হিব্রু ভাষায় ‘মোসাদ’ শব্দের অর্থ ‘ইনস্টিটিউট’ বা প্রতিষ্ঠান। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার নাম ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশন্স’ (Institute for Intelligence and Special Operations)।
মোসাদকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা। এটি একটি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা।।
ইতিহাস
মোসাদের জন্ম ডিসেম্বর ১৩, ১৯৪৮ সালে; ইসরায়েলের কথিত প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গোরিয়নের হাতে।১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট গঠনের ১৯ মাস পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন মোসাদ সৃষ্টি করলেও মোসাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয় ।
ডেভিড বেন গোরিয়ন ছিল জায়নবাদের কট্টর হোতা এবং ইসরায়েলে হিব্রু ভাষার প্রবর্তক। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে পোলিশ ইহুদি ডেভিড গোরিয়নতৎকালীন উসমানীয় শহর জেরুজালেমে ১৯০৬ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে বেন গোরিয়ন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রুভেন সিলোহাকে প্রথম পরিচালক পদে নিযুক্ত করে মোসাদ গড়ে তোলার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। রুভেন সিলোহা ১৯৪৮ সালে ‘আরব লিগ’-এর সম্মিলিত ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা হস্তগত করতে সক্ষম হন, যা ওই সময়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রটিকে জন্মলগ্নের প্রথম ধাক্কা থেকে রক্ষা করেছিল।
মোসাদ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে নাৎ সি তথা জার্মানি হিটলারের গণহত্যার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডলফ আইখম্যানকে অপহরণ করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা এবং বিচারের মুখোমুখি করানোর পর থেকে। শান্তিকালীন ওই ধরনের অভিযান ছিল অবিশ্বাস্য, যা আজও গোয়েন্দাকাহিনির অন্যতম শীর্ষ অভিযান।
১৯৪৯ সালে মোসাদের জন্ম হলেও ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সংস্হাটার প্রধানের কথা। ১৯৯৬ সালে যখন সাবতাই কে অপসারন করে ডেনি ইয়াতমকে নিয়োগ দেওয়া হয় এক ঘোষণার মাধ্যমে, তখন প্রথমবারের মত বিশ্ববাসী জানতে পারে এই সংস্হাটার প্রধান কে।
১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ২৮তম কম্যুনিস্ট সম্মেলনে যখন ক্রুশ্চেব এর এক গোপন মিটিংয়ে ‘স্টালিনকে’ অভিযুক্ত ও অস্বীকার করে নিজেই প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে, ঐ বক্তব্যের এক কপি মোসাদ সিআইএর হাতে দিয়ে দেয়। এই প্রথম সিআইএ মোসাদের কার্যক্রম উপলব্ধি করে যাতে সিআইএ অবিভূত হয়। কারণ সিআইএর মত সংস্হাটিও এই রকম একটা সেন্সেটিভ সংবাদ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছিল।।
সাধারন পরিচয়
প্রতিষ্ঠাকাল :-১৩ই ডিসেম্বর ,১৯৪৯ (দ্য সেন্ট্রাল ইন্সিটিটিউট ফর করডিনেসন)
সদর দপ্তর :-তেল আবিব,ইসরায়েল
কর্মীর সংখ্যা:- প্রায় ৮০০০
এজেন্ট সংখ্যা:- প্রায় ১২০০
সংস্থার নির্বাহী কর্মকর্তা:- ইয়োসি চয়েন,পরিচালক
মাতৃ সংস্থা:- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
নির্বাহী কার্যক্রম
মোসাদের কাজ চালানোর জন্য ৮ টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি হলো:-
•কালেকশন ডিপার্টমেন্ট: এটি মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে ডিপ্লোম্যাট,ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে
*
পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লিয়াজোঁ ডিপার্টমেন্ট: এ গ্রুপের কাজ প্রতিটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা ।
স্পেশাল অপারেশন ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপকে গুপ্তহত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়।
*
ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপ প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মনস্তাত্তি্বক যুদ্ধের জন্য প্রচার চালায় ও শত্রু শিবিরে ভুল খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
*
•রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট: যাবতীয় গোয়েন্দা গবেষণা ও ‘কাউন্টার ইনটেলিজেন্স’-এর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধির নিরন্তর কাজ করে চলেন এই গ্রুপের গবেষকরা।
পরিচালনা পর্ষদ
* রিউভেন শিলোয়াহ : দায়িত্বকাল-১৯৫১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টম্বর মোসাদ প্রতিষ্ঠার আগে তিনি দ্য সেন্ট্রাল ইন্সিটিটিউট ফর করডিনেসন-এর ডিরেক্টর ছিলেন।
*
* ইসার হারেল : দায়িত্বকাল- ১৯৫২ সালের ২২ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত।
*
* মীর অমিত : দায়িত্বকাল- ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত।
*
* ভি যামির : দায়িত্বকাল- ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত।
*
* ঈঝাক হোফি : দায়িত্বকাল- ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত।
*
* নাহুম আদমনি : দায়িত্বকাল- ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত।
*
* শাবতাই শাভিত : দায়িত্বকাল- ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।
*
* দানি ইয়াতুম : দায়িত্বকাল- ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত।
*
* ইফরাইম হেলভি : দায়িত্বকাল- ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত।
*
* মেয়ার দাগান : দায়িত্বকাল- ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত।
*
* তামির পারদো : দায়িত্বকাল- ২০১১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত।
মোসাদের লক্ষ্য
শত্রুক্ পুরোপুরি দমন করা।
অন্যদেশে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে নিজেদের তথ্যদাতা নিয়োগ করা।
ইসরায়েল জন্য সুবিধাজনক নীতি প্রনয়নে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোকে বাধ্য করা।
অস্থিরতা তৈরী ও লিজেদের পছন্দমতো লোককে ক্ষমতায় বসানো।
মোসাদের উল্লেযোগ্য কর্মকৌশল
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
গুপ্ত মিশন পরিচালনা করা।
ইহুদিদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা।
সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা।
মোসাদ গোয়েন্দা , এজেন্ট, কর্মী কে বা কারা?
মোসাদ গোয়েন্দা কারা, এজেন্ট কারা এসব সম্পর্কে জানা যায় নি। জানায় না তারা যদি চাকরি শেষে নিজ থেকে মুখ না খোলেন। তবে মোসাদের উল্লেখিত অভিযান গুলোর মধ্যে অংশগ্রহন অনেক এজেন্ট ও গোয়েন্দার নাম দেখতে পাবো। চাইলে তাদের জীবনি ঘাটলে জানা তারের যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা, ক্ষিপ্রতা। তাহলে কিছুটা আঁচ করা যাবে মোসাদের কর্মীদের সম্পর্কে। খুব সম্ভবত মোসাদের কর্মী হওয়ার জন্য ইহুদী ধর্মের হওয়া লাগবে।।তাদের একটি এজেন্ট শাসিত গ্রাম যা দেখে বোঝার উপায় নাই।
সুদানের যে গ্রাম চালাতো ইসরায়েলি মোসাদ এজেন্টরা।।
সুদানের মরুভূমিতে লোহিত সাগরের তীরের একটি ছোট্ট পর্যটন গ্রাম অ্যারোস। সেখানে ডাইভিং আর মরুভূমিতে আনন্দ করার নানা উপকরণ ছিল।এই রিসোর্টটি আসলে ইসরায়েলি গুপ্তচরদের একটি গ্রাম।
রিসোর্টের বিজ্ঞাপনে সাগরের তীরে চমৎকার সাজানো সৈকতের পাশাপাশি যুগলের স্কুবা করার বা মাছ ধরার ছবি। লেখা রয়েছে, এখান থেকে স্বর্গের দেখা মেলে। যেখানে প্রায়ই বিদেশি অতিথিরা বেড়াতেও আসেন।
কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই আসলে সাজানো। এটি আসলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি ফ্রন্ট বেজ।
মোসাদের সকল কার্যক্রমই ছিলো ক্ষতিকর মনে হয় এমন দেশের বিরুদ্ধে লেগে পড়া, অভিযান চালানো। তা আবার যেনতেন অভিযান নয়। একদম কুপোকাত করার মতোই অভিযান।
কিছু দেশের বিরুদ্ধে অভিযানগুলোর কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
ফ্রান্স:-
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের মিরাজ ফাইভ জেড বিমানের প্রযুক্তিগত দিকের বিভিন্ন দলিল চুরি করে নেয় মোসাদ। পরে ইসরাইল ওই প্রযুক্তিকে আরো উন্নত ও যেকোনো আবহাওয়ার উপযোগি করে জে৭৯ নামের ইলেক্ট্রিক টার্বো।
ইতালি
ইসরাইলের পারমাণবিক প্রোগ্রামের গোপন তথ্য বৃটিশে পাচার করার কারণে ১৯৮৬ সালে ইতালির রাজধানী রোম থেকে ইসরাইল নাগরিক মোডাচাই ভ্যানুনুকে অপহরণ করে ইসরাইল নিয়ে আসে মোসাদ। পরে তাকে জেলে ঢুকানো হয়।।
জার্মানি
১৯৭২ সালে মোসাদ জার্মানীর বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির কাছে পত্র বোমা পাঠিয়েছিল।
অপারেশন প্লামব্যাট।
চিলি:-
১৯৭৬ সালের ২১ সেপ্টম্বর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কুটনৈতিক এবং চিলির প্রাক্তন মন্ত্রী অরল্যান্ডো লেটেলারকে ওয়াশিংটন ডিসিতে গাড়ি বোমায় হত্যা করে চিলির ডিআইএনএ’র এজেন্টরা। পরবর্তীতে জানা যায়, এটি ছিল মোসাদের একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
লিবিয়া
গাদ্দাফীর ইসরায়েল বিরোধী অপারেশন এবং এক মোসাদ এজেন্টের তৎপরতা।
ইরাক:-
১.১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইরাকের অসরিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর’র (নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদনের কেন্দ্রে হামলা
২.কানাডার বিজ্ঞানী গিরাল্ড বুল বিভিন্ন দেশে স্যাটেলাইট গবেষণায় কাজ করতেন। ইরাক স্যাটেলাইট উন্নয়ন প্রোগ্রাম ‘প্রোজেক্ট ব্যবিলন’-এর ডিজাইন করলে তাকে ১৯৯০ সালের ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে তার বাড়ির বাইরে গুলি করে হত্যা করে মোসাদ।
৩.মিগ-২১ বিমান চুরি মোসাদের।
অপারেশন ডায়মন্ড: মোসাদের বিমান চুরির অবিশ্বাস্য এক অভিযান।
মিসর & সিরিয়া
অপারেশন:-সিক্স-ডে ওয়ার
মিশর ও সিরিয়ায় মোসাদ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও লিঙ্ক স্থাপন করেছিল। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ইসরাইলের বিপক্ষে ছিল
মিসর , সিরিয়া, জর্ডান ।এই যুদ্ধটি সিক্স-ডে ওয়ার নামে পরিচিত।
অপারেশন :-বালমাস সিক্স
১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই মিশরের ছোট দ্বীপ গ্রিন আয়ল্যান্ডে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স আকস্মিক হামলা চালায় মোসাদ ।এই অভিযানের নাম দেয় অপারেশন বালমাস সিক্স।
ফিলিস্তিন
মোসাদ স্পেশাল দল গঠন করে অপারেশান রথ অফ গড ঘোষণা করে। পুরো ইউরোপ জুড়ে ব্লাক সেপ্টেমবারগ্রুপকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়।
ফিলিস্তিনিদের রক্তাক্ত ইতিহাসে ১৪ই মে, ২০১৮ ছিল আরেকটি বিষাদময় দিন। যুক্তরাষ্ট্র সেদিন জেরুসালেমে তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করছিল। আর সেদিন গাজা পরিণত হয়েছিল এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের হিসেব অনুযায়ী ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে সেদিন গাজায় নিহত হয় ৫৮ জন। আহত হয় আরও প্রায় তিন হাজার। ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর এক দিনে এত বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির ঘটনা আর ঘটেনি।
সালামেহ হত্যা।
সিরিয়া
যুদ্ধবিমান ভূপতিত করার জবাবে সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা। সিরিয়ার বিমান ঘাঁটির ওপর গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির একটি যুদ্ধবিমানকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ভূপতিত করার পর ওই বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
সিরিয়া এবং তার মিত্র রাশিয়া বলছে, সিরিয়ার ভেতরে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।মি. হ্যানসন বলছেন, এটা খুবই সম্ভব যে হেযবোল্লাহ এবং প্রেসিডেন্ট আসাদের অস্ত্র সম্ভারকে টার্গেট করেছে ইসরায়েল।
সিরিয়ান রকেট বিজ্ঞানী ড. আজিজ আসবার: মোসাদের গুপ্তহত্যার আরেকজন শিকার
অপারেশন অর্চার্ড
সিরিয়ার পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংসে ইসরায়েলি অভিযান।
মোসাদের কা্র্যক্রম প্রক্রিয়ার একাংশ:
মোসাদের আরব বিশ্বে গুপ্তহত্যার কৌশল ।।
মোসাদ প্রথমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইসরায়েলের বৃহত্তম গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে হত্যার টার্গেট নির্ধারণ করে। যাকে হত্যার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, দ্বিতীয় ধাপে এসে তার সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পর তা মূল্যায়ন করে মোসাদ। মূল্যায়নকৃত প্রতিবেদন ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের নিয়ে গঠিত ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস কমিটির প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কমিটিই সুপারিশ হাজির করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা যায় কিনা। আল জাজিজার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ২/১ জনকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। গুপ্তহত্যা পরিচালনায় গঠিত মোসাদের বিশেষ ইউনিট ক্যাসেরিয়া সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে।
গুপ্তহত্যার প্রক্রিয়া।।
লক্ষ্য হিসেবে কোনো ব্যাক্তিকে নির্বাচনের পর মোসাদ হত্যার জন্য টার্গেটকৃত ব্যক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য মূল্যায়ন করে। কাউকে হত্যা করা হবে কিনা, হত্যা করলে লাভ কি হবে আর এটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী এসব দিক খতিয়ে দেখা হয় সেই মূল্যায়নে। মোসাদের বিশেষজ্ঞ ইউনিট তার লক্ষ্য সম্পর্কে তৈরি করা ফাইলের কাজ শেষ করে ফেলে ফলাফল নিয়ে ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস কমিটির প্রধানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত। হিব্রু ভাষায় এর নাম ভারাস।
ভারাস শুধু অভিযান নিয়ে আলোচনা করে। এরমধ্যে কোনও পরামর্শ থাকলে দেয় বা অন্য কোনও কিছু যোগ করে। তবে অভিযানের অনুমতি দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা নেই এই কমিটির। একমাত্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীরই এই ক্ষমতা রয়েছে। । প্রায়শই প্রধানমন্ত্রী এক বা দুজন মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। প্রায়ই এক্ষেত্রে তার সঙ্গে থাকেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
অভিযান অনুমোদন পেয়ে গেলে এর দায়িত্ব আবারও মোসাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। পরিকল্পনা সফল করতে কখনও কখনও সপ্তাহ, মাস, এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। এই সময় নির্ভর করে এর লক্ষ্যের ওপরে। আমি আগেই বলে নিচ্ছি মোসাদ এমন এক সংগঠন তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া অতিব দুর্লভ।তাই কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি।তাদের কার্যক্রম ও কৌশল, ক্ষিপ্রতার আঁচ বোঝানোর জন্য।
মোসাদের গোপন ক্যাসেরিয়া ইউনিট।।
মোসাদের অভ্যন্তরীণ একটি ইউনিট ক্যাসেরিয়া। প্রধানত আরব বিশ্বে গুপ্ত অভিযান পরিচালনার স্বার্থে ৭০-এর দশকে গঠিত এই ইউনিট বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে গোয়েন্দা মোতায়েন ও পরিচালনা করে থাকে। ক্যাসেরিয়া তার আরব রাষ্ট্র ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদ্যমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য লক্ষ্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এসব লক্ষ্যের ওপর নজরদারিও করে থাকে তারা।
সবচেয়ে বেশি অস্ত্রসজ্জিত ইউনিটে পেশাদার হত্যাকারী নিয়োগ করা হয়। এসব পেশাদাররা । ।মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর স্পেশাল একটিভিটি সেন্টার (এসএসি)-এর সমমান সম্পন্ন ক্যাসেরিয়া। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সিআইএ’র চেয়েও মোসাদ ভয়াবহ।
মোসাদের তথ্য বের করার অভিনব কৌশল-॥সুন্দরী নারীর টোপ॥
নিজেদের কাজে কখনো যদি কোনো শত্রু এসে পড়ে মোসাদের সামনে তাহলে সেই শত্রুকে হয় সঙ্গে সঙ্গেই নেই করে দেওয়া হয়, কিংবা নেওয়া হয় অন্য কোনো পদ্ধতি। আর এই অন্য কোনো পদ্ধতির ভেতরেই মোসাদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতিটি হচ্ছে হানিট্র্যাপ বা সুন্দরী নারীর টোপ। এই টোপ দেওয়ার সময় সঠিক মানুষকে বেছে নিয়ে তাকে কোনো এক নারীর প্রতি ভালোবাসায় আসক্ত করে ফেলে মোসাদ। আর তারপরই শুরু হয় আসল খেলা। টোপ গিলে ফেললেই যেমন শিকারকে খেলিয়ে খেলিয়ে জালে তোলা হয়, তেমনি এই নারীরাও টার্গেট মানুষটিকে নিয়ে যায় মোসাদের ডেরায় আর ধরিয়ে দেয়। এরপরের ব্যাপারটা মোসাদই জানে।।
বিশেষ কিছু অপারেশন মোসাদের যেখানে জয়ী হয় মোসাদ। বিশ্বে আলোঁরন সৃষ্টিকারি ।
ডায়মন্ড অপারেশন।।
শত্রুর কাছ থেকে বিমান চুরির এই ‘মহৎ’ উদ্যোগের কোড নাম হয় অপারেশন ডায়মন্ড। ষাটের দশকের শুরুতেই মোসাদ এ ব্যাপারে কাজ শুরু করে। ইসরায়েলের ঠিক পাশেই মিশর হওয়াতে তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল মিশর থেকে চুরি করা।
একজন মিশরীয় পাইলটকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেয়া হয় মোসাদ এজেন্ট জিন থমাসকে। থমাস আর তার এজেন্টরা আদিব হান্না নামে একজন মিশরীয় পাইলটকে টার্গেট করে তাদের কাজ করানোর জন্য। তারা তাকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবার প্রস্তাবও দেয় মিগ-২১ নিয়ে ইসরাইলে যাবার জন্য। কিন্তু হান্না তাদের কথায় রাজি হয়নি।
এ ঘটনার দুই বছর পর ইসরায়েল না চাইতেই এক সফলতা পায়। দুর্নীতিগ্রস্থ এক মিশরীয় পাইলট, ক্যাপ্টেন আব্বাস হেলমি, তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বিরোধের জের ধরে তার ইয়াক-১১ বিমান নিয়ে ইসরায়েলে পালিয়ে যায়। কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই ইসরায়েলের এই সফলতা আসলেও মাত্র দু’মাস পরেই হেলমিকে হত্যা করা হয় দক্ষিণ আমেরিকায়।
মিশরে ব্যর্থ হবার পর মোসাদ চেষ্টা করে ইরাকে। কিন্তু ইরাকেও প্রথমে ব্যর্থ হতে হয় মোসাদকে। তবে আগেরবারের মতো ভুল করেনি এবার মোসাদ এজেন্টরা।
তবে মোসাদের ভাগ্য খোলে ইরাকে বাস করা এজরা জেলখা নামের এক ইহুদী ইরানের তেহরানে ইসরাইলের দূতাবাসে যোগাযোগ করেন এক ইরাকি পাইলট রেদফার ব্যাপারে। মোসাদের কাছে এজরা জেলখার সাংকেতিক নাম ছিল ‘ইউসুফ’।মোসাদ এটিকেই তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে দেখে।
মোসাদ তাদের একজন নারী এজেন্টকে পাঠায় রেদফার সাথে যোগাযোগের জন্য। প্রথমে রেদফার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে সেই এজেন্ট, রেদফার নিজের কাছ থেকেই তার হতাশা আর রাগের কথাগুলো শোনে সে। এরপরই মোসাদ এজেন্ট তার আসল পরিকল্পনা শুরু করে। বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে রেদফাকে রাজি করায় ইউরোপে মোসাদ এজেন্টদের সাথে দেখা করার ব্যাপারে। রেদফা রাজি হলে ইউরোপে মোসাদের একজন অফিসারের সাথে দেখা করেন তিনি। রেদফাকে ১ মিলিয়ন ডলার, ইসরাইলের নাগরিকত্ব এবং চাকরির আশ্বাস দেয়া হয় তার মিশন সফল করতে পারলে।
কিন্তু পরিস্থিতি আবার পাল্টে যায় ১৯৬৩ সালের আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরে। এবারের শাসকরা ছিলেন পশ্চিমাঘেঁষা, ফলে আমেরিকা আর ব্রিটেনের সাথে আবারো সম্পর্ক জোড়া লাগে। ১৯৫৮-৬৩ সালে সামরিক বাহিনীতে থাকা বেশিরভাগ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাকরি চলে যায় আগের সরকারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে। এই সুযোগে মিগ-২১ এর প্রশিক্ষণ থাকা রেদফা হয়ে যান ইরাকের স্কোয়াড্রন-১১ এর ডেপুটি কমান্ডার। স্কোয়াড্রন-১১ ছিল ইরাকের মিগ-২১ এর একমাত্র স্কোয়াড্রন।
অন্যদিকে ইসরায়েল ইরাকের পাইলটদের প্রভাবিত করে মিগ-২১ চুরি করার মিশন তখনও ছাড়েনি। তাদের সামনে সুযোগ আসে, যখন ১৯৬৫ সালে ১৫ জন ইরাকি পাইলট আমেরিকা যায় প্রশিক্ষণের জন্য। মোসাদ তাদের নারী এজেন্টদের ব্যবহার করে তরুণ পাইলটদের এক এক করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। প্রথম চেষ্টায় একজন রাজি না হলে তাকে হত্যা করা হয়। তবে পাইলট হত্যার পর ইরাক তার পাইলটদের দেশে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু ফেরার সময় তিনজন পাইলটের সাথে ফেরে তিনজন মোসাদ এজেন্ট, তাদের বান্ধবী হিসেবে। সেই তিনজন পাইলটের একজন রেদফা।
পাইলটদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের নিজেদের কবজায় আনাই ছিল মোসাদের মূল লক্ষ্য। রেদফার সাথে যে এজেন্ট ছিল, তার নাম ছাড়া আর কিছুই জানা যায় না। লিসা ব্রাট নামের সেই মহিলা এজেন্ট খুব সম্ভবত আমেরিকান ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। রেদফার আগে অন্য দুজন পাইলটকেও রাজি করানোর চেষ্টা করে তাদের সাথে আসা এজেন্টরা। কিন্তু তাদের কেউই রাজি না হওয়াতে হত্যা করা হয় দুজনকেই।
এরপর যখন রেদফাকে প্রস্তাব দেয়া হয় তখন তিনিও প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু তাকেও হত্যার হুমকি দিলে তিনি শেষপর্যন্ত লিসার সাথে ইউরোপে গিয়ে অন্য মোসাদ এজেন্টদের সাথে দেখা করতে রাজি হন।
রেদফা স্বেচ্ছায় রাজি হন কিংবা ভয়ের জন্য সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে তিনি যে একপর্যায়ে রাজি হয়েছিলেন সেটি নিশ্চিত। তবে রেদফাও নিজের কিছু শর্ত জুড়ে দেন অন্য সবকিছুর সাথে। তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে ইরাক থেকে বের করে আনতে হবে। রেদফা পালিয়ে যেতে সফল হতে পারুক বা না পারুক, ইরাকে তার পরিবার থাকলে তাদের অচিন্ত্যনীয় অত্যাচারের শিকার হতে হবে তার জানা ছিল। তাই তিনি সবকিছুর আগে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান।
মোসাদ তার প্রস্তাবে রাজি হলে রেদফা ইসরায়েলে যান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে।
সবকিছু ঠিকঠাক হলে মোসাদ তাদের এজেন্ট পাঠায় ইরাকে, রেদফার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে ইসরাইলে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু সবার আগে অপেক্ষা করতে থাকে রেদফার, সে বিমান নিয়ে পালাতে সক্ষম হলেই পরিবারের সদস্যদের ইসরায়েলে নেয়া হবে। তার আগেই কিছু করলে যে কেউ সন্দেহ করে বসতে পারে, ভণ্ডুল হতে পারে পুরো পরিকল্পনা।
এদিকে ১৯৬৬ সালের জুলাইয়ে রেদফাকে স্কোয়াড্রন-১১ এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান রেদফা। কিন্তু তারপরেও তিনি চাইলেই যেকোনো দিন তার এয়ারবেস থেকে ইসরায়েলে পালিয়ে যেতে পারেন না। তার সামনে সুযোগ আসে ১৯৬৬ সালের ১৬ আগস্ট।
সর্বোচ্চ সম্ভব জ্বালানি নিয়ে রেদফা তার রুটিন ফ্লাইট শুরু করেন। কিন্তু বাগদাদ থেকে বের হতেই তিনি রুটিন ফ্লাইট পাথ থেকে মুখ ঘুরিয়ে রওনা দেন ইসরায়েলের দিকে। প্রথমদিকে ইরাকীরা বুঝতে না পারলেও বুঝতে পারার সাথে সাথে রেদফাকে নির্দেশ দেয় ফিরে আসার। কিন্তু রেদফা ততক্ষণে তার রেডিও বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় ৩০ হাজার ফুট উপর দিয়ে তিনি আঁকাবাঁকাভাবে যেতে থাকেন ইসরায়েলের দিকে। অন্যদিকে, রেদফার পালানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হবার পর ইরাকে থাকা মোসাদ এজেন্টরা রেদফার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ইরানের সীমান্তের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কুর্দি সেনাদের সাহায্যে তাদের ইরানে প্রবেশ করানো হয়। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলে।
এদিকে রেদফাকে ইসরায়েলে যেতে হলে জর্ডানের আকাশ দিয়ে যেতে হবে। জর্ডানের নিরাপত্তাবাহিনীর রাডারে তার বিমান ধরা পড়লে তারা মনে করে এটি সিরিয়ার বিমান। তারা সিরিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে বলে সিরিয়া জানায় এটি তাদেরই ট্রেনিং বিমান! দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝিতে আসলে ফায়দা হয় রেদফার। নিরাপদে চলে যান ইসরায়েলের কাছাকাছি।
ইসরায়েলে প্রবেশের সাথে সাথে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর মিরাজ বিমান এস্কোর্ট করে নিয়ে যায় রেদফাকে। অনেক উঁচু আর সর্বোচ্চ গতিতে চালানোর ফলে রেদফার মিগের জ্বালানি একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। নিরাপদেই কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ইরাক আর জর্ডানকে ফাঁকি দিয়ে রেদফা অবতরণ করেন ইসরায়েলে। সফল হয় মোসাদের মিগ চুরির অভিযান! রেদফার নিয়ে যাওয়া মিগ-২১ টিকে নতুন করে রঙ করে ইসরায়েল, আর সাংকেতিক নম্বর হয় ০০৭। সংখ্যাটা যে জেমস বন্ডের অনুকরণে সেটি বুঝতে আশা করি কারোরই কষ্ট হবার কথা না।।।
গাদ্দাফীর ইসরায়েল বিরোধী অপারেশন এবং এক মোসাদ এজেন্টের তৎপরতা।।
১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গুলিতে ভূপাতিত হয়েছিল লিবিয়ান আরব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১৪ এর একটি যাত্রীবাহী বোয়িং ৭২৭ বিমান। । ঐ ঘটনায় প্লেনটির ১১৩ জন যাত্রীর মধ্যে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিল ১০৮ জন, যাদের অধিকাংশই ছিল লিবিয়ান এবং মিসরীয় নাগরিক।
সে সময় লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন তরুণ বিপ্লবী নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফী। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হাতে নিজ দেশের এত বড় ক্ষতি তার মতো নেতার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসরায়েলের উপর প্রতিশোধ নিবেন। ফাইটার জেট দিয়ে আক্রমণ করবেন ইসরায়েলের উপর।
ইসরায়েল কর্তৃক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদ শোনার সাথে সাথেই গাদ্দাফী ফোন করেন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের কাছে।
গাদ্দাফীর পরিকল্পনা ছিল প্রথমেই ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী হাইফাতে ফাইটার জেট দিয়ে আক্রমণ করবেন। পরবর্তীতে পূর্ণ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে মিসরীয় সেনাবাহিনীকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু সাদাত গাদ্দাফীর প্রস্তাবে রাজি হলেন না। বরং তিনি গাদ্দাফীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাই না নেওয়ার পরামর্শ দিলেন, যদিও তার পরামর্শের পক্ষে তিনি ভালো কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি।
সাদাতের সাহায্য না পেলেও গাদ্দাফীর পক্ষে ফেরত আসার কোনো উপায় ছিল না। গাদ্দাফী ক্ষমতায় এসেছিলেনই মূলত ইসরায়েল এবং পশ্চিমাবিরোধী আদর্শকে সামনে তুলে ধরে।
১৯৭৩ সালের ১৭ই এপ্রিলের ঘটনা। সে সময় ইসরায়েলের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে ১৪০০ ইহুদি যাত্রি নিয়ে একটি জাহাজ ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইসরায়েলের আশদুদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। গাদ্দাফী সিদ্ধান্ত নিলেন, ইসরায়েলের উপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই জাহাজটিকেই তিনি ধ্বংস করবেন।
এত বড় একটি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য মিশরীয় ক্যাপ্টেন মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি সাহস করে গাদ্দাফীর কাছ থেকে লিখিত নির্দেশ চেয়ে বসলেন। গাদ্দাফীও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পরদিনই যাত্রা শুরু করল সাবমেরিন। পুরো একদিন ভূমধ্যসাগরের পানির নিচ দিয়ে পূর্ব দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর ভেসে উঠল গন্তব্যস্থলের কাছাকাছি। কিন্তু অপারেশনটির রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করার পূর্বে ক্যাপ্টেন মিসরীয় নৌবাহিনীর কমান্ডারের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করে বসলেন। তিনি তাকে গাদ্দাফীর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করলেন।
বিস্ময়ে বিমুঢ় কমান্ডার নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন না। ক্যাপ্টেনকে অপেক্ষা করতে বলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এই সংবাদ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন প্রেসিডেন্ট সাদাতের কাছে। সাদাত সাথে সাথে মিশন বাতিল করে ক্যাপ্টেনকে আলেক্সান্দ্রিয়া বন্দরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ‘কুইন এলিজাবেথ টু’ নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন সাদাত। এরপর গাদ্দাফীকে ফোন করে জানালেন, সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন জাহাজটি ধ্বংস করতেই চেয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে জাহাজটিকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে।
স্বাভাবিকভাবেই গাদ্দাফী সাদাতের কথা বিশ্বাস করেননি। তিনি ইসরায়েলের উপর আক্রমণের নতুন পরিকল্পনা শুরু করেন এবং সাদাতের উপর পুনরায় চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। তার চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সাদাতও রাজি হন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন একটি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সাদাত তখনও চাইছিলেন না ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লিবিয়া কোনো অভিযান পরিচালনা করুক। গাদ্দাফী এবং সাদাতের এই অদ্ভুত সম্পর্ক, অর্থাৎ গাদ্দাফীর প্রতিশোধস্পৃহা এবং সাদাতের বিরোধিতা, আবার তা সত্ত্বেও দুজনের শীতল মৈত্রীর প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে ফিরে তাকাতে হবে একটু পেছনের দিকে।
সাবমেরিন হামলা ব্যর্থ হওয়ার পর ক্ষুদ্ধ গাদ্দাফী ছুটে যান কায়রোতে। তিনি পূর্বের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে সাদাতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন, যেন লিবিয়া এবং মিসর একত্রে যুক্ত হয়ে একীভূত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেটা সফল হলে মিসরের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাথে লিবিয়ার তেল বিক্রয় লব্ধ বিপুল পরিমাণ অর্থের সমন্বয়ে ইসরায়েল বিরোধী শক্তিশালী একটি জোট সৃষ্টি হতে পারত। সাদাতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে লিবিয়া থেকে ৪০০০ হাজার মানুষ মিসর অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে। কিন্তু মিসরীয় সেনাবাহিনী রোডব্লক এবং স্থলমাইন স্থাপন করে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়।হতাশ গাদ্দাফী লিবিয়াতে ফিরে আসেন ।
কিন্তু গাদ্দাফী তখনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেননি। তার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত হওয়ার জন্য এবং সুযোগ অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাদাত গাদ্দাফীকে শর্ত দেন, তিনি ইসরায়েলে আক্রমণের ব্যাপারে গাদ্দাফীকে সাহায্য করবেন, তবে তাকে কথা দিতে হবে তিনি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা মিসরের সাথে আগে থেকেই শেয়ার করবেন। গাদ্দাফী অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হন।
গাদ্দাফীর সাথে মিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য বিশেষ দূত হিসেবে সাদাত নিয়োগ দেন তার অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন সিনিয়র উপদেষ্টা আশরাফ মারোয়ানকে। আশরাফ মারোয়ান ছিলেন সাদাতের পূর্বসূরী গামাল আবদেল নাসেরের মেয়ে মুনা নাসেরের স্বামী এবং প্রেসিডেন্টের চীফ অফ স্টাফের সহকারী। কিন্তু সাদাত জানতেন না, বছরের পর বছর ধরে মিসরের প্রেসিডেন্টের অফিসে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করা এবং সাবেক প্রেসিডেন্টের জামাতা এই আশরাফ মারোয়ানই ছিলেন ইসরায়েলের কুখ্যাত গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তচর!
মারোয়ানের নির্দেশে মিসরীয় গোয়েন্দা বাহিনীর দুই সিনিয়র কর্মকর্তা রোমে যান এবং এয়ারপোর্টের লে-আউট, আশেপাশের এলাকার মানচিত্র, বিভিন্ন ফ্লাইটের সময়সূচী সংগ্রহ করে আনেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের পরপরই পাশের একটি ভবন থেকে এসএ-৭ স্ট্রেলা অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলের মাধ্যমে ৪০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট ইসরায়েলের একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান ভূপাতিত করা হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে পাওয়া অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলগুলো রোমে পৌঁছে দিবে মারোয়ানের নেতৃত্বে মিসরীয় গোয়েন্দারা, আর সেখান থেকে সেগুলো গ্রহণ করবে ফিলিস্তিনের ব্লাক সেপ্টম্বর সংগঠনের সদস্যরা, যাদেরকে নিয়োগ করার দায়িত্বে থাকবে লিবিয়ানরা।
ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের
সাথে গাদ্দাফী প্রশাসনের আগে থেকেই সুসম্পর্ক ছিল। এর আগে জার্মানীর মিউনিখ অলিম্পিকে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের যে দলটি ১১ জন ইসরায়েলি খেয়োয়াড়কে প্রথমে জিম্মি এবং পরে হত্যা করেছিল, তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে আশ্রয় দিয়েছিল লিবিয়া।
আগস্টের ২৯ তারিখে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের বিশেষ দলটির দলনেতা আমিন আল হিন্দি দলটির আরো চার সদস্য সহ রোমে এসে পৌঁছে। এর কিছুদিন পরই মারোয়ানের নির্দেশে মিসরীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রভান্ডার থেকে দুটি মিসাইল এবং মিসাইল লঞ্চার গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়। মারোয়ান সেগুলোকে তার স্ত্রী মুনার নামে একটি ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে প্যাক করেন। মুনার সে সময় ভিন্ন একটি কাজে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মারোয়ান তাকে অনুরোধ করেন ব্যাগ দুটি নিয়ে তার সাথে রোমে দেখা করার জন্য।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটির একটি গাড়িতে করে মিসাইলগুলো নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদেরকে যে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে, সে তথ্যটি কেউ তাদেরকে আগে জানায়নি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে তারা বাজারের একটি কার্পেটের দোকান থেকে কার্পেট কিনে এবং ব্যাগগুলোকে কার্পেটে পেঁচিয়ে ট্রেনে করে প্রকাশ্যে সবার সামনে দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসে।
ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটির জানার কথা না, তারা রোমে পা দেওয়ার পর থেকে শুরু করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ গোপনে নজরদারি করছিল মোসাদের একদল এজেন্ট। মিসাইলগুলো এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছা, সেখান থেকে মিসরীয় এয়ার অ্যাকাডেমিতে স্থানান্তর, মারোয়ানের কাছ থেকে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের মিসাইলগুলো গ্রহণ, ট্রেনে করে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে ফেরত আসা- কোনো কিছুই তাদের চোখ এড়ায়নি। পরিকল্পনার শুরু থেকেই মারোয়ান ঘটনার বিস্তারিত মোসাদকে জানিয়ে রেখেছিলেন। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে মোসাদের প্রধান জাভি জামিরও এসে হাজির হয়েছিলেন রোমে।
জামির একেবারে শেষ মুহূর্তে রোমের পুলিশ বাহিনীকে জানিয়েছিলেন যে, এয়ারপোর্টে একটি সন্ত্রাসী হামলা হবে। কিন্তু এর আগে থেকেই তিনি নিজেদেরও একটি বিশেষ কমান্ডো বাহিনী প্রস্তুত রেখেছিলেন এই উদ্দেশ্যে যে, যদি রোমের পুলিশ ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজেরাই যেন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার প্রয়োজন হয়নি। পরদিন সকালে, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে, ইতালির নিরাপত্তা বাহিনীর বিশাল একটি দল অভিযান চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র সহ আটক করে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর দলের পাঁচ সদস্যকে। রক্ষা পেয়ে যায় ৪০০ নিরীহ যাত্রীর প্রাণ।
সেদিন গাদ্দাফীর পরিকল্পনা যদি আসলেই সফল হতো, তাহলে তার ফলাফল কী হতো, বলা মুশকিল। ইসরায়েলের অন্যায়ভাবে ১০৮ জন নিরীহ যাত্রীসমেত বিমান ধ্বংসের প্রতিশোধ হিসেবে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো যেতে পারে, কিন্তু পাল্টা আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্যেই পড়ে। আর সেই সন্ত্রাসী হামলার খেসারত হয়তো শেষপর্যন্ত গাদ্দাফী এবং লিবিয়ার জনগণকেই দিতে হতো।।
||ডাবল এজেন্ট ও ক্রশ্চেভদের ভাষন||
ভিক্টর গ্রায়োভিস্কির ছিলো ডাবল এজেন্ট।তিনি শুরুতে ছিলো ইহুদি সাংবাদিক। ১৯৫৬ সালে লুসিয়ার সথে প্রেম হয়। ভিক্টর পোল্যান্ড থাকতো।তার পরিবার ইসরাইল। কাহিনি শুরু হয় ভাষনের কপি চুরি নিয়ে।ভিক্টরের গার্ল ফ্রেন্ড থেকে ও নিয়ে আসে কপিটা।
তারপর কি মনে করে ইসরাইল দূতাবাসে দিয়ে আসে। তখন কম্যুনিউস্ট দুনিয়ায় সারা ফেলে দেয়। অনেক গোপন তথ্য ছিলো ।পরবর্তীতে ভিক্টর বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করায় সে ইসরাইল থেকে চাকরি পান।
পরবর্তীতে পূর্ব ইউরোপে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাকে এজেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন ইসরাইলের কথামতো সে দুইদেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করেন।
শর্ত ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভুল তথ্য দিবে সে। ভিক্টর সোভিয়েতদের যত ভূল তথ্য দিলো সে ততই ভালো হতে লাগল। ১৯৬৭ সালে একবার সঠিক তথ্য দিতে গিয়ে সে তিরস্কার হলো। সেটা হলো ইসরাইলের সাথে সোভিয়েতের মিএদের যুদ্ধ নিয়ে যেখানে ইসরাইল না করার কথা বলেছিলে। কিন্তু শোনে নাই। তখন ইসরাইল যুদ্ধে দাপট দেখায়। বিপক্ষদের অনেক ক্ষতি হয়। তখন সোভিয়েত আবার খুশি হয়ে তাকে লেনিন উপাধি দেয়ার চিন্তা করেন।
২০০৭ সালে ভিক্টরকে লেলিন উপাধি দেন মস্কোতে।।তিনি এক মোসাদের সদস্য যে দুই দেশ থেকে বড় উপাধি পেয়েছেন।
নাইন-এলেভেন এর ঘটনার সৃষ্টকারী কি তবে মোসাদ?
নাইন/ইলেভেনের দায় কার— এ বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। যদিও সিআইএ’র এক সময়ের বিশ্বস্ত ওসামা বিন লাদেন ও তালেবানকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর এর শাস্তি হিসেবে দখল করে নেওয়া হয়েছে ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ দেশ আফগানিস্তানকে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেরুজালেম পোস্টের ইন্টারনেট সংস্করণে বলা হয়, হামলাকালীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে ৪ হাজার ইহুদি কাজ করত। কিন্তু বিমান হামলায় মাত্র একজন নিহত হয়েছে। পরে আরও দুজনের নিহতের কথা বলা হয়। ওই দিন এত বিপুলসংখ্যক ইহুদি কীভাবে নিরাপদে ছিল তার জবাব আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি বা দেয়নি। অথচ যে সময় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হয়েছে প্রতিদিন ওই সময়ে অনেক ইহুদি অফিসে উপস্থিত থাকত। ব্যতিক্রম শুধু হামলার দিন।
পারমাণবিক চোরাচালানিঃ
১৯৬০ সালে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় অবস্থিত নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট বা নিউমেকে হঠাৎ করে পারমাণবিক অস্ত্র ও জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে চেষ্টা করা হয় কোথায় চুরি যাওয়া বা হারানো জিনিসগুলো রয়েছে সেটা খুঁজে বের করার। কিন্তু লাভ হয় না কিছুই।এদিকে সবচেয়ে বেশি কর্মী নেইয়া নিউমেক ও বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরণের গুজব রটে নিউমেকের বিরুদ্ধে। আমেরিকা এ ঘটনার তদন্ত করেও খুজে পায়নি কোন সমাধান। এমনকি তদন্ত চলাকালীন সময়েও আরো একবার পারমাণবিক অস্ত্র চুরির ঘটনা ঘটে।
দুর্ধর্ষ মোসাদের সাধারন কয়েকটি সাধারন কয়েকটি হামলার চিএ রুপ বর্ননা করা হলো। যা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার জন্য দুর্ধর্ষ অভিযান হবে।।
ইসাদ মুগনিয়া
ইসাদ মুগনিয়া ,২০০৮ সালের কথা। বরাবরই মোসাদের টনক নড়ার মতো মানুষগুলোকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও থাকে ও করেন। ইসাদের জীবন অন্যরকম । টুইন টাওয়ার ধংসের পর সব পাল্টে গেছে। তাকে রাজনীতিতে ভূতের সাথে আখ্যা দেন। তিনি এমন একজন লোক যে মোসাদের জন্য বিপদজ্বনক। তাকে যথাক্রমে ১৯৮৬,১৯৮৮,১৯৯৫ সালে গ্রফতার করার চেষ্টা থাকলেও পরে আর সম্ভব হয় নি। কিন্তু মোসাদ থেমে নাই। অনেক কিছুর অবসানের পর সমর্থ হয় গোপন তথ্য বের করার তাকে মেরে ফেলার মতো । তা হলো গোপন কারো সাথে দেখা করতে যাওয়া। গোপন জীবন বলা চলে মিস্ট্রেসের সাথে দামেস্কেতে। কেননা তিনি জানতেন মোসাদ ও পশ্চিমা গনমাধ্যম তাকে হত্যার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।তাই পারিবারিক জীবন খুব গোপন ছিলো। কেউ জানতেন এইসব বিষয়ে। ২০০৮ সালের মে আসে যখন মিস্ট্রেসের বাসায় আসেন তখন তাকে হত্যা করে মোসাদ বিস্ফোরক হামলার মাধ্যমে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে লেবানন সরকার প্রায় ধরে ফেলেছেন এ হামলার নেপথ্যে মোসাদ ছাড়া কেউ নেই।।
সিরিয়া হামলা।
।সিরিয়া যাতে তাদের মাথা তাদের বিরুদ্ধে তুলতে না পারে।তার রিরুদ্ধে ধংসান্তক হামলা। নেপথ্যে মোসাদ।
২০০৭ সালের কথা। খুবই সংক্ষেপে তুলে ধরছি। পারমানবিক বোমা,অস্র বানানো নিষেধ ছিলো। কারো ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলোর উপর অন্য কেউ নাড়াচাড়া দিতে না পারেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সিরিয়া পারমানবিক চুল্লি কেন্দ্রের কাজ শুরু করেন যার অংশ হিসেবে অন্য উদ্দেশ্য ছিলো যা নিষেধ। ইসরায়েল অবাক হয় এই ভেবে তাদের মদদ দিচ্ছে উওর কোরিয়া ও ইরান। গুপ্ত চোরের মাধ্যমে তাদের মধ্যে লোক ডুকিয়ে সব তথ্য হ্যাক করতে থাকে ইসরায়েল। ইসরায়েল নেতা ওয়ালমার্ট আমেরিকা প্রসিডেন্টকে বার বার বলে হামলা করতে। অনেক তথ্য দেওয়ার দেওয়ার পর আমেরিকা নিশ্চিত হয় না। কেননা ২০০৬ সালে লেবানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধে তালগোল পাকিয়ে ছিলেন। সিরিয়ার মূলত টার্গেট ছিলো ইসরায়েলকে আনবিক বোমা দিয়ে ধংস করা। তাই ওয়ালমার্টের কথা না শুনায় জর্জ বুশ তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাদের আত্নরক্ষার জন্য তারা চেষ্টা চালাবে মানে আক্রমন। ২০০৭ সালের ৫ই সেপ্টম্বর হামলা চালায়।সিরিয়ার প্লান ধংসস্তুপে পরিনত হয়।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের এপ্রিলে আমেরিকার ইসরায়েল তথ্যের সত্যতা খুঁজে পান।এদিকে ইসরায়েল চিন্তিত সিরিয়ার পরবর্তী অ্যাটাক নিয়ে। তুরষ্কের সাথে ও কথা বলেন এ নিয়ে ।কিন্তু বরাবর সিরিয়া নিশ্চুপ ছিলো। বিপত্তি ঘটে বিরোধী দলীয় নেতানিয়াহুর হাটে হাড়ি বেফাশ মন্তব্যে।তখন ইসরায়েল বুঝতে পারে সিরিয়া মূল নেতাকে মিডিয়াতে না আনলেও সোলাইমান আসাদই শীর্ষ নেতা। সে থেমে থাকার নয়। সে আবার মনোযোগ দেন পরমানু নিয়ে। সে অনেক দক্ষতাসম্পন্ন লোক ছিলো। সে বুঝতে পেরেছিলো তার জীবনাশের হুমকি ইসরায়েল ও আমেরিকা দিয়ে ।তখন শহর ১৪০ কিমি: দূরে টারটামে অবস্থান নেন। অতিথি দাওয়াত করে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়। মোসাদের হিটটিম গুপ্ত গোয়েন্দা দিয়ো খুব কৌশলে সিরিয়া প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেন।সিরিয়া গোয়েন্দা ও সামরিক বাহীনি ও হতাশ। কীভাবে সম্ভব এটা। পরবর্তীতে এই রহস্য ধোয়াশা থেকে যায়।
অপারেশন প্লামব্যাট।।
১৯৬৮ সালে ইসরাইলের একটি শিপে ২০০ টন ইউরেনিয়াম অক্সাইড সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে একটি কার্গো বিমান যাত্রা শুরু করেছিল। জার্মানির আকাশে বিমান উড়ছিলো। কিন্তু তারা বুঝে ওঠার আগেই বিমানটি তাদের রাডারের বাইরে চলে যায়। পরে তুরস্কের একটি পোর্টের রাডারে ধরা পড়লেও ওই কার্গো বিমান থেকে বলা হয় পথ হারিয়ে তারা এই দিকে চলে এসেছে। তাদের জ্বালানিও ফুরিয়ে গেছে। গালফ থেকে জ্বালানি নিয়ে তারা আবার ফিরে যাবে। কিন্তু আড়ালে তারা নিরাপদেই “ইউরেনিয়াম অক্সাইড”গুলো ইসরায়েলের একটি শিপে খালাস করে দেয়। এটি ছিল লেকেম ও মোসাদের একটি যৌথ অপারেশন।
পাসপোর্ট নকল করে অভিযান।।
অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট নকল করে দুবাইয়ে প্রবেশ করে হামাস নেতা মাহমুদ আল মাবহোকে খুন করে মোসাদের তিনজন সদস্য। অস্ট্রেলিয়া এ ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় এবং পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, তাদের এই কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। এর আগেও মোসাদের পাসপোর্ট নকল করা নিয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে।
মোসাদ সবসময় তাদের বিরুদ্ধে থাকা অথবা পক্ষে ক্ষতিকর নয় এমন কোনো মানুষকে ছাড় দিতে চায় নি।তার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানি গুপ্তহত্যা চালায়। সেই অপারেশনের নাম দেন।
।।অপারেশন ডেমোক্লিস।।
মোসাদের অন্যতম এক অভিযান ছিলো অপারেশন ডেমোক্লিস।মেধাহীন করার অপারেশন বলা যায়। যেমন বাংলায় হয়েছিলো ১৪ই ডিসেম্বর।
•ইয়াহিয়া এল মাশাদ
মিশর, ব্রিটেন এবং রাশিয়ায় পড়াশোনা করে এসে এই গবেষক মিশরের আণবিক সংস্থায় যোগ দেন। ৩য় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর মিশরের বেসামরিক আণবিক কর্মসূচী একদম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের পর এল মাশাদ ইরাকে চলে যান এবং দেশটির আণবিক সংস্থায় যোগ দেন। রিঅ্যাক্টরের জন্য প্রচুর খুচরা যন্ত্রপাতি ইউরোপ থেকে আমদানি করতে হতো। এর জন্য এল মাশাদকে ফ্রান্সে নিজেদের কেনাকাটার সমন্বয়কারী হিসেবে নিযুক্ত করে ইরাক। মোসাদ যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তখন তাকে হত্যা করে।
•ড. মাজিদ শাহরিয়ারি ও ড. আব্বাস-দাভানি
নিউট্রন স্পেশালিস্ট মাজিদ শাহরিয়ারি ইরানের এক প্রতিভাবান পরমাণু গবেষক।
২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর নিজে গাড়ি চালিয়ে কর্মস্থল শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রাফিক জ্যামে গাড়ির গতি কমে যেতেই হঠাৎ মোটরবাইক থেকে গুপ্তঘাতক চুম্বক লাগানো সি-৪ বোমা গাড়ির দরজায় আটকে দেয়। কয়েক সেকেন্ড পরেই বিস্ফোরণ ঘটে এবং তিনি মারা যান। পাশের আসনে বসা ড. মাজিদের স্ত্রীও মারাত্মক জখম হন এই হামলায়।
•মাসুদ আলী মোহাম্মদী
প্রতিভাবান এই গবেষক ইরানের বিখ্যাত শারিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। গোপনে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে বেশ ভালোভাবেই যুক্ত ছিলেন। ইরানের অভিজাত রেভ্যলুশনারি গার্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা আছে বলে শোনা যায়। ২০০৯ সালে হজ্জ করতে গিয়ে তিনি প্রথম বুঝতে পারেন, কেউ তাকে অনুসরণ করছে।
তিনি ভেবেছিলেন, স্বদেশের মাটি তার জন্য নিরাপদ। কিন্তু ২০১০ সালের এক সকালে বাড়ির থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠার সময় একটি বোমার বিস্ফোরন ঘটে। পাশের এক মোটরবাইকের সাথে একটি বোমা বাঁধা ছিল। সেটি এতই শক্তিশালী ছিল যে আশেপাশের বাড়ির কাঁচ পর্যন্ত শক-ওয়েভে ভেঙে যায়।
•দারিউশ রেজায়ি
৩৫ বছর বয়সী পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক দারিউশ রেজায়ি । ইরানের বুশেহর পরমাণু প্রকল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি একদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাস নিয়ে ফেরার সময় মোসাদের দুই এজেন্ট তাকে অনুসরণ করে। দক্ষিণ তেহরানের অভিজাত এলাকা বনি হাশেম স্ট্রিটে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই গুলি করা হয় তাকে। ।
•মোস্তফা আহমাদ রোশান
৩২ বছর বয়সী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রোশান ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণু কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি প্রতিদিনকার মতো উত্তর তেহরানের রাস্তা দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও এটা প্রায় নিশ্চিত, ইরানের বিপ্লব বিরোধী গোষ্ঠী মুজাহিদিন-ই খালকের সহায়তায় এই বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ।
•জেরাল্ড বুল
জেরাল্ড বুল এক খ্যাপাটে বিজ্ঞানী। দূরপাল্লার কামান নিয়ে গবেষণা করতেন। শেষমেশ হাত দেন ব্যবিলিন নামের দুই ধরনের সুপার গান তৈরির কাজে। সম্ভবত সাদ্দাম হোসেন তাকে এই কাজে অর্থায়ন করছিলেন এবং ইসরায়েলের ধারণা ছিল বুল সফল হলে ইসরায়েলের ভূখণ্ড ব্যবিলনের আওতায় চলে আসবে।
১৯৯০ সালের ২০ মার্চ। দরজায় ঘণ্টা বাজলে বুল দরজা খুলতে যান। খুলতেই একঝাঁক গুলি তাকে বিদ্ধ করে। ইসরায়েল গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, সাদ্দামের সাথে মতের অমিল হওয়ায় তাকে ইরাকীরা হত্যা করেছে, যদিও পরে মোসাদের সংশ্লিষ্টতা চাপা থাকে না।
•মোহাম্মদ জাওয়ারি
হামাসের সামরিক স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ জাওয়ারি ১০ বছর ধরে ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ৪৯ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী আবাবিল নামের একটি ড্রোন তৈরি করছিলেন। জাওয়ারি তার ড্রোন আবাবিলকে অস্ত্র বহনের উপযোগী করে তুলছিলেন। আল জাজিরার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি হামাসের ড্রোন প্রজেক্টের দলনেতা ছিলেন।
২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বরে তিউনিশিয়ার সফক্স শহরে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করেই একটি ট্রাক এসে তার পথ আটকে দাঁড়ায়। সাইলেন্সার লাগানো বন্দুক থেকে ২০টি গুলিতে তাকে ঝাঁঝরা করে দেয়। ধারণা করা হয়, সাংবাদিক ছদ্মবেশে একজন মোসাদ এজেন্ট তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ইসরায়েল তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।
•ফাদি আল-বাৎশ
শিক্ষায় অন্যতম সফল ও বুদ্ধিমান এই ফিলিস্তিনি নাগরিক ২০১১ সালে উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া আসেন।
২০১৩ সালে তিনি ড্রোন প্রযুক্তির উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। । খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়, ফাদি হামাসের জন্য রকেট আধুনিকায়নের কাজ করছিলেন।
প্রতিদিনের মতো ২১ এপ্রিল সকালে নামাজ পড়তে বেড়িয়েছিলেন ফাদি। মসজিদের সামনে আসতেই ২০ মিনিট ধরে মোটরবাইকে অপেক্ষা করা দুই গুপ্তঘাতক ১০টি গুলি চালায় তাকে লক্ষ্য করে। এর মধ্যে ৪টি গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।।কিছু না বললে ফিলিস্তিন বুঝতে পারে হত্যার পেছনে মোসাদ রয়েছে।।
।।মোসাদের কিলিং মিশন ও গুপ্ত হত্যা।।
রনেন বার্গম্যান তাঁর ‘রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট: দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব ইসরায়েলস টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশনস’ বইয়ে থেকে-
ইসরায়েলের গত ৭০ বছরে অবৈধ দখলদারত্ব টিকিয়ে রাখার পথে যেসব গুপ্ত ও টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করেছে, তার বিবরণ দিয়েছেন। এই বইয়ে বার্গম্যান জানান, প্রতিষ্ঠার পর ২ হাজার ৭০০ জনকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হত্যা করেছে। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। এর মধ্যে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাতও রয়েছেন। তাঁকে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় বলে বার্গম্যান উল্লেখ করেছেন।
১৯৫৬ সালের মিসরের লে. কর্নেল মোস্তফা হাফেজকে পার্সেল বোমা পাঠিয়ে হত্যা করে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। মোস্তফা হাফেজ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বাছাই করতেন। গুপ্তহত্যার বড় ধরনের অভিযান ইসরায়েলিরা পরিচালনা করে ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে।দীর্ঘ সময় নিয়ে ওই হামলায় অংশ নেওয়া সবাইকে বৈরুত, প্যারিস, অসলো ও যুক্তরাষ্ট্রে হত্যা করে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা।
১৯৭৩ সালের ৯ এপ্রিল,পিএলওর শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতাকে হত্যা করে তারা। ১৯৮৮ সালে তিউনিসে হত্যা করা হয় ফাতাহ আন্দোলনের নেতা আবু জিহাদকে। ১৯৯৫ সালের মাল্টার ডিপ্লোম্যাট হোটেলের সামনে ফাতিহ সাকিকিকে গুলি করে হত্যা করে মোসাদের সদস্যরা। ১৯৯৬ সালে হামাসের বোমা স্কোয়াডের সদস্য ইয়াহইয়া আয়েশেকে গাজায় হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালে হত্যা করা হয় খালেদ মেশালসহ অনেক হামাস নেতার তাত্ত্বিক গুরু শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে।
ওপরে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ছাড়াও ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের বড় বড় রাজনৈতিক ও সামরিক নেতার কমবেশি সবাই ইসরায়েলের গুপ্তহত্যা ও টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া সাতজন ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করে মোসাদের গোয়েন্দারা। কারণ, ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ইরানের সামরিক শক্তি ভবিষ্যতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের টিকে থাকা ও সম্প্রসারণে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।।
দেইর ইয়াসিন গণহত্যা।।
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাসখানেক আগে জায়নবাদী সন্ত্রাসী দলের দুই সদস্য ইরগুন এবং লেহি প্যালেস্টাইনের দেইর ইয়াসিন গ্রামে রাতের আধারে এক হত্যাকাণ্ড চালায়। মহিলা ও শিশুসহ সেই হামলায় প্রায় ১০০-১৫০ প্যালেস্টানিয়ান নিহত হয়। এছাড়া আরো ৮০ জন নিহতের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
এডলফ ইচম্যান হত্যা।।
নাৎসি যুদ্ধে অভিযুক্ত এডলফ ইচম্যানকে অনেকদিন ধরে খুঁজছিল মোসাদ। ১৯৬০ সালের দিকে তাকে পাওয়া যায় আর্জেন্টিনায়। সে বছর মোসাদের এজেন্টরা তাকে গোপনে আটক করে। ইসরায়েলে নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে উত্তর ইউরোপে ক্যাম্প গঠন ও পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে ইহুদিদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ইসরায়েলের আদালতে একটি সাজানো বিচারের মাধ্যমে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
সালামেহ হত্যা।।
ফিলিস্তিনের সালামেহ সিআইএর গুপ্তচর হয়ে কাজ করছিলেন। দিনে দিনে সালামেহ সিআইএর এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হয়ে উঠে। এদিকে একবার সালামেহকে হত্যা করতে চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয় মোসাদ। ৫ বছর পর আবার সালামেহকে পেয়ে গুপ্তচরের মাধ্যমে জানতে পারে সালামেহ ও সিআইএর এর সম্পৃক্ততার কথা। গোয়েন্দা দ্বারা সালামেহ এর গতিবিধি লক্ষ করা হয় প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন সালামেহ ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে পিএলওর দপ্তরে যেতে হতো। একদিন সালামেহ এর রাস্তায় বক্সওয়াগন রেখে দেয় মোসাদ। সালামেহ ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বক্সওয়াগনের বিষ্ফোরনে সালামোহ সহ আরো ৯ জন নিহত হয়।
মোসাদ ২-১ টা কলঙ্ক বা ব্যার্থতা।
আম্মানে মোসাদের কলঙ্ক।।
১৯৯৭ সালের ৩০ই জুলাই জেরুজালেমে হামলার পর মোসাদ খালেদ মাশালকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। কেননা ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ইয়াসির আরাফাত ও আইজাক রবীন এর মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল।খালেদ মাশাল ছিলেন হামাসের নবনিযুক্তি রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান, ৪৫ বছর বয়সি একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। তবে এই হামলা ছিলো ইসরাইলের ইতিহাসে মোসাদের বড় ব্যর্থতা। ব্যাপারটি এমন ছিলো শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।
তখনকার সময়ে ইসরাইলের প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন বেন্জামিন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেইসময়ে মোসাদের প্রধান নিযুক্ত হোন ইয়াতোম। তবে মোসাদের ভিতরে ভিতরে অসংগতি ছিলো তাকে নিয়ে।কেননা তারা মনে করতেন ইয়াতোম যোগ্যতা সম্পূর্ন ছিলো না এই গুরুত্পূর্ন পদের জন্য। নেতা ইয়াতোম সকল গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বৈঠক করেন কিন্তু কোনো সমঝোতা আসতে পারে নাই হামলার পরিকল্পনা নিয়ে । কেননা হামাসের মোস্ট ওয়ান্টেড নেতাদের সম্পূর্ন লিস্ট ও ধারনা ছিলো না। হামাসের সবচেয়ে বড় নেতা ছিলেন মুসা মো: আবু মারজুক।
তাকে হত্যার সমস্যা ছিলো আমেরিকান পাসপোর্ট। অন্যদিকে জর্ডানের সাথে ইসরাইলের ১৯৯৪ সালের শান্তি চুক্তি হয়েছিলো। তবে সর্বসম্মত দেন মোস্ট সুইটেবল টার্গেট খালেদ মাশাল।
ইসরাইল নেতা নেতানিয়াহু খালেদকে হত্যার অনুমোদন দেন মোসাদ নেতার আবেদন এর পর।তবে শর্ত হলো আম্মানের সাথে যেনো সংকট সৃষ্টি না হয়। মোসাদ নেতা ইয়াতোম এই হামলার দায়িত্ব দেন মোসাদের কিডন গ্রুপকে। এরাই কায়সারেয়ারে এলিট গ্রুপ। মোসাদের কেমিস্ট্রি ডাক্তার মাশালের দেহে বিষ প্রয়োগের প্রস্তাব ।যেটা তাদের নিজস্ব বায়োলজি ইনিস্টিউটে তৈরি।এর বিশেষত্ব হলো এই বিষ প্রয়োগে প্রমান পাওয়া কঠিন। এমনকি তদন্তে ও পাওয়া যায় না।
পরিকল্পনা মাফিক ১৯৯৭ সালের আগস্টের দিকে প্রায় হামলার পরিকল্পনার তারিখের ছয় সপ্তাহ আগে পৌছায় এক দল কিডনের পক্ষ থেকে। তাদের কাজ ছিলো মাশালের দৈনিন্দন সকল কাজগুলোকে পর্যালোচনা করে, সঠিক তথ্য গুলো প্রতিবেদন করা কিডনের কাছে। হত্যার পরিকল্পনা পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে করতে থাকে আগাম দল। পরবর্তীতে সহতাকারী দল ও আসে। ৪ঠা সেপ্টেম্বর হঠাৎ জেরুজালেমে হামলা হয়। তখন চিন্তা করেন আর বসে থেকে নয়। ২৪ই সেপ্টম্বর পলিকল্পনা মাফিক হোটলে অবস্থানে নেন পর্যটক বেশে যে উনি বের হলে খুব সহজেই কাজ করার হবে কেননা জর্ডান যাতে না বুঝে।তখন ৮ জন গোয়েন্দা পাঠিয়েছিলো।
২৫ই সেপ্টম্বর,মাশালের প্রতিদিনে কাজের অমিল ছিলো তার দুই বাচ্চা নিয়ে অফিসের দিকে রওনা ।যা গোয়েন্দারা তথ্য দিতে পারে ফলে বিপত্তি ঘটে। গাড়ি নামার পর তার দিকে যাবে বিষ প্রয়োগের জন্য স্প্রে দিয়ে ,তখনই মাশালের বাচ্চা রা কান্নার শব্দ করে। তখন মোসাদ কমান্ডার পরিকল্পনা বন্ধের জন্য বললেও বিষয়টি এতো তৎক্ষনাত হয় যে বুঝতে পারে নি সৈন্যরা। তখন ধরা খাওয়ার উপক্রম হয় এক হামাস যোদ্ধার কাছে।পরে আরো কাহিনী হয়। নিজেদের দায় এড়ানোর স্বরুপ তারা ঐই বিষ এর এন্টিডোট দিতে বাধ্য নিজ থেকে।তা দেন কৌশলি উপায়ে।পরবর্তীতে বেচে যান মাশাল ইয়াতোমের ব্যার্থতার পরিচয় দিয়ে।ঘটনার পর কায়সারের প্রধান পদত্যগ করেন। এর পাঁচ মাস পর ইয়াতোম ও পদত্যাগ করেন। মাশাল এই সুযোগে অনেক জনপ্রিয়তা পান,তাকে হত্যার এতো কলাকৌশলের জন্য।পরবর্তীতে তিনি ইয়াসিরের মৃত্যু পর শীর্ষ নেতা হন আম্মানের।।
সাদ্দাম হোসাইনকে হত্যাচেষ্টার তথ্য ফাঁস।।
ইসরায়েল যাদের শত্রু মনে করে তাদের গ্রেফতার কিংবা কোন মহলে অভিযোগ জানানোর চেয়ে নিজেরাই হত্যা করা সমীচীন বলে মনে করে৷ আর এ কাজ সম্পাদনে রয়েছে মোসাদের সুপ্রশিক্ষিত খুনির দল। ১৯৭০ সালে ইরাকের স্বাধীনতাকামী কুর্দিদের সমর্থন দেয় ইসরাইল। ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে নিজেদের সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করত তারা। আর এজন্য মোসাদের একটি ঘাতক দল সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করতে বিস্ফোরকধারী একটি বইয়ের সাহায্য নেয়। কিন্তু সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
জামার্নীতে হামলার পরিকল্পনা ফাঁস
১৯৭২ সালে মোসাদ জার্মানীর বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির কাছে পত্র বোমা পাঠিয়েছিল। চিঠি খুললেই বোমা ফুটবে এবং সে মারা যাবে। অধিকাংশ চিঠিই পাঠানো হয়েছি নাযি যুদ্ধে অভিযুক্ত এলোস ব্রানারের কাছে। অবশ্য মোসাদের এ প্রচেষ্টা জানাজানি হয়ে যায় এবং ব্যর্থ হয়।
মোসাদ এক বিস্ময় কর নাম। নাম শুনলে শরীর কাপুনি দিয়ে উঠে প্রায় মোসাদ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দর্ষ, শক্তিশালি, বুদ্ধিমান, সেরা গোয়েন্দা সংস্থা। যতই যাই বলা হোক, সিআইএ,এমআই৯ ইত্যাদি।এগুলো কিছু না মোসাদের কাছে। কেনো বললাম এই কথা তার জন্য পিছনে যেতে হবে আপনাকে। ইতিহাস রয়েছে।তবে সত্য ইতিহাসের বিরুদ্ধে আমাকে সাম্প্রদায়িক বলবেন না। আপনি বলতে পারেন মোসাদ বিশ্বের সকল মাথাওয়ালা ব্যাক্তিদের দাবার ঘুটির মতো ব্যবহার করে। আর মনে রাখতে হবে মোসাদ মানেই ইসরায়েল। ইসরায়েল ইহুদিদের রাষ্ট্র। তারা পুরে পৃথিবীর .২% হলেও সারা দুনিয়া চালাচ্ছে। মোসাদ এক ভয়ংকর নাম । নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তারা সব কিছু করতে প্রস্তুত। মোসাদ তথা ইসরায়েল ধংস হবে যখন পৃথিবীর ধংস ঘনিয়ে আসবে। আমি উপরের মোসাদের অপারেশন,অভিযান,কার্যক্রম সম্পর্কে যা তুলে ধরলাম তা একটু মাএ। তাদের সম্পর্কে বেশিরভাগই ধোয়াশা। আমি কিছু ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র।
ইসারায়েল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এখনো বর্তমান। পৃথিবীর অন্তিম পর্যন্ত থাকবে। পরবর্তী ইতিহাস সৃষ্টিকারী অনেক অনেক অপারেশন ও পরিচালনা করবে সামনে থেকে না হয় পেছনে থেকে। তবে এর ও শেষ হবে এবং বিশ্বের মানুষের সামনে অনেক সত্য উন্মোচিত হবে। যা ভাবেনি কখনি কল্পনাতেও।।
Writer: MD Ismail Hossain
Sylhet Agriculture University
তথ্য সংগ্রহ ও জানার জন্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে:-
Roar bangla.com
Wikipedia/mosade
Mosade bangla pdf 1 ,2
BBC
Youtube/mosade