাজ হবে মূলত আবহাওয়া বিষয়ক। সুতরাং এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে “আবহাওয়া বিজ্ঞান” সাবজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের কাছে যে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, SPARRSO ছাড়াও দেশ-বিদেশের অনেক বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- University of Reading (UK), University of Nebraska-Lincoln (USA), University of Rajasthan (India), Tribhuvan University (Nepal) এর সাথে সহযোগিতায় নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহার অপরিহার্য।

তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহারের দ্বারা পূর্বাভাস ও গবেষণার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে দেশ গঠনের দক্ষ আবহাওয়াবিদ তৈরির দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগ এগিয়ে চলছে নিরন্তর।

লেখা ও সম্পাদনায়
মোঃ শরীফুল ইসলাম সীমান্ত
ফাওজিয়া আনজুম ইতু
মুহাম্মদ ফাহিমুল ইসলাম

-আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়