‘নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’-এদেশে খুবই নতুন একটি নাম ইঞ্জিনিয়ারিং জগতে।অত্যন্ত সহজ করে বলতে গেলে-“যে সব বিক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে তারাই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর যে শাখা এ সব নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ শক্তি নিয়ে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করে সেটাই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং”.নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এককথায় বলা যায়:”It is the most integrated of the engineering discipline.” বিজ্ঞানের তুলনামূলক নতুন এবং জটিলতম বিষয়গুলো জানতে হয় এ বিষয়টি পড়ার জন্য।কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং Partial Differential Equation হচ্ছে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভিত্তিস্বরুপ।নিজেদের সেক্টর সম্পর্কে জানার পাশাপাশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের জানতে হয় প্রোগ্রামিং(MATLAB এর মাধ্যমে রিঅ্যাাক্টর মডেলিং ও সিমুলেশনের জন্য),ইলেক্ট্রিকাল সিগন্যাল এন্ড মিসারমেন্ট(SCADA সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের জন্য যা একটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রাণস্বরূপ),ফ্লুইড ডাইনামিকস(একটি কনভেনশনাল পাওয়ার প্ল্যান্ট যথাযথ পরিচালনার জন্য),ম্যাটেরিয়াল সাইন্স(কোন পদার্থ নিউট্রনের আঘাতে কতটুকু শক্তি উতপন্নে সক্ষম তা জানার জন্য)।এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ কেন একে আমরা ‘integrated engineering discipline’ বলছি।
এবার আসি কেন ভবিষ্যতে শক্তি উতপাদনে কেন বারবার এটমিক এনার্জির দিকেই ফিরে আসা লাগবে-তথাকথিত পরিবেশবাদী,যারা এই এটমিক এনার্জির ঘোর বিরোধী তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে অন্য যেকোন প্রকার শক্তির তুলনায় এই শক্তি অনেক বেশি cost effective.তারা নিউক্লিয়ারের বিকল্প হিসেবে যে সোলার এবং উইন্ডমিলের পরামর্শ দেয় তা ইতিমধ্যেই শক্তির এক ব্যর্থ উৎস হিসেবে অনেক দেশে প্রমাণিত হয়েছে।আর পৃথিবীকে উষ্ণায়ণ থেকে বাঁচাতে হলে যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে যে যেকোন মূল্যে বেরিয়ে আসতে হবে-এটা নিয়েও দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। বিভিন্ন দেশ ঝুঁকছে এখন নিউক্লিয়ারের দিকে,অনেকে বলতে পারে কিছু কিছু দেশ তো নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বন্ধ করে দিচ্ছে-তাদের জন্য বলতে চাই জাপান যেখানে ফুকুশিমা দূর্ঘটনার পর সবগুলো রিঅ্যাক্টর অফ করে দিয়েছিল,তারা পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মেলাতে না পেরে এখন আবার এগুলো থেকে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেট করা শুরু করে দিয়েছে আর বিশ্বজুড়ে নিউক্লিয়ার এনার্জির বিস্তার মানেই তো নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের লাগামহীন চাহিদা
এবার আসি চাকরির ক্ষেত্রের বেলায়।ভারতে ৬টি কোম্পানী নিউক্লিয়ার পাওয়ারের ক্ষেত্রে কাজ করছে-ইউরেনিয়াম মাইনিং থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন পর্যন্ত( i.e.Bhabani, Nuclear Power Corporation of India).অনুরুপভাবে কানাডায় ৯টি,চীনের ৪টি,জার্মানির ৪টি,অস্ট্রেলিয়ার ৪টি,ফ্রান্সের ৬টি,রাশিয়ার ১২ টি,ফিনল্যান্ডের ৩টি,কোরিয়ার ৪টি,সুইডেনের ৪টি,সুইজারল্যান্ডের ৪টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ টি কোম্পানি কাজ করছে এ সেক্টরে।এছাড়াও যুক্তরাজ্য, আজারবাইজান, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, ইটালি, কাজাখিস্তান, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, সাউথ আফ্রিকা, স্পেন, ইউক্রেন, উজবেকিস্থানে নিউক্লিয়ার সেক্টরে কাজ করছে এমন কোম্পানি রয়েছে ।বাংলাদেশের অনেক নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে জাপান,জার্মানি ও কানাডার নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোতে কৃতিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।সমগ্র বিশ্বেই এই সাবজেক্টটি পড়ানো হয় খুবই কম জায়গায়-তাই বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য চাকরির এক বড় ক্ষেত্র হতে পারে এসব নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি।আর দেশের চাহিদার কথা তো সকলের জানাই-পাবনার রুপপুরে যে বিপুল পরিমাণ লোকবল দরকার হবে তা যোগান দেওয়ার সামর্থ্য করে উঠতে বাংলাদেশকে এখনো বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশের এটমিক এনার্জি কমিশনে আছে একটি 3MW এর রিসার্চ রিঅ্যাক্টর ।এখান থেকেই কেমোথেরাপি,রেডিওথেরাপিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন আইসোটোপ প্রক্রিয়াজাত হয়-যে ব্যবস্থা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই।এখানে লাগে বেশকিছু নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার।এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতালে সঠিকভাবে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রয়োগ ঘটানোর জন্যও অপরিহার্য এই নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার।মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এবং ফুড প্রসেসিং যন্ত্রপাতির Sterilization(জীবাণুমুক্তকরণ) এর জন্য ব্যবহৃত হয় রেডিয়েশন-আর রেডিয়েশন মানেই আমরা  এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে এই রেডিয়েশন।
ডিপার্টমেন্ট চালু হওয়ার প্রথম বছরেই MIST-NSE চালু করে MSc ও PhD প্রোগ্রাম ।এই MSc ও PhD প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচ ভর্তির সময়ই পাওয়া যায় আশাতীত সাড়া।এই দুইটি প্রোগ্রাম চালুর ফলে MIST এর NSE এর শিক্ষার্থীরা যে শুধু ভার্সিটি থেকেই তাদের পোস্টগ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের নিশ্চয়তা পেল তা নয়-নি:সন্দেহে ল্যাব সুবিধাও অনেক বেড়ে যাবে এর .আমরা যদি MIST এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের ‘Research’ ফিল্ডটাতে যাই তাহলে দেখবো Energy System and Nuclear Science Research Center নামে একটি অপশন খোলা হয়েছে-শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের জন্য হবে এক বিরাট পাওয়া।
Source : Department Of Nuclear Science And Engineering , MIST
#Mention #Share
পরবর্তী সাবজেক্ট রিভিউ এবং আরো সাবজেক্ট রিভিউ+বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত তথ্য জানতে লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকো ইঞ্জিনিয়ারস ডায়েরী – Engineers Diary