সর্ববৃহৎ উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বিমানের ভিতরকার দেয়ালের উপাদান তৈরিতে কাজ করতে গিয়ে একদিন তার মনে হল, আমি এখানে কি করছি!
আমার সব গবেষণা, উদ্ভাবন তো বিদেশের এদের কাছে চলে যাচ্ছে, এদের কাজে লাগছে। আমার দেশের কাজে তো লাগছে না!
আমেরিকার সর্বোচ্চ সুবিধা ছেড়ে তিনি দেশে ফিরে আসলেন। বানালেন পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি বিশ্বে চমক সৃষ্টিকারী সোনালি ব্যাগ।
বানালেন পাটের তৈরি ঢেউটিন, পাট দিয়ে হেলমেট, টাইলস, গরুর হাড় থেকে উন্নত জিবানুকরন উপাদান, চিংড়ির খোসা দিয়ে বানিয়েছেন প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ, সামুদ্রিক শেওলা থেকে বানিয়েছেন উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক সার, লালশাকের মতো সবজির উৎপাদন সময় কমিয়ে এনেছেন অর্ধেক।
পরিবারে তাকে সবাই চিনে খসরু নামে। বাল্যকাল থেকেই মেধাবী ছাত্র খসরুর আগ্রহ ছিল সাইন্টিফিক এক্সপেরিমেন্টের প্রতি। ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইয়ের ছবি আঁকা পরীক্ষাগুলো বাসায় নিজে নিজে করে দেখতেন।
কখনও সফল কখনও ব্যর্থ, ব্যর্থতা তাকে থামায়নি বরং গবেষণার প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে।
কাজ করেছেন জার্মানিতে ডিএএডি এবং অ্যাভিএ’র সহকর্মী হিসেবে, জাপানে জেএসএসএস, এমআইএফ এর ফেলো হয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি) এবং অস্ট্রেলিয়ায় আইএইএ এর সহযোগী হিসেবে।
১৭ টি বই এবং একটি পেটেন্টসহ ৬০০ টির বেশি প্রকাশনার লেখক, সহ-লেখক।
তিনি পাট ভালোবাসেন। বলেন, আমি যেখানেই যাই, হাতে করে একগাছি পাট নিয়ে যাই। এইটা তো একান্তই আমাদের।
পাটের তৈরি পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগ উনার আলোড়নসৃষ্টিকারী উদ্ভাবন। পরিবেশ রক্ষায় যেখানে দুনিয়া জুড়ে চলছে আন্দোলন, প্রায় বাহাত্তুরটি রাষ্ট্র আইন করে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। সবাই খুঁজছে পলিথিনের বিকল্প। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাজার বসে উন্মুখ হয়ে বসে আছে।
সোনালি ব্যাগ সেই জাদুর বিকল্প। সোনালি ব্যাগ, মাটিতে পুতে রাখলে এক থেকে ছয়াসের মধ্যে পচে যায়, পরে পরিণত হয় জৈব সারে। পানিতে ফেললে একমাসের মধ্যে পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাছের খাদ্যে রুপান্তরিত হয়ে যায়।
দুনিয়া পাল্টে দেয়া এই উদ্ভাবক বিজ্ঞানি মোবারক আহমদ খান।
সোনালি ব্যাগ উৎপাদনে গিয়েছিল বহু আগেই। কিন্তু তারপর? দুইহাজার দুই সালে পথিলিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস।
বর্তমান বাজারে পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। বাজারে সোনালি ব্যাগের দেখা নেই। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশী পণ্য হিসেবে সোনালি ব্যাগের প্রচারণা নেই।
কিছুদিন আগে শুনেছিলাম এই বিজ্ঞানী অসুস্থ, জানি না এখন কেমন আছেন, কোথায় আছেন। জানি না তার উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ।
‘বাবু খাইসো’ নিয়ে মিডিয়া আলোড়িত হয়, ভাস্কর্য নিয়ে রাষ্ট্র তোলপাড় হয় আর মোবারক আহমদ খানের মতো মানুষরা বিশ্ব বদলে দেয়া পণ্য দেশের মাটিতে আবিষ্কার করে নীরবে পড়ে থাকে।
তবুও নির্লজ্জের মতো বলবো,
থ্যাংকস ফর বিং বাংলাদেশী
লেখকঃ রাফিউজ্জামান সিফাত
পুরকৌশলী, সাংবাদিক